Ajker Patrika

আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের গোপন সূত্র

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জীবনের মূল লক্ষ্য হলো আত্মশুদ্ধি, অর্থাৎ নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা। বাহ্যিক জীবনে ধন, পদবি বা সামাজিক মর্যাদা যতই থাকুক, যদি হৃদয় খারাপ হয়—মানুষ কখনো প্রকৃত সাফল্য পেতে পারে না। কোরআন ও হাদিসে বারবার নিজের অন্তর পরিশুদ্ধ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

আত্মশুদ্ধি কি ও কেন গুরুত্বপূর্ণ

আত্মশুদ্ধি বা তাজকিয়া মানে হলো নিজের হৃদয়কে পাপ, অহংকার, রাগ ও মন্দ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখা। একজন পরিশুদ্ধ অন্তরধারী মানুষ ধৈর্য, বিনয়, সততা ও আল্লাহভীতি অর্জন করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই সে-ই সফল, যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে; আর সে-ই ব্যর্থ, যে একে কলুষিত করেছে।’ (সুরা শামস: ৯–১০)

আমরা এখানে দেখতে পাই যে, প্রকৃত সাফল্য শুধু বাহ্যিক জীবনে নয়, অন্তরের পরিশুদ্ধিতেও নিহিত।

কোরআনের নির্দেশনায় আত্মশুদ্ধি

১. তওবা ও ইস্তিগফার: আত্মশুদ্ধির প্রথম ধাপ হলো নিজের ভুল স্বীকার করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তওবা করো—যাতে তোমরা সফল হও।’ (সুরা নুর: ৩১)

২. আল্লাহর স্মরণ ও জিকির: কোরআন বলছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্তি পায়।’ (সুরা রাদ: ২৮)। জিকির, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া আমাদের অন্তরকে শান্ত করে এবং মন্দ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখে।

৩. তাকওয়া ও সৎকর্ম: আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য পথ খুলে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন, যা সে কল্পনাও করে না।’ (সুরা তালাক: ২–৩)। আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহভীতি অপরিহার্য। এটি অহংকার, লোভ ও রাগ কমাতে সাহায্য করে।

মহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধির আদর্শ। তাঁর চরিত্রে আমরা পাই—দয়া, ক্ষমাশীলতা, বিনয়, সততা ও আত্মসংযম।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তিনি (আল্লাহ) তোমাদের মাঝে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন, যিনি তোমাদের কাছে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তোমাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন।’ (সুরা বাকারা: ১৫১)। এ থেকে বোঝা যায়, নবী (সা.)-এর আগমনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মানুষের হৃদয় পরিশুদ্ধ করা।

হাদিসে আত্মশুদ্ধি

১. নিয়ত ঠিক রাখা: ‘সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (সহিহ্ বুখারি: ১)। যেকোনো কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করলে অন্তর পরিশুদ্ধ হয়।

২. রাগ সংযম ও ক্ষমাশীলতা: ‘শক্তিমান সে নয়, যে কুস্তিতে জয়ী হয়; বরং শক্তিমান সে, যে রাগের সময় নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬১১৪)। রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে অন্তর শান্ত থাকে এবং অহংকার কমে।

৩. হৃদয়ের পবিত্রতা: ‘দেহে একটি অঙ্গ আছে, যদি তা ভালো থাকে, তবে গোটা দেহ ভালো থাকে; আর যদি তা নষ্ট হয়, তবে গোটা দেহ নষ্ট হয়। সেটি হলো হৃদয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫২)

৪. অহংকার ও হিংসা থেকে বিরত থাকা: ‘যার অন্তরে সরিষার দানার সমান অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৯১)। নবীজির শিক্ষা হলো অহংকার, হিংসা ও মন্দ মানসিকতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।

আত্মশুদ্ধির সাধারণ উপায়

নিয়মিত নামাজ আদায় ও কোরআন তিলাওয়াত করা। দোয়া ও জিকিরে অভ্যস্ত থাকা। অন্যের প্রতি সহানুভূতি থাকা এবং সেবা করা। প্রতিদিন নিজেকে মূল্যায়ন করা। ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা।

পরিশেষে, আত্মশুদ্ধি অর্জনই মানুষের জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য। যদি হৃদয় খারাপ থাকে, কোনো জ্ঞান, ধন বা পদবি প্রকৃত কল্যাণ দিতে পারে না। নবীজি (সা.)-এর জীবন আমাদের দেখিয়েছে—হৃদয় পবিত্র থাকলে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব। আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন কোনো ধন-সম্পদ বা সন্তান উপকারে আসবে না; কেবল সেই ব্যক্তি সফল হবে—যার হৃদয় বিশুদ্ধ।’ (সুরা শুআরা: ৮৮–৮৯)

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...