Ajker Patrika

একাধিক বিয়ের অনুমতি: শর্ত ও সীমারেখা

কাউসার লাবীব
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১৭
একাধিক বিয়ের অনুমতি: শর্ত ও সীমারেখা

একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের প্রথাটি ইসলাম-পূর্ব যুগেও বিশ্বের প্রায় সকল ধর্ম ও সমাজে প্রচলিত ছিল। আরব, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইউরোপসহ বিভিন্ন সভ্যতায় এটি প্রচলিত ছিল কোনো প্রকার সংখ্যা নির্ধারণ বা বাধা-নিষেধ ছাড়াই। কিন্তু ইসলাম এই সীমাহীন প্রথায় নিয়ন্ত্রণ এনে নারী জাতির মর্যাদা রক্ষা এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছে।

ইসলামে একজন পুরুষকে একই সময়ে সর্বোচ্চ চারজন পর্যন্ত স্ত্রী রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এই অনুমতি কঠোর শর্ত ও সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি আশঙ্কা বোধ করো যে এতিমদের প্রতি ইনসাফ রক্ষা করতে পারবে না, তবে (তাদের বিয়ে না করে) অন্য নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের পছন্দ হয় বিয়ে করো—দুই-দুজন, তিন-তিনজন অথবা চার-চারজনকে। অবশ্য যদি আশঙ্কা বোধ করো যে তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে এক স্ত্রীতে (ক্ষান্ত থাকো) ...।’ (সুরা নিসা: ৩)

এই আয়াতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারার আশঙ্কা থাকলে একাধিক বিয়ে করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এবং এক স্ত্রীতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

একাধিক বিয়ের অনুমতি আছে, অপব্যবহারের সুযোগ নেই

ইসলামে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেওয়ার পেছনে বেশ কিছু প্রজ্ঞা ও যুক্তি রয়েছে, যা মানব ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনা করে প্রবর্তিত হয়েছে।

একাধিক বিয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং উম্মাহকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হতে পারে, যদি মানবসম্পদের উন্নয়ন করা যায়। এ ছাড়া বিশ্বের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারীদের সংখ্যা প্রায়ই পুরুষের সংখ্যার চেয়ে বেশি থাকে। যুদ্ধ, বিপজ্জনক পেশা ইত্যাদির কারণে পুরুষদের জীবননাশের ঝুঁকি বেশি। ফলে অনেক নারীকে স্বামী ছাড়া থাকতে হয়। একাধিক বিয়ে সমাজে অনাচার ও বিপথগামিতা রোধ করে এই নারীদের সুরক্ষার একটি উপায় হতে পারে। আবার কিছু পুরুষের প্রবল শারীরিক চাহিদা থাকতে পারে, যার জন্য একজন স্ত্রী যথেষ্ট না-ও হতে পারে। একাধিক স্ত্রীর সুযোগ না থাকলে তাদের জৈবিক চাহিদা হারাম পথে পরিচালিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে দৈহিক সম্পর্কে অক্ষমতা সৃষ্টি হলে, সন্তানের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অন্য স্ত্রী গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, একাধিক বিয়ে কেবল শর্ত পূরণ সাপেক্ষেই বৈধ হয়। যদি কোনো পুরুষ তার সব স্ত্রীর মধ্যে ভরণপোষণ, আবাসন ও শয্যাযাপনে পূর্ণ সমতা রক্ষা করতে পারবে না বলে আশঙ্কা করে, তবে তার জন্য একাধিক বিয়ে করা বৈধ হবে না এবং এক স্ত্রীতেই সন্তুষ্ট থাকা বাধ্যতামূলক।

আর যে ব্যক্তি স্ত্রীর হক (অধিকার) নষ্ট করার প্রবল ধারণা রাখে, তার জন্য বিয়ে করা বৈধ নয়। আর স্ত্রীর প্রতি জুলুম করা যার নিশ্চিত, তার জন্য বিয়ে করা কঠোরভাবে নিষেধ।

একাধিক স্ত্রীর মাঝে সমতা রক্ষা না করার শাস্তি

একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসলাম সমতা বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ওপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। যদি কোনো ব্যক্তি একাধিক স্ত্রী রাখার পর তাদের মধ্যে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা ও ন্যায়বিচার রক্ষা করতে না পারে, তবে তার জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা রয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী রয়েছে, সে যদি এদের মধ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ করতে না পারে, তবে কিয়ামতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠবে যে তার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ)

একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে শারীরিক ও জাগতিক সুযোগ-সুবিধা যেমন—খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান ও রাত্রি যাপনের ক্ষেত্রে সবার সঙ্গে সমান আচরণ বজায় রাখা ফরজ। তবে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার মতো অভ্যন্তরীণ আবেগ, যা মানুষের সাধ্যের বাইরে, সে ক্ষেত্রে সমান হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু কোনো এক স্ত্রীর প্রতি অতিশয় আসক্ত হয়ে অন্য স্ত্রীর ওপর জুলুম করা যাবে না। একাধিক বিয়ের অনুমতি থাকলেও, বিনা প্রয়োজনে বা সমতা রক্ষার সামর্থ্য না থাকলে একাধিক বিয়েকে নিরুৎসাহিতই করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত