মুফতি মুহাম্মদ জাকারিয়া আল-আজহারি
১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। জালিম পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার দিন। এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ডানা মেলে উড়াল দেওয়ার দিন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, লাখো বীর বাঙালির আত্মদান এবং অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে, ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা বিজয় লাভ করি। তাই এই দিন আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবাহী দিন।
বিজয় মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। তাঁর সাহায্য ছাড়া কেবল অস্ত্র, রণকৌশল ও শক্তির জোরে বিজয় অর্জিত হয় না। পৃথিবীর এমন অনেক জাতি আছে যাদের হাতে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও যুগের পর যুগ তারা দাসত্বের শেকলে বন্দী হয়ে আছে। কারণ, বিজয়ের জন্য প্রয়োজন আদর্শ, নৈতিক মনোবল এবং আল্লাহর সাহায্য। সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা নিবেদিত, আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন এবং বিজয় দান করেন। যেমন তিনি রাসুল (সা.)-কে অসংখ্য বিজয় দান করেছেন এবং পৃথিবীর বুকে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি মহান আল্লাহ, যিনি তাঁর রাসুল (সা)-কে পাঠিয়েছেন সঠিক পথনির্দেশ ও সত্য জীবন বিধান সহকারে, যাতে তিনি তা সকল বিধানের ওপর বিজয়ীরূপে প্রতিষ্ঠা করেন, সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা ফাত্হ, আয়াত: ২৮)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ‘ফাত্হ’ বা বিজয় নামে স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করে বিজয়কে মহিমান্বিত করেছেন। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর নাজিল হওয়া এ সুরার শুরুতেই আল্লাহ সেটিকে ‘স্পষ্ট বিজয়’ আখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা)-কে খুব ভালোবাসেন, তাই তাঁর সকল দুর্বলতা দূর করে তাঁকে পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করেছেন, সত্য ও সুন্দরের পথে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং বিপুল সাহায্য করেছেন। ফলে তিনি বিজয় লাভ করেছেন। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে স্পষ্ট বিজয় দান করেছি। যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সকল ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করেন, আপনার ওপর তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন এবং আপনাকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন। এবং আল্লাহ আপনাকে দান করেন প্রবল সাহায্য।’ (সুরা ফাত্হ, আয়াত: ১-৩)
কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই যুদ্ধ; এবং এর ফলেই অর্জিত হয় বিজয়। তাই বিজয়ীদের প্রধান দায়িত্ব হলো, সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। এটিই বিজয়ীদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের আমি পৃথিবীতে বিজয় ও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করলে তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং সৎ কাজে আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে বাধা দেয়।’ (সুরা হজ: ৪১) মুসলিম সমাজে নামাজ শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার প্রতীক। আর জাকাত মানুষের ধন-সম্পদে আল্লাহর অধিকার; এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন হয় এবং অর্থের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়। আর সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে বাধা প্রধানের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়; অপরাধ, হানাহানি ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত হয়ে সমাজ শুদ্ধ ও সুন্দর হয়। তাই আল্লাহ তাআলা বিজয়ীদের এ বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিজয়ের দিনে আমাদের শপথ হোক—দেশকে ভালোবেসে বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ার এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার। এ ছাড়া যাঁরা যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন তাঁদের সমাদর করা, যাঁরা দেশকে জুলুম থেকে মুক্ত করার জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করেছেন, তাঁদের জন্য দোয়া করা, কৃতজ্ঞতা জানানো এবং তাঁদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া বিজয়ীদের কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। আর মোমিন কখনো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে ভুলে যায় না। তার সকল সাফল্যই আল্লাহর দরবারে নিবেদিত। কারণ তার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষই আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে পরকালীন সাফল্য ও বিজয় অর্জন। তাই বিজয়ের দিনে মহান আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা তার অন্যতম কর্তব্য। বিজয়ের দিনের কর্তব্য জানিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা)-কে বলেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে মানুষকে আল্লাহর মনোনীত ধর্মে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার মাধ্যমে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নাসর: ১-৩)
লেখক: মুহাদ্দিস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। জালিম পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার দিন। এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ডানা মেলে উড়াল দেওয়ার দিন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, লাখো বীর বাঙালির আত্মদান এবং অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে, ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা বিজয় লাভ করি। তাই এই দিন আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবাহী দিন।
বিজয় মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। তাঁর সাহায্য ছাড়া কেবল অস্ত্র, রণকৌশল ও শক্তির জোরে বিজয় অর্জিত হয় না। পৃথিবীর এমন অনেক জাতি আছে যাদের হাতে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও যুগের পর যুগ তারা দাসত্বের শেকলে বন্দী হয়ে আছে। কারণ, বিজয়ের জন্য প্রয়োজন আদর্শ, নৈতিক মনোবল এবং আল্লাহর সাহায্য। সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা নিবেদিত, আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন এবং বিজয় দান করেন। যেমন তিনি রাসুল (সা.)-কে অসংখ্য বিজয় দান করেছেন এবং পৃথিবীর বুকে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি মহান আল্লাহ, যিনি তাঁর রাসুল (সা)-কে পাঠিয়েছেন সঠিক পথনির্দেশ ও সত্য জীবন বিধান সহকারে, যাতে তিনি তা সকল বিধানের ওপর বিজয়ীরূপে প্রতিষ্ঠা করেন, সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা ফাত্হ, আয়াত: ২৮)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ‘ফাত্হ’ বা বিজয় নামে স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করে বিজয়কে মহিমান্বিত করেছেন। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর নাজিল হওয়া এ সুরার শুরুতেই আল্লাহ সেটিকে ‘স্পষ্ট বিজয়’ আখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা)-কে খুব ভালোবাসেন, তাই তাঁর সকল দুর্বলতা দূর করে তাঁকে পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করেছেন, সত্য ও সুন্দরের পথে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং বিপুল সাহায্য করেছেন। ফলে তিনি বিজয় লাভ করেছেন। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে স্পষ্ট বিজয় দান করেছি। যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সকল ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করেন, আপনার ওপর তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন এবং আপনাকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন। এবং আল্লাহ আপনাকে দান করেন প্রবল সাহায্য।’ (সুরা ফাত্হ, আয়াত: ১-৩)
কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই যুদ্ধ; এবং এর ফলেই অর্জিত হয় বিজয়। তাই বিজয়ীদের প্রধান দায়িত্ব হলো, সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। এটিই বিজয়ীদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের আমি পৃথিবীতে বিজয় ও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করলে তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং সৎ কাজে আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে বাধা দেয়।’ (সুরা হজ: ৪১) মুসলিম সমাজে নামাজ শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার প্রতীক। আর জাকাত মানুষের ধন-সম্পদে আল্লাহর অধিকার; এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন হয় এবং অর্থের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়। আর সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে বাধা প্রধানের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়; অপরাধ, হানাহানি ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত হয়ে সমাজ শুদ্ধ ও সুন্দর হয়। তাই আল্লাহ তাআলা বিজয়ীদের এ বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিজয়ের দিনে আমাদের শপথ হোক—দেশকে ভালোবেসে বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ার এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার। এ ছাড়া যাঁরা যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন তাঁদের সমাদর করা, যাঁরা দেশকে জুলুম থেকে মুক্ত করার জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করেছেন, তাঁদের জন্য দোয়া করা, কৃতজ্ঞতা জানানো এবং তাঁদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া বিজয়ীদের কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। আর মোমিন কখনো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে ভুলে যায় না। তার সকল সাফল্যই আল্লাহর দরবারে নিবেদিত। কারণ তার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষই আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে পরকালীন সাফল্য ও বিজয় অর্জন। তাই বিজয়ের দিনে মহান আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা তার অন্যতম কর্তব্য। বিজয়ের দিনের কর্তব্য জানিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা)-কে বলেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে মানুষকে আল্লাহর মনোনীত ধর্মে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার মাধ্যমে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নাসর: ১-৩)
লেখক: মুহাদ্দিস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মহান আল্লাহ মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন, যার মধ্যে বিপদ-আপদ অন্যতম এক মাধ্যম। দুঃখ-কষ্ট, রোগ-বালাই, অভাব-অনটন, বিরহ-টেনশন বা প্রিয়জনের বিয়োগ—এসবই হতে পারে একেকটি পরীক্ষা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের ভয় ও ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন, ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি...
৬ ঘণ্টা আগেতওবা মানে ক্ষমা চেয়ে সঠিক পথে ফিরে আসা। তওবা মানে নিজের ভুল স্বীকার করে প্রায়শ্চিত্ত গড়ার চেষ্টা করা। সহজে বললে—পাপের পথ ছেড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং ভবিষ্যতে সেই পাপে না ফেরার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করা।
১ দিন আগেজীবনের প্রয়োজনে আমরা কখনো কখনো ঋণগ্রস্ত হই। ঋণগ্রস্ত হওয়া জীবন নানা সময় কুফল ডেকে আনে। ঋণের চাপ উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা তৈরি করে। নবী করিম (সা.)-এর শেখানো কিছু দোয়ার মাধ্যমে আমরা ঋণ থেকে মুক্তি পেতে পারি।
২ দিন আগেসুখময় পরিবার জীবনের অমূল্য সম্পদ। সুখী সংসারকে বলা হয় দুনিয়ার জান্নাত। পরিবার আমাদের আশ্রয়, ভালোবাসা ও সাহসের উৎস। পরিবারে একে অপরের পাশে থাকলে সব বাধা সহজে অতিক্রম করা যায়। ছোঁয়া যায় ভালোবাসার আকাশ। মাখা যায় সুখের আবেশ। এ ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) হতে পারেন উত্তম আদর্শ। কীভাবে তিনি পারিবারিক ও...
৩ দিন আগে