Ajker Patrika

নৈতিক জীবন গঠনে আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব

ড. মোহাম্মদ ইউছুফ
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৪৬
নৈতিক জীবন গঠনে আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব

আত্মার পরিচ্ছন্নতা ও গুনাহমুক্ত থাকা নৈতিক জীবনের ভিত্তি। ইসলামের চোখে যা কিছু অন্যায় এবং যা কিছু অন্তরকে কলুষিত করে, তা থেকে জীবনকে পবিত্র রাখার অনুশীলন করা মোমিনের জন্য আবশ্যক। কোরআন-হাদিসে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে নৈতিক জীবন গঠনের জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। 

মানুষ স্বভাবতই মন্দ কর্মপ্রবণ। প্রবৃত্তির তাড়নায় সে অন্যায় ও অসৎ কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাকে সৎপথে ফেরাতে প্রয়োজন নৈতিকতার শিক্ষা। আল্লাহ তাআলা এ উদ্দেশ্যেই যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নৈতিকতার মহান শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তিনি তাদের আল্লাহর কিতাব পাঠ করে শোনাবেন আর তাদের কোরআন ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের হৃদয় পবিত্র করবেন।’ (সুরা-২: বাকারা, আয়াত: ১২৯) নবী (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে উত্তম শিষ্টাচারের পূর্ণতার জন্য পাঠানো হয়েছে।’ (সিলসিলা সহিহা, হাদিস: ৪৫) 

নৈতিক জীবন গঠনের পূর্বশর্ত আত্মার পরিশুদ্ধি। আত্মা যখন শুদ্ধ, সুন্দর ও কাচের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়, তখন গুনাহমুক্ত জীবন গঠন সহজ হয়ে যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘জেনে রেখো, মানুষের দেহের মধ্যে একখণ্ড মাংসপিণ্ড আছে, যখন তা সংশোধিত হয়, তখন গোটা দেহ সংশোধিত হয়ে যায়। আর যখন তা দূষিত হয়, তখন পুরো দেহ দূষিত হয়ে যায়। মনে রেখো, সেটাই অন্তর।’ (সহিহ্ বুখারি, হাদিস: ৫০)। 

আত্মা পরিশুদ্ধ হলে মানুষ যেমন মনের গোপন পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি লাভ করে, তেমনি অন্যায়-অনাচারে জড়িয়ে পড়া থেকেও বিরত থাকে। তার মধ্যে থাকে না হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার ও নিষিদ্ধ কামনা-বাসনা। চুরি, দুর্নীতি, সুদ-ঘুষ, খুনখারাবি ও পরনিন্দার মতো কাজে সে জড়াতে পারে না। ফলে সে দুনিয়া-আখিরাতের সাফল্য লাভ করে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই সে সফলকাম, যে আত্মাকে পরিচ্ছন্ন করেছে।’ (সুরা-৯১: শামস, আয়াত: ৯) 

পরকালে আল্লাহর কাছে মানুষের ধন-সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির কোনো মূল্য থাকবে না, যদি তাদের অন্তর পরিশুদ্ধ না থাকে। অন্তরে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং সব কাজে তার ভয় না থাকলে পরকালীন জীবন মসৃণ হবে না। দৈহিক সৌন্দর্য কিংবা রূপ-লাবণ্য সেদিন কোনো কাজে আসবে না। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আকৃতি ও সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও সৎকর্মের প্রতিই লক্ষ করেন। এরপর রাসুল (সা.) অন্তর দেখানোর জন্য আঙুল দিয়ে নিজের বুকের দিকে ইশারা করেন।’ (সহিহ্ মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৪) 

অন্তরের পরিশুদ্ধি লাভের জন্য ভালো কাজের অনুশীলন আবশ্যক। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা এবং আল্লাহর ভয় সদা অন্তরে জাগরুক থাকলেই শুদ্ধ অন্তরের অধিকারী হওয়া সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। তাই কায়মনোবাক্যে তাঁর দরবারে দোয়া করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের মন অবশ্যই মন্দ কর্মপ্রবণ; কিন্তু ওই ব্যক্তি নয়, যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেছেন। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা-১২: ইউসুফ, আয়াত: ৫৩) 

লেখক: অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত