কোন বয়স কোনো বাধা মানে না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছি। ৪১তম বিসিএস ছিল আমার দ্বিতীয় বিসিএস পরীক্ষা। বিসিএস ভাইভায় সিরিয়াল ছিল ১০ নম্বরে। আনুমানিক ১৫ মিনিটের মতো ভাইভা হয়েছিল। ক্যাডার পছন্দক্রম—প্রশাসন, পুলিশ, কর, কাস্টমস, অডিট, আনসার ও শিক্ষা ক্যাডার ছিল। 

আমি: সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। (চেয়ারম্যান স্যার বসতে বলার পর, মাস্ক রেখে বসে পড়ি) 
চেয়ারম্যান: কোন বয়স কোনো বাধা মানে না? 
আমি: স্যার, আঠারো বছর বয়স। 
চেয়ারম্যান: আচ্ছা, সেটা তো পদ্যের ভাষায়। কিন্তু গদ্যের ভাষায় কোন বয়স কোনো বাধা মানে না? 
আমি: সরি স্যার, এমন কিছু আমার মনে পড়ছে না।

চেয়ারম্যান: কবিতাটি কে লিখেছেন জানেন? 
আমি: সুকান্ত ভট্টাচার্য। 

চেয়ারম্যান: সুকান্ত ভট্টাচার্যকে দেখেছেন? 
আমি: জি স্যার, দেখেছি। 

চেয়ারম্যান: কোথায় দেখেছেন? 
আমি: স্যার ইন্টারনেট থেকে তাঁর ছবি দেখেছি। 

চেয়ারম্যান: তিনি কত শতকের কবি ছিলেন? 
আমি: বিংশ শতাব্দীর। 

চেয়ারম্যান: তাঁর জীবন সম্পর্কে জানেন কিছু? 
আমি: জি স্যার, কিছুটা। 

চেয়ারম্যান: তিনি কিসের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করেছিলেন এবং পকেটে নিজের কোনো টাকা না থাকায় দুপুরের খাবার না খেয়েই চাঁদার সম্পূর্ণ টাকা জমা দিয়েছিলেন? 
আমি: সরি স্যার, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। 

চেয়ারম্যান: তাহলে সুকান্তকে নিয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা হয়নি। 
আমি: সরি স্যার, উইকিপিডিয়া থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি; এর বেশি না। 
চেয়ারম্যান: সুকান্ত ভট্টাচার্য কত বছর বয়সে মারা গিয়েছেন? 
আমি: সরি স্যার, সঠিক বয়সটা মনে পড়ছে না। তবে খুব অল্প বয়সে মারা গেছেন।

চেয়ারম্যান: বই পড়েন? কার কার বই পড়েছেন, ‘ডটার অব দি ইস্ট’ পড়েছেন? 
আমি: না স্যার, ডটার অব দি ইস্ট পড়া হয়নি। তবে এ পি জে আবদুল কালামের ‘উইংস অব ফায়ার’ পড়া হয়েছে। 

চেয়ারম্যান: তাঁর পুরো নাম বলতে পারবেন? 
আমি: জি স্যার, আবুল পাকির জয়নুল আবদুল কালাম। 
চেয়ারম্যান: উনার পিতা পেশায় কী ছিলেন? 
আমি: স্যার, পেশায় কী ছিলেন তা এ মুহূর্তে মনে নেই। তবে, তিনি খুব ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন এবং মানুষজন তাঁর কাছে পানি পড়া নিতে আসতেন। 
চেয়ারম্যান: আচ্ছা, উনি জীবনে প্রথম ইনকাম করেছেন কীভাবে, বলতে পারবেন? 
আমি: সরি স্যার, বলতে পারছি না। 

চেয়ারম্যান: পত্রিকা বিক্রি করতেন, পত্রিকা কীভাবে নিয়ে আসতেন। 
আমি: স্যার, ট্রেনে পত্রিকা আসত। 
চেয়ারম্যান: পত্রিকা তো ট্রেনে আসত, কিন্তু উনি নিয়ে আসতেন সাইকেলে করে। 
আমি: সরি স্যার। 
চেয়ারম্যান: বুঝেছি, গভীরভাবে পড়া হয়নি। 

আমি: স্যার কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম, তাই ঘটনার অনেক কিছুই ভুলে গেছি, মূল ভাবটা মনে আছে। 
চেয়ারম্যান: আপনার পড়াশোনা রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে? 
আমি: জি স্যার। 
চেয়ারম্যান: রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর অর্থনীতির মধ্যে কে কাকে প্রভাবিত করে, এ বিষয়ে তো একটি বিতর্ক রয়েছে। আপনার মতামত কী? 
আমি: স্যার এটি মূলত দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। একটি বিষয়কে একেকজন একেক দৃষ্টি থেকে দেখে একেক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে। এ ছাড়া বিষয় দুটি ইন্টাররিলেটেড এবং দু-ধরনের তত্ত্বেরই প্রয়োগক্ষেত্র রয়েছে। কোনোটিকেই বাতিল করে দেওয়া যায় না। 

চেয়ারম্যান: আমি বলছি, অর্থনীতির দ্বারা রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়, আর রাজনীতি অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ দুটির মধ্যে যারা প্রথমটিকে সমর্থন করেছে, তারা তো দ্বিতীয়টি অস্বীকার করেছে, আবার যারা দ্বিতীয়টি সমর্থন করেছে, তারা প্রথমটিকে অস্বীকার করেছে। আপনি যদি তাদের একজন হন তাহলে আপনি কোনটি সমর্থন করবেন। 
আমি: সে ক্ষেত্রে আমি বলব, একটি জাতির অর্থনৈতিক অবস্থান ও কর্মকাণ্ড তাদের রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। (চেয়ারম্যান স্যার প্রথম এক্সটার্নালকে প্রশ্ন করতে বললেন) 

প্রথম এক্সটার্নাল: বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ এফডিআই রয়েছে, তা আমাদের দেশের বা অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট কি না? 
আমি: না স্যার, একদমই সন্তোষজনক নয়। আর এ কারণেই সরকার এটি বৃদ্ধির জন্য নানারকম উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম