মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে পাঠানোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানবজাতিকে গোমরাহির অন্ধকার থেকে হিদায়াতের মাধ্যমে আলোর পথে নিয়ে আসা এবং পৃথিবীবাসীর ওপর চেপে বসা শোষণমূলক আইন ও সমাজব্যবস্থাকে পরাজিত করে আল্লাহর নির্দেশিত শোষণহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিৃষ্ঠা করা। (সুরা মায়েদা: ১৫-১৬; সুরা তাওবা: ৩৩) এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মহানবী (সা.) যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে আরবের বিভিন্ন গোত্র ও তৎকালীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ লেখায় তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
আবিসিনিয়ায় হিজরত
নবুয়তি মিশন শুরু করার পরপরই ইসলামের অনুসারীরা মক্কাবাসীর তুমুল বিরোধিতা ও নির্যাতনের মুখে পড়েন। এতে তাঁদের জীবনযাত্রা ও ধর্মীয় অনুশাসন পালন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হলে মহানবী (সা.) তাঁর কিছু অনুসারীকে দুই ধাপে আবিসিনিয়ায় (বর্তমান ইথিওপিয়া অঞ্চলে) পাঠিয়ে দেন। হিজরতের জন্য নির্বাচিত এই দল গঠন করা হয়েছিল নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, যুবক-বৃদ্ধ, অভিজাত ও নিম্নবংশীয় সবাইকে নিয়ে, যেন বহির্বিশ্বের মানুষ বুঝতে পারে, লিঙ্গ-বয়স-শ্রেণি-পেশানির্বিশেষে সব ধরনের মানুষের কাছে ইসলাম গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তৎকালীন পৃথিবীর রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, হিজরতের জন্য আবিসিনিয়াই ছিল সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। কারণ সেখানে কোনো আরব গোত্রের বসবাস ছিল না। সেখানকার রাজা ন্যায়পরায়ণ ছিলেন এবং আবিসিনিয়া ছিল সেকালের দুই পরাশক্তির প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন দেশ। ফলে একদিকে সেখানে মুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা যেমন ছিল, তেমনি তার সঙ্গে ব্যবসায়িক, সামরিক ও রাজনৈতিক মিত্রতা প্রতিষ্ঠারও সমূহ সম্ভাবনা ছিল। অনুসারীদের জুলুম থেকে বাঁচাতে এবং চাপে পড়ে ইসলাম ত্যাগ করা থেকে রক্ষা করতে আবিসিনিয়ায় পাঠানোর এমন বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপকে সিরাত বিশ্লেষকেরা মহানবী (সা.)-এর অসামান্য কূটনৈতিক দক্ষতা বলে অভিহিত করেছেন।
আকাবার শপথ ও মদিনায় হিজরত
পৌত্তলিকদের উপর্যুপরি বিরোধিতার কারণে মক্কায় থেকে নবুয়তি মিশন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে তিনি মদিনায় হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। গবেষকদের মতে, হিজরতের জন্য মদিনাকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো মদিনার লোকজনের অতিথিপরায়ণতা এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তার প্রাকৃতিক উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। মদিনার পশ্চিম ও পূর্ব দিকে ছিল দুর্গম প্রস্তরময় ভূমি। দক্ষিণ দিকে ছিল দীর্ঘ ও ঘন খেজুরবাগান, যা ভেদ করে মদিনায় আক্রমণ করা অসম্ভব। শুধু উত্তর দিকের অংশটি খোলা ছিল, যেখানে মহানবী (সা.) পরিখা খনন করে মদিনাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত দুর্গে পরিণত করেছিলেন। মদিনায় যাওয়ার আগে তিনি সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিকবার গোপন বৈঠক করে তাঁর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার ওয়াদা নেন, ইতিহাসে যা আকাবার শপথ নামে পরিচিত। এই নিখুঁত পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নকে গবেষকেরা মহানবীর কূটনৈতিক দক্ষতা বলে অভিহিত করেছেন। (আস সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ)
মদিনা সনদ
মদিনায় হিজরতের পর মহানবী প্রথমে মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে দেন এবং ইসলামের সুমহান নীতি সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে চলা আন্তঃগোত্রীয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটান। মদিনায় বসবাসরত সব গোত্রের মধ্যে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৪৭ মতান্তরে ৫৩ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিত। এই সনদ একদিকে মদিনায় ঐক্য ও শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মদিনাকে নিরাপদ করে তোলে, অন্যদিকে মহানবীকে মদিনাবাসীর অদ্বিতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই পুরো প্রক্রিয়া তিনি সব ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে সম্পূর্ণ কূটনৈতিকভাবে আঞ্জাম দেন।
হুদাইবিয়ার সন্ধি
হুদাইবিয়ার সন্ধি হলো মহানবী (সা.) ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এই চুক্তিকে মহানবীর সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক বিজয় বলা হয়। পবিত্র কোরআনেও এটাকে ফাতহে মুবিন বা স্পষ্ট বিজয় বলা হয়েছে। (সুরা ফাতাহ: ১) মদিনায় যাওয়ার পর থেকে মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে মুসলমানদের একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আরবে মুসলমানদের শক্তি জানান দেওয়ার জন্য এসব যুদ্ধের খুব প্রয়োজনও ছিল। তবে যুদ্ধের ব্যস্ততা কমিয়ে আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলাম প্রচার করা, আরবের বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইসলামের পয়গাম পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার জন্য কুরাইশদের সঙ্গে একটা যুদ্ধবিরতির খুব প্রয়োজন ছিল। মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্রকাঠামো মজবুত করার জন্যও এর প্রয়োজন ছিল। হুদাইবিয়ার সন্ধি সেই সুযোগ করে দেয়। চুক্তির কয়েকটি ধারা আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মনে হওয়ায় সাহাবিদের কেউ কেউ তা মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু রাসুল (সা.) চুক্তি প্রসঙ্গে অনড় থাকেন। সন্ধির কল্যাণে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে মক্কা-মদিনার মধ্যে যাতায়াত শুরু হয়। বিনা বাধায় অমুসলিমরা নবীজির কাছে আসা-যাওয়া করতে থাকেন। এর সুবাদে ইসলামের ব্যাপারে ছড়ানো অপপ্রচারের অসারতা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইতিহাসবিদেরা বলেন, এ সময় অধিকসংখ্যক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন।
বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে চিঠি
হুদাইবিয়ার সন্ধির ফলে দাওয়াতের পথ মসৃণ হয়। এই সুযোগে মহানবী (সা.) ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বিশ্বনেতাদের কাছে চিঠি লেখেন। দূত হিসেবে দাহইয়া কালবি, আমর ইবনে উমাইয়া, আবদুল্লাহ ইবনে হুজাইফার মতো সুদর্শন ও সমীহ জাগানিয়া ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকজনের বাছাই করেন। গবেষকদের মতে, মহানবীর চিঠি পাঠানোর এই পদক্ষেপ ইসলামের দাওয়াতের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক সাহসী কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল।
সূত্র:
১. মাজাল্লাতুল জামিয়া আল মাদানিয়্যাহ।
২. আল লুলুউল মাকনুন ফি সিরাতিন নাবিয়্যিল মামুন।
৩. সিরাতে ইবনে হিশাম।
৪. সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া।
৫. ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে পাঠানোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানবজাতিকে গোমরাহির অন্ধকার থেকে হিদায়াতের মাধ্যমে আলোর পথে নিয়ে আসা এবং পৃথিবীবাসীর ওপর চেপে বসা শোষণমূলক আইন ও সমাজব্যবস্থাকে পরাজিত করে আল্লাহর নির্দেশিত শোষণহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিৃষ্ঠা করা। (সুরা মায়েদা: ১৫-১৬; সুরা তাওবা: ৩৩) এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মহানবী (সা.) যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে আরবের বিভিন্ন গোত্র ও তৎকালীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ লেখায় তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
আবিসিনিয়ায় হিজরত
নবুয়তি মিশন শুরু করার পরপরই ইসলামের অনুসারীরা মক্কাবাসীর তুমুল বিরোধিতা ও নির্যাতনের মুখে পড়েন। এতে তাঁদের জীবনযাত্রা ও ধর্মীয় অনুশাসন পালন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হলে মহানবী (সা.) তাঁর কিছু অনুসারীকে দুই ধাপে আবিসিনিয়ায় (বর্তমান ইথিওপিয়া অঞ্চলে) পাঠিয়ে দেন। হিজরতের জন্য নির্বাচিত এই দল গঠন করা হয়েছিল নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, যুবক-বৃদ্ধ, অভিজাত ও নিম্নবংশীয় সবাইকে নিয়ে, যেন বহির্বিশ্বের মানুষ বুঝতে পারে, লিঙ্গ-বয়স-শ্রেণি-পেশানির্বিশেষে সব ধরনের মানুষের কাছে ইসলাম গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তৎকালীন পৃথিবীর রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, হিজরতের জন্য আবিসিনিয়াই ছিল সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। কারণ সেখানে কোনো আরব গোত্রের বসবাস ছিল না। সেখানকার রাজা ন্যায়পরায়ণ ছিলেন এবং আবিসিনিয়া ছিল সেকালের দুই পরাশক্তির প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন দেশ। ফলে একদিকে সেখানে মুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা যেমন ছিল, তেমনি তার সঙ্গে ব্যবসায়িক, সামরিক ও রাজনৈতিক মিত্রতা প্রতিষ্ঠারও সমূহ সম্ভাবনা ছিল। অনুসারীদের জুলুম থেকে বাঁচাতে এবং চাপে পড়ে ইসলাম ত্যাগ করা থেকে রক্ষা করতে আবিসিনিয়ায় পাঠানোর এমন বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপকে সিরাত বিশ্লেষকেরা মহানবী (সা.)-এর অসামান্য কূটনৈতিক দক্ষতা বলে অভিহিত করেছেন।
আকাবার শপথ ও মদিনায় হিজরত
পৌত্তলিকদের উপর্যুপরি বিরোধিতার কারণে মক্কায় থেকে নবুয়তি মিশন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে তিনি মদিনায় হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। গবেষকদের মতে, হিজরতের জন্য মদিনাকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো মদিনার লোকজনের অতিথিপরায়ণতা এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তার প্রাকৃতিক উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। মদিনার পশ্চিম ও পূর্ব দিকে ছিল দুর্গম প্রস্তরময় ভূমি। দক্ষিণ দিকে ছিল দীর্ঘ ও ঘন খেজুরবাগান, যা ভেদ করে মদিনায় আক্রমণ করা অসম্ভব। শুধু উত্তর দিকের অংশটি খোলা ছিল, যেখানে মহানবী (সা.) পরিখা খনন করে মদিনাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত দুর্গে পরিণত করেছিলেন। মদিনায় যাওয়ার আগে তিনি সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিকবার গোপন বৈঠক করে তাঁর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার ওয়াদা নেন, ইতিহাসে যা আকাবার শপথ নামে পরিচিত। এই নিখুঁত পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নকে গবেষকেরা মহানবীর কূটনৈতিক দক্ষতা বলে অভিহিত করেছেন। (আস সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ)
মদিনা সনদ
মদিনায় হিজরতের পর মহানবী প্রথমে মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে দেন এবং ইসলামের সুমহান নীতি সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে চলা আন্তঃগোত্রীয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটান। মদিনায় বসবাসরত সব গোত্রের মধ্যে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৪৭ মতান্তরে ৫৩ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিত। এই সনদ একদিকে মদিনায় ঐক্য ও শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মদিনাকে নিরাপদ করে তোলে, অন্যদিকে মহানবীকে মদিনাবাসীর অদ্বিতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই পুরো প্রক্রিয়া তিনি সব ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে সম্পূর্ণ কূটনৈতিকভাবে আঞ্জাম দেন।
হুদাইবিয়ার সন্ধি
হুদাইবিয়ার সন্ধি হলো মহানবী (সা.) ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এই চুক্তিকে মহানবীর সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক বিজয় বলা হয়। পবিত্র কোরআনেও এটাকে ফাতহে মুবিন বা স্পষ্ট বিজয় বলা হয়েছে। (সুরা ফাতাহ: ১) মদিনায় যাওয়ার পর থেকে মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে মুসলমানদের একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আরবে মুসলমানদের শক্তি জানান দেওয়ার জন্য এসব যুদ্ধের খুব প্রয়োজনও ছিল। তবে যুদ্ধের ব্যস্ততা কমিয়ে আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলাম প্রচার করা, আরবের বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইসলামের পয়গাম পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার জন্য কুরাইশদের সঙ্গে একটা যুদ্ধবিরতির খুব প্রয়োজন ছিল। মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্রকাঠামো মজবুত করার জন্যও এর প্রয়োজন ছিল। হুদাইবিয়ার সন্ধি সেই সুযোগ করে দেয়। চুক্তির কয়েকটি ধারা আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মনে হওয়ায় সাহাবিদের কেউ কেউ তা মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু রাসুল (সা.) চুক্তি প্রসঙ্গে অনড় থাকেন। সন্ধির কল্যাণে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে মক্কা-মদিনার মধ্যে যাতায়াত শুরু হয়। বিনা বাধায় অমুসলিমরা নবীজির কাছে আসা-যাওয়া করতে থাকেন। এর সুবাদে ইসলামের ব্যাপারে ছড়ানো অপপ্রচারের অসারতা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইতিহাসবিদেরা বলেন, এ সময় অধিকসংখ্যক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন।
বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে চিঠি
হুদাইবিয়ার সন্ধির ফলে দাওয়াতের পথ মসৃণ হয়। এই সুযোগে মহানবী (সা.) ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বিশ্বনেতাদের কাছে চিঠি লেখেন। দূত হিসেবে দাহইয়া কালবি, আমর ইবনে উমাইয়া, আবদুল্লাহ ইবনে হুজাইফার মতো সুদর্শন ও সমীহ জাগানিয়া ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকজনের বাছাই করেন। গবেষকদের মতে, মহানবীর চিঠি পাঠানোর এই পদক্ষেপ ইসলামের দাওয়াতের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক সাহসী কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল।
সূত্র:
১. মাজাল্লাতুল জামিয়া আল মাদানিয়্যাহ।
২. আল লুলুউল মাকনুন ফি সিরাতিন নাবিয়্যিল মামুন।
৩. সিরাতে ইবনে হিশাম।
৪. সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া।
৫. ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ এবং মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়; বরং মুমিনের আত্মিক প্রশান্তি, চারিত্রিক পরিশুদ্ধি ও জীবনের ভারসাম্য রক্ষার একটি মহান উপায়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।
৮ ঘণ্টা আগেআমাদের দৈনন্দিন জীবনে নতুন কাপড় কেনা ও তা পরিধান করা একটি সাধারণ ঘটনা। কেউ ঈদের জন্য কেনে, কেউ বিয়ে-সাদির জন্য, কেউ বা নিজের প্রয়োজনে। নতুন কাপড় কিনে পরিধান করার সময় দোয়া পড়লে আল্লাহর বিশেষ রহমত পাওয়া যায়।
১ দিন আগেসপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য একটি সাপ্তাহিক ঈদের মতো, যা আত্মশুদ্ধি, ইবাদত এবং কল্যাণ অর্জনের বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। এই বরকতময় দিনে কী কী করণীয় তা জানা এবং তা মেনে চলা একজন মুমিনের দায়িত্ব।
২ দিন আগেমানুষের জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্তগুলোর একটি হলো আপনজন হারানোর বেদনা। এমন শোকের সময় মানুষ থাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, দুর্বল ও অনেকটা একা। ঠিক তখনই সে আশায় থাকে কারও সহানুভূতির, সান্ত্বনার কিংবা একটু অনুভব করার মতো মানবিক উপস্থিতির। এই বিপদ ও কষ্টের সময়টিতে...
২ দিন আগে