আমজাদ ইউনুস
রাসুল (সা.) সাহাবিদের তিনজন নেককার ব্যক্তির গল্প শুনিয়েছিলেন। হাদিসের ভাষ্যে স্পষ্টভাবে তাঁদের নাম ও বাসস্থানের কথা উল্লেখ নেই। তবে তাঁরা যে বনি ইসরাইলের লোক ছিলেন, এ কথার উল্লেখ আছে। এ গল্পে আল্লাহর ভয়, মা–বাবার প্রতি সদাচার, দোয়ার শক্তি এবং সৎকর্মের মহত্ত্ব ফুটে উঠেছে। হাদিসের আলোকে পুরো গল্পটি এবং এর শিক্ষা এখানে তুলে ধরা হলো—
একদিন তিন ব্যক্তি হেঁটে চলছিলেন। এমন সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে তাঁরা এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করেন। হঠাৎ একটি পাথর গড়িয়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা একজন আরেকজনকে বললেন, ‘তোমরা যেসব আমল করেছ, তার মধ্যে উত্তম আমলকে অসিলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’
তাঁদের একজন বললেন, ‘হে আল্লাহ, আমার অতিবৃদ্ধ মা–বাবা ছিলেন, আমি (প্রতিদিন সকালে) মেষ চরাতে বের হতাম। তারপর ফিরে এসে দুধ দোহন করতাম এবং এ দুধ নিয়ে আমার মা-বাবার কাছে উপস্থিত হতাম। তাঁরা তা পান করতেন। তারপরে আমি শিশুদের, পরিজনদের এবং স্ত্রীকে পান করতে দিতাম। এক রাতে আমি আটকা পড়ে যাই। তারপর আমি যখন এলাম, তখন তাঁরা দুজনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম না। আর তখন শিশুরা আমার পায়ের কাছে (ক্ষুধায়) চিৎকার করছিল। এ অবস্থায়ই আমার ও মা-বাবার ফজর হয়ে গেল। হে আল্লাহ, তুমি যদি জানো তা আমি কেবল তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় করেছিলাম, তা হলে তুমি আমাদের গুহার মুখ এতটুকু ফাঁক করে দাও, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পারি।’
দোয়া শেষে গুহার মুখ একটু ফাঁকা হয়ে গেল।
দ্বিতীয়জন বললেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি জানো যে, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে অনেক ভালোবাসতাম, যেমন একজন পুরুষ একজন নারীকে ভালোবেসে থাকে। সে আমাকে বলেছিল—যতক্ষণ না তুমি আমাকে এক শ দিনার দেবে, ততক্ষণ আমার কাছ থেকে সেই মনস্কামনা পূরণ করতে পারবে না। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। তারপর যখন আমি তার দুই পায়ের মাঝে বসি, তখন সে বলে ওঠে—আল্লাহকে ভয় করো। বৈধ অধিকার ছাড়া মহরকৃত বস্তুর সিল ভাঙবে না। এতে আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়ি। (হে আল্লাহ) তুমি যদি জানো যে আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করেছিলাম, তবে আমাদের সামনে থেকে পাথরটি আরও একটু সরিয়ে দাও।’
তখন গুহামুখের পাথরটি দুই-তৃতীয়াংশ সরে গেল।
এরপর তৃতীয়জন বললেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি জানো যে, এক ফারাক (পরিমাণের একক) শস্য দানার বিনিময়ে আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। আমি তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। তারপর আমি সেই এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু কিনি এবং রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলল—হে আল্লাহর বান্দা, আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি বললাম—এই গরুগুলো ও রাখাল নিয়ে যাও। সে বলল—তুমি কি আমার সঙ্গে উপহাস করছ? আমি বললাম—আমি উপহাস করছি না; বরং এসব তোমার। হে আল্লাহ, তুমি যদি জানো যে আমি তা তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশে করেছি, তবে আমাদের গুহামুখটি উন্মুক্ত করে দাও।’
তখন আল্লাহর কুদরতে গুহামুখ থেকে পাথরটি সরে গেল এবং তা পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে গেল। (সহিহ্ বুখারি, হাদিস: ২২১৫)
গল্পের ৪ শিক্ষা
সৎকর্মের অসিলায় দোয়া করা বৈধ: সৎকর্মকে মাধ্যম বানিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা বৈধ। যেমন, এই তিন ব্যক্তি তাদের সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তাঁদের মুক্তি দিয়েছিলেন।
বিপদে দোয়া করা উচিত: সংকট ও বিপদে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। তিনি বান্দাদের দোয়া করতে আদেশ দিয়েছেন। যারা দোয়া করে না, তিনি তাদের ওপর রাগান্বিত হন।
মা-বাবার প্রতি সদাচার: মা-বাবার প্রতি সদাচার সর্বোত্তম সৎকর্মগুলোর একটি। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সংকট থেকে মুক্তির উপায়।
অন্যের অধিকার সংরক্ষণ: অন্যের অধিকার সংরক্ষণ করা, শ্রমিকের মজুরি সঠিকভাবে দেওয়া এবং তা রক্ষা করা সব মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। এ ঘটনায় মালিক শ্রমিকের মজুরি সংরক্ষণ করেছিল এবং লাভসহ তা ফিরিয়ে দিয়েছিল। এটি তার সততা ও বিশ্বস্ততার নিদর্শন।
রাসুল (সা.) সাহাবিদের তিনজন নেককার ব্যক্তির গল্প শুনিয়েছিলেন। হাদিসের ভাষ্যে স্পষ্টভাবে তাঁদের নাম ও বাসস্থানের কথা উল্লেখ নেই। তবে তাঁরা যে বনি ইসরাইলের লোক ছিলেন, এ কথার উল্লেখ আছে। এ গল্পে আল্লাহর ভয়, মা–বাবার প্রতি সদাচার, দোয়ার শক্তি এবং সৎকর্মের মহত্ত্ব ফুটে উঠেছে। হাদিসের আলোকে পুরো গল্পটি এবং এর শিক্ষা এখানে তুলে ধরা হলো—
একদিন তিন ব্যক্তি হেঁটে চলছিলেন। এমন সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে তাঁরা এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করেন। হঠাৎ একটি পাথর গড়িয়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা একজন আরেকজনকে বললেন, ‘তোমরা যেসব আমল করেছ, তার মধ্যে উত্তম আমলকে অসিলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’
তাঁদের একজন বললেন, ‘হে আল্লাহ, আমার অতিবৃদ্ধ মা–বাবা ছিলেন, আমি (প্রতিদিন সকালে) মেষ চরাতে বের হতাম। তারপর ফিরে এসে দুধ দোহন করতাম এবং এ দুধ নিয়ে আমার মা-বাবার কাছে উপস্থিত হতাম। তাঁরা তা পান করতেন। তারপরে আমি শিশুদের, পরিজনদের এবং স্ত্রীকে পান করতে দিতাম। এক রাতে আমি আটকা পড়ে যাই। তারপর আমি যখন এলাম, তখন তাঁরা দুজনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম না। আর তখন শিশুরা আমার পায়ের কাছে (ক্ষুধায়) চিৎকার করছিল। এ অবস্থায়ই আমার ও মা-বাবার ফজর হয়ে গেল। হে আল্লাহ, তুমি যদি জানো তা আমি কেবল তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় করেছিলাম, তা হলে তুমি আমাদের গুহার মুখ এতটুকু ফাঁক করে দাও, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পারি।’
দোয়া শেষে গুহার মুখ একটু ফাঁকা হয়ে গেল।
দ্বিতীয়জন বললেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি জানো যে, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে অনেক ভালোবাসতাম, যেমন একজন পুরুষ একজন নারীকে ভালোবেসে থাকে। সে আমাকে বলেছিল—যতক্ষণ না তুমি আমাকে এক শ দিনার দেবে, ততক্ষণ আমার কাছ থেকে সেই মনস্কামনা পূরণ করতে পারবে না। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। তারপর যখন আমি তার দুই পায়ের মাঝে বসি, তখন সে বলে ওঠে—আল্লাহকে ভয় করো। বৈধ অধিকার ছাড়া মহরকৃত বস্তুর সিল ভাঙবে না। এতে আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়ি। (হে আল্লাহ) তুমি যদি জানো যে আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করেছিলাম, তবে আমাদের সামনে থেকে পাথরটি আরও একটু সরিয়ে দাও।’
তখন গুহামুখের পাথরটি দুই-তৃতীয়াংশ সরে গেল।
এরপর তৃতীয়জন বললেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি জানো যে, এক ফারাক (পরিমাণের একক) শস্য দানার বিনিময়ে আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। আমি তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। তারপর আমি সেই এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু কিনি এবং রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলল—হে আল্লাহর বান্দা, আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি বললাম—এই গরুগুলো ও রাখাল নিয়ে যাও। সে বলল—তুমি কি আমার সঙ্গে উপহাস করছ? আমি বললাম—আমি উপহাস করছি না; বরং এসব তোমার। হে আল্লাহ, তুমি যদি জানো যে আমি তা তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশে করেছি, তবে আমাদের গুহামুখটি উন্মুক্ত করে দাও।’
তখন আল্লাহর কুদরতে গুহামুখ থেকে পাথরটি সরে গেল এবং তা পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে গেল। (সহিহ্ বুখারি, হাদিস: ২২১৫)
গল্পের ৪ শিক্ষা
সৎকর্মের অসিলায় দোয়া করা বৈধ: সৎকর্মকে মাধ্যম বানিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা বৈধ। যেমন, এই তিন ব্যক্তি তাদের সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তাঁদের মুক্তি দিয়েছিলেন।
বিপদে দোয়া করা উচিত: সংকট ও বিপদে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। তিনি বান্দাদের দোয়া করতে আদেশ দিয়েছেন। যারা দোয়া করে না, তিনি তাদের ওপর রাগান্বিত হন।
মা-বাবার প্রতি সদাচার: মা-বাবার প্রতি সদাচার সর্বোত্তম সৎকর্মগুলোর একটি। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সংকট থেকে মুক্তির উপায়।
অন্যের অধিকার সংরক্ষণ: অন্যের অধিকার সংরক্ষণ করা, শ্রমিকের মজুরি সঠিকভাবে দেওয়া এবং তা রক্ষা করা সব মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। এ ঘটনায় মালিক শ্রমিকের মজুরি সংরক্ষণ করেছিল এবং লাভসহ তা ফিরিয়ে দিয়েছিল। এটি তার সততা ও বিশ্বস্ততার নিদর্শন।
রোজার মৌখিক নিয়ত যেকোনো ভাষায় হতে পারে। একান্ত আরবি ভাষায় হওয়া জরুরি নয়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১ / ৩৭৮)। বরং যারা আরবি বোঝে না, তাদের জন্য আরবিতে নিয়ত না করাই কর্তব্য। কারণ নিয়ত পড়া জরুরি নয়, নিয়ত করাই জরুরি।
৮ ঘণ্টা আগে‘জ্ঞানের তরে শহীদ’ উপাধি পাওয়া এবং বিশ্ববিশ্রুত হাদিস গ্রন্থ ‘সহিহ্ মুসলিম’ রচয়িতা ইমাম মুসলিম বিন হাজ্জাজের খ্যাতি জগতজোড়া। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে হাদিস শাস্ত্রে যোগ হয়েছে অসামান্য সব প্রামাণ্য। আজকের অবসরে সংক্ষেপে এ মহান মনীষীর জীবন নিয়ে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব।
১২ ঘণ্টা আগেনিয়মিত খাওয়াদাওয়া করার সময় যেসব আদব অনুসরণ করতে হয়, তা ইফতারের সময়ও অনুসরণ করা চাই। তবে ইফতারের রয়েছে বিশেষ কিছু সুন্নত ও আদব। যথা— এক. সময় হওয়ার পরপরই ইফতার করা: সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে কিংবা মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার শুরু করে দেওয়া সুন্নত।
১৫ ঘণ্টা আগেপ্রিয় নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে হাদিস সংকলনের কাজ শুরু করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর সাহাবি-যুগ ও তাবেয়ি-যুগেও ব্যাপক আকারে হাদিস সংকলনের কাজ শুরু হয়। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিকসহ অনেক বড় বড় ইমামরা এ কাজ করেন। তবে সর্বাগ্রে যিনি নবীজির হাদিসসমূহকে বিশুদ্ধ সূত্রে সংকলন করার বিশাল
১ দিন আগে