Ajker Patrika

নবীজির জন্ম ও মৃত্যুদিনে করণীয় কী

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
Thumbnail image

মহানবী (সা.) সোমবার সুবহে সাদিকের সময় পবিত্র মক্কায় আবু তালিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। সোমবার জন্মদিন হওয়ার বিষয়টি হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)কে সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘সেদিন আমি জন্মেছি এবং সেদিন আমার প্রতি অহি অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসলিম: ২৮০৭)

তবে জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী, নবী (সা.) রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও জুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) থেকে এমনই বর্ণিত আছে। তবে প্রসিদ্ধ মত হলো, নবী (সা.)-এর জন্মতারিখ ১২ রবিউল আউয়াল। (সিরাতুল মুস্তফা: ১/ ৫১)

নবী (সা.)-এর জন্মের দিন তাঁর আত্মীয়স্বজনসহ সব সৃষ্টিই আনন্দিত হয়েছিল। আবু লাহাবকে তার দাসী সুয়াইবিয়া এসে ভাতিজা হওয়ার সুসংবাদ দিলে সে আনন্দিত হয়ে সুয়াইবিয়াকে মুক্ত করে দিয়েছিল। তবে নবী (সা.) নিজে বা কোনো সাহাবায়ে কেরাম নবী (সা.)-এর জন্মদিনকে জন্মবার্ষিকী হিসেবে উদ্‌যাপন করেননি। বিষয়টি গুরুত্বহীন হওয়ার কারণেই তাঁর জন্ম তারিখ অকাট্যভাবে সংরক্ষিত হয়নি।

নবী (সা.) ১১ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার ইন্তেকাল করেন। দিনটি প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী ১২ রবিউল আউয়াল হলেও আরও দুটি মত রয়েছে। ১ রবিউল আউয়াল এবং ২ রবিউল আউয়াল। বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারিতে সর্বশেষ মতটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। (সিরাতুল মুস্তফা: ৩/ ১৭২)

নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের দিন সাহাবাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। ওমর (রা.) খোলা তরবারি নিয়ে মসজিদে নববির সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘যে বলবে আল্লাহর নবী ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেব।’ অর্থাৎ, তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে নবী (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। পরবর্তীকালে সাহাবায়ে কেরাম, তাঁদের পর তাবেয়িন বা তাবে তাবেয়িন কেউই নবী (সা.)-এর মৃত্যুবার্ষিকী বা ওফাত দিবস নামে কোনো অনুষ্ঠান বা শোক পালন করেননি।

জন্ম-মৃত্যু সব মানুষের থাকবেই। নবী-রাসুলগণও এর বাইরে নন। স্বল্প সময়ের এই পৃথিবীতে আসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য চিহ্নিত করে তা পূর্ণ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখাই হলো মানুষের কাজ। নবী (সা.)-এর পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য হলো আদর্শের বাস্তবায়ন। আর উম্মাহর কাজ হলো তাঁর অনুসরণ। নবী (সা.) তাঁর কথা, কাজ, সম্মতি এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের মাধ্যমে সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই করে গেছেন। কাজেই নবীজির জন্ম বা মৃত্যুদিনে আমাদের করণীয় হলো—নবী (সা.)-এর আদর্শের অনুসারী হিসেবে নিজেদের যোগ্য করে তোলা, তাঁর অনুপম আদর্শ বিশ্ববাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার শপথ গ্রহণ করা এবং তাঁর আদর্শের চর্চা করা। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত