Ajker Patrika

বৃষ্টির বর্ণনা কোরআন ও হাদিসে যেভাবে এসেছে

কাউসার লাবীব
বৃষ্টির বর্ণনা কোরআন ও হাদিসে যেভাবে এসেছে

বৃষ্টি মানবজীবনের এক অতি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরে। জমিনে ফোটে ফুল-ফসল। প্রকৃতি পায় সজীবতা। এটি শুধু কৃষিকাজের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং মানুষের মনেও আনে প্রশান্তি ও স্নিগ্ধতা। বৃষ্টির শব্দ হৃদয়কে করে কোমল, মনে জাগায় নানা স্মৃতি। গ্রীষ্মের খরতাপে যখন চারদিক শুকিয়ে যায়, তখন বৃষ্টি এনে দেয় শান্তির পরশ। আবার বর্ষায় বৃষ্টি আনে জলাবদ্ধতা, জনজীবনের দুর্ভোগ।

বৃষ্টি নিয়ে মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাস আবহমানকাল ধরেই। গল্প-কবিতা আর ছন্দ-পঙ্‌ক্তি তো বৃষ্টি ছাড়া জমেই না। সাদাকালো উপন্যাস রঙিন হয় বৃষ্টির ছোঁয়ায়। এ ছাড়া পবিত্র কোরআন এবং হাদিসেও নানাভাবে এসেছে বৃষ্টির বর্ণনা।

কোরআনের পাতায় বৃষ্টির ছোঁয়া

বৃষ্টি কেবল আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়; বরং মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক অপার রহমত ও রিজিকের নিদর্শন। কোরআনুল কারিমে অসংখ্যবার বৃষ্টিকে জীবনের উৎস, দুনিয়ার প্রাণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন—

‘আর তারা নিরাশ হয়ে পড়লে তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর রহমত ছড়িয়ে দেন। আর তিনিই তো অভিভাবক, প্রশংসিত।’ (সুরা শুরা: ২৮)

‘তোমরা জেনে রাখো—দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহংকার, ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হলো বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়। তারপর তা শুকিয়ে যায়। তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও। তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়।’ (সুরা হাদিদ: ২০)

‘আর আমি বায়ুকে উর্বরকারীরূপে প্রেরণ করি। অতঃপর আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদের পান করাই। কিন্তু তোমরা তার সংরক্ষণকারী নও।’ (সুরা হিজর: ২২)

‘আর তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর আমি এ দ্বারা উদ্ভিদ উদ্‌গম করি, যা থেকে উৎপন্ন করি সবুজ শ্যামলতা। তারপর তা থেকে আমি বের করি ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা। আর উৎপন্ন করি খেজুর বৃক্ষের কাণ্ডের ওপর থেকে ঝুলে পড়া কাঁদি, আঙুরের বাগান, সাদৃশ্যপূর্ণ ও অসাদৃশ্য জয়তুন (অলিভ) ও আনার। তোমরা লক্ষ করো তার ফলের দিকে—যখন তা ফলে এবং যখন তা পাকে। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে এমন এক সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ইমান আনে।’ (সুরা আনআম: ৯৯)

‘তুমি কি দেখো না, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা ভূগর্ভে প্রস্রবণরূপে চালিত করেন। তারপর তিনি তা দিয়ে নানা রঙের ফসল উৎপন্ন করেন। তারপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি দেখতে পাও তা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। তারপর তিনি তা খড়-কুটায় পরিণত করেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে উপদেশ।’ (সুরা জুমার: ২১)

হাদিসের পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা

মেঘ ভেঙে নেমে আসা বৃষ্টির পেছনে আছে গভীর আধ্যাত্মিক বার্তা, যা আমাদের শিখিয়েছেন প্রিয় নবী (সা.)। তিনি বৃষ্টিকে বানিয়ে তুলতেন ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়। দোয়ার জন্য তিনি বৃষ্টির সময় বেছে নিতেন, আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করতেন, এমনকি বৃষ্টির ফোঁটাকে বলতেন—প্রভুর পক্ষ থেকে সদ্য আগত রহমত।

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) সঙ্গে থাকাকালীন একবার বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। নবীজি তাঁর পরনের কাপড়ের কিছু অংশ তুলে ধরলেন, যাতে করে তাঁর শরীরে কিছুটা বৃষ্টির পানি পড়ে। এ রকম করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা (বৃষ্টি) এইমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।’ (সহিহ্ মুসলিম)

আল্লাহর রাসুল (সা.) বৃষ্টির সময় কল্যাণ কামনা করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বৃষ্টি দেখলে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিআ।’ অর্থ, ‘হে আল্লাহ, আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারী হয়।’ (সহিহ্ বুখারি)

বৃষ্টির সময় নবী করিম (সা.) বেশি বেশি দোয়া করতেন। কারণ এ সময় দোয়া কবুল হয়। হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আজানের সময় এবং বৃষ্টি চলাকালীন দোয়া কখনো ফেরত দেওয়া হয় না।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৫৪০)

এ ছাড়া কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন স্থানে নানাভাবে বৃষ্টির বর্ণনা এসেছে। এই বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় রিজিক দেন। আবার কখনো আসমানি আজাব নেমে এসেছে বৃষ্টির মাধ্যমে। বৃষ্টির সময় রাসুল (সা.)-এর দোয়া, তাঁর আমল এবং হাদিসে বর্ণিত নির্দেশনাগুলো আমাদের শেখায় কীভাবে আমরা এই সময়টি ইবাদতে পরিণত করতে পারি। কারণ, বৃষ্টির সময়কে ইবাদতে পরিণত করতে পারলেই কেবল এর মাধ্যমে নেমে আসা আসমানি ক্ষতি থেকে বাঁচা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন, প্রস্তাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের পর বললেন, ‘আমি যুবদলের সভাপতি, জানস?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত