Ajker Patrika

মোগলদের নির্মিত মসজিদগুলো যেন আজও বিস্ময়

মোখতারুল ইসলাম মিলন
মোগলদের নির্মিত মসজিদগুলো যেন আজও বিস্ময়

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে মোগল আমল এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ওই সময়ে মোগল শাসকেরা মুসলিম স্থাপত্যে অসাধারণ অবদান রেখেছিলেন, যার মধ্যে মসজিদ অন্যতম। মোগল আমলে নির্মিত মসজিদগুলো কেবল ইবাদতের স্থান হিসেবে নয়, বরং শিল্প ও স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। আজও মোগল আমলে নির্মিত মসজিদগুলো মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বহন করে চলেছে।

মোগল আমলে নির্মিত মসজিদগুলোর স্থাপত্যশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য হলো বিশাল গম্বুজ, সুসজ্জিত মিহরাব, সুউচ্চ মিনার এবং পাথরের উৎকৃষ্ট কারুকাজ। মসজিদের দেয়ালে প্রায়ই আরবি ক্যালিগ্রাফি ও পবিত্র কোরআনের আয়াত অঙ্কিত থাকত। ওই সময়ে নির্মিত মসজিদগুলোতে সাধারণত সাদা মার্বেল, লাল বেলে পাথর এবং বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান রঙিন পাথর ব্যবহার করা হতো, যা মসজিদের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে তুলত।

বাদশাহি মসজিদ, লাহোর

সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক নির্মিত বাদশাহি মসজিদ লাহোরে অবস্থিত এবং এটি মোগল স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এর বিশাল প্রাঙ্গণ ও সুউচ্চ গম্বুজগুলো মসজিদটিকে এক জাঁকজমকপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। লাল বেলে পাথর ও মার্বেল দিয়ে নির্মিত এই মসজিদটি সৌন্দর্য ও স্থায়িত্বের এক অনন্য নিদর্শন।

Jama-Masjid,-Delhi

জামে মসজিদ, দিল্লি

সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত দিল্লির জামে মসজিদ মোগল আমলের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৬৫৬ সালে নির্মিত এই মসজিদটির চমৎকার কারুকাজ, বিশাল গম্বুজ এবং সুউচ্চ মিনারগুলো ইসলামি স্থাপত্যের অসামান্য উদাহরণ। লাল বেলে পাথর ও সাদা মার্বেলের ব্যবহার মসজিদটিকে এক অনন্য রূপ দিয়েছে।

মোতি-মসজিদ,-আগ্রা

মোতি মসজিদ, আগ্রা

আগ্রার লাল কেল্লার ভেতরে অবস্থিত মোতি মসজিদটি সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত। মসজিদটির নির্মাণে সম্পূর্ণ সাদা মার্বেল ব্যবহৃত হয়েছে, যা এর নামকরণের পেছনে প্রভাব ফেলেছে ‘মোতি’ অর্থাৎ মুক্তার মতো উজ্জ্বল। এর নির্মাণশৈলী অত্যন্ত নিখুঁত এবং প্রতিটি অংশে মার্বেলের অসাধারণ কারুকাজ দেখতে পাওয়া যায়।

মোগল মসজিদের গঠনশৈলী

মোগল আমলের মসজিদগুলোতে সাধারণত তিনটি বড় গম্বুজ, নামাজের জন্য বিস্তৃত স্থান এবং একটি বিশাল প্রাঙ্গণ থাকত। মিনারের সংখ্যা মসজিদের আকার অনুসারে হতো এবং প্রতিটি মিনারে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা হতো। মিহরাব অংশটিকে সুসজ্জিত করার জন্য মার্বেল বা মূল্যবান পাথর ব্যবহৃত হতো। নামাজের স্থানের জন্য বিস্তৃত জায়গা এবং প্রাঙ্গণের চারপাশে খোলা স্থান রাখা হতো, যাতে বড় জনসমাগম হতে পারে।

মোগল মসজিদগুলোতে ইসলামি ভাবধারা গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়। তাদের নির্মাণশৈলীতে আধ্যাত্মিকতা এবং নান্দনিকতা মিশ্রিত হয়েছিল, যা মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর প্রতি মোগলদের আন্তরিক ভালোবাসার প্রকাশ। মসজিদগুলো কেবল ইবাদতের জায়গা হিসেবে নয়, বরং শিক্ষাকেন্দ্র ও সমাজের মিলনস্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। এর ফলে মসজিদগুলো মুসলিম সংস্কৃতি ও ইসলামি সভ্যতার প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মোগল আমলের মসজিদগুলো ইসলামি স্থাপত্যশৈলীর এক বিশেষ নিদর্শন, যা সেই সময়ের শিল্প এবং ধর্মীয় অনুভূতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। মোগল আমলে নির্মিত মসজিদগুলো আজও ইতিহাস, শিল্প এবং সংস্কৃতির সাক্ষী হিসেবে অটুট আছে। এগুলো কেবল ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, বরং মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিশ্ববাসীর জন্য খোলা রেখেছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, শরীফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ত্রীর সঙ্গে ভালোবাসার গভীরতা বাড়াবে যে সুন্নাহ

শাব্বির আহমদ
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে পারিবারিক সম্পর্ক, সফর, নেতৃত্ব ও সাহচর্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ ও সুন্নাহ।

মহানবী (সা.)-এর পারিবারিক জীবনে দেখা যায়, তিনি স্ত্রীদের মর্যাদা দিতেন, তাঁদের মতামত গ্রহণ করতেন এবং প্রয়োজনীয় সফরে তাঁদের কাউকে সঙ্গী করতেন। শুধু দাম্পত্য সম্পর্ক নয়, বরং নবীজির সফরসঙ্গী হিসেবে স্ত্রীর উপস্থিতি ছিল শিক্ষা, পরামর্শ ও সম্মান প্রদর্শনের নিদর্শন।

ষষ্ঠ হিজরিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বনি মুস্তালিক মতান্তরে মুরাইসি যুদ্ধে যান, তখন স্ত্রীদের মধ্য থেকে হজরত আয়েশা (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে যান। এই যুদ্ধের আগে পর্দার বিধান নাজিল হয়েছিল। হজরত আয়েশা (রা.)-কে উটের পিঠে পালকির ওপর বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই যুদ্ধে হজরত আয়েশা (রা.)-কে বড় অপবাদও দেওয়া হয়েছিল, যার প্রতিবাদে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করেছেন। (সহিহ বুখারি)

এ ছাড়া অন্যান্য সফরে অন্য স্ত্রীদের সঙ্গে নেওয়ার কথাও হাদিসে এসেছে। হুদাইবিয়ার সন্ধির সফরে নবীপত্নী উম্মে সালামা (রা.) তাঁর সঙ্গে ছিলেন। কুরাইশদের সঙ্গে এই সন্ধি করতে রাজি ছিলেন না অনেক সাহাবি, তাই এই চুক্তির পর সাহাবিরা বিমর্ষ ছিলেন। হজরত উম্মে সালামা (রা.)-এর পরামর্শেই তাঁদের শান্ত করেছিলেন মহানবী (সা.)। (সহিহ বুখারি)

সফরে স্ত্রীকে সঙ্গে নেওয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি সুস্পষ্ট সুন্নত, যা তিনি শুধু প্রেম-ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নয়, বরং পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় রাখার একটি পন্থা হিসেবেও পালন করতেন। আজকের দিনে এই সুন্নাহগুলো শুধু জানলে হবে না, চর্চাও করতে হবে, যেন আমাদের দাম্পত্যজীবনে ভালোবাসার গভীরতা বৃদ্ধি পায়। পরিবারে নেমে আসে অনাবিল শান্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ০৫ মিনিট
ফজর০৫: ০৬ মিনিট০৬: ২৫ মিনিট
জোহর১১: ৪৯ মিনিট০৩: ৩৪ মিনিট
আসর০৩: ৩৫ মিনিট০৫: ১০ মিনিট
মাগরিব০৫: ১২ মিনিট০৬: ৩০ মিনিট
এশা০৬: ৩১ মিনিট০৫: ০৫ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুকুরকে পানি পান করিয়ে আল্লাহর ক্ষমা পেয়েছিলেন যে নারী

কাউসার লাবীব
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৮
পানি পান করছে একটি কুকুর। ছবি: সংগৃহীত
পানি পান করছে একটি কুকুর। ছবি: সংগৃহীত

আমাদের নবী করিম (সা.) মানুষের মাঝে দয়ার বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ওপর মক্কার কাফিররা শত অত্যাচার করার পরও তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি ইসলামকে ঘোষণা দিয়েছিলেন শান্তির ধর্ম হিসেবে। তাঁর ঐতিহাসিক বাণী—‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ: ৪৯৪১)

নবীজি (সা.) এই দয়া শুধু মানুষের প্রতিই দেখাননি, প্রাণিকুলের প্রতিও তিনি ছিলেন সদয়। এক সাহাবি বর্ণনা করেন, আমরা এক সফরে ছিলাম। নবী করিম (সা.) সাময়িকভাবে দূরে গেলে আমরা একটি পাখি ও তার দুটি ছানা ধরে ফেলি। মা পাখিটি আমাদের ওপর চক্কর দিয়ে ডানা ঝাপটে কষ্ট প্রকাশ করছিল। নবীজি (সা.) ফিরে এসে বললেন, ‘কে এই পাখিটিকে কষ্ট দিয়েছে? তার ছানাগুলো ফিরিয়ে দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ)

প্রাণীদের কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য নবীজি (সা.) সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো চড়ুইকে অযথা হত্যা করল, সেই চড়ুই কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে উঁচু স্বরে ফরিয়াদ করে বলবে—হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তি আমাকে অযথা হত্যা করেছিল।’ (সুনানে নাসায়ি: ৪৪৪৭)

অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, যে কোনো প্রাণীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, আল্লাহ তাকে বিচারের মুখোমুখি করবেন। (সুনানে নাসায়ি)

কুকুর পাহারা ও শিকারে উপকারী প্রাণী। কোরআনের সুরা কাহাফে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী কিছু যুবক যখন নিপীড়ন থেকে পালিয়ে গুহায় আশ্রয় নেয়, তাদের সঙ্গী ছিল একটি কুকুর। তবে বিনা প্রয়োজনে কুকুর নিজ ঘরে পুষতে নিরুৎসাহিত করেছে ইসলাম। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই নির্যাতনের অনুমতি দেয়নি। বরং এসব অবলা প্রাণীকে খাবার দেওয়ার মধ্যে রয়েছে অনেক সওয়াব। রয়েছে ক্ষমার ঘোষণা।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। পানির পিপাসা তাকে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে তার ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ থেকে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল) এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো।’ (সহিহ বুখারি: ৩৩২১)

অন্য এক হাদিসে প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলার জন্য এক নারীকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করানো হয়েছে মর্মে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেওয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলাটি ওই কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খানাপিনা কিছুই করায়নি এবং ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।’ (সহিহ বুখারি ৩৪৮২)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তালাকের পরও স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা যায় যেভাবে

মুফতি শাব্বির আহমদ
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০৬
স্বামী-স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত
স্বামী-স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মানবজীবনের অন্যতম পবিত্র ও মধুর বন্ধন। এটি নিছক আকদ নয়; বরং ভালোবাসা, সহানুভূতি, দায়িত্ববোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্ক। একটি আদর্শ দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি তৈরি হয় পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং একে অপরকে বুঝে নেওয়ার মানসিকতার মাধ্যমে। স্বামী যেন স্ত্রীর শ্রেষ্ঠ আশ্রয় হয়, আর স্ত্রী যেন স্বামীর প্রশান্তির উৎস হয়; এটাই ইসলামের শিক্ষা।

সংসারজীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভালোবাসার মর্যাদা ব্যাপক। দাম্পত্য জীবনে উত্তম আচার-আচরণে রয়েছে সওয়াব, কল্যাণ ও ভালোবাসার হাতছানি। আল্লাহ তাআলা বিয়েকে একটি পবিত্র বন্ধন বানিয়েছেন। বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক, বংশ বৃদ্ধি, গুনাহ মুক্তিসহ অনেক ভালো বিষয় রয়েছে।

তবে অপ্রত্যাশিতভাবে কখনো কখনো ভুল-বোঝাবুঝি বা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে স্বামী-স্ত্রীর এই মধুর বন্ধন ভেঙে যায়। তাঁদের মধ্যে হয়ে যায় তালাক বা বিচ্ছেদ। এরপর ভুল বুঝতে পেরে স্ত্রীকে আবার অনেকে ফিরিয়ে আনতে চান। আর এ ক্ষেত্রে ইসলামের সঠিক বিধান না জানার কারণে অনেকেই ভুল করে বসেন। গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়েন।

তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার সঠিক পদ্ধতি নির্ভর করে তালাকের প্রকার ও পরিস্থিতির ওপর। ইসলামের পরিভাষা অনুযায়ী তালাকের প্রকার ও পদ্ধতি বিষয়ে আমরা জেনে নিলে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।

তালাকের প্রকার ও বিধান

ক. তালাকে রাজয়ি: এটি হলো তিন তালাকের মধ্যে প্রথম বা দ্বিতীয় তালাক। স্বামী যদি প্রথম বা দ্বিতীয়বার তালাক দেয় এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই স্ত্রীকে ফেরত নিতে চায়, তাহলে এই প্রকারে পড়বে।

এ ক্ষেত্রে দুটি বৈধ পদ্ধতি আছে:

  • ১. মৌখিকভাবে রুজু ঘোষণা: স্বামী বলবে, আমি তোমাকে ফেরত নিলাম, আমি তোমার সঙ্গে সংসার করতে চাই। অথবা এমন কিছু বাক্য ইত্যাদি।
  • ২. কার্যত রুজু (রাতবাস): স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে সহবাস করা বা সহবাসের নিয়তে স্পষ্টভাবে সংসার শুরু করা, এটাও রুজু হিসেবে গৃহীত হয়।

এই রুজু করার জন্য নতুন করে স্ত্রীকে বিয়ে করতে হবে না এবং স্ত্রী বা অভিভাবকের সম্মতি লাগবে না। কারণ, তালাকে রাজয়িতে ইদ্দতের সময় পর্যন্ত স্ত্রী স্বামীর অধীনে থাকে।

খ. তালাকে বাইন: এই তালাক হলো যেখানে তালাকের পর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীকে তালাকে বাইন দেয় বা শর্তযুক্ত তালাক অথবা খোলা করে। তখন ফেরত নিতে চাইলে মোহরসহ নতুনভাবে বিয়ে করতে হবে। এটি করা যাবে প্রথম বা দ্বিতীয় তালাকের পর। তৃতীয় তালাক দিলে, আবার বিয়ে করেও ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে নিচের বিধানটি কার্যকর হবে।

গ. তালাকে মুগাল্লাজা (তৃতীয় তালাক বা একত্রে ৩ তালাক): এ ক্ষেত্রে সরাসরি রুজু বা পুনরায় বিয়ে করার কোনো সুযোগ নেই। কেবল হিল্লা শরয়ি, অর্থাৎ অন্য স্বামীর সঙ্গে বৈধভাবে বিয়ে করে সংসার করার পর যদি সে তালাক দেয় বা মারা যায়, তাহলে ইদ্দত পালনের পরই প্রথম স্বামী পুনরায় বিয়ে করতে পারবে।

তালাকের ইদ্দত হলো তিন হায়েজ। যদি হায়েজ না আসে, তাহলে তিন মাস। আর গর্ভাবস্থায় হলে সন্তান জন্ম পর্যন্ত।

তথ্যসূত্র: সুরা বাকারা: ২২৮, সুরা তালাক: ৪, সহিহ্ বুখারি: ৫২৬১, সহিহ্ মুসলিম: ১৪০৭, ফাতাওয়া আলমগিরি: ১/৩৭৩

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত