Ajker Patrika

বিজেএস ভাইভা: বাংলাদেশে কত প্রকার রিট আছে

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২: ৫৮
সাদিকুর রহমান
সাদিকুর রহমান

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন সাদিকুর রহমান। স্নাতক পাস করে ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় অংশ নেন। সুপারিশপ্রাপ্ত হন সহকারী জজ হিসেবে। ভাইভার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তিনি। গ্রন্থনা করেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার।

সাদিকুর: আসতে পারি স্যার?

(অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলাম। কাছাকাছি গিয়ে সবার উদ্দেশে সালাম দিলাম। দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা আমাকে বসতে বললেন।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: আপনার নাম কী?

সাদিকুর: সাদিকুর রহমান।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: আপনার বাবার নাম কী?

সাদিকুর: মো. মজিবুর রহমান।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: বাবার পেশা কী?

সাদিকুর: ব্যবসা করেন।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: মায়ের পেশা কী?

সাদিকুর: গৃহিণী।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: আপনারা কয় ভাইবোন?

সাদিকুর: আমিসহ ৪ ভাইবোন।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: আপনিই কি সবার বড়?

সাদিকুর: জি স্যার।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: তাহলে কর্মক্ষম বলতে অন্য তো কেউ নেই!

সাদিকুর: জি না, স্যার।

(পারিবারিক তথ্য খুব বিস্তারিতভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন।)

প্রথম প্রশ্নকর্তা: আচ্ছা বলুন তো, Basic Structure কী?

সাদিকুর: Pillars of Constitution on which constitution stands.

প্রথম প্রশ্নকর্তা: সংবিধানে কোথাও বলা আছে এ সম্পর্কে?

সাদিকুর: জি স্যার, অনুচ্ছেদ ৭(খ)।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: তাহলে বলুন তো, কোনগুলো Basic structure?

সাদিকুর: (সঠিক উত্তর করতে পারিনি। দুঃখপ্রকাশ করে বললাম) এখন মনে পড়ছে না স্যার।

দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা: আচ্ছা বলুন তো, রিট কী?

সাদিকুর: Written order of High Court Division to do or to refrain from doing something।

দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা: আরও বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলুন।

সাদিকুর: অনুচ্ছেদ ১০২(১) রেফারেন্স টেনে বললাম—কোনো ব্যক্তির মৌলিক অধিকার যদি লঙ্ঘিত হয় এবং সেই সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির যদি অন্য কোনো প্রতিকার না থাকে, তবে তিনি হাইকোর্ট ডিভিশনে আবেদন করতে পারেন। আদালত দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে অধিকারগুলো বলবৎ করার আদেশ দিতে পারেন।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: বাংলাদেশে কত প্রকার রিট আছে?

সাদিকুর: ৫ প্রকার স্যার।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: বলুন তো কী কী?

সাদিকুর: Writ of Prohibition, Writ of Mandamus, Writ of Certiorari, Writ of Habeas Corpus, Writ of Quo Warranto।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: কোন অনুচ্ছেদে বলা আছে?

সাদিকুর: ১০২ নম্বর অনুচ্ছেদে।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: Writ of Certiorari এবং Writ of Mandamus-এর মধ্যে পার্থক্য কী?

সাদিকুর: Writ of Certiorari: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি তার আইনগত ক্ষমতাকে লঙ্ঘন করে, তবে আদালত ওই কাজকে নাকচ করে দেন। Writ of Mandamus: যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তখন আদালত ওই দায়িত্ব পালনের জন্য আদেশ দেন।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে পারবেন?

সাদিকুর: জি স্যার। একটু সময় চাইলাম ভাবার জন্য। অনুমতি দিলেন। Writ of Mandamus-এর উদাহরণ দিতে পারি—কোনো অধীনস্থ আদালতকে তাঁর দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: ১০২ অনুচ্ছেদ এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের মধ্যে সম্পর্ক কী?

সাদিকুর: যদি কোনো aggrieved person-এর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তাহলে তিনি ১০২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে মামলা করতে পারেন। এই অধিকার বলবৎ করার বিধান অনুচ্ছেদ ৪৪(১)-এ নিশ্চিত করা হয়েছে।

দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা: Person aggrieved বলতে কী বোঝেন?

সাদিকুর: ১০২(১) অনুচ্ছেদের রেফারেন্স টেনে বললাম—এমন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি, যার অধিকার নিশ্চিত করতে কোনো বিধান নেই।

দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা: PIL কী?

সাদিকুর: Public Interest Litigation।

দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা: কখন করা যায়?

সাদিকুর: যখন কোনো ব্যক্তি তাঁর আর্থিক বা সামাজিক অবস্থানের কারণে আদালতে মামলা করতে পারেন না, তখন তাঁর পক্ষে অন্য কেউ মামলা করতে পারেন।

দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা: অন্য ব্যক্তি বলতে কাকে বোঝালেন? তিনি Locus Standi কীভাবে নেবেন?

সাদিকুর: ওই ব্যক্তি Locus Standi নিতে হলে দেখাবেন—‘His heart bleeds for his less fortunate fellow who are unable to approach the court due to financial destitution।’

(একটি মামলার উদাহরণ দিতে চাইলাম; কিন্তু অনুমতি দিলেন না।)

তৃতীয় প্রশ্নকর্তা: CPC-এর ধারা ১৫১-তে কী বলা আছে?

সাদিকুর: Inherent Power of the Court বা আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা।

তৃতীয় প্রশ্নকর্তা: এটা আদালত কখন প্রয়োগ করেন?

সাদিকুর: ১৫১ ধারার দুটি গ্রাউন্ড বললাম—1. To ensure end of Justice; 2. To prevent abuse of the process of court (কিন্তু তিনি অন্য উত্তর চাচ্ছিলেন উদাহরণসহ। আমি বুঝতে পারিনি তখন, তাই দুঃখপ্রকাশ করলাম।)

চতুর্থ প্রশ্নকর্তা: মুসলিম ল-এর জন্য কোন রাইটারের বই পড়েছেন?

সাদিকুর: ড. মো. ইকরামুল হক স্যারের বই এবং Syed Khalid Rashid’s Principle on Muslim Law।

চতুর্থ প্রশ্নকর্তা: Jurisprudence কোন লেখকের বই পড়েছেন?

সাদিকুর: (অনেক চেষ্টা করলাম মনে করতে পারিনি। সরি বললাম।)

চতুর্থ প্রশ্নকর্তা: Obiter Dicta এবং Ratio Decidendi কী?

সাদিকুর: Ratio Decidendi: Reasons of the decision।

Obiter Dicta: রায় ঘোষণার সময়ে বলা অন্যান্য বিষয়।

(দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা বললেন, উত্তর ঠিক কি না। আমি বললাম, ‘ম্যাম, ভুল হতে পারে।’)

তৃতীয় বোর্ড সদস্য: আইন শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আমার মনে হয়’ বা ‘আমি মনে করি’ বলার সুযোগ নেই! ব্যক্তিজীবনেও এসব শব্দ ব্যবহার করবেন না।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: মাস্টার্সে কটি সাবজেক্ট ছিল?

সাদিকুর: ১২টি।

প্রথম প্রশ্নকর্তা: তাহলে তো সব মনে থাকার কথা!

সাদিকুর: (সরি বললাম, মনে পড়ছে না)।

দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা: Istihad কী?

সাদিকুর: Interpretation or effort to interpret।

দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা: আদালত বর্তমানে Interpretation করতে পারে কি?

সাদিকুর: প্রথমে Takhayyur করা হয়, তারপর Istihsan, Istislah, Istidlal প্রয়োগ করা হয়।

দ্বিতীয় প্রশ্নকর্তা: কেস রেফারেন্স?

সাদিকুর: (সরি বললাম, মনে পড়ছে না)।

আমি চেয়ার থেকে উঠে সালাম দিয়ে বের হলাম। দরজার সামনে এসে হাসিমুখে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে এলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস: এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মুকিতুলের বিরুদ্ধে এবার মামলা

রক্ত কেনা যায় না—ইয়েমেনে নিমিশাকে ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি মাহদির পরিবারের

২৫ সেকেন্ডে ১২ গুলি, হাসপাতালে গ্যাংস্টারের শরীর ঝাঁঝরা

গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় ফেসবুকে সরব ইসলামপুরের পলাতক আওয়ামী নেতারা

গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহত ৪ জনের ময়নাতদন্ত হলো না, প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ডিআইজি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত