Ajker Patrika

ব্যারিস্টার হওয়া স্বপ্ন যাঁদের

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ০৭
ব্যারিস্টার হওয়া স্বপ্ন যাঁদের

যুগ যুগ ধরে আইনশাস্ত্র জ্ঞানজগতের অপরিহার্য শাখা হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। একসময় কেবল অভিজাত ও বিলাসী শ্রেণির মানুষেরা আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করতেন। যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগের স্বপ্ন থাকত ব্যারিস্টার হওয়া। বর্তমানেও পেশাটির গুরুত্ব ফিকে হয়নি, বরং মানুষের আগ্রহ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যারিস্টার হওয়া নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জানাচ্ছেন ব্যারিস্টার মো. আবরার ফাইয়াজ। 

ব্যারিস্টার বলতে যা বোঝায়
বিভিন্ন দেশের আইনজীবীকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশের আইনজীবীদের বলা হয় অ্যাডভোকেট। আমেরিকাতে আইনজীবীকে বলা হয় অ্যাটর্নি। আর যুক্তরাজ্যের আইনজীবীকে বলা হয় ব্যারিস্টার। ব্যারিস্টার অ্যাট-ল সংক্ষেপে বার অ্যাট-ল। ব্যারিস্টার হতে হলে যুক্তরাজ্যে আইনের ওপর পড়াশোনা করতে হবে। অর্থাৎ ইংল্যান্ডের ইনস অব কোর্টের তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থী হিসেবে কাউন্সিল অব লিগ্যাল এডুকেশনের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে সনদপ্রাপ্তদের ব্যারিস্টার বলা হয়।

ব্যারিস্টার হতে চাইলে
ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য কোনো শিক্ষার্থী এইচএসসি কিংবা ‘এ’ লেভেল পাস করে সরাসরি যুক্তরাজ্যে ব্যারিস্টারি পড়াশোনা করার জন্য চলে যেতে পারেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে আইন বিষয়ে চার বছরের স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কিংবা যেকোনো ল কলেজে পড়েও উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যেতে পারেন। ব্যারিস্টার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আইনে ডিগ্রি নেওয়ার পর ৯ মাসের একটি প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স করতে হয়। তা ছাড়া দেশে থেকেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যারিস্টারি করার জন্য গ্র্যাজুয়েশন কোর্স করা যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশে বসে ব্রিটিশ কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের এনরোল্ড অ্যাডভোকেটরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর সরাসরি ব্যারিস্টারি কোর্সে অংশ নিতে পারবেন। 

যেভাবে করবেন বিটিসি
ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য এলএলবিতে কোয়ালিফায়েড ল ডিগ্রি (QLD) শুধু ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করে। যাঁরা সেকেন্ড ক্লাস পেয়ে এই ডিগ্রি সম্পন্ন করবেন, তাঁরা বার কোর্সে আবেদন করতে পারবেন। বার কোর্সে আবেদন করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে: 

  • এলএলবি রেজাল্ট। 
  • আইইএলটিএস।
  • বিক্যাট বা বার কোর্স অ্যাপটিউট টেস্ট সব আবেদনকারীকে দিতে হবে। 
  • যেকোনো ইনসের সদস্য হতে হবে। বার অ্যাট ল কোর্সটি মূলত ইংল্যান্ডের চারটি ইনসের যেকোনো একটি থেকে করতে হয়। অর্থাৎ লিনকনস ইন, গ্রেইস ইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পল—এই চারটি ইনসের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।

ব্যারিস্টার হওয়ার প্রক্রিয়া
এইচএসসি বা ‘এ’ লেভেল পাস করা একজন শিক্ষার্থী ইংল্যান্ডে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি ল-তে ভর্তি নেয়। আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাব করে ফাউন্ডেশন কোর্স। ফাউন্ডেশন কোর্স সাধারণত ছয় মাসের হয়ে থাকে। এই কোর্সের পরেই শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। উল্লেখযোগ্য, এটি সাধারণত তিন বছরের প্রোগ্রাম হয়ে থাকে। এই তিন বছরে সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে শিক্ষার্থীর প্রতিবছরে ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ লাগবে।

আইন বা অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য যে প্রক্রিয়া
বাংলাদেশের সিলেবাসে কেউ আইন বা অন্য যেকোনো বিষয়ে স্নাতক পাস করার পর যদি ব্যারিস্টার হতে চান, তাহলে তাঁকে এক বছরের গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ল (জিডিএল) সম্পন্ন করতে হবে। জিডিএল সম্পন্ন করার পর বার কোর্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে শুধু জিডিএলের জন্য ১০ থেকে ১৮ লাখ টাকার মতো খরচ হয়।

ব্যারিস্টার মো আবরার ফাইয়াজদেশে থেকে ব্যারিস্টার হতে চাইলে
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ডিস্টেন্স লার্নিং প্রোগ্রামে দেশে বসেই শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইংলিশ এলএলবির সহায়তা দিচ্ছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলএলবি করে পরে ইংল্যান্ডে বার কোর্সের জন্য আবেদনের সুযোগ আছে। এ ছাড়া কেউ যদি বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের অ্যাডভোকেট হন, তাঁরাও নির্দিষ্ট সময় পর বার ট্রান্সফার টেস্ট (BTT) করতে পারবেন। বার ট্রান্সফার টেস্ট অন্যান্য আইনজীবীদের বার অব ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে অনুশীলন করার যোগ্যতা অর্জনের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়। কারণ, যোগ্য আইনজীবীরা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বার অব ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে প্রবেশের সুযোগ পান।

অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত