Ajker Patrika

নারী জাতির শ্রেষ্ঠ আদর্শ হজরত ফাতিমা

রাফাত আশরাফ
হজরত ফাতিমা (রা.)। ছবি: সংগৃহীত
হজরত ফাতিমা (রা.)। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের ইতিহাসে হজরত ফাতিমা (রা.) এমন এক নাম, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, আত্মত্যাগ, সহনশীলতা ও আত্মিক বিশুদ্ধতার এক অভূতপূর্ব গল্প। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই বলেছেন, ‘নারীদের মধ্যে তোমাদের জন্য যথেষ্ট অনুসরণীয় ব্যক্তি ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ।’ (জামে তিরমিজি)

চল্লিশ বছর বয়সে যখন রাসুল (সা.)-এর ওপর নবুওয়াতের দায়িত্ব অর্পণ হয়। ফাতিমা (রা.) তখন মাত্র পাঁচ বছরের শিশু। কিন্তু সেই শিশুকালেই তিনি দেখেছেন—রাসুল (সা.)-এর ওপর কুরাইশ নেতাদের অমানবিক অত্যাচার। পিঠে উটের নাড়িভুঁড়ি ফেলে কুরাইশরা যখন রাসুল (সা.)-কে অপমান আর অত্যাচার করছিল, তখন তিনিই ছুটে গিয়ে তা রাসুলের শরীর থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। এ ঘটনা বাবার প্রতি তার সুগভীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের এক জ্বলন্ত প্রমাণ।

ফাতিমা (রা.) ছিলেন মহীয়সী হজরত খাদিজা (রা.)-এর কন্যা। নবী পরিবারে তিনি বেড়ে ওঠেন। মদিনায় হিজরতের পর হিজরি দ্বিতীয় সনে আলী (রা.)-এর সঙ্গে রাসুল (সা.) তাঁর বিয়ে দেন। তখন তার বয়স ছিল আঠারো বছর।

সে সময় আলী (রা.)-এর কাছে সম্পদ বলতে ছিল শুধু একটি বর্ম। সেটি বিক্রি করে মোহরানা প্রদান করেন। বিয়ের পর রাসুল (সা.) কোরআন তিলাওয়াত করে এক গ্লাস পানিতে ফুঁ দিয়ে সেই পানি বর-কনের মাথায় ছিটিয়ে দোয়া করেন। এই দম্পতির ঘর আলোয় রাঙা হয়েছিল দুই সন্তান—হাসান ও হুসাইনের জন্মের মাধ্যমে।

ফাতিমা (রা.)-এর সংসার ছিল অতি সাধারণ ও কষ্টে ভরা। আলী (রা.) ছিলেন দরিদ্র। কোনো গোলাম ছিল না। তাই গৃহকর্ম সব ফাতিমা (রা.)-এর একাই আনজাম দিতে হতো। শারীরিক দুর্বলতার কারণে একদিন তিনি একটি দাস চেয়েছিলেন বাবার কাছে। তখন রাসুল (সা.) তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি যা চেয়েছ, তার চেয়ে উত্তম কিছু আমি শেখাব না? ঘুমানোর সময় ও নামাজের পর নির্দিষ্ট তাসবিহ পড়ো।’ তখন তিনি তাঁকে কিছু তাসবিহ শিখিয়ে দিলেন। (সহিহ্ বুখারি)

মক্কা বিজয়ের সময় ফাতিমা (রা.) বাবার সঙ্গে ছিলেন। সেই সময়ে তাঁর স্মৃতিতে ফিরে আসে শৈশবের নিদারুণ কষ্ট, মা হারানোর যন্ত্রণা ও মক্কার নির্যাতনের দিনগুলো। শেষ জীবনে রাসুল (সা.)-এর অসুস্থতার সময় ফাতিমা (রা.) সর্বক্ষণ পাশে থেকে সেবা করতেন।

একবার রাসুল (সা.) তাঁকে ডেকে কানে কিছু বললে তিনি কেঁদে ফেলেন, আবার পরক্ষণেই হাসেন। পরবর্তীতে আয়েশা (রা.) এই ঘটনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে রাসুল (সা.) তাঁর ইন্তেকালের দুঃসংবাদ দেন। তাই তিনি কেঁদে ছিলেন। পরে রাসুল সা. জানান, ‘তুমি আমার মৃত্যুর পর সবার আগে আমার সঙ্গে মিলিত হবে।’ এতে তিনি হাসছিলেন।

রাসুল (সা.) বলেছিলেন, ‘ফাতিমা আমার দেহের অংশ। কেউ তাকে কষ্ট দিলে আমাকেই কষ্ট দেয়।’

হিজরি ১১ সনের রমজান মাসে, রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের ছয় মাস পর, হজরত ফাতিমা (রা.) মাত্র আটাশ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবন প্রতিটি মুসলিম নারীর জন্য এক দীপ্ত মানদণ্ড, যেখানে দায়িত্ব, সাহস ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা একসঙ্গে ফুটে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত