Ajker Patrika

বিবিএতে ভালো করবেন যেভাবে

মো. আল-আমিন
ছবি: মাহতাব হোসেন
ছবি: মাহতাব হোসেন

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) প্রোগ্রামে ভর্তি হন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, স্নাতক শেষ করার পরও অধিকাংশ গ্র্যাজুয়েট চাকরির বাজারে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা নিয়ে প্রস্তুত থাকেন না। অথচ বিবিএ একটি এমন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একাডেমিক পড়ালেখা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং—সবকিছু একসঙ্গে শেখার সুযোগ রয়েছে। কীভাবে বিবিএ কোর্সটিকে নিজের ক্যারিয়ার গঠনের রূপরেখায় রূপান্তর করবেন? এমনই কিছু কার্যকরী পরামর্শ দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আল-আমিন

প্রতি সেমিস্টারের শুরুতেই কোর্স আউটলাইন ও মার্কিং স্কিম বুঝে পড়াশোনার প্রস্তুতি নিন। সময় ব্যবস্থাপনায় পোমোডোরো টেকনিক বা আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে পড়াশোনায় ফোকাস রাখুন। প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা রিভিশন ও সাপ্তাহিক গ্রুপ স্টাডি আপনার লার্নিং গভীর করবে।

ক্লাসে সক্রিয়তা ও নোট নেওয়ার কৌশল

ক্লাসে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুধু শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণই করে না, বরং ক্লাসেই অন্তত ৫০ শতাংশ বিষয় বুঝে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। নোট নেওয়ার জন্য ‘কর্নেল পদ্ধতি’ অনুসরণ করলে পড়াশোনা হবে আরও সংগঠিত।

বুকিশ নয়, প্র্যাকটিক্যাল লার্নিং

আন্তর্জাতিক কেস স্টাডি যেমন এইচবিআর কিংবা দেশীয় কোম্পানির বিজনেস মডেল বিশ্লেষণ করে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করুন। এসডব্লিউওটি, পর্টার’স ৫ ফোর্স ইত্যাদি টুল ব্যবহার করে বিজনেস বিশ্লেষণের অভ্যাস গড়ুন।

ইন্টার্নশিপ ও প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং

তৃতীয় বর্ষ থেকেই ইন্টার্নশিপ খোঁজা শুরু করুন—বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। লিংকইনড প্রোফাইল তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান।

সফট স্কিল

একজন বিবিএ গ্র্যাজুয়েটের জন্য পাবলিক স্পিকিং, ডিজিটাল টুলস ব্যবহার (এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট), ক্রিটিক্যাল থিংকিং ইত্যাদি স্কিল অপরিহার্য। টোস্টমাস্টারস ক্লাব, টেড টকস এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।

প্রস্তুতিতে স্ট্র্যাটেজিক অ্যাপ্রোচ

মিডটার্মে বেশি ফোকাস দিয়ে ফাইনালের চাপ কমান। বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান করে প্রশ্নের ধরন বুঝুন এবং শর্ট নোট তৈরি করে রিভিশন সহজ করুন।

এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজে নিজেকে প্রকাশ করুন

বিভিন্ন ক্লাব (যেমন বিজিনেস ক্লাব, মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন) এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে টিমওয়ার্ক ও লিডারশিপ স্কিল বাড়ান। স্টার্টআপ আইডিয়া কনটেস্টে অংশ নিয়ে বাস্তব ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনার পরিচয় দিন।

শিক্ষক ও মেন্টরদের সংস্পর্শে থাকুন

শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, তাঁদের গবেষণায় সহায়তা এবং সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা আপনাকে সঠিক পথে চালিত করবে। একজন মেন্টর আপনার ক্যারিয়ার গঠনে বিশেষ সহায়তা করতে পারেন।

জ্ঞান ও রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন—বিশেষ করে ব্যবসা ও অর্থনৈতিক চিন্তার ভিত্তি গড়ার মতো বই যেমন রিড ড্যাড পুর ড্যাড, গুড টু গ্রেট, দ্য সাইকোলজি অব মানি। কোরসেরা ও লিংকইনড লার্নিংয়ের কোর্সগুলো আপনাকে গ্লোবাল লেভেলের জ্ঞান দেবে।

সুস্থ জীবনধারা ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য

প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম ও মেডিটেশন আপনার মেন্টাল ফোকাস বাড়াবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন—যেমন সিপিএ/এসিসিএ, এমবিএ অথবা ডিজিটাল মার্কেটিং সার্টিফিকেশন অর্জন। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য লিংকইনড বা ব্লগে আপনার দক্ষতা প্রকাশ করুন।

বিবিএ কোনো সাধারণ ডিগ্রি নয়, এটি হলো একটি ‘লাইফ স্কুল’, যেখানে আপনি শুধু পড়াশোনা নয়, বরং জীবনের সব দিক থেকে প্রস্তুত হন। এই চার বছরকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলুন, যেন গ্র্যাজুয়েশনের করার সময়ই আপনি হয়ে ওঠেন একজন আত্মবিশ্বাসী ও দক্ষ প্রফেশনাল।

অনুলিখন: সাব্বির হোসেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুই ঘণ্টা আগে একই বিমানে ভ্রমণের দাবি এক ব্যক্তির, জানালেন ভয়াবহ তথ্য

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় সবাই মরেনি, একমাত্র জীবিত ১১ নম্বর সিটের যাত্রী

ইরানের কোনো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রভাব পড়েনি: আইএইএ

সাতক্ষীরায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, সেনা জালে ৩ সমন্বয়ক

‘উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ার সময় আমার ছেলে হোস্টেলের দোতলা থেকে ঝাঁপ দেয়’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত