Ajker Patrika

অভুক্তের ক্ষুধা ও বিপদগ্রস্তের সংকটে মুমিনের করণীয়

কাউসার লাবীব
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

এই নশ্বর পৃথিবীতে আমাদের জীবন সুখের ভেলায় ভাসলেও হয়তো অদূরেই কোনো এক মানবসন্তান ক্ষুধায় কাতর বা গভীর কোনো বিপদে অসহায়। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে আমরা হয়তো তাদের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই না, কিন্তু তাদের হৃদয়ের কান্না ও প্রয়োজন আকাশ ছুঁয়ে যায়। একজন মুমিন হিসেবে আমাদের মনে রাখা জরুরি, জীবন একটাই এবং এই জীবনের ক্ষণস্থায়ী প্রাপ্তিগুলো প্রকৃত সফলতা নয়। প্রকৃত সফলতা নিহিত আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া ও ভালোবাসায়। যদি আমরা দয়াময় আল্লাহর দয়া পেতে চাই; তবে আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে সেই আর্তি—ক্ষুধার্তকে অন্ন দেওয়া ও বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানো। কারণ, অসহায়ত্বের চরম মুহূর্তে অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইবাদতের শ্রেষ্ঠতম কাজ।

আল্লাহর করুণা লাভের চাবিকাঠি

ইসলামে মানবসেবা শুধু মানবিক কর্তব্য নয়, বরং তা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। মহানবী (সা.)-কে যখন প্রশ্ন করা হলো, ইসলামে কোন কাজটি শ্রেষ্ঠ? তিনি উত্তর দিলেন, ‘ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানো।’ (সহিহ বুখারি: ১২)

আমরা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে বেঁচে থাকি। যদি আমরা তাঁর করুণা ও দয়া পেতে চাই, তবে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দয়ার নজর দিতে হবে। দয়ার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন, ‘দয়াশীলদের প্রতি করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪১)। সমাজে ধনী-গরিব, সক্ষম-অসক্ষম সব ধরনের মানুষ আছে। যে ব্যক্তি তার সাধ্যমতো অসহায়ের পাশে দাঁড়ায়, আল্লাহ তাকেও করুণার দৃষ্টি দেন।

ক্ষুধার্তকে না খাওয়ানোর ভয়াবহ পরিণতি

ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করার গুরুত্ব এত বেশি যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ অনাহারীর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে, তবে তা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে। পবিত্র কোরআনে জাহান্নামিদের আত্মস্বীকৃত জবানবন্দি তুলে ধরা হয়েছে, ‘(তাদের প্রশ্ন করা হবে) কিসে তোমাদের জাহান্নামে নিয়ে গেছে? তারা বলবে, আমরা নামাজিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না এবং মিসকিনদের খাবার খাওয়াতাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৪)

অন্যদিকে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ব্যক্তির প্রতি কঠোর প্রশ্ন রাখবেন, ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি খাবার চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি...তুমি কি জানতে না যে যদি তুমি তাকে খাবার খাওয়াতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৯)। এর মাধ্যমে আল্লাহ বুঝিয়ে দেন, সৃষ্টির সেবা করা হলো সৃষ্টিকর্তার ইবাদত।

বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানোর পুরস্কার

বিপদগ্রস্ত মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে আল্লাহ বান্দার প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করেন। পবিত্র কোরআনে সেই সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের প্রশংসা করা হয়েছে, যারা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি (চেহারা) লাভের জন্য মিসকিন, এতিম ও কয়েদিদের খাবার খাওয়ায়। তারা কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা চায় না। এই কাজের ফলস্বরূপ আল্লাহ তাদের রক্ষা করবেন এবং সজীবতা ও আনন্দ দান করবেন, ‘যার ফলে আল্লাহ তাদের সেদিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন আর তাদের দেবেন সজীবতা ও আনন্দ।’ (সুরা দাহার: ৮-১১)

সহযোগিতার পুরস্কার প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্যের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৬)

ইসলামে সাহায্য-সহযোগিতাকে ইবাদত হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই এবং একে অপরের সহায়ক। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ সে অন্য ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৩১৪)। সৎকর্মশীল ব্যক্তি তারা, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, মুসাফির ও সাহায্য প্রার্থীদের জন্য সম্পদ ব্যয় করে। তাদের জন্য কোনো ভয় নেই, কোনো চিন্তাও নেই।

আমরা অনেক সময় ইবাদতের অর্থকে শুধু নামাজ, রোজা বা হজের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে ফেলি। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে ক্ষুধার্তকে আহার করানো, বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানো এবং অসহায়কে আশ্রয় দেওয়া আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ ইবাদতগুলোর অন্যতম। মানবতার সেবা হলো ইমানের প্রকৃত সৌন্দর্য। তাই আমাদের সাধ্যের সামান্যতম দানও যদি কোনো অভুক্ত মুখে হাসি ফোটাতে পারে, সেটি আল্লাহর দৃষ্টিতে অমূল্য। মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী প্রাপ্তি একদিন হারিয়ে যাবে, কিন্তু মানুষের সেবায় নিবেদিত প্রতিটি কাজ পরকালের পাথেয় হয়ে থাকবে। আসুন, আমরা জীবনের এই সংক্ষিপ্ত যাত্রায় দয়ার নবী (সা.)-এর পথ অনুসরণ করি, অসহায়কে আশ্রয় দিই এবং ক্ষুধার্তের মুখে আহার তুলে দিই। হয়তো এই সামান্য দয়া ও করুণা কিয়ামতের দিনে আমাদের জন্য জান্নাতের দুয়ার খুলে দেবে। রবের দয়া পেতে সাহায্য করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২১ অক্টোবর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৫ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০৪: ৪২ মিনিট
ফজর০৪: ৪৩ মিনিট০৫: ৫৭ মিনিট
জোহর১১: ৪৪ মিনিট০৩: ৪৯ মিনিট
আসর০৩: ৫০ মিনিট০৫: ২৬ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৮ মিনিট০৬: ৪২ মিনিট
এশা০৬: ৪৩ মিনিট০৪: ৪২ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নীতি ও সাহসের প্রতীক ইমাম আবু হানিফা (রহ.)

রায়হান আল ইমরান
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যশ-খ্যাতি ও পদ-পদবির জন্য জন্য আমরা কত কিছুই না করি। তবে ইতিহাসের পাতায় আমরা এমন অনেক উজ্জ্বল মনীষীর সন্ধান পাই, যাঁরা ক্ষমতা বা পদকে পদদলিত করে সর্বদাই নীতি ও আদর্শকে এগিয়ে রেখেছেন। এমনই একজন মহান মনীষী হলেন নুমান বিন সাবিত, যিনি মুসলিম বিশ্বে ইমাম আবু হানিফা নামে পরিচিত।

আবু হানিফা (রহ.)-এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

তাঁর পুরো নাম, নুমান বিন সাবেত বিন মারজুবান আল-কুফি। তবে ‘আবু হানিফা’ উপাধিতেই বেশি পরিচিত। বর্ণনা অনুযায়ী, তৎকালীন কুফায় ‘হানিফা’ শব্দটি দোয়াত বা কলমের কালি বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। যেহেতু তিনি অধিকাংশ সময় গবেষণা ও লেখালেখিতে ব্যস্ত থাকতেন, তাই তিনি ‘আবু হানিফা’ উপাধি লাভ করেন।

তিনি ৮০ হিজরি বর্তমান ইরাকের কুফায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি তীক্ষ্ণ মেধাবী ও অধ্যবসায়ী ছিলেন। মেধা ও সাধনার সমন্বয়েই একসময় তিনি নিজেকে সময়ের শ্রেষ্ঠ ফকিহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির হিসেবে গড়ে তোলেন।

হানাফি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা

তিনি ইসলামি ফিকহ তথা আইনশাস্ত্রের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। ফিকহ গবেষণায় তাঁর গভীর যুক্তি, তীক্ষ্ণ চিন্তাশক্তি ও উপলব্ধিই একদিন তাঁকে পরিণত করে হানাফি মাজহাবের স্থপতিতে, যা আজও বিশ্বের বহু দেশে অনুসৃত।

তিনি একজন তাবেয়ি

তিনি ছিলেন একজন তাবেয়ি, যা তাঁর মর্যাদাকে ফুটিয়ে তোলে। তিনি কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাহাবির সাক্ষাৎ পেয়ে ধন্য হোন। যাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন, তাঁরা হলেন হজরত আনাস বিন মালিক, আবদুল্লাহ বিন হারিস, আমর বিন হুরাইস, জাবির বিন আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ বিন আবি আওফা, সাহল বিন সাদ, আবু তোফাইল, ওয়াসেলা বিন আসকা, আবদুল্লাহ বিন উনাইস, মাকিল বিন ইয়াসার, আয়েশা বিনতে আজরাদ (রা.)।

বিচারপতি পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি

তখন ক্ষমতার মসনদে ছিলেন উমাইয়া খলিফা ইয়াজিদ বিন হুবায়রা। তিনি একদিন সময়ের শ্রেষ্ঠ ফকিহ ইমাম আবু হানিফা (রা.)-কে ডেকে পাঠান রাজপ্রসাদে। সেখানে এলে তিনি তাঁকে কুফার বিচারপতি (কাজি) হওয়ার প্রস্তাব দেন।

এ প্রস্তাব বাহ্যিকভাবে যদিও সম্মানের; কিন্তু এর পেছনে ছিল খলিফার চতুর রাজনীতি। খলিফা মনে করতেন—তিনি বিচারপতি হলে খিলাফতের ভিত মজবুত হবে, খলিফার বৈধতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

কিন্তু এ দায়িত্ব যে এতটা মসৃণ নয়; তা আবু হানিফা (রহ.) আগে থেকেই বুঝতে সক্ষম হোন। তাই তিনি স্পষ্টভাবে অস্বীকৃতি জানান।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর এই স্পষ্ট অস্বীকৃতিতে থমকে যায় পুরো রাজদরবার। কিন্তু শাসকের ক্রোধ থামেনি। তিনি ইমামকে কঠোর শাস্তির নির্দেশ দেন।

শাসকের আদেশ লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। তাই শুরু হয় মর্মান্তিক শাস্তি। প্রতিদিন ১০টি করে মোট ১০০টি বেত্রাঘাত করা হয় তাঁকে। তবু তিনি ন্যায়ের পথ থেকে একচুলও নড়েননি।

আবারও প্রস্তাব, আবারও প্রত্যাখ্যান

সময় গড়ায়। ক্ষমতায় আসেন আব্বাসি খলিফা আবু জাফর আল-মানসুর। এবার তিনিও আবু হানিফা (রহ.)-কে একই পদের প্রস্তাব দেন। কিন্তু আবু হানিফা (রহ.) আগের মতোই দৃঢ়ভাবে নাকচ করেন এবং খলিফার রোষানলে পড়েন। খলিফা তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

কারাগারের জীবদ্দশায় খলিফা একদিন আবু হানিফা (রহ.)-কে ডেকে নেন এবং জিজ্ঞেস করেন, এ দায়িত্ব গ্রহণে কেন আপনি অনিচ্ছুক? তিনি জবাব দেন—আমি নিজেকে এ দায়িত্বের যোগ্য মনে করি না। তাঁর এ কথায় খলিফা ক্ষুব্ধ হন। বললেন, তুমি মিথ্যা বলছ! আবু হানিফা (রহ.) দৃঢ়ভাবে জবাব দেন, যদি আমি সত্য বলি, তবে আমি অযোগ্য; আর যদি মিথ্যা বলি, তবে আপনি একজন মিথ্যাবাদীকে বিচারপতি বানাতে চাচ্ছেন। খলিফা তাঁর এমন যুক্তিসংগত কথায় খুব বেশি ক্ষিপ্ত হন এবং তাঁকে পুনরায় কারাগারে বন্দী ও বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন।

খলিফার কথামতো বেত্রাঘাতসহ নানা নিপীড়ন শুরু হয় তাঁর ওপর। ফলে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অতঃপর ১৫০ হিজরিতে, বন্দিদশায়ই আপন প্রভুর সান্নিধ্যে গমন করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

তাঁর জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা

সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে, তবুও সত্য বলাই শ্রেয়। সম্মান বা পদ নয়, একজন মানুষের আসল পরিচয়—তার নীতি ও আদর্শ। ক্ষমতার মোহ সবাইকে পায় না; বরং কেউ হন ব্যতিক্রম, যিনি যুগে যুগে স্মরণীয় হয়ে থাকেন।

তথ্যসূত্র: উকুদুল জুমান ফি মানাকিবিল ইমাম আজম আবি হানিফা আন নুমান ও আল-খাইরাতুল হিসান ফি মানাকিবিল ইমাম আজম আবি হানিফা আন নুমান।

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অগ্নিকাণ্ড দেখলে মুমিনের করণীয় আমল

শাব্বির আহমদ
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ০১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

অগ্নিকাণ্ড মানবজীবনে একটি অপ্রত্যাশিত ও ভয়ংকর দুর্যোগ, যা মুহূর্তেই জান ও মালের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করে। এমন চরম বিপদের মুহূর্তে একজন মুমিনের কর্তব্য হলো, আগুন নেভানোর পার্থিব চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল করা। এই আমলগুলো কেবল মানসিক শক্তি জোগায় না, বরং আল্লাহর রহমতে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে।

১. উচ্চ স্বরে তাকবির দেওয়া: অগ্নিকাণ্ড দেখলে সর্বাগ্রে যে আমলটি রয়েছে, তা হলো তাকবির দেওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন কোথাও আগুন (লাগতে) দেখো, তখন (উচ্চ স্বরে) তাকবির দাও।’ (তাবরানি: ১ / ৩০৭)

২. কোরআনের আয়াত পাঠ: বিপদের সময় কোরআনের সাহায্য প্রার্থনা করা মুমিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। পবিত্র কোরআনে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যা আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য আগুনের ক্রিয়া নিস্তেজ করে দিয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের সময় এই আয়াতটি পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ: ‘ইয়া না-রু কু-নি বারদাও ওয়া সালামান আলা ইবরাহিম।’ অর্থ: ‘হে আগুন, তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া: ৬৯)

৩. আল্লাহর কাছে সাহায্য ও আজান: তাকবির এবং আয়াত পাঠের পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নেভানোর নিয়তে উচ্চ স্বরে আজান দেওয়াও অনেক আলেম উত্তম বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ আজানের ধ্বনিও শয়তানকে বিতাড়িত করে। এ ছাড়া, সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) ও তওবা করা জরুরি।

আগুন মানুষকে মুহূর্তেই নিঃস্ব করে দিতে পারে, কিন্তু মুমিন কখনো নিরাশ হয় না। কারণ সে জানে, সব বিপদের নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতেই। অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়ংকর দুর্যোগেও একজন ইমানদার আল্লাহর স্মরণে আশ্রয় নেয়, তাকবির ও কোরআনের আয়াত পাঠে মন স্থির রাখে এবং দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য কামনা করে। পার্থিব চেষ্টা ও আধ্যাত্মিক আমলের এই সমন্বয়ই হলো প্রকৃত ইমানদারের পথ। কেননা, আগুন নেভানোর যন্ত্র যেমন বাহ্যিক আগুন নেভায়, তেমনি আল্লাহর স্মরণ অন্তরের ভয় ও অস্থিরতা নিভিয়ে দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২০ অক্টোবর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৪ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৪১ মিনিট
ফজর০৪: ৪২ মিনিট০৫: ৫৭ মিনিট
জোহর১১: ৪৪ মিনিট০৩: ৫০ মিনিট
আসর০৩: ৫১ মিনিট০৫: ২৭ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৯ মিনিট০৬: ৪৩ মিনিট
এশা০৬: ৪৪ মিনিট০৪: ৪১ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত