Ajker Patrika

ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ মদিনা সনদ

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের পাতায় এমন কিছু দলিল-দস্তাবেজ পাওয়া যায়, যা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়, বরং যুগযুগান্তর মানবসভ্যতার জন্য চিরন্তন শিক্ষা হয়ে থাকে। মদিনা সনদ বা মদিনার সংবিধান তেমনই একটি দলিল। আরব উপদ্বীপে বহুধর্মীয় ও বহুজাতীয় সমাজে শান্তি, ন্যায়বিচার ও সহাবস্থানের এক অনন্য চুক্তি ছিল এটি।

হিজরতের পর মদিনার সমস্ত গোত্র ও সম্প্রদায়কে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সনদ প্রণয়ন করেন। ইসলামের ইতিহাসে এ সনদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কারণ এটি ছিল মুসলিম ও অমুসলিম—উভয় সম্প্রদায়কে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রথম লিখিত সংবিধান।

মদিনা সনদের প্রেক্ষাপট: ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, মদিনায় তখন প্রধানত তিনটি জনগোষ্ঠী বসবাস করত—

  • ১. মক্কা থেকে হিজরত করে আসা মুহাজির, মদিনার স্থানীয় আনসার এবং পরবর্তীকালে ইসলাম গ্রহণকারী মুসলমান সম্প্রদায়।
  • ২. বনু কায়নুকা, বনু নাদির, বনু কুরাইজা প্রভৃতি গোত্রের ইহুদি সম্প্রদায়।
  • ৩. এমন মুশরিক সম্প্রদায়, যারা তখনো ইসলাম গ্রহণ করেনি এবং নির্দিষ্ট কোনো ধর্মমতেরও অনুসারী ছিল না।

মদিনায় বসবাসকারী এসব ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত ছিল। বিশেষত আওস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যকার দীর্ঘকালীন যুদ্ধ-বিগ্রহ চলে আসছিল। ইহুদিরাও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িত ছিল। এমন পরিস্থিতিতে কেবল নবী হিসেবেই নয়, বরং একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেও রাসুলুল্লাহ (সা.) এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সমাধান, মদিনায় বসবাসকারী সমস্ত মানুষের পারস্পরিক সহাবস্থান, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সবাইকে নিয়ে এক লিখিত চুক্তি করেন। এ চুক্তিটাই ইতিহাসে ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত।

মদিনা সনদ ও বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা:

ঐতিহাসিকদের মতে, মদিনা সনদ মোট ৪৭টি ধারা নিয়ে গঠিত হয়েছিল। সনদে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অধিকার, কর্তব্য, পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্পর্কের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এ সংবিধানের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধারা নিম্নরূপ—

  • ১. সনদে স্বাক্ষরকারী গোত্রসমূহ একটি রাষ্ট্র গঠন করবে।
  • ২. কোনো গোত্র গোপনে মদিনার বহিরাগত কারও সঙ্গে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবে না। ৩. সব ধর্মাবলম্বী পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে।
  • ৪. মদিনার ওপর বহিরাগত আক্রমণ হলে সবাই মিলে তা প্রতিহত করবে।
  • ৫. পারস্পরিক যুদ্ধ বা বিরোধ সৃষ্টি হলে তার ফয়সালা আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলের হাতে ন্যস্ত করা হবে।
  • ৬. ব্যক্তিগত অপরাধের শাস্তি ব্যক্তি নিজেই ভোগ করবে। এক ব্যক্তির অপরাধের জন্য গোত্রের সবাইকে দায়ী করা যাবে না।
  • ৭. কেউ অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করলে সবাই মিলে তার শাস্তির বিধান করবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, আত্মীয় বা নিজ সন্তান হলেও কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
  • ৮. অসহায় ও দুর্বলদের সব সময় সাহায্য করা হবে।
  • ৯. সব ধর্মের লোকেরা পরস্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।

সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলো যে সংবিধান মেনে চলে, সেখানে মানবাধিকার সংরক্ষণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার সংবলিত যতগুলো নীতি স্থান পেয়েছে, তার সবই মদিনা সনদে বিদ্যমান ছিল। ফলে বলা যায়, মদিনা সনদ আধুনিক সংবিধান ও বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম প্রাচীন ভিত্তি।

মদিনা সনদ সর্বযুগের সমগ্র মানবজাতির জন্য এক অনন্য শিক্ষা। নবীজি (সা.) প্রমাণ করেছেন, ভিন্ন মত, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন গোত্র সবাইকে সঙ্গে নিয়েও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। আজকের পৃথিবী যখন যুদ্ধ-বিগ্রহ, সাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজনের অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন মদিনা সনদ আমাদের শেখায় একতাবদ্ধ থাকাই শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্তান আল্লাহর রহমতের স্নেহমাখা উপহার

কাউসার লাবীব
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪২
মসজিদের মিনার। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদের মিনার। ছবি: সংগৃহীত

সন্তান আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, এক টুকরা অস্তিত্ব, হৃদয়ের স্পন্দন। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক ভালোবাসা ও দয়ার এক স্বর্গীয় বন্ধন। এই ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব হৃদয়ে প্রবাহিত এক অলৌকিক অনুভব। এই সম্পর্কের গভীরতা ও গুরুত্ব বোঝাতে কোরআন ও হাদিসে এসেছে দৃষ্টান্ত, যা শুধু ভালোবাসার নয়; বরং দয়া, অনুগ্রহ ও রহমতের নিদর্শন।

সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তাঁর রহমতকে ১০০ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার মধ্যে ৯৯ ভাগ তিনি নিজের কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন। আর পৃথিবীতে ১ ভাগ পাঠিয়েছেন। ওই ১ ভাগ পেয়ে সৃষ্টিজগৎ পরস্পরের প্রতি দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার ওপর থেকে পা উঠিয়ে নেয় এই আশঙ্কায় যে সে ব্যথা পাবে।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬০০০)

আল্লাহর দেওয়া সেই ভালোবাসা থেকেই মানুষ সন্তানকে কোলে-পিঠে নিয়ে মানুষ করে, আদর করে চুমু খায়, স্নেহ মেখে দেয়। বলা যায়, এ সবই আল্লাহর রহমতের একটি প্রতিফলন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ক্ষেত্রে নিজের জীবনে ভালোবাসা, স্নেহ ও দয়ার এমন নজির স্থাপন করেছেন, যা যুগে যুগে অভিভাবকদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।

একবার নবী করিম (সা.) প্রিয় নাতি হাসানকে চুমু খান। সে সময় তাঁর কাছে আকরা তামিমি (রা.) বসা ছিলেন। তিনি নবীজিকে বললেন, ‘আমার ১০ ছেলে। আমি তাদের কাউকেই কোনো দিন চুমু দিইনি।’ দয়ার নবী (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৯৭)

আরেক হাদিসে এসেছে, ‘এক বেদুইন এসে নবী (সা.)-কে বললেন, আপনারা শিশুদের চুমু দেন, কিন্তু আমরা ওদের চুমু দিই না। প্রিয় নবীজি (সা.) তখন বললেন, আল্লাহ যদি তোমার হৃদয় থেকে দয়ামায়া উঠিয়ে নেন, তাহলে তোমার ওপর আমার কি কোনো অধিকার আছে!’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৯৮)

সন্তানকে স্নেহ করা, চুমু খাওয়া, কোলে নেওয়া—এসব শুধু আবেগ নয়; বরং একেকটি ইবাদত ও সুন্নাহ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ০৬ মিনিট
ফজর০৫: ০৭ মিনিট০৬: ২৬ মিনিট
জোহর১১: ৫০ মিনিট০৩: ৩৪ মিনিট
আসর০৩: ৩৫ মিনিট০৫: ১০ মিনিট
মাগরিব০৫: ১২ মিনিট০৬: ৩১ মিনিট
এশা০৬: ৩২ মিনিট০৫: ০৬ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জমাদিউস সানির দ্বিতীয় জুমা: মুমিনের করণীয়

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
ক্লোনস্কে মসজিদ, আয়ারল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত
ক্লোনস্কে মসজিদ, আয়ারল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত

জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।’ (সুরা জুমা: ৯)

এই আয়াতটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জুমা শুধু ফরজ নামাজের জন্য নয়, বরং আত্মপর্যালোচনা এবং নেক আমল বৃদ্ধির এক মহান সময়। বিশেষ করে জমাদিউস সানি মাসের এই দ্বিতীয় জুমা মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুসলিমদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের সুযোগ এনে দেয়।

অতএব, মাসের এই বরকতময় জুমাবারে নামাজ, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত ও সদকা আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দেয়।

জুমার দিনে করণীয় আমলসমূহ

জুমার দিনটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মূল্যবান। এই দিনে বিশেষভাবে কিছু আমল করা উচিত। যেমন—

  • ১. নামাজে গভীর মনোযোগ দেওয়া।
  • ২. মন দিয়ে খুতবা শোনা।
  • ৩. সদকা ও দান করা।
  • ৪. কোরআন তিলাওয়াত করা।
  • ৫. দোয়া-দরুদ পাঠ করা।

জমাদিউস সানির দ্বিতীয় জুমা আল্লাহর নৈকট্য লাভ, আত্মশুদ্ধি, নেক আমল বৃদ্ধি এবং সমাজে সদকা ও দান করার এক অনন্য সুযোগ। আল্লাহ আমাদের সকলের নেক আমল গ্রহণ করুন এবং জীবনকে শান্তিতে ভরিয়ে দিন।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মসজিদগুলো হয়ে উঠুক শিশুবান্ধব

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
মসজিদগুলো হয়ে উঠুক শিশুবান্ধব

মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন। নবীজির মুখনিঃসৃত মূল্যবান নসিহত থেকে নিজেদের জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতেন।

ইবাদত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি মসজিদ ছিল আলোকিত প্রজন্ম গঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণস্থল। নবী করিম (সা.)-এর যুগে শিশুরা মসজিদে আসত, ঘুরে বেড়াত, ইবাদত শিখত এবং সাহাবিদের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করত। মসজিদ ছিল কচিকাঁচাদের ভালোবাসার জায়গা। কোনো ভয় বা নিষেধাজ্ঞার প্রতিবন্ধকতা ছিল না তাদের।

কিন্তু আজকের বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিশুরা মসজিদে এলে অনেকেই তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন, সামান্য দুষ্টুমিতেই ধমক দেন, এমনকি কখনো তাড়িয়েও দেন। এতে করে অনেক অভিভাবকই নিজের সন্তানদের সহজে মসজিদে আনতে চান না। ফলে ধীরে ধীরে মসজিদের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের দূরত্ব তৈরি হয়। অথচ ভবিষ্যতে এই প্রজন্মই উম্মতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তাই তাদের মসজিদমুখী করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।

নবীজির যুগে শিশুদের মসজিদে গমন

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মসজিদে শিশুদের স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। নবীজি (সা.)-এর চারপাশে সাহাবিদের সঙ্গে ছোট বাচ্চাদেরও দেখা যেত। নবীজি (সা.) কখনো তাদের ধমক দিতেন না, তাড়িয়ে দিতেন না। তিনি শিশুদের উপস্থিতিকে স্বাগত জানাতেন। তাদের প্রতি অসীম মমতা দেখাতেন। নামাজ চলাকালেও নবীজি (সা.) শিশুদের প্রতি বিশেষ কোমলতা প্রদর্শন করতেন। তাঁর নাতি হাসান বা হুসাইন (রা.) কখনো তাঁর পিঠে চড়ে বসত। তিনি তাড়াহুড়ো না করে বরং তাদের ভালোবাসার খাতিরে সিজদা দীর্ঘ করতেন।

একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সিজদায় গেলে হজরত হাসান কিংবা হোসাইন (রা.) তাঁর পিঠে চড়ে বসে। এ কারণে নবীজি (সা.) খুব দীর্ঘ সময় সিজদায় থাকেন। নামাজ শেষে সাহাবিরা এর কারণ জানতে চাইলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমার এই নাতি আমাকে বাহন বানিয়ে নিয়েছিল, তাই তাকে নামিয়ে দিতে আমি তাড়াহুড়ো করতে চাইনি, যতক্ষণ না সে স্বাভাবিকভাবে নেমে আসে।’ (সুনানে নাসায়ি: ১১৪১)। মেয়েশিশুরাও নবীজির স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতো না। তারাও মসজিদে আসত। হজরত কাতাদা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা জাইনাবের মেয়ে উমামাকে কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়তেন। সিজদায় গেলে তাকে নামিয়ে দিতেন এবং দাঁড়ালে আবার কাঁধে তুলে নিতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৯১৭)

আমাদের দেশের বেদনাদায়ক বাস্তবতা

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে ‘নামাজের প্রতি শ্রদ্ধা’ দেখানোর লেভেল লাগিয়ে অনেকেই শিশুদের প্রতি রূঢ় আচরণকে বৈধ মনে করেন। তাদের ধমক দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেন। কোনো কোনো মসজিদ কমিটি ‘বাচ্চাদের মসজিদে আনা নিষিদ্ধ’ লেখা সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে রাখেন মসজিদের সামনে। এসব আচরণ শিশুদের কোমল হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। পরিণতিতে সে মসজিদকে ভয় পেতে শুরু করে। যে রাসুল (সা.) শিশুদের মাথায় মমতার পরশ বুলিয়ে দিতেন, তাঁর উম্মতের কেউ কেউ আজ শিশুদের বকাঝকা করে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা বড় লজ্জার বিষয়।

শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি হোক নম্রতা

শিশুরা দেহ-মন উভয় দিক থেকে কোমল। তারা কঠোরতা সহ্য করতে পারে না। নবীজি (সা.) বাচ্চাদের প্রতি খুবই কোমল ছিলেন। আল্লাহ তাআলাও কোমলতা পছন্দ করেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোমল আচরণকারী, তিনি সর্বক্ষেত্রে কোমলতা ভালোবাসেন।’ (সহিহ বুখারি: ৬০২৪)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৯০)। আমাদেরও উচিত বাচ্চাদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করা। তাদের কিছু শেখাতে হলেও আদুরে গলায় শিশুসুলভ ভঙ্গিতে শেখানো। বাচ্চাদের জন্য এটি কঠোরতা থেকেও বেশি ফলপ্রসূ।

শিশুরা হোক মসজিদমুখী

শিশুদের মসজিদমুখী করতে হলে নম্রতা, কোমলতা ও ভালোবাসা দিয়ে কাছে টানতে হবে। তাদের জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মসজিদের আঙিনায় শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার হতে পারে। সেখানে তাদের উপযোগী রঙিন বই, কোরআন শেখার বিভিন্ন মজাদার উপকরণ থাকতে পারে। এতে তারা ধীরে ধীরে মসজিদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি ও ইমাম সাহেবগণ নানা ধরনের উৎসাহমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন। হতে পারে শিশুদের জন্য সাপ্তাহিক বিশেষ ক্লাস। যেখানে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে তাদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞান শেখানো হবে। যারা এতে নিয়মিত উপস্থিত হবে, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ কার্যক্রমও থাকতে পারে।

মসজিদে আসার পর শিশুদের একটু শব্দে কেউ যদি রেগে যায়, বিনয়ের সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন ‘নবীজির মসজিদেও তো শিশুদের বিচরণ ছিল। আমরা তাদের প্রতি কোমল হই। কঠোর আচরণ পরিত্যাগ করি।’ এভাবে ধীরে ধীরে সমাজের পরিবেশ বদলে যাবে।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা যদি চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো, সচ্চরিত্রবান, নামাজি ও ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন হোক—তাহলে তাদের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। উৎসাহ, অভয়, ভালোবাসা দিয়ে ও নানা পরিকল্পনা করে তাদের মসজিদমুখী করতে হবে। তাহলেই গড়ে উঠবে আলোকিত প্রজন্ম।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত