Ajker Patrika

নমুনা ভাইভা: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন?

এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ১৬
নমুনা ভাইভা: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন শুভ রায় সুমন। তিনি ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন এবং ৪১তম বিসিএসে তথ্য (জেনারেল) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর ৪৩তম বিসিএসের ভাইভার অভিজ্ঞতা শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

কলবেল বাজার পর ধীরে ধীরে দরজা খুলে অনুমতি নিলাম।

আমি: স্যার, আসতে পারি?

চেয়ারম্যান স্যার: হ্যাঁ, আসেন।

আমি: (সবার উদ্দেশে নমস্কার দিলাম। তারপর স্যার বসতে বললেন)।

চেয়ারম্যান স্যার: আপনি শুভ রায় সুমন?

আমি: জি স্যার।

চেয়ারম্যান স্যার: আপনি দেখছি ৪১তম বিসিএসে তথ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। অভিনন্দন আপনাকে।

আমি: ধন্যবাদ স্যার।

চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা, আপনি তো একটা ভালো ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাহলে আবার ভাইভা দিতে আসছেন কেন?

আমি: স্যার, আমি তথ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। এ জন্য স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞ। তথ্য ক্যাডার নিঃসন্দেহে একটা চমৎকার ক্যাডার। তবে স্যার, আমি স্বপ্নের পেছনে ছুটছি। আর আমার স্বপ্ন প্রশাসন ক্যাডার। যতক্ষণ না স্বপ্ন পূরণ হবে, ততক্ষণ চেষ্টা করে যাব। আর এ জন্য পুনরায় ভাইভা দিতে আসা।

চেয়ারম্যান স্যার: প্রশাসনে কেন আসতে চান?

আমি: স্যার, স্কুলে থাকতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখতাম, ইউএনও স্যার প্রধান অতিথি থাকতেন। তা ছাড়া উপজেলায় প্রায় সব অনুষ্ঠানে ইউএনও স্যার মধ্যমণি হিসেবে থাকতেন। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে উনাকে দেখতাম আর ভাবতাম, যদি কখনো উনার অবস্থানে যেতে পারি। এটাই আমার মূল প্রেরণা স্যার।

চেয়ারম্যান স্যার: উপজেলায় ইউএনওর কাজ কী?

আমি: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা, আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত, পাবলিক পরীক্ষা ও নির্বাচনসংক্রান্ত কার্যাবলি। এ ছাড়া উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে উপজেলা চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করা।

চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা, আপনি তো লেদারে পড়াশোনা করেছেন। ওই সেক্টরে যাচ্ছেন না কেন?

আমি: স্যার, লেদার বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ সেক্টর। কিন্তু ওখানে জব সিকিউরিটি কম। এটাই না যাওয়ার মূল কারণ।

[তারপর চেয়ারম্যান স্যার এক্সটার্নাল-১ স্যারকে প্রশ্ন করতে বললেন]।

এক্সটার্নাল-১: কিছুদিন আগে ভারত চন্দ্রযান-২ অভিযান সম্পন্ন করেছে। কত তারিখে সেটা?

আমি: দুঃখিত স্যার। তারিখটা এই মুহূর্তে মনে নেই।

এক্সটার্নাল-১: এর আগে কোন কোন দেশ চন্দ্রাভিযান সম্পন্ন করেছে?

আমি: স্যার যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন।

এক্সটার্নাল-১: ভারতের এই চন্দ্রাভিযানের বিশেষত্ব কী?

আমি: স্যার, ভারত প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করেছে।

এক্সটার্নাল-১: দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কারণ কী?

আমি: স্যার, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অক্সিজেন ও জ্বালানির উৎস রয়েছে, যেটা ভবিষ্যতে কাজে লাগানো যেতে পারে।

এক্সটার্নাল-১: চন্দ্রযান-২ বহনকারী ল্যান্ডারের নাম কী?

আমি: দুঃখিত স্যার। (সঠিক উত্তর: বিক্রম)

[এরপর পুনরায় চেয়ারম্যান স্যার প্রশ্ন করা শুরু করলেন]।

চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা, অবসর সময়ে আপনি কী করেন?

আমি: স্যার, ইউনিভার্সিটিতে থাকতে বই পড়তাম। তা ছাড়া অনলাইনে বই বিক্রিও করতাম।

চেয়ারম্যান স্যার: বই বিক্রি করতেন বলতে?

আমি: স্যার, যারা ঢাকার বাইরে থাকে, তাদের চাহিদা মোতাবেক বই সরবরাহ করতাম। এ জন্য ফেসবুকে বই দাও নামে একটা পেজ ও গ্রুপ ছিল আমার। পাঠকেরা সেখান থেকে বই অর্ডার করত আর আমি কুরিয়ারে বই পাঠিয়ে দিতাম।

চেয়ারম্যান স্যার: কেমন লাভ হতো আপনার?

আমি: স্যার, আসলে লাভের জন্য কাজটা করতাম না। ভালো লাগার জন্য করতাম।

চেয়ারম্যান স্যার: গুড। তো এখন বই পড়েন না?

আমি: স্যার, এখন ব্যাংকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিউটি করি। তাই আগের মতো সময় হয়ে ওঠে না।

চেয়ারম্যান স্যার: সর্বশেষ কোন বইটা পড়েছেন?

আমি: সৈয়দ শামসুল হকের নিষিদ্ধ লোবান।

চেয়ারম্যান স্যার: উনার আরও কিছু বইয়ের নাম বলুন।

আমি: খেলারাম খেলে যা, নীল দংশন, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়।

চেয়ারম্যান স্যার: উনি বাংলা সাহিত্যে কী নামে পরিচিত?

আমি: স্যার, উনি সব্যসাচী লেখক হিসেবে পরিচিত।

এক্সটার্নাল-২: বায়ুদূষণে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন?

আমি: স্যার, আমাদের রাজধানী ঢাকা বায়ুদূষণে শীর্ষে।

এক্সটার্নাল-২: দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের অবস্থান কেমন?

আমি: স্যার, ভারতের মুম্বাই, পাকিস্তানের করাচির অবস্থা আমাদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো। তবে নেপাল সবচেয়ে ভালো অবস্থানে।

এক্সটার্নাল-২: আচ্ছা, বায়ুদূষণ পরিমাপক সূচকের নাম বলতে পারবেন?

আমি: জি স্যার। Air Quality Index সংক্ষেপে AQI।

এক্সটার্নাল-১: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন? আপনার মতামত কী?

আমি: স্যার, আমার মনে হয় ভারত ও চীনের অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে একটা বড় বাধা।

এক্সটার্নাল-১: ভারত ও চীন তো বৈরী রাষ্ট্র। এই অবস্থায় দুই দেশকে নিয়ে কীভাবে আগানো যায়?

আমি: স্যার, আমাদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য দুই দেশকেই প্রয়োজন। তা ছাড়া জাতির পিতার দর্শনও ছিল সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয় Balance Diplomacy প্রয়োগ করা যেতে পারে।

চেয়ারম্যান স্যার: আপনি তো সিলেটের। সিলেট কেন বিখ্যাত?

আমি: স্যার, সিলেট মূলত পর্যটন ও চায়ের জন্য বিখ্যাত।

চেয়ারম্যান স্যার: সবচেয়ে বেশি চা হয় কোথায়?

আমি: স্যার, মৌলভীবাজারে।

চেয়ারম্যান স্যার: প্রথম চা নিলাম কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?

আমি: সরি স্যার। জানা নেই। (সঠিক উত্তর: চট্টগ্রাম)

চেয়ারম্যান স্যার: ঠিক আছে, আপনি আসেন।

আমি: দাঁড়িয়ে পুনরায় নমস্কার দিয়ে ধীর পদক্ষেপে প্রস্থান করলাম।

আরও কিছু প্রশ্ন ছিল। সব মনে নেই।

ভাইভা বোর্ডে ২০-২৫ মিনিট ছিলাম। বোর্ড অনেক ফ্রেন্ডলি ছিল। পুরো ভাইভায় আমাকে বাংলায় প্রশ্ন করা হয়েছিল।

প্রতিটি প্রশ্নের পরে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়েছিলাম উত্তর বলার জন্য। তবে অজানা প্রশ্নের ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ না করে সঙ্গে সঙ্গে সরি বলে দিয়েছিলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বঙ্গবন্ধু ও মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল থাকছে

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

বিদ্যালয়ে সময় দেন না শিক্ষক, ইউএনওর কাছে অভিযোগ করায় সহকর্মীকে মারধর

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত