Ajker Patrika

মহানবীর বড় ৫ কূটনৈতিক সাফল্য

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
মহানবীর বড় ৫ কূটনৈতিক সাফল্য

পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে পাঠানোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানবজাতিকে গোমরাহির অন্ধকার থেকে হিদায়াতের মাধ্যমে আলোর পথে নিয়ে আসা এবং পৃথিবীবাসীর ওপর চেপে বসা শোষণমূলক আইন ও সমাজব্যবস্থাকে পরাজিত করে আল্লাহর নির্দেশিত শোষণহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিৃষ্ঠা করা। (সুরা মায়েদা: ১৫-১৬; সুরা তাওবা: ৩৩) এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মহানবী (সা.) যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে আরবের বিভিন্ন গোত্র ও তৎকালীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ লেখায় তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। 

আবিসিনিয়ায় হিজরত
নবুয়তি মিশন শুরু করার পরপরই ইসলামের অনুসারীরা মক্কাবাসীর তুমুল বিরোধিতা ও নির্যাতনের মুখে পড়েন। এতে তাঁদের জীবনযাত্রা ও ধর্মীয় অনুশাসন পালন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হলে মহানবী (সা.) তাঁর কিছু অনুসারীকে দুই ধাপে আবিসিনিয়ায় (বর্তমান ইথিওপিয়া অঞ্চলে) পাঠিয়ে দেন। হিজরতের জন্য নির্বাচিত এই দল গঠন করা হয়েছিল নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, যুবক-বৃদ্ধ, অভিজাত ও নিম্নবংশীয় সবাইকে নিয়ে, যেন বহির্বিশ্বের মানুষ বুঝতে পারে, লিঙ্গ-বয়স-শ্রেণি-পেশানির্বিশেষে সব ধরনের মানুষের কাছে ইসলাম গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তৎকালীন পৃথিবীর রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, হিজরতের জন্য আবিসিনিয়াই ছিল সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। কারণ সেখানে কোনো আরব গোত্রের বসবাস ছিল না। সেখানকার রাজা ন্যায়পরায়ণ ছিলেন এবং আবিসিনিয়া ছিল সেকালের দুই পরাশক্তির প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন দেশ। ফলে একদিকে সেখানে মুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা যেমন ছিল, তেমনি তার সঙ্গে ব্যবসায়িক, সামরিক ও রাজনৈতিক মিত্রতা প্রতিষ্ঠারও সমূহ সম্ভাবনা ছিল। অনুসারীদের জুলুম থেকে বাঁচাতে এবং চাপে পড়ে ইসলাম ত্যাগ করা থেকে রক্ষা করতে আবিসিনিয়ায় পাঠানোর এমন বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপকে সিরাত বিশ্লেষকেরা মহানবী (সা.)-এর অসামান্য কূটনৈতিক দক্ষতা বলে অভিহিত করেছেন। 

আকাবার শপথ ও মদিনায় হিজরত 
পৌত্তলিকদের উপর্যুপরি বিরোধিতার কারণে মক্কায় থেকে নবুয়তি মিশন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে তিনি মদিনায় হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। গবেষকদের মতে, হিজরতের জন্য মদিনাকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো মদিনার লোকজনের অতিথিপরায়ণতা এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তার প্রাকৃতিক উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। মদিনার পশ্চিম ও পূর্ব দিকে ছিল দুর্গম প্রস্তরময় ভূমি। দক্ষিণ দিকে ছিল দীর্ঘ ও ঘন খেজুরবাগান, যা ভেদ করে মদিনায় আক্রমণ করা অসম্ভব। শুধু উত্তর দিকের অংশটি খোলা ছিল, যেখানে মহানবী (সা.) পরিখা খনন করে মদিনাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত দুর্গে পরিণত করেছিলেন। মদিনায় যাওয়ার আগে তিনি সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিকবার গোপন বৈঠক করে তাঁর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার ওয়াদা নেন, ইতিহাসে যা আকাবার শপথ নামে পরিচিত। এই নিখুঁত পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নকে গবেষকেরা মহানবীর কূটনৈতিক দক্ষতা বলে অভিহিত করেছেন। (আস সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ) 

মদিনা সনদ 
মদিনায় হিজরতের পর মহানবী প্রথমে মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে দেন এবং ইসলামের সুমহান নীতি সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে চলা আন্তঃগোত্রীয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটান। মদিনায় বসবাসরত সব গোত্রের মধ্যে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৪৭ মতান্তরে ৫৩ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিত। এই সনদ একদিকে মদিনায় ঐক্য ও শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মদিনাকে নিরাপদ করে তোলে, অন্যদিকে মহানবীকে মদিনাবাসীর অদ্বিতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই পুরো প্রক্রিয়া তিনি সব ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে সম্পূর্ণ কূটনৈতিকভাবে আঞ্জাম দেন। 

হুদাইবিয়ার সন্ধি 
হুদাইবিয়ার সন্ধি হলো মহানবী (সা.) ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এই চুক্তিকে মহানবীর সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক বিজয় বলা হয়। পবিত্র কোরআনেও এটাকে ফাতহে মুবিন বা স্পষ্ট বিজয় বলা হয়েছে। (সুরা ফাতাহ: ১) মদিনায় যাওয়ার পর থেকে মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে মুসলমানদের একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আরবে মুসলমানদের শক্তি জানান দেওয়ার জন্য এসব যুদ্ধের খুব প্রয়োজনও ছিল। তবে যুদ্ধের ব্যস্ততা কমিয়ে আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলাম প্রচার করা, আরবের বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইসলামের পয়গাম পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার জন্য কুরাইশদের সঙ্গে একটা যুদ্ধবিরতির খুব প্রয়োজন ছিল। মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্রকাঠামো মজবুত করার জন্যও এর প্রয়োজন ছিল। হুদাইবিয়ার সন্ধি সেই সুযোগ করে দেয়। চুক্তির কয়েকটি ধারা আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মনে হওয়ায় সাহাবিদের কেউ কেউ তা মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু রাসুল (সা.) চুক্তি প্রসঙ্গে অনড় থাকেন। সন্ধির কল্যাণে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে মক্কা-মদিনার মধ্যে যাতায়াত শুরু হয়। বিনা বাধায় অমুসলিমরা নবীজির কাছে আসা-যাওয়া করতে থাকেন। এর সুবাদে ইসলামের ব্যাপারে ছড়ানো অপপ্রচারের অসারতা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইতিহাসবিদেরা বলেন, এ সময় অধিকসংখ্যক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। 

বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে চিঠি 
হুদাইবিয়ার সন্ধির ফলে দাওয়াতের পথ মসৃণ হয়। এই সুযোগে মহানবী (সা.) ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বিশ্বনেতাদের কাছে চিঠি লেখেন। দূত হিসেবে দাহইয়া কালবি, আমর ইবনে উমাইয়া, আবদুল্লাহ ইবনে হুজাইফার মতো সুদর্শন ও সমীহ জাগানিয়া ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকজনের বাছাই করেন। গবেষকদের মতে, মহানবীর চিঠি পাঠানোর এই পদক্ষেপ ইসলামের দাওয়াতের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক সাহসী কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। 

সূত্র: 
১. মাজাল্লাতুল জামিয়া আল মাদানিয়্যাহ। 
২. আল লুলুউল মাকনুন ফি সিরাতিন নাবিয়্যিল মামুন। 
৩. সিরাতে ইবনে হিশাম। 
৪. সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া। 
৫. ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ। 

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

মাহমুদ হাসান ফাহিম 
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৪১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মানসিক অশান্তি থাকলে কোনো কাজেই মন বসে না। সারাক্ষণ অস্থিরতা বিরাজ করে। কাজে স্থিরতা আসার পূর্বশর্ত হলো মানসিক শান্তি। কোরআন-সুন্নাহয় এই অশান্তি বা অস্থিরতা ভাব দূর করার অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।

১. ‘আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরজু, ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা আইন, ওয়া আসলিহ লি শানি কুল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে রহমত (মনের প্রশান্তি) চাই। আপনি এক মুহূর্তও আমাকে নফসের ওপর ছেড়ে দিয়েন না। বরং আপনিই আমার সমস্ত বিষয় ঠিক করে দিন। আপনি ছাড়া (মনের অস্থিরতা ও বিপদ থেকে রক্ষাকারী) কোনো ইলাহ নেই।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫০০২)

২. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।’ অর্থ: ‘মহান, সহনশীল আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আরশের অধিপতি, মহান আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আসমান ও জমিনের রব এবং সম্মানিত আরশের রব আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। (সহিহ্ মুসলিম: ৬৬৭২)

৩. ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজান, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবন, ওয়া জিলাইদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশান থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই।’ (সহিহ্ বুখারি: ২৬৯৪)

৪. ‘আল্লাহু, আল্লাহু রাব্বি; লা উশরিকু বিহি শাইআ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রভু, আল্লাহ। আমি আপনার সঙ্গে কাউকে শরিক করি না।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৫)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোনো কারণে মনে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে উল্লিখিত দোয়াগুলো পড়া। এতে মনের অস্থিরতা ও পেরেশান দূর হবে ইনশা আল্লাহ।

লেখক: মাদ্রাসাশিক্ষক, টঙ্গী, গাজীপুর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৭ অক্টোবর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৪৪ মিনিট
ফজর০৪: ৪৫ মিনিট০৬: ০০ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৪৫ মিনিট
আসর০৩: ৪৬ মিনিট০৫: ২২ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৪ মিনিট০৬: ৩৮ মিনিট
এশা০৬: ৩৯ মিনিট০৪: ৪৪ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—

চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট

সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—

খুলনা: ০৩ মিনিট

রাজশাহী: ০৭ মিনিট

রংপুর: ০৮ মিনিট

বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল্লাহর সঙ্গে লাভজনক ব্যবসা, মুনাফা যেখানে জান্নাত

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের অভাব পূরণের প্রয়োজন থেকে ব্যবসার উৎপত্তি। সুপ্রাচীন কাল থেকে ব্যবসা বৈধ জীবিকা নির্বাহের এক অনন্য উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যবসা শুধু একটি পেশা নয়, গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন (সুরা বাকারা: ২৭৫)

পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত ব্যবসায়ের অসংখ্য ধরন বা শ্রেণি বিদ্যমান। কিন্তু মানুষের মধ্যে দুই ধরনের ব্যবসা থাকতে পারে:

এক. বস্তুগত ব্যবসা, যা দুনিয়াবি প্রয়োজন পূরণে একে অপরের সঙ্গে করে থাকে।

দুই. আধ্যাত্মিক ব্যবসা, যা আত্মার সন্তুষ্টির জন্য মহান আল্লাহর সঙ্গে হয়।

মহান আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ব্যবসা করা নিঃসন্দেহে ইবাদতের একটি অংশ। তা ছাড়া মুনাফা অর্জনের অভিপ্রায়ে লাভজনক খাতে মূলধন, শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করা হয়। ফলস্বরূপ লাভ এবং ক্ষতির আশঙ্কা থাকে প্রায় সমান।

কিন্তু পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এমন এক ব্যবসার সুসংবাদ দিয়েছেন, যেখানে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই—আছে লাভ আর লাভ। সুরা সফফাতের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’

অর্থাৎ কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সঙ্গে ব্যবসার মূলধন হিসেবে তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেছেন:

এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনা। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং তদনুযায়ী আমল এই ব্যবসার শ্রেষ্ঠ মূলধন।

দুই. দ্বীনি কাজে ধন-সম্পদ ব্যয় করা। আপাতদৃষ্টিতে দ্বীনের জন্য সম্পদ ব্যয়ের ফলে মনে হয় তা কমেছে। কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে আর্থিক এই ব্যবসা ক্ষতিবিহীন এবং অন্তহীন, যা দুনিয়া এবং আখিরাতের সম্পদকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে; যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির: ২৯)

তিন. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। জিহাদ নিয়ে বর্তমান সমাজে ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। কিন্তু জিহাদ বলতে কেবল যুদ্ধকেই বোঝানো হয় না। বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টা। যেমন, নিজের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান এবং দ্বীনের জন্য নিজের জীবন কিংবা নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করা অথবা দ্বীনকে রক্ষা করার অন্য যেকোনো প্রচেষ্টা জিহাদের অংশ।

যেকোনো ব্যবসায় ক্রেতা অপরিহার্য। তবে বান্দা এবং রবে এই ব্যবসায় ক্রেতা যিনি, তিনি হলেন মহান আল্লাহ। তিনি কী কিনে নিচ্ছেন এবং বিনিময়ে আমরা কী লাভ করছি, তা সুরা তওবার ১১১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও মালকে জান্নাতের বিনিময়ে।’

মহান রবের সঙ্গে ব্যবসার লাভ এবং উপকারিতা সম্পর্কে সুরা সফফাতের ১২ নম্বর আয়াতে তিনি আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য।’

ব্যবসায়ের চিরাচরিত ঝুঁকি থাকলেও খোদার সঙ্গে লেনদেনে কোনো প্রকার ঝুঁকি নেই। নিশ্চিত লাভের আশায় মুমিনগণ আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে নিভৃতে ইবাদত করে। ওয়াল্লাহি মুমিনদের জন্য এর থেকে বড় ব্যবসা একটিও নেই।

লেখক: শারমিন আক্তার, শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিশুদের নৈতিক বিকাশে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব

ইসলাম ডেস্ক 
দাদা ও নাতি। ছবি: সংগৃহীত
দাদা ও নাতি। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বিকশিত হলে তার মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সমাজবোধ, সুষ্ঠু আচরণ, সততা, সত্যবাদিতা ও সময়নিষ্ঠতার শিক্ষালাভ করে। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে, ফলে সে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এ জন্য প্রথমেই দরকার শিশুর পরিবারের সবার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষাদান।

শিশু সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় তার পরিবারের সঙ্গে। এ জন্য পরিবারের সবার করণীয় শিশুর সঙ্গে ইসলামিক ভাবধারার আচরণ করা, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য গল্পের মাধ্যমে শোনানো, আল্লাহভীতি সৃষ্টি করা, আল্লাহর ৯৯ নামের অর্থ ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।

এ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা নিয়মিত নামাজ, রোজা, কোরআন পাঠ, সত্য ও সদাচরণ করলে শিশুরা তা অনুসরণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধ যদি শেখানো যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে আলোকিত ও দায়িত্বশীল। শিক্ষকেরা যদি নিজেদের আচরণের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার উদাহরণ দিতে পারেন, তবে সে প্রভাব অনেক গভীর হবে।

বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ শিশু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। ছোট থেকেই ভিডিও গেমস ও অন্যান্য কনটেন্ট দেখায় তাদের আচার-আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে, যা তাদের মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কিন্তু ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বেড়ে উঠলে তার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারা জাগ্রত হয়, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মস্তিষ্ক ও আত্মাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এটি তাকে শেখায় কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কীভাবে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয় এবং কীভাবে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝে এগিয়ে যেতে হয়।

একটি সমাজ তখনই সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয়, যখন সে সমাজের শিশুরা নৈতিক গুণাবলি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে গড়ে ওঠে। এ শিক্ষা শুধু আখিরাতের জন্য কল্যাণকর নয়; বরং দুনিয়ার জীবনকেও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। তাই সমাজের সব স্তরে শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: রাখি আক্তার, শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত