Ajker Patrika

আপনার জিজ্ঞাসা

আউজুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ: কোথায় কোনটি পড়তে হয়?

মুফতি শাব্বির আহমদ
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ১৩
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ছবি: সংগৃহীত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: আমরা জানি, যেকোনো কাজ শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়তে হয়। আমার প্রশ্ন হলো, ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ কোন কোন ক্ষেত্রে পড়ার নিয়ম?

আশিকুর রহমান, কাউতলা, কুমিল্লা

উত্তর: আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘বিসমিল্লাহ’ এবং ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠের স্থান ও বিধান নিয়ে অনেকেরই ধারণা অস্পষ্ট থাকে। সংক্ষেপে বলা যায়, প্রতিটি বৈধ ও ভালো কাজ আল্লাহর নামে শুরু করার জন্য ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ করা সুন্নত ও বরকতের উৎস। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কাজ বিসমিল্লাহ ছাড়া আরম্ভ করা হয়, তাতে কোনো বরকত থাকে না।

অন্যদিকে, ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পাঠ করা হয় মূলত শয়তানের কুমন্ত্রণা ও মন্দ প্রভাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় লাভের জন্য। এটি পাঠের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট স্থান হাদিস ও কোরআন দ্বারা প্রমাণিত, যা নিচে আলোচনা করা হলো—

কোরআন তিলাওয়াত শুরুর ক্ষেত্রে: কোরআন তিলাওয়াত শুরুর আগে ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠ করা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ ওয়াজিব। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ‘সুতরাং যখন তুমি কোরআন পাঠ করবে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ (সুরা নাহল: ৯৮)। এ ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, কোনো সুরার প্রথম থেকে তিলাওয়াত শুরু করলে, প্রথমে ‘আউজুবিল্লাহ’ এবং এরপর ‘বিসমিল্লাহ’ (সুরা তাওবা ব্যতীত) উভয়ই পাঠ করতে হবে। আর যদি কোনো সুরার মাঝখান থেকে পড়া হয়, তাহলে শুধু ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠ করাই যথেষ্ট।

নামাজের মধ্যে

নামাজের ভেতরে সানা পড়ার পর এবং সুরা ফাতিহা বা অন্য কোনো সুরা শুরুর আগে ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠের নিয়ম রয়েছে। অর্থাৎ, তাকবিরে তাহরিমার পর সানা পড়তে হয়, এরপর ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ এবং তারপর ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে সুরা ফাতিহা শুরু করতে হয়।

রাগ ও কুমন্ত্রণা দেখা দিলে

যখন কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত রাগান্বিত হন, তখন শয়তান তাঁকে প্ররোচিত করে। এই সময় শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচতে ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠ করা সুন্নত। (সহিহ বুখারি: ৩২৮২)। এ ছাড়া পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আরাফ: ২০০)

খারাপ স্বপ্ন দেখলে

খারাপ স্বপ্ন শয়তানের প্রভাব থেকে আসে। এমন স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাঁ দিকে থুতু দেবে। আর তিনবার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাইবে (অর্থাৎ আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম পাঠ করবে)। এরপর যে পার্শ্বে শুয়ে ছিলে, তা পরিবর্তন করে শয়ন করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২২৬২)

যেসব ক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আউজুবিল্লাহ’ কোনোটিই নয়

দ্বীনি আলোচনা বা খুতবার শুরুতে প্রচলিত সুন্নত নিয়ম হলো আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) ও সালাত (দরুদ) দ্বারা শুরু করা। এ ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ বা আউজুবিল্লাহ দিয়ে শুরু করার কোনো শক্তিশালী প্রমাণ হাদিস বা সাহাবাদের আমল দ্বারা পাওয়া যায় না। আজান ও নামাজও আল্লাহু আকবার (তাকবির) বলে শুরু করাই নিয়ম।

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত