Ajker Patrika

যা শিখিয়ে গেল মাহে রমজান

আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
Thumbnail image

চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল পুণ্যের বসন্তকাল মাহে রমজান। রমজান এমনই এক বরকতময় মাস, যার কোনো তুলনাই হয় না। একটি নেক আমল করলে সত্তরের অধিক প্রতিদান আর কোন মাসে পাওয়া যায়? এ জন্যই মাহে রমজানের বিয়োগব্যথায় মুমিনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে। চোখের কোণ থেকে গড়িয়ে পড়ছে তপ্ত বারি। অনুশোচনার বীণায় সুর ওঠে—আহা! চোখের পলকেই কেটে গেল পবিত্র রমজান। 

মাহে রমজানের সংযম সাধনার মাধ্যমে যাঁরা নিজেদের গুনাহগুলো ক্ষমা করাতে পেরেছেন, তাঁদের উপমা সদ্য ভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশুর মতো। রমজানের মাধ্যমে যে শুভ্র-সফেদ আত্মার অধিকারী হয়েছেন, তা যেন গুনাহর কালো দাগে জর্জরিত না হয়, সে জন্য রমজানের আমলগুলো আজীবন ধরে রাখতে হবে। মনে রাখবেন নেক কাজের প্রতিদান হলো, নেক কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আর পাপ কাজের অভিশাপ হলো, অব্যাহতভাবে পাপ কাজ করে যাওয়া।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনগণ, যারা তাদের নামাজে বিনীত এবং যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ১-৩) হাদিসে বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তির সুন্দর মুসলিম হওয়ার এক নিদর্শন, অর্থহীন কাজ ত্যাগ করা।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ২৩১৭) 

এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পাপমুক্তির যে সনদ অর্জিত হয়েছে, তার সংরক্ষণেই যাবতীয় পাপ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। উদাসীন জীবনযাপন করা যাবে না। একইভাবে ইবাদতে গুরুত্ব না দেওয়া, বেচাকেনায় লোক ঠকানো, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা, অশালীন চলাফেরা ইত্যাদি কাজে জড়ালে রমজানে যে নিষ্পাপ চরিত্রের সনদ অর্জিত হয়েছে, তার পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই সেই সনদ অক্ষুণ্ন রাখতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে তেমনই কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:

গুনাহমুক্ত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা
গুনাহ করলে রোজা নষ্ট হয়ে যায়, রোজা যেন নষ্ট না হয়, তার জন্য আমরা গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছি। এমনিভাবে পুরো জীবন গুনাহমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। মুমিনের অভ্যাস হলো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। গুনাহর প্রতি মনোভাব মানুষকে কুফরিতে নিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের সংশোধনের দায়িত্ব তোমাদের নিজেদেরই ওপর। তোমরা যদি সঠিক পথ অবলম্বন করো, তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে, সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর কাছেই তোমাদের সবার ফিরে আসা। এরপর তিনি সে সম্পর্কে জানাবেন, যা তোমরা করতে।’ (সুরা মায়েদা: ১০৫) 

গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর শরণ
আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এ জন্য চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। হাদিসে চমৎকার একটি দোয়ার কথা বলা হয়েছে। দোয়াটি হলো, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাওরি বাদাল কাওফুর।’ অর্থ, হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে ভালোর পর মন্দে পতিত হওয়া থেকে পানাহ চাই। (তিরমিজি: ৩৪৩৯) 

আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক সংস্কারেও আমাদের নজর দিতে হবে। একইভাবে অনাথ, অসুস্থদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এক মাস রোজা রেখে আমরা ক্ষুধার জ্বালা অনুধাবন করেছি। তাই রোজার পরেও অভুক্তদের মুখে আহার তুলে দেওয়াই হবে রোজা থেকে কিছু শিখতে পারার নিদর্শন। 
 
তাহাজ্জুদ নামাজের অভ্যাস 
দিনে রোজা আর রাতে তারাবি ও তাহাজ্জুদ ছিল মাহে রমজানের আমল। রমজানের পরে তারাবি না থাকলেও তাহাজ্জুদের আমল জারি রাখতে হবে। ভুলে গেলে হবে না, প্রবৃত্তির তাড়না মানুষকে গুনাহের দিকে ধাবিত করে। ফলে মানুষ কামনা-বাসনার বশবর্তী হয়ে গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। সেই তাড়নার প্রতিবন্ধক তাহাজ্জুদ। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তাহাজ্জুদের সালাত তোমাদের ওপর বিধিবদ্ধ করে নাও। কারণ, তা নেক বান্দাদের অভ্যাস ও ঐতিহ্য। তোমাদের প্রভুর নৈকট্য লাভের উপায়, গুনাহগুলোর কাফফারা এবং পাপ কাজের প্রতিবন্ধক।’ (তিরমিজি: ৩০৮০) 

সত্যবাদিতা অবলম্বন
রমজানে আমরা মিথ্যা বলিনি। মিথ্যা বললে রোজার প্রাণ নষ্ট হয়ে যায়। এখন কি মিথ্যা বলা যাবে? কখনোই নয়। রমজান মূলত মানুষকে সত্যবাদী হওয়ার শিক্ষা দেয়। সত্যবাদিতা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, মাগফিরাত ও জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা পুণ্য ও নেক আমলের পথ দেখায়, আর নেক আমল জান্নাতের পথ দেখায়। সত্য বলতে বলতে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সিদ্দিক বা নিরেট সত্যবাদী হিসেবে পরিগণিত হয়। আর মিথ্যা পাপের পথ দেখায়। পাপ পাপীকে জাহান্নামে নিয়ে ফেলে এবং মিথ্যা বলতে বলতে ব্যক্তি আল্লাহর খাতায় কাযযাব বা চরম মিথ্যুক বলে পরিচিত হয়।’ (বুখারি: ৬০৯৪) 

গুনাহ হয়ে গেলে তওবাই সমাধান
অভিশপ্ত শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কোনো গুনাহে জড়িয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নিতে হবে। কেননা গুনাহ মাফের একমাত্র ওষুধ হলো তওবা। এ জন্য আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাকে তওবা করার  নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে মুমিনেরা, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো, 
নিশ্চয়ই তোমরা সফলকাম হবে।’ 
(সুরা আন নুর: ৩১) 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত