Ajker Patrika

বৃষ্টির সময় নবীজির আমল ও মুমিনের করণীয়

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বৃষ্টি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অফুরন্ত রহমতের নিদর্শন। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ দুনিয়ায় কল্যাণ ও রিজিকের ব্যবস্থা করেন। পানি জীবন ও প্রাণের আদি উৎস। ভূপৃষ্ঠের চার ভাগের তিন ভাগই পানি।

পৃথিবী বাসযোগ্য হওয়ার জন্য পানি ও নদ-নদীর অপরিহার্যতা বিষয়ে আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘বল তো, কে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তার স্থিতির জন্য পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন? অতএব, আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।’ (সুরা নামল: ৬১)

মেঘ ও বৃষ্টিপাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ থেকে বারি বর্ষণ দ্বারা মৃতপ্রায় ধরিত্রীকে পুনর্জীবিত করেন; তাতে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তার ঘটান; এতে ও বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং আকাশ পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা: ১৬৪)। ‘আর তিনি আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা তোমাদের জীবিকাস্বরূপ ফলমূল উৎপাদন করেন।’ (সুরা বাকারা: ২২)

বৃষ্টির সময় মুসলমানের বেশ কিছু করণীয় আমল রয়েছে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এ করণীয়গুলো সুস্পষ্ট। নিম্নে বৃষ্টির দিনে রাসুল (সা.)-এর আমলের আলোকে মুমিনের করণীয় আমলগুলো তুলে ধরা হলো—

কল্যাণের দোয়া করা

যখন বৃষ্টি হয় তখন বৃষ্টি থেকে উপকার পেতে দোয়া করা জরুরি। বৃষ্টি শুরু হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) কল্যাণ ও উপকার পেতে তিন শব্দের ছোট্ট একটি দোয়া বেশি বেশি পড়তেন। তা হলো, ‘আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিআ’। অর্থ, ‘হে আল্লাহ, আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারী হয়।’ (সহিহ্ বুখারি ও সুনানে নাসায়ি)

এ দোয়া পড়লে আল্লাহ তাআলা বৃষ্টির ক্ষতিকর দিকগুলো দূর করে দেবেন এবং কল্যাণকর ও উপকারী বৃষ্টি দান করবেন।

বৃষ্টিতে অল্প সময় ভেজা

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে বৃষ্টির অনেক উপকারিতার কথা তুলে ধরেছেন। বৃষ্টি মানুষের জন্য রহমতস্বরূপ। আল্লাহর রহমত ও বরকত পেতে কিছু সময় বৃষ্টিতে ভেজার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) সঙ্গে থাকাকালীন সময়ে একবার বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরনের কাপড়ের কিছু অংশ তুলে ধরলেন যাতে করে তাঁর শরীরে কিছুটা বৃষ্টির পানি পড়ে। এ রকম করার কারণ জানতে চাইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এটা (বৃষ্টি) এইমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।’ (সহিহ্ মুসলিম)

বৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাওয়া

ঝড়-বৃষ্টির ভারী বর্ষণের ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে দোয়া করাও সুন্নত। দীর্ঘ এক হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জুমার দিন দারুল কাজার (বিচার করার স্থান) দিকের দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। এ সময় আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন।

লোকটি আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দান করেন।

তখন আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই হাত তুলে (তিনবার) দোয়া করলেন, ‘আল্লাহুম্মাসকিনা, আল্লাহুম্মাসকিনা, আল্লাহুম্মাসকিনা।’ অর্থ, ‘হে আল্লাহ, আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদের বৃষ্টি দান করুন।’ হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম, আমরা তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মেঘ নেই, মেঘের সামান্য টুকরোও নেই। অথচ সালআ পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোনো ঘরবাড়িও ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ সালআর ওই পাশ থেকে ঢালের মতো মেঘ উঠে এল এবং মধ্য আকাশে এসে ছড়িয়ে পড়ল। অতঃপর প্রচুর বর্ষণ হতে লাগল। আল্লাহর কসম, আমরা ছয় দিন সূর্য দেখতে পাইনি।’ এর পরের জুমায় সে দরজা দিয়ে এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। আল্লাহর রাসুল (সা.) তখন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। লোকটি তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি বৃষ্টি বন্ধের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) তখন দুই হাত তুলে (এভাবে) দোয়া করলেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা, আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল জিবালি ওয়াল আজামি ওয়াজ্ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাজারি।’ অর্থ, ‘হে আল্লাহ, আমাদের আশপাশে, আমাদের ওপর নয়। হে আল্লাহ, টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।’

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘তখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা বেরিয়ে রোদে চলতে লাগলাম।’

উপকারী বৃষ্টির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে আল্লাহর কাছে এ বৃষ্টি সবার জন্য উপকারী হতে কিংবা বৃষ্টি বন্ধ হলে আল্লাহর কাছে এ দোয়া করা সুন্নত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘যে ব্যক্তি (বৃষ্টির পর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের) এই দোয়া পাঠ করে, সে আমাকে বিশ্বাস করে আর তারকায় (তারার শক্তিতে) অবিশ্বাস করে। তা হলো, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহি।’ অর্থ, ‘আমরা আল্লাহর দয়া ও করুণার বৃষ্টি লাভ করেছি।’ (সহিহ্ বুখারি ও সহিহ্ মুসলিম)।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের বৃষ্টির সময় ও বৃষ্টি পরবর্তী সময়ে হাদিসে নির্দেশিত সুন্নত যথাযথভাবে পালন করা উচিত।

লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত