Ajker Patrika

টেলিস্কোপে চাঁদ দেখে রমজান মাস গণনা করা যাবে কি

ইসলাম ডেস্ক
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৪: ৩২
Thumbnail image

খালি চোখে চাঁদ দেখাই ইসলামের সাধারণ বিধান। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে এই মূলনীতি মেনেই চান্দ্র মাসের তারিখ নির্ধারণ হয়ে আসছে। তবে একালে দূরবর্তী বা মহাজাগতিক বস্তু স্পষ্ট দেখার জন্য টেলিস্কোপসহ আধুনিক অনেক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবিত হয়েছে। সেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ আরবি মাসের চাঁদ দেখাতেও।

এ নিয়ে কিছু বিতর্কও তৈরি হয়েছে। খালি চোখে দৃশ্যমান না হলেও যন্ত্রের সাহায্যে চাঁদ দেখে রোজা পালন বা ঈদ উদ্‌যাপন নিয়ে অনেক আলোচনা আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রযুক্তির সাহায্যে চাঁদ দেখে রমজান, ঈদ ইত্যাদির তারিখ নির্ণয় ইসলামে কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

এ প্রশ্নের জবাবে ফকিহদের দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। একদল আলিম মনে করেন, সরাসরি খালি চোখে চাঁদ দেখলেই কেবল তা গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় নয়। তাঁদের মতে, চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, তবে সম্পূর্ণরূপে সেগুলোর ওপর নির্ভর করা যাবে না।

সুতরাং খালি চোখে যদি চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে যন্ত্রপাতির সাহায্যে চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে (রমজানের) রোজা সমাপ্ত করো। (বুখারি: ১৯০০; মুসলিম: ১০৮০) 

এই ঘরানার আলিমদের মতে, হাদিসে চাঁদ দেখার গ্রহণযোগ্য যে পদ্ধতির কথা এসেছে, তা শুধু খালি চোখে দেখার সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ এসব প্রযুক্তি রাসুল (সা.)-এর যুগে ছিল না। অতএব, খালি চোখে দেখাই বর্ণিত হাদিসটির লক্ষ্য।

তবে সৌদি আরবসহ বিশ্বের অধিকাংশ আলিমগণ এ কথায় একমত যে, যেকোনো উপায়েই হোক না কেন, চাঁদ দেখাই আসল কথা। সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ‘মাজলিসু হাইআতি কিবারিল ওলামা’ও এই মতকে সমর্থন দিয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুসরণ করা হয়। ১৪০৩ হিজরির ১৬ জমাদিউল আউয়াল এই সংস্থার বৈঠকে সব সদস্যের ঐকমত্যে এই সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়—

১. চাঁদ দেখার কাজে সহযোগী হিসেবে মানমন্দির (অবজারভেটরি) নির্মাণ করা যেতে পারে, এতে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো বাধা বা নিষেধ নেই। 
২. মানমন্দিরের মাধ্যমে দেখা না গেলেও খালি চোখে চাঁদ দেখা গেলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। 
৩. টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ দেখা সম্ভব হলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে—খালি চোখে দেখা যাওয়া জরুরি নয়। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ফলে তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫) 

হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ (রমজানের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা রোজা রাখবে না। (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা রোজা সমাপ্ত করবে না। মেঘ বা অন্য কোনো কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করবে।’ (বুখারি: ১৯০৬) 

এই ঘরানার আলিমদের মতে, হাদিসে শুধু চাঁদ দেখার কথা বলা হয়েছে। এখানে খালি চোখ বা যন্ত্রের সাহায্যের দেখায় কোনো পার্থক্য হবে না। তাই টেলিস্কোপে দেখে দিন নির্ণয়ে অসুবিধা নেই। 

 ৪. মানমন্দিরগুলোর বিশেষজ্ঞ দলের কাছে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সম্ভাব্য সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার প্রয়াস চালানোর অনুরোধ করা হয়েছে। 

 ৫. চাঁদ দেখতে পাওয়ার সম্ভাব্য স্থানগুলোতে দেখার চেষ্টা করতে ভ্রাম্যমাণ মানমন্দির গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষদের থেকে চাঁদ দেখার কাজে সহযোগিতা নিতে হবে। তবে তাঁদের ইসলামি আইন মোতাবেক আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। 

সূত্র: আল-মাউসুআতুল মুয়াসসারাহ ফি ফিকহিল কাযায়াল মুআসারাহ, রোজা অধ্যায়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত