মাওলানা শেখ তারেক হাসান মাহদী
আরবি ‘মিরাজ’ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন। লাইলাতুল মিরাজ বা মিরাজের রজনী উপমহাদেশে শবে মিরাজ হিসেবে পরিচিত। এই রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কুদরতিভাবে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেন এবং মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মিরাজের পটভূমি সম্পর্কে জ্ঞানীরা বলেছেন, জন্মের আগেই বাবাকে হারান প্রিয় নবী (সা.)। ৬ বছর বয়সে হারান মাকে। ৮ বছর বয়সে দাদার ইন্তেকালের পর তাঁর দায়িত্ব নেন পিতৃতুল্য চাচা আবু তালেব। তখন থেকে ৫৫ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৮ বছর ছায়ার মত নবীজির সঙ্গ দিয়েছেন আবু তালেব। নবুওয়াতের দশম বর্ষের রজব মাসে আবু তালেব মারা যান। এ দুঃখ নবীর হৃদয় চৌচির করে দেয়। এর ঠিক ৩ দিন পর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাও (রা.) ইন্তেকাল করেন। কষ্টের পর কষ্টের ঢেউ নবিজির হৃদয়ে আছড়ে পড়ে। এ জন্য ঐতিহাসিকগণ এ বছরকে ‘আমুল হুজন’ বা দুঃখ-কষ্টের বছর বলে অভিহিত করেছেন। একে তো স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে স্বগোত্রীয়দের বিরোধিতা নবীজির দাওয়াতি মিশনকে কঠিন করে তোলে। নবীজির পেরেশানি ও মনঃকষ্ট দূর করার জন্য মহান আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজের কাছে নিয়েই প্রিয় বন্ধুকে সান্ত্বনা দেবেন পরম যত্নে।
প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে বিশেষ নিরাপত্তায় প্রথমে বোরাক তারপর রফরফে চড়ে নবী (সা.) মিরাজে যান। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘মহিমান্বিত সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের এক অংশে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন তাঁর নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, যা চারপাশে আমি বরকতে পূর্ণ করে দিয়েছি। নিশ্চয়ই তিনি সব শোনেন ও সব দেখেন।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ১)
মিরাজ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, নবী (সা.) কর্তৃক সশরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় মেরাজ হয়েছে। হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) শুয়েছিলেন। হঠাৎ জিবরাইল (আ.) এসে তাঁকে জাগিয়ে বক্ষ মোবারক বিশেষ উপায়ে বিদারণ করে জমজমের পানি দিয়ে হৃদয় ধুয়ে হিকমতে পূর্ণ করে আবার প্রতিস্থাপন করেন। এরপর আনা হয় নবীজিকে বহন করার বিশেষ সওয়ারি। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়ার চেয়ে ছোট। নাম বোরাক। রং সাদা। এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির যে একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে। এভাবে নবী (সা.) মুহূর্তেই পৌঁছে যান বায়তুল মুকাদ্দাসে। বোরাক বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। যে পাথরে অপরাপর নবীগণ নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরাইল (আ.) নবীজির সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করলেন। একটি দুধের, অন্যটি মদের। নবীজি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন। জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি স্বভাবসিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন। আপনি যদি মদের পেয়ালা নিতেন, তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৩৯৪)
এরপর শুরু হলো ঊর্ধ্বজগতের সফর। জিবরাইল নবীজিকে নিয়ে চললেন। প্রথম আসমানে গিয়ে কড়া নাড়লেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? উত্তর দেওয়া হলো, আমি জিবরাইল। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? বললেন, মুহাম্মদ (সা.)। জিজ্ঞাসা করা হলো, তার কাছে কি আপনাকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। এরপর নবীজিকে সম্ভাষণ জানানো হলো—মারহাবা, উত্তম আগন্তুকের আগমন ঘটেছে। খুলে দেওয়া হলো নবীজির জন্য আসমানের দরজা।
নবীজি প্রথম আসমানে গেলেন। সেখানে ছিলেন হজরত আদম (আ.)। জিবরাইল পরিচয় করিয়ে দিলেন। নবীজি আদমকে সালাম বললেন। বাবা আদম জবাব দিলেন। নবীজিকে সাদর অভিবাদন জানালেন—মারহাবা, নেককার পুত্র ও নেককার নবী। হজরত আদম (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন। এরপর নবীজি উঠতে থাকলেন দ্বিতীয় আসমানের দিকে। সেখানে দেখতে পেলেন দুই ভাই হজরত ইসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.)-কে। তাদের সঙ্গে নবীজির সালাম বিনিময় হলো। তারা নবীজিকে স্বাগত জানালেন—মারহাবা, আমাদের পুণ্যবান ভাই এবং সজ্জন নবী। তাঁরা দোয়া করলেন। এরপর নবীজিকে তৃতীয় আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে দেখা হলো হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে। নবীজির সালাম ও কুশল বিনিময় করে বললেন, হজরত ইউসুফকে দুনিয়ার অর্ধেক সৌন্দর্য দেওয়া হয়েছে। এরপর চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। হজরত ইদরিস (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন। এরপর পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.)-এর সাক্ষাৎ হলো। এরপর ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.) এর সঙ্গে এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (রা.)-এর সঙ্গে দেখা হলো। জিবরাইল ফেরেশতা পরিচয় করিয়ে দিলেন, ইনি আপনার পিতা, সালাম করুন। নবীজি হজরত ইবরাহিমকে সালাম দিলেন। ইবরাহিম (আ.) তখন বায়তুল মামুরে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন।
এরপর নবীজিকে নিয়ে যাওয়া হলো সিদরাতুল মুনতাহায়। জিবরাইল বললেন, এটা সিদরাতুল মুনতাহা। এখানে চারটি নহর রয়েছে। দুটি অদৃশ্য আর দুটি দৃশ্যমান। নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন, দৃশ্যমান নদী দুটি কোনগুলো? জিবরাইল বললেন, অদৃশ্যমান দুটি জান্নাতে। আর দৃশ্যমান দুটি হলো দুনিয়ার নীলনদ ও ফোরাত নদী।
এরপর আল্লাহ তাআলার সঙ্গে নবীজির দেখা হলো। দিনরাতে উম্মতের জন্য ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। হজরত মুসা (আ.)-এর পরামর্শে নবীজি বারবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে সালাতের ওয়াক্ত ৫-এ নামিয়ে আনলেন। সর্বশেষ আল্লাহ বললেন, ‘হে হাবিব আমার, দিন-রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে প্রতিটি নামাজের বিনিময় ১০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব দেওয়া হবে। এভাবে বান্দা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩৮৮৭; মুসলিম, হাদিস: ১৬২,১৬৪)
মিরাজের পরদিন সকালে মক্কার কোনো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন হজরত আবু বকর (রা.)। কাফেররা তাঁকে উপহাস করে বলল, তোমার নবী দাবি করছে, এক রাতে এত কিছু ঘুরে এসেছে, এরপরও তুমি কি এসব বিশ্বাস করবে এবং তাকে সত্যবাদী বলবে? হজরত আবু বকরের হৃদয়ে ইমানের বহ্নিশিখা জ্বলে উঠল। তিনি এক বুক আস্থা নিয়ে সুদৃঢ় কণ্ঠে বলে বললেন, আমি তো এর চেয়েও আরও দূরের অনেক জটিল বিষয়েও তাঁকে বিশ্বাস করি। তাঁর কাছে আসা আসমানি বার্তাগুলোর ওপর রয়েছে আমার অটল বিশ্বাস ও সুদৃঢ় ইমান। এ ঘটনার পরই তাঁকে আস-সিদ্দিক উপাধি দেওয়া হয়। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৬২)
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক
আরবি ‘মিরাজ’ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন। লাইলাতুল মিরাজ বা মিরাজের রজনী উপমহাদেশে শবে মিরাজ হিসেবে পরিচিত। এই রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কুদরতিভাবে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেন এবং মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মিরাজের পটভূমি সম্পর্কে জ্ঞানীরা বলেছেন, জন্মের আগেই বাবাকে হারান প্রিয় নবী (সা.)। ৬ বছর বয়সে হারান মাকে। ৮ বছর বয়সে দাদার ইন্তেকালের পর তাঁর দায়িত্ব নেন পিতৃতুল্য চাচা আবু তালেব। তখন থেকে ৫৫ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৮ বছর ছায়ার মত নবীজির সঙ্গ দিয়েছেন আবু তালেব। নবুওয়াতের দশম বর্ষের রজব মাসে আবু তালেব মারা যান। এ দুঃখ নবীর হৃদয় চৌচির করে দেয়। এর ঠিক ৩ দিন পর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাও (রা.) ইন্তেকাল করেন। কষ্টের পর কষ্টের ঢেউ নবিজির হৃদয়ে আছড়ে পড়ে। এ জন্য ঐতিহাসিকগণ এ বছরকে ‘আমুল হুজন’ বা দুঃখ-কষ্টের বছর বলে অভিহিত করেছেন। একে তো স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে স্বগোত্রীয়দের বিরোধিতা নবীজির দাওয়াতি মিশনকে কঠিন করে তোলে। নবীজির পেরেশানি ও মনঃকষ্ট দূর করার জন্য মহান আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজের কাছে নিয়েই প্রিয় বন্ধুকে সান্ত্বনা দেবেন পরম যত্নে।
প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে বিশেষ নিরাপত্তায় প্রথমে বোরাক তারপর রফরফে চড়ে নবী (সা.) মিরাজে যান। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘মহিমান্বিত সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের এক অংশে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন তাঁর নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, যা চারপাশে আমি বরকতে পূর্ণ করে দিয়েছি। নিশ্চয়ই তিনি সব শোনেন ও সব দেখেন।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ১)
মিরাজ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, নবী (সা.) কর্তৃক সশরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় মেরাজ হয়েছে। হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) শুয়েছিলেন। হঠাৎ জিবরাইল (আ.) এসে তাঁকে জাগিয়ে বক্ষ মোবারক বিশেষ উপায়ে বিদারণ করে জমজমের পানি দিয়ে হৃদয় ধুয়ে হিকমতে পূর্ণ করে আবার প্রতিস্থাপন করেন। এরপর আনা হয় নবীজিকে বহন করার বিশেষ সওয়ারি। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়ার চেয়ে ছোট। নাম বোরাক। রং সাদা। এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির যে একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে। এভাবে নবী (সা.) মুহূর্তেই পৌঁছে যান বায়তুল মুকাদ্দাসে। বোরাক বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। যে পাথরে অপরাপর নবীগণ নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরাইল (আ.) নবীজির সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করলেন। একটি দুধের, অন্যটি মদের। নবীজি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন। জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি স্বভাবসিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন। আপনি যদি মদের পেয়ালা নিতেন, তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৩৯৪)
এরপর শুরু হলো ঊর্ধ্বজগতের সফর। জিবরাইল নবীজিকে নিয়ে চললেন। প্রথম আসমানে গিয়ে কড়া নাড়লেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? উত্তর দেওয়া হলো, আমি জিবরাইল। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? বললেন, মুহাম্মদ (সা.)। জিজ্ঞাসা করা হলো, তার কাছে কি আপনাকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। এরপর নবীজিকে সম্ভাষণ জানানো হলো—মারহাবা, উত্তম আগন্তুকের আগমন ঘটেছে। খুলে দেওয়া হলো নবীজির জন্য আসমানের দরজা।
নবীজি প্রথম আসমানে গেলেন। সেখানে ছিলেন হজরত আদম (আ.)। জিবরাইল পরিচয় করিয়ে দিলেন। নবীজি আদমকে সালাম বললেন। বাবা আদম জবাব দিলেন। নবীজিকে সাদর অভিবাদন জানালেন—মারহাবা, নেককার পুত্র ও নেককার নবী। হজরত আদম (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন। এরপর নবীজি উঠতে থাকলেন দ্বিতীয় আসমানের দিকে। সেখানে দেখতে পেলেন দুই ভাই হজরত ইসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.)-কে। তাদের সঙ্গে নবীজির সালাম বিনিময় হলো। তারা নবীজিকে স্বাগত জানালেন—মারহাবা, আমাদের পুণ্যবান ভাই এবং সজ্জন নবী। তাঁরা দোয়া করলেন। এরপর নবীজিকে তৃতীয় আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে দেখা হলো হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে। নবীজির সালাম ও কুশল বিনিময় করে বললেন, হজরত ইউসুফকে দুনিয়ার অর্ধেক সৌন্দর্য দেওয়া হয়েছে। এরপর চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। হজরত ইদরিস (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন। এরপর পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.)-এর সাক্ষাৎ হলো। এরপর ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.) এর সঙ্গে এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (রা.)-এর সঙ্গে দেখা হলো। জিবরাইল ফেরেশতা পরিচয় করিয়ে দিলেন, ইনি আপনার পিতা, সালাম করুন। নবীজি হজরত ইবরাহিমকে সালাম দিলেন। ইবরাহিম (আ.) তখন বায়তুল মামুরে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন।
এরপর নবীজিকে নিয়ে যাওয়া হলো সিদরাতুল মুনতাহায়। জিবরাইল বললেন, এটা সিদরাতুল মুনতাহা। এখানে চারটি নহর রয়েছে। দুটি অদৃশ্য আর দুটি দৃশ্যমান। নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন, দৃশ্যমান নদী দুটি কোনগুলো? জিবরাইল বললেন, অদৃশ্যমান দুটি জান্নাতে। আর দৃশ্যমান দুটি হলো দুনিয়ার নীলনদ ও ফোরাত নদী।
এরপর আল্লাহ তাআলার সঙ্গে নবীজির দেখা হলো। দিনরাতে উম্মতের জন্য ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। হজরত মুসা (আ.)-এর পরামর্শে নবীজি বারবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে সালাতের ওয়াক্ত ৫-এ নামিয়ে আনলেন। সর্বশেষ আল্লাহ বললেন, ‘হে হাবিব আমার, দিন-রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে প্রতিটি নামাজের বিনিময় ১০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব দেওয়া হবে। এভাবে বান্দা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩৮৮৭; মুসলিম, হাদিস: ১৬২,১৬৪)
মিরাজের পরদিন সকালে মক্কার কোনো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন হজরত আবু বকর (রা.)। কাফেররা তাঁকে উপহাস করে বলল, তোমার নবী দাবি করছে, এক রাতে এত কিছু ঘুরে এসেছে, এরপরও তুমি কি এসব বিশ্বাস করবে এবং তাকে সত্যবাদী বলবে? হজরত আবু বকরের হৃদয়ে ইমানের বহ্নিশিখা জ্বলে উঠল। তিনি এক বুক আস্থা নিয়ে সুদৃঢ় কণ্ঠে বলে বললেন, আমি তো এর চেয়েও আরও দূরের অনেক জটিল বিষয়েও তাঁকে বিশ্বাস করি। তাঁর কাছে আসা আসমানি বার্তাগুলোর ওপর রয়েছে আমার অটল বিশ্বাস ও সুদৃঢ় ইমান। এ ঘটনার পরই তাঁকে আস-সিদ্দিক উপাধি দেওয়া হয়। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৬২)
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক
বাংলা অঞ্চলের হাজার বছরের ইতিহাসে ধর্ম, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের যে সমন্বয় ঘটেছে, তার মধ্যে ইসলামি স্থাপত্য এক মহিমান্বিত অধ্যায়। কালের গহ্বরে কিছু নিদর্শন হারিয়ে গেলেও, আজও দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদের গম্বুজ, মাদ্রাসার মিনার কিংবা মাজারের কারুকাজ ইসলামের প্রসার ও সৃজনশীলতার এক অনুপম সাক্ষ্য বহন করে।
১২ ঘণ্টা আগেপৃথিবীতে আমরা কেউই চাপমুক্ত নই; দুশ্চিন্তা ও হতাশা সবারই থাকে। তবে এটি অস্বাভাবিক মাত্রায় হলে তা মানসিক রোগে রূপ নেয়, যা অনেক শারীরিক রোগেরও কারণ। তাই প্রতিটি মানুষের দুশ্চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। চিন্তামুক্ত থাকার জন্য কোরআন-হাদিসে বেশ কিছু আমলের কথা এসেছে। এখানে ৪টি আমলের কথা আলোচনা করছি।
১৩ ঘণ্টা আগেহিজরি সনের অষ্টম মাস শাবান। ইসলামে এ মাসের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক। মহানবী (সা.) রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রেখে রমজানের জন্য মানসিকভাবে তৈরি হতেন। এ মাসের মধ্যভাগে রয়েছে ফজিলতের রাত শবে বরাত।
১৩ ঘণ্টা আগেআরবি দাওয়াত শব্দের অর্থ ডাকা এবং তাবলিগ শব্দের অর্থ পৌঁছে দেওয়া। ইসলামের সুমহান বাণীর প্রচার-প্রসারের পদ্ধতিকেই দাওয়াত ও তাবলিগ বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। মুসলমানদের একটি দলকে অবশ্যই এই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে একটা...
১৩ ঘণ্টা আগে