Ajker Patrika

‘আল্লাহ’ ও ‘মুহাম্মদ’ লেখা প্রাকৃতিক পাথরের সংগ্রহশালা

আমিরুল ইসলাম লুকমান
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, ০৮: ৩৯
‘আল্লাহ’ ও ‘মুহাম্মদ’ লেখা প্রাকৃতিক পাথরের সংগ্রহশালা

পৃথিবীজুড়ে আল্লাহর কুদরত ও রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা বিভিন্ন রূপে ধরা দেয়—প্রকৃতির বৈচিত্র্যে, মানুষের হৃদয়ে, এমনকি জড়জগতের নিঃশব্দ বার্তায়ও। কখনো কখনো কিছু বিস্ময়কর নিদর্শন আমাদের সামনে আসে, যা যুক্তিবোধকে পেছনে ফেলে আত্মায় নাড়া দেয়। পাহাড়, নদী, পাথর কিংবা মরুভূমির বালুকণায়ও আল্লাহর সৃষ্টির অদ্ভুত শিল্প ও নিদর্শন লুকিয়ে থাকে। এমনই এক মুগ্ধতার গল্প নিয়ে হাজির হয়েছেন পাকিস্তানের এক সংগ্রাহক, যাঁর সংগ্রহে রয়েছে ‘আল্লাহ’ ও ‘মুহাম্মদ’ লেখা রহস্যময় বেশ কিছু পাথর।

পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রসৈকত, ঝরনা কিংবা মরুভূমির বালুর নিচে ছড়িয়ে থাকা এক টুকরা পাথর আমাদের কাছে সাধারণ এক খনিজ পদার্থ মাত্র। কিন্তু কারও কারও কাছে এসবই হয়ে ওঠে ইমান, ইতিহাস ও আত্মিক সাধনার প্রতীক। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের নওশাহরো ফিরোজ জেলার বাসিন্দা, ৬০ বছর বয়সী সৈয়দ আলী আসগর তেমনই একজন ব্যতিক্রমী মানুষ, যিনি ২০ বছর ধরে সংগ্রহ করে চলেছেন আশ্চর্য রকমের পাথর। এসব পাথরের বৈশিষ্ট্য হলো—মানুষের হাতের ছোঁয়া ছাড়াই সৃষ্টিগতভাবে সেগুলোর গায়ে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ‘আল্লাহ’ ও ‘মুহাম্মদ’ নাম।

আসগর শাহের দাবি, তাঁর সংগ্রহে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ২০০ বিরল পাথর। এসব তিনি সংগ্রহ করেছেন পাকিস্তান ছাড়াও সৌদি আরব, দুবাই, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইরাক থেকে। তিনি মনে করেন, প্রতিটি পাথর একটি আসমানি আমানত। কোনো কোনো পাথর সংগ্রহে তাঁর লেগেছে পাঁচ-ছয় বছর। তবু কখনো তাড়াহুড়ো করেননি।

আসগর শাহের ভাষায়, ‘এই পাথরগুলো আমার কাছে পবিত্র। এগুলোর মধ্যে এমন একটি আধ্যাত্মিক টান আছে, যা ব্যাখ্যা করা যায় না।’

পাথরগুলো সংরক্ষণের জন্য তিনি বাড়ির একটি নির্দিষ্ট কক্ষে ধাতব স্লেট ও মেডিসিন ব্যবহার করেন। দর্শনার্থীরা অনুমতি নিয়ে পাথরগুলো দেখতে পারেন। পাকিস্তানের খ্যাতনামা ভূ-উপাদান ও খনিজ বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আমজাদ হুসাইন জানিয়েছেন, এসব পাথরের মধ্যে রয়েছে আকিক, ফিরোজা, ওপাল ও মার্জানের মতো খনিজ। ল্যাব পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, এসব লেখা বা ছাপ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক—ভূগর্ভস্থ খনিজ উপাদানের মিশ্রণ ও গঠনপ্রক্রিয়ার ফলে এমনটি তৈরি হয়েছে।

ফিচার-৪

সৈয়দ আলী আসগর জানিয়েছেন, শুরুর দিকে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছে নকল পাথর বিক্রি করতে চেয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে তিনি নিজেও পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং করাচির ল্যাব থেকে সংগ্রহ করা পাথরের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন।

পাথর বিক্রির প্রস্তাবও পেয়েছেন বহুবার, কিন্তু কোনো কিছুতেই রাজি হননি। তাঁর কথা, ‘আমি চাই এগুলো বিশ্বস্ত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকারিভাবে জাদুঘরে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে আমি এগুলো সবার দেখার জন্য উৎসর্গ করতে পারি।’

ফিচার

আসগর শাহের সংগ্রহশালা কেবলই পাথরের প্রদর্শনী নয়; বরং তা এক আত্মিক ভালোবাসা ও আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রকাশ। যখন আমাদের চারপাশে অবিশ্বাস, অবহেলা ও নিছক বস্তুবাদের দাপট, তখন এ ধরনের নিদর্শন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আল্লাহর কুদরতি নিদর্শন আজও পৃথিবীর আনাচকানাচে ছড়িয়ে আছে। কেবল প্রয়োজন একটু গভীর দৃষ্টির, সজাগ হৃদয়ের।

তথ্যসূত্র: ইনডিপেনডেন্ট উর্দু

লেখক: সাব-এডিটর, ৩৬ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত