Ajker Patrika

জাহিলি যুগ ও রহমতের নবী (সা.)

ইসলাম ডেস্ক 
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত

জাহিলি যুগ—অন্ধকারের এক দীর্ঘ অধ্যায়। সেই সময়ে আরবসহ গোটা পৃথিবী নিমজ্জিত ছিল ঘোর অমানিশায়। চতুর্দিকে ছিল অজ্ঞানতার কালো মেঘ, অশান্তির বিষাদময় ছায়া। ন্যায়-নীতি, মানবতা ও ভ্রাতৃত্ব ছিল বিস্মৃতপ্রায় এক কাহিনি। হত্যা, লুণ্ঠন, ব্যভিচার, নারীর অবমাননা, গোত্রীয় অহমিকা আর মূর্তিপূজা—এসব ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অপরাধ-অপকর্ম চলত প্রকাশ্যে, যেন তা-ই সমাজের নিয়ম ও সংস্কৃতি।

এই আঁধারঘেরা প্রান্তরে আলোকবর্তিকার মতো আবির্ভূত হলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। তিনি জাহিলিয়াতের অমানিশাকে চ্যালেঞ্জ জানালেন, গ্রহণ করলেন সমাজসংস্কারের কঠিনতম দায়িত্ব। তিনি যে স্বপ্ন বুকে ধারণ করেছিলেন, তা শুধু একটি জাতির নয়; বরং গোটা মানবতার মুক্তির এক মহৎ আহ্বান। তিনি শুরু করলেন মানুষকে অন্তরকে পরিবর্তনের দাওয়াত। আত্মনিয়োগ করলেন অশান্তির স্থলে শান্তি, অন্যায়ের স্থলে ন্যায়, অন্ধকারের স্থলে আলো প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।

দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তাঁর অক্লান্ত শ্রম, ধৈর্য ও দাওয়াতের ফল ধীরে ধীরে রূপ নিল নতুন বাস্তবতায়। যে সমাজ একদিন নিমজ্জিত ছিল পশ্চাৎপদতায়, ধীরে ধীরে সেটি রূপান্তরিত হতে লাগল সভ্যতার আদর্শ কেন্দ্রে। অবশেষে তিনি সফল হলেন—চূড়ান্ত সাফল্যে। যে যুগে মানবতা ছিল বন্দী, যে সময়কে মানুষ ডাকত অন্ধকারের যুগ বলে, সেই সময়কে তিনি বদলে দিলেন সোনালি আলোর যুগে।

জাহিলিয়াতের আঁধার থেকে উঠে এল নূরের আলো। অমানিশা ভেদ করে জায়গা করে নিল নবুওয়াতের সূর্য। সেই সূর্যালোক আজও মানবজাতির জন্য অক্ষয় দিশারি, যা যুগে যুগে আলোকিত করে চলেছে দুনিয়াকে।

জাহিলি যুগ: জাহিলি যুগ হলো সেই সময়কাল, যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াতের আগে আরব উপদ্বীপে বিরাজমান ছিল। এ যুগ প্রায় দুই শ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চলমান ছিল। এ সময়কে জাহিলি যুগ বলা হয়, যা মূলত তার অজ্ঞতার কারণে।

জাহিলি যুগের চিত্র: জাহিলি যুগের বাস্তব চিত্রটা নিখুঁতভাবে এঁকেছেন হজরত জাফর তায়্যার (রা.) বাদশাহ নাজ্জাশির দরবারে। তিনি সেদিন দীপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘হে বাদশা! আমরা ছিলাম এক অজ্ঞ, মূর্খ ও বিভ্রান্ত জাতি। আমাদের ধর্ম ছিল কেবল হাতে গড়া মূর্তির পূজা করা। আমাদের রীতি ছিল মৃত জন্তুর গোশত খাওয়া। আমাদের সমাজ ছিল ব্যভিচারে ভরপুর। অন্যায় ও নৃশংসতায় আমরা আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলাম। আমরা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতাম।

প্রতিবেশীর হকের কোনো পরোয়া করতাম না। আমাদের শক্তিমানেরা দুর্বলকে গিলে খেত। অত্যাচার করতে পারাকে আমরা গর্বের বিষয় মানতাম। এভাবেই আমরা ডুবে ছিলাম অমানবিকতা ও অন্ধকারের আঁধারে। আমাদের এ দুর্দশা বিরামহীনভাবে যুগের পর যুগ চলতে থাকে। এমন অবস্থায় মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করলেন। তিনি আমাদের মাঝে পাঠালেন একজন নবী, যাঁকে আমরা জন্ম থেকেই জানি।

তাঁর বংশ পরিচ্ছন্ন। চরিত্র মহান। সততা ও সত্যবাদিতায় তিনি অতুলনীয়। আমাদের চোখের সামনেই তাঁর শুদ্ধ নৈতিকতা ও নির্মল জীবন প্রতীয়মান। তিনি এলেন হিদায়াতের আলো নিয়ে। হাতে ধরে দেখালেন সত্যের প্রদীপ। তাঁর আগমনেই মুছে গেল জাহিলিয়াতের ঘোর অমানিশা। ছিন্ন হলো অন্যায়ের শৃঙ্খল। উন্মোচিত হলো আলোর দিগন্ত।

জাহিলি যুগের মন্দ বৈশিষ্ট্যসমূহ। মূর্তিপূজা: জাহিলি যুগের সবচেয়ে বড় মন্দ দোষ ছিল মূর্তিপূজা। কাবা শরিফকে ঘিরে তিন শতাধিক মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল ওই লোকেরা। প্রতিটি গোত্রের আলাদা দেবতা ছিল এবং তারা সেই দেবতার পূজা করত। এমনকি কাবার ভেতরও মূর্তি রাখা হয়েছিল। হজও হয়ে গিয়েছিল মূর্তিপূজাকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান। আল্লাহর একত্ববাদ ও হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর রেখে যাওয়া তাওহিদের শিক্ষা ভুলে গিয়ে তারা অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল।

কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস: ওই সব লোকের দৈনন্দিন জীবনে কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ছিল অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ভাগ্য গণনা, জ্যোতিষবিদ্যা, পাখির ডাক, পশুর চলাফেরা, হাড়-হাড্ডির ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ—এসব ছিল তাদের সাধারণ প্রথা। যুক্তিবোধ, জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার বদলে তারা এসব কুসংস্কারকে পথপ্রদর্শক মনে করত। ফলে সমাজে যৌক্তিক চিন্তা ও বাস্তব বিচারপ্রক্রিয়ার কোনো স্থান ছিল না।

নারীর অবমাননা: জাহিলি সমাজে নারীর অবস্থান ছিল অত্যন্ত করুণ। তাদের সম্পত্তির মতো গণ্য করা হতো। উত্তরাধিকার থেকে তারা বঞ্চিত ছিল। বিধবা নারীদের জোরপূর্বক কবজা করা হতো। কন্যাশিশুর জন্মকে লজ্জাজনক মনে করা হতো। তাই অনেকেই জীবন্ত কন্যাশিশুকে মাটিতে পুঁতে ফেলত। এভাবে ওই যুগে নারীরা ছিল নির্যাতন, অবমাননা ও অমানবিকতার শিকার।

সামাজিক অসংগতি: ব্যভিচার, মদ্যপান, জুয়া, সুদ, খুনোখুনি ও লুণ্ঠন ছিল তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারও জীবন বা সম্পদের নিরাপত্তা ছিল না। যার শক্তি বেশি, তার প্রভাব ও ক্ষমতাই আইন হিসেবে বিবেচিত হতো। দুর্বলরা সব সময় শোষিত হতো। নৈতিকতার কোনো মানদণ্ডই সমাজে কার্যকর ছিল না।

আইন ও ন্যায়বিচারের অভাব: কোনো রাষ্ট্রীয় বা একক আইন ছিল না। গোত্রপ্রধানের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ন্যায়বিচারের পরিবর্তে শক্তিশালীর শাসন চলত। দুর্বল শ্রেণি সব সময় বঞ্চিত হতো এবং তাদের অধিকার কেউ রক্ষা করত না। ফলে সমাজে শোষণ ও অন্যায় চরম আকার ধারণ করেছিল।

অর্থনৈতিক বৈষম্য: ধনী ও গরিবের মধ্যে ছিল তীব্র বৈষম্য। সুদ ছিল অর্থনীতির প্রধান মাধ্যম। যা গরিবকে নিঃশেষ করে দিত। ধনীরা ক্রমশ ধনী হয়ে উঠত। আর গরিবেরা আরও নিপীড়িত হতো। বাণিজ্য, চাষাবাদ ও শ্রমের সুফল সমাজের একশ্রেণির হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল।

প্রতিহিংসাপরায়ণতা: সামান্য ঘটনা থেকেও বড় বড় যুদ্ধ লেগে যেত। গোত্রীয় রেষারেষি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলত। প্রতিহিংসার কারণে হাজার হাজার প্রাণহানি হতো। এসব দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ইতিহাসে ‘আয়্যামুল আরব’ নামে পরিচিত।

‘জোর যার, মুলুক তার’: জাহিলি যুগের সমাজে বিরাজ করত এক অন্ধাচারের নিয়ম—‘জোর যার, মুলুক তার।’ ক্ষমতা যার হাতের মুঠোয়, নীতি ও আইনও তার ইচ্ছার দিকে বাঁক নিত। মানুষের রক্তের মূল্য ছিল পানির চেয়ে সস্তা। প্রতিদিন ছিল হানাহানি, মারামারি, রক্তপাত—নিত্যনৈমিত্তিক শোকাবহ দৃশ্য। কেউ জানত না, কেন তাকে হত্যা করা হচ্ছে। আর কার অনুপযুক্ত রোষের শিকার তাকে হতে হলো।

সেই সময়ের সমাজ চলত ক্ষুধা ও প্রতিশোধের তাগিদে। যুদ্ধে বিজয়ীর ইচ্ছে ছিল ন্যায়ের বিকল্প।

আলোকবর্তিকার আগমন: এই অন্ধকারে এসে দীপ্তি হয়ে প্রকাশিত হলো নবী মুহাম্মদ (সা.)। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত তিনি, পৃথিবীর আলোকবর্তিকা রূপে। যিনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনলেন। কেবল কোরআনের আলোকেই নয়, তাঁর জীবন ও চরিত্রের মাধ্যমে তিনি সমাজে ন্যায়, মানবিকতা ও সদাচারের বীজ বপন করলেন।

রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা প্রতিটি অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হয়ে উঠেছিল। তিনি মূর্তিপূজার চূর্ণ করে গড়ে তোলেন আল্লাহর একত্ববাদের দালান। নারীর দিলেন তার প্রাপ্ত মর্যাদা। কন্যাশিশুর অধিকার নিশ্চিত করলেন। সামাজিক অসংগতি, সুদ ও লুণ্ঠন বিলুপ্ত করে প্রতিষ্ঠা ন্যায় ও ইনসাফ। প্রতিহিংসা, রক্তক্ষয় ও জুলুমের সংস্কৃতিকে নিন্দা জানিয়ে, মানবতার প্রতি দয়া, ক্ষমা ও ন্যায়ের পথ প্রদর্শন করলেন।

রাসুল (সা.)-এর প্রতিরোধ ছিল কেবল তাত্ত্বিক ছিল না, বরং তিনি জীবনের প্রতিটি ধাপে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। তিনি নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিশ্ববাসীকে দেখালেন যে সত্য, ধৈর্য ও ন্যায়ের পথে চললে অন্ধকার দূর হয় এবং সমাজকে আলোর দিকে নেওয়া যায়।

জাহিলি যুগের সব অমানবিক প্রথা, কুসংস্কার ও শোষণ তিনি একে একে দূর করে দিয়ে মানুষের হৃদয়ে ইমানের আলো জ্বালিয়েছিলেন।

ফলে জাহিলি যুগের অন্ধকার যতই ঘনঘন হোক, রাসুল (সা.)-এর আলোর দীপ্তি তা ছাপিয়ে গিয়েছে। তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা আজও মানুষের জীবনকে আলোকিত করে চলছে। তাঁর জ্ঞানের আলোতে দূর হয়েছে সহস্র কালব্যাপী জমে থাকা আঁধার। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক: জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মক্কা-মদিনায় ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা, যা জানা গেল

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসন্ন হজ মৌসুম চলাকালে মসজিদুল হারাম (মক্কা) এবং মসজিদে নববীর (মদিনা) ভেতরে ছবি তোলার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার যে সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে, তা মিথ্যা বলে জানিয়েছে দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন।

এ বিষয়ে কোনো সৌদি আরবের সরকারি নীতি পরিবর্তন ঘোষণা করা হয়নি বলে জানায় এই সংবাদমাধ্যম।

৮ ডিসেম্বর (সোমবার) সংবাদমাধ্যমটির ফ্যাক্টচেক থেকে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, যেখানে দাবি করা হয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ ২০২৬ সালের হজ মৌসুমে মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীর ভেতরে ছবি তোলার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থা থেকে এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়নি।

দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ধরনের মিথ্যা দাবি মাঝেমধ্যে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হজ বা ওমরাহর মৌসুমে এমন গুজব বেশি বিস্তার লাভ করে। এসব তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়াই কাম্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যে বন্ধুত্ব টিকে থাকে দুনিয়া ও আখিরাতে

তাসনিফ আবীদ
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মানুষ সামাজিক জীব। একা চলা তার স্বভাব নয়। জীবনে চলার পথে তাই একজন প্রকৃত বন্ধুর প্রয়োজন হয়—যে পাশে থাকবে বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সবাই কি বন্ধুত্বের যোগ্য? ইসলাম এ বিষয়ে দিয়েছে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা।

কেবল সম্পর্ক নয়, বরং বন্ধুত্ব হতে হবে পরিশুদ্ধ, নীতিনির্ভর ও পরকালমুখী। চলার পথে আমরা সবাই বন্ধুত্ব করি—কখনো প্রয়োজনে, কখনো স্বার্থে, কখনো পরিস্থিতিতে। কিন্তু প্রকৃত বন্ধু কে? যে আমাদের চিন্তা, কর্ম ও দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। ইসলাম তাই কেবল বন্ধুত্ব গড়ে তোলার আহ্বানই দেয়নি, দিয়েছে সচেতনতার দিকনির্দেশনাও।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘ইমানদার পুরুষ এবং ইমানদার নারীরা একে অপরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের আদেশ করে, অসৎ কাজে নিষেধ করে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ মান্য করে চলে। তাদের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে।’ (সুরা তাওবা: ৭১)

আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই বিরাগ—এটাই মুসলমানের সম্পর্কের মূলনীতি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে কাউকে ভালোবাসে আল্লাহর জন্য, কাউকে কিছু দেয় আল্লাহর জন্য, কারও সঙ্গে রাগ করে আল্লাহর জন্য—সে তার ইমান পূর্ণ করল।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ্)। এমন বন্ধুত্ব টিকে থাকে দুনিয়া ও আখিরাতে। অন্যদিকে স্বার্থ, দম্ভ, আভিজাত্য বা জৌলুশের ওপর নির্মিত বন্ধুত্ব টেকে না।

ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর কিছু গুণাবলি হলো—সে সৎ পরামর্শদাতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণে অভ্যস্ত। নিজে সৎ জীবনযাপন করে এবং অন্যকেও অনৈতিকতা থেকে দূরে রাখে। গোপন কথা গোপন রাখে, বিশ্বাস ভঙ্গ করে না। বিপদে-আপদে পাশে থাকে, অসুস্থতায় খোঁজ নেয়, দাওয়াতে সাড়া দেয়। এক কথায়, ভালো বন্ধু আপনার আখিরাতকেও সুন্দর করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্কই পরকালের পাথেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ০৮ মিনিট
ফজর০৫: ০৯ মিনিট০৬: ২৯ মিনিট
জোহর১১: ৫২ মিনিট০৩: ৩৫ মিনিট
আসর০৩: ৩৬ মিনিট০৫: ১১ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৩ মিনিট০৬: ৩২ মিনিট
এশা০৬: ৩৩ মিনিট০৫: ০৮ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাউকে কাফের বলার বিষয়ে নবীজির সতর্কবার্তা

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৯
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কোনো মুসলমানকে সামান্য কোনো কারণে কাফের বলা ইসলামে বৈধ নয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘একজন যেন অন্যজনকে ফাসিক বলে গালি না দেয় এবং একজন যেন অন্যজনকে কাফের বলে অপবাদ না দেয়। কেননা, অপরজন যদি তা না হয়, তবে সে অপবাদ তার নিজের ওপর আপতিত হবে।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬০৪৫)

এ বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) অন্য এক হাদিসে বলেছেন, ‘কেউ তার ভাইকে কাফের বলে সম্বোধন করলে উভয়ের মধ্যে যেকোনো একজনের ওপর তা ফিরে আসবে। যাকে কাফের বলা হয়েছে, সে কাফের হলে তো হলোই; নতুবা কথাটি বক্তার ওপর ফিরে আসবে।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬৪০৪)

ইসলামের বিধান হলো, কারও থেকে কুফরি কোনো কাজ বা কথা প্রকাশ পেলেও তাকে সরাসরি তাকফির করা বা কাফের ঘোষণা দেওয়া সাধারণ মানুষের কাজ নয়। ইসলামবিষয়ক গবেষকেরা ওই ব্যক্তির সার্বিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করে ইসলামের মূলনীতি সামনে রেখে ফতোয়া দেবেন।

তবে সতর্কতার বিষয় হলো, শরিয়তের দৃষ্টিতে অমুসলিমরা স্পষ্টতই কাফের। তাদের কুফরকে কেউ কুফর না মানা অথবা তাদের কুফরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া যাবে না। (আশ শিফা: ২/২৮১)

ইমাম আবুল মাআলি (রহ.) বলেন, ‘কোনো কাফেরকে মুসলমান বলে চালিয়ে দেওয়া এবং কোনো মুসলমানকে দ্বীন থেকে বের করে দেওয়া, দুটোই জঘন্য।’ (ইকফারুল মুলহিদিন: ২৭)

মোটকথা হলো, কাউকে তাকফির করা তথা কাফের ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। একইভাবে অতিমাত্রায় ছাড়াছাড়ি করে কাফের বা মুরতাদকে মুসলিম আখ্যা দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মূলনীতির অনুসরণ করতে হবে। (শরহে আকিদাতুত তাহাবি: পৃষ্ঠা-৯১)

নবী করিম (সা.) উম্মতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘কোনো মুমিনকে কুফরের অপবাদ দেওয়া তাকে হত্যা করার মতোই।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬১০৫)। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত