Ajker Patrika

আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত যারা

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত যারা

আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়া মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য। তাই আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন না এমন সব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মানুষের জন্য বাঞ্ছনীয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো। 

সীমা লঙ্ঘনকারী: যেকোনো বিষয়ে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করা, যেমন অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া, কথাবার্তা ও আচরণে অপ্রয়োজনীয় কৃত্রিমতা, উচ্চ স্বরে দোয়া করা, যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করা, এমনকি সামর্থ্যের বাইরে অতিরিক্ত নফল ইবাদত ইত্যাদি সীমা লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ 
(সুরা বাকারা: ১৯০; সুরা মায়িদা: ৮৭; সুরা আরাফ: ৫৫) 
 
জালিম: শিরক করা, পাপাচারে নিমজ্জিত থাকা, অন্যের জানমাল ও সম্ভ্রমে অন্যায় হস্তক্ষেপ, বিচার-ফয়সালায় পক্ষপাতিত্ব, সর্বোপরি ইনসাফ পরিপন্থী যেকোনো কাজ ইসলামের দৃষ্টিতে জুলুম। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ জালিমদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আলে ইমরান: ৫৭ ও ১৪০; সুরা শুরা: ৪০) 
 
অহংকারী: রাসুল (সা.) বলেন, ‘অহংকার হচ্ছে সত্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং (নিজেকে বড় মনে করে) অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’ (মুসলিম) সম্পদ, জ্ঞান ও সামাজিক মর্যাদা মানুষের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। কিন্তু এসব পেয়ে যদি কেউ অহংকারী হয়ে ওঠে, আল্লাহ তা সহ্য করেন না। এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা: ৩৬; সুরা লুকমান: ১৮; হাদিদ: ২৩ ও সুরা নাহল: ২৩) 
 
ফাসাদ সৃষ্টিকারী: দুর্নীতি, দল ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক ঝগড়া, চুরি-ডাকাতি, আত্মসাৎ, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, যা সামাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে, পবিত্র কোরআনে সেগুলোকে ‘ফাসাদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা মায়িদা: ৬৪; সুরা কাসাস: ৭৭) 
 
কাফির: যারা আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্ববাদে বিশ্বাসী নয়, আল্লাহ ও রাসুলের বিধানকে অস্বীকার করে, কোরআনের ভাষায় তারা কাফির। আর কাফিরদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। (সুরা রুম: ৪৫) 

অপচয়কারী: আল্লাহর দেওয়া সময় ও ধন-সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা এমন কাজে ব্যবহার করা, যাতে ইহকালীন বা পরকালীন কোনো কল্যাণ নেই, ইসলামের পরিভাষায় তাকে ইসরাফ বা অপচয় বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আনআম: ১৪১; সুরা আরাফ: ৩১) 
 
আমানতের খিয়ানতকারী: একজনের কাছে গচ্ছিত থাকা অন্যজনের সম্পদ এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা জনগণের সম্পদ নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করা এবং যথাসময়ে যথাযথভাবে আসল মালিকের হাতে তুলে না দেওয়া আমানতের খিয়ানত। এরশাদ হয়েছে ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ খিয়ানতকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আনফাল: ৫৮) 

পাপাচারী: আল্লাহ ও রাসুল (সা.) যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন তা না করা এবং যা থেকে বারণ করেছেন তা করাই পাপাচার। মানুষ পাপে জড়াবে, এটা স্বাভাবিক। তবে সঙ্গে সঙ্গে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে নেওয়া জরুরি। তাতে মজে থাকা অনুচিত। এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না, যে খিয়ানতকারী ও অত্যধিক পাপী।’ (সুরা নিসা: ১০৭) 

অকৃতজ্ঞ: আল্লাহ তাআলা মানুষকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। এসবের বিনিময়ে তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা আবশ্যক। অনুরূপভাবে কেউ উপকার করলে তার প্রতিদান দেওয়া, না পারলে অন্তত মুখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না, যে খিয়ানতকারী ও অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা হজ: ৩৮) 

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদনজর থেকে আত্মরক্ষায় নবীজির শেখানো আমল

মাহমুদ হাসান ফাহিম 
বদনজর থেকে আত্মরক্ষায় নবীজির শেখানো আমল

বদনজর মানে কুদৃষ্টি। মানুষের কুদৃষ্টির প্রভাব সত্য; এর কারণে মানুষ নানারকম ক্ষতির মুখোমুখি হয়। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা (বদনজর থেকে বাঁচার জন্য) আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, কেননা বদনজর সত্য ও বাস্তব।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৫০৮)

নিজেকে, নিজের সন্তানসন্ততি ও ধনসম্পদকে সব সময় মন্দ লোকের কুদৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ তাআলার কাছে মন্দ লোকের কুদৃষ্টি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। বদনজর থেকে বাঁচতে হাদিস শরিফে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা তিন কুল তথা সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তিনবার করে পড়ার কথা বলা হয়েছে। (জামে তিরমিজি: ৩৫৭৫)

এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে এই দোয়া শিখিয়েছেন, ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস সামায়ি, ওয়া হুওয়াস সামিউল আলিম।’ অর্থ: ‘আল্লাহর নামে (আশ্রয় নিচ্ছি), যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’ (জামে তিরমিজি: ৩৩৩৫)

প্রত্যেক মা-বাবা শিশুর নিরাপত্তা ও সুস্থতা কামনা করেন। তাঁরা চান সন্তান সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকুক। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া শিখিয়েছেন। তাদের সুরক্ষার জন্য মাঝেমধ্যে এ দোয়া পড়ে গায়ে ফুঁ দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পড়ে হাসান-হুসাইন (রা.)-কে ফুঁ দিয়ে দিতেন, ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাহ, মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ।’ অর্থ: ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামসমূহের মাধ্যমে শয়তানের সব আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বিষধর প্রাণীর ও বদনজরের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’ (সহিহ্ বুখারি: ৩১৯১)

এই আমলগুলো নিয়মিত করলে বদনজর থেকে সুরক্ষা মিলবে ইনশা আল্লাহ।

লেখক: মাদ্রাসাশিক্ষক, টঙ্গী, গাজীপুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৩ নভেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৪৭ মিনিট
ফজর০৪: ৪৮ মিনিট০৬: ০৪ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৪২ মিনিট
আসর০৩: ৪৩ মিনিট০৫: ১৮ মিনিট
মাগরিব০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৫ মিনিট
এশা০৬: ৩৬ মিনিট০৪: ৪৭ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের গোপন সূত্র

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জীবনের মূল লক্ষ্য হলো আত্মশুদ্ধি, অর্থাৎ নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা। বাহ্যিক জীবনে ধন, পদবি বা সামাজিক মর্যাদা যতই থাকুক, যদি হৃদয় খারাপ হয়—মানুষ কখনো প্রকৃত সাফল্য পেতে পারে না। কোরআন ও হাদিসে বারবার নিজের অন্তর পরিশুদ্ধ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

আত্মশুদ্ধি কি ও কেন গুরুত্বপূর্ণ

আত্মশুদ্ধি বা তাজকিয়া মানে হলো নিজের হৃদয়কে পাপ, অহংকার, রাগ ও মন্দ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখা। একজন পরিশুদ্ধ অন্তরধারী মানুষ ধৈর্য, বিনয়, সততা ও আল্লাহভীতি অর্জন করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই সে-ই সফল, যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে; আর সে-ই ব্যর্থ, যে একে কলুষিত করেছে।’ (সুরা শামস: ৯–১০)

আমরা এখানে দেখতে পাই যে, প্রকৃত সাফল্য শুধু বাহ্যিক জীবনে নয়, অন্তরের পরিশুদ্ধিতেও নিহিত।

কোরআনের নির্দেশনায় আত্মশুদ্ধি

১. তওবা ও ইস্তিগফার: আত্মশুদ্ধির প্রথম ধাপ হলো নিজের ভুল স্বীকার করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তওবা করো—যাতে তোমরা সফল হও।’ (সুরা নুর: ৩১)

২. আল্লাহর স্মরণ ও জিকির: কোরআন বলছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্তি পায়।’ (সুরা রাদ: ২৮)। জিকির, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া আমাদের অন্তরকে শান্ত করে এবং মন্দ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখে।

৩. তাকওয়া ও সৎকর্ম: আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য পথ খুলে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন, যা সে কল্পনাও করে না।’ (সুরা তালাক: ২–৩)। আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহভীতি অপরিহার্য। এটি অহংকার, লোভ ও রাগ কমাতে সাহায্য করে।

মহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধির আদর্শ। তাঁর চরিত্রে আমরা পাই—দয়া, ক্ষমাশীলতা, বিনয়, সততা ও আত্মসংযম।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তিনি (আল্লাহ) তোমাদের মাঝে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন, যিনি তোমাদের কাছে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তোমাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন।’ (সুরা বাকারা: ১৫১)। এ থেকে বোঝা যায়, নবী (সা.)-এর আগমনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মানুষের হৃদয় পরিশুদ্ধ করা।

হাদিসে আত্মশুদ্ধি

১. নিয়ত ঠিক রাখা: ‘সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (সহিহ্ বুখারি: ১)। যেকোনো কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করলে অন্তর পরিশুদ্ধ হয়।

২. রাগ সংযম ও ক্ষমাশীলতা: ‘শক্তিমান সে নয়, যে কুস্তিতে জয়ী হয়; বরং শক্তিমান সে, যে রাগের সময় নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬১১৪)। রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে অন্তর শান্ত থাকে এবং অহংকার কমে।

৩. হৃদয়ের পবিত্রতা: ‘দেহে একটি অঙ্গ আছে, যদি তা ভালো থাকে, তবে গোটা দেহ ভালো থাকে; আর যদি তা নষ্ট হয়, তবে গোটা দেহ নষ্ট হয়। সেটি হলো হৃদয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫২)

৪. অহংকার ও হিংসা থেকে বিরত থাকা: ‘যার অন্তরে সরিষার দানার সমান অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৯১)। নবীজির শিক্ষা হলো অহংকার, হিংসা ও মন্দ মানসিকতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।

আত্মশুদ্ধির সাধারণ উপায়

নিয়মিত নামাজ আদায় ও কোরআন তিলাওয়াত করা। দোয়া ও জিকিরে অভ্যস্ত থাকা। অন্যের প্রতি সহানুভূতি থাকা এবং সেবা করা। প্রতিদিন নিজেকে মূল্যায়ন করা। ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা।

পরিশেষে, আত্মশুদ্ধি অর্জনই মানুষের জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য। যদি হৃদয় খারাপ থাকে, কোনো জ্ঞান, ধন বা পদবি প্রকৃত কল্যাণ দিতে পারে না। নবীজি (সা.)-এর জীবন আমাদের দেখিয়েছে—হৃদয় পবিত্র থাকলে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব। আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন কোনো ধন-সম্পদ বা সন্তান উপকারে আসবে না; কেবল সেই ব্যক্তি সফল হবে—যার হৃদয় বিশুদ্ধ।’ (সুরা শুআরা: ৮৮–৮৯)

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুস্থতা আল্লাহর অনন্য নিয়ামত

ইসলাম ডেস্ক 
সুস্থতা আল্লাহর অনন্য নিয়ামত

স্বাস্থ্য আল্লাহর অপার অনুগ্রহ। সুস্থ থাকতে শরীর ও স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হয়। নবী করিম (সা.) অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন ছিলেন। তিনি নিজে স্বাস্থ্যের যত্ন নিতেন এবং সাহাবাদেরও এতে উৎসাহিত করতেন। এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭০৩)

ইসলামের মৌলিক পাঁচ স্তম্ভের তিনটির সঙ্গেই শারীরিক সুস্থতা সম্পর্ক রাখে। নামাজ, রোজা, হজ যথাযথভাবে আদায় করতে হলে সুস্থ থাকা প্রয়োজন। উদাসীনতা বা অবহেলা করে নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করলে কিয়ামতের দিন এ জন্য জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে প্রথম যে প্রশ্ন করা হবে, তা হলো তার সুস্থতাবিষয়ক। তাকে বলা হবে, আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’ (সুনানে তিরমিজি)

স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম প্রধান অবলম্বন হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। ইসলাম এ বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।’ (সহিহ মুসলিম: ২২৩)

নামাজ ইসলামের অন্যতম বিধান। নামাজের জন্য পবিত্রতা প্রথম এবং প্রধান শর্ত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য একজন মুসলমান সারা দিনে পাঁচবার অজু করে। কেননা রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ বেহেশতের চাবি, আর অজু নামাজের চাবি।’ (সুনানে তিরমিজি: ৪)। এ ছাড়া খাওয়ার আগে-পরে, ঘুমের আগে-পরে, ঘর থেকে বের হওয়ার আগে এবং ঘরে ফেরার পরও অজু করার প্রতি উৎসাহিত করে ইসলাম। এই অজুর ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জন হয়। নিশ্চিত হয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা।

মহানবী (সা.) শারীরিক সুস্থতাকে যথাযথ মূল্যায়ন করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মৃত্যু আসার আগে জীবনের, অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতার, ব্যস্ততা আসার আগে অবসরের, বার্ধক্য আসার আগে যৌবনের এবং দারিদ্র্য আসার আগে সচ্ছলতার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করো।’ (সহিহুল জামে: ১০৭৭)

সুবিন্যস্ত জীবনচর্চায় আমাদের দিন কাটুক সুস্থতায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত