Ajker Patrika

জাহিলি যুগ ও রহমতের নবী (সা.)

ইসলাম ডেস্ক 
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত

জাহিলি যুগ—অন্ধকারের এক দীর্ঘ অধ্যায়। সেই সময়ে আরবসহ গোটা পৃথিবী নিমজ্জিত ছিল ঘোর অমানিশায়। চতুর্দিকে ছিল অজ্ঞানতার কালো মেঘ, অশান্তির বিষাদময় ছায়া। ন্যায়-নীতি, মানবতা ও ভ্রাতৃত্ব ছিল বিস্মৃতপ্রায় এক কাহিনি। হত্যা, লুণ্ঠন, ব্যভিচার, নারীর অবমাননা, গোত্রীয় অহমিকা আর মূর্তিপূজা—এসব ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অপরাধ-অপকর্ম চলত প্রকাশ্যে, যেন তা-ই সমাজের নিয়ম ও সংস্কৃতি।

এই আঁধারঘেরা প্রান্তরে আলোকবর্তিকার মতো আবির্ভূত হলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। তিনি জাহিলিয়াতের অমানিশাকে চ্যালেঞ্জ জানালেন, গ্রহণ করলেন সমাজসংস্কারের কঠিনতম দায়িত্ব। তিনি যে স্বপ্ন বুকে ধারণ করেছিলেন, তা শুধু একটি জাতির নয়; বরং গোটা মানবতার মুক্তির এক মহৎ আহ্বান। তিনি শুরু করলেন মানুষকে অন্তরকে পরিবর্তনের দাওয়াত। আত্মনিয়োগ করলেন অশান্তির স্থলে শান্তি, অন্যায়ের স্থলে ন্যায়, অন্ধকারের স্থলে আলো প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।

দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তাঁর অক্লান্ত শ্রম, ধৈর্য ও দাওয়াতের ফল ধীরে ধীরে রূপ নিল নতুন বাস্তবতায়। যে সমাজ একদিন নিমজ্জিত ছিল পশ্চাৎপদতায়, ধীরে ধীরে সেটি রূপান্তরিত হতে লাগল সভ্যতার আদর্শ কেন্দ্রে। অবশেষে তিনি সফল হলেন—চূড়ান্ত সাফল্যে। যে যুগে মানবতা ছিল বন্দী, যে সময়কে মানুষ ডাকত অন্ধকারের যুগ বলে, সেই সময়কে তিনি বদলে দিলেন সোনালি আলোর যুগে।

জাহিলিয়াতের আঁধার থেকে উঠে এল নূরের আলো। অমানিশা ভেদ করে জায়গা করে নিল নবুওয়াতের সূর্য। সেই সূর্যালোক আজও মানবজাতির জন্য অক্ষয় দিশারি, যা যুগে যুগে আলোকিত করে চলেছে দুনিয়াকে।

জাহিলি যুগ: জাহিলি যুগ হলো সেই সময়কাল, যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াতের আগে আরব উপদ্বীপে বিরাজমান ছিল। এ যুগ প্রায় দুই শ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চলমান ছিল। এ সময়কে জাহিলি যুগ বলা হয়, যা মূলত তার অজ্ঞতার কারণে।

জাহিলি যুগের চিত্র: জাহিলি যুগের বাস্তব চিত্রটা নিখুঁতভাবে এঁকেছেন হজরত জাফর তায়্যার (রা.) বাদশাহ নাজ্জাশির দরবারে। তিনি সেদিন দীপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘হে বাদশা! আমরা ছিলাম এক অজ্ঞ, মূর্খ ও বিভ্রান্ত জাতি। আমাদের ধর্ম ছিল কেবল হাতে গড়া মূর্তির পূজা করা। আমাদের রীতি ছিল মৃত জন্তুর গোশত খাওয়া। আমাদের সমাজ ছিল ব্যভিচারে ভরপুর। অন্যায় ও নৃশংসতায় আমরা আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলাম। আমরা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতাম।

প্রতিবেশীর হকের কোনো পরোয়া করতাম না। আমাদের শক্তিমানেরা দুর্বলকে গিলে খেত। অত্যাচার করতে পারাকে আমরা গর্বের বিষয় মানতাম। এভাবেই আমরা ডুবে ছিলাম অমানবিকতা ও অন্ধকারের আঁধারে। আমাদের এ দুর্দশা বিরামহীনভাবে যুগের পর যুগ চলতে থাকে। এমন অবস্থায় মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করলেন। তিনি আমাদের মাঝে পাঠালেন একজন নবী, যাঁকে আমরা জন্ম থেকেই জানি।

তাঁর বংশ পরিচ্ছন্ন। চরিত্র মহান। সততা ও সত্যবাদিতায় তিনি অতুলনীয়। আমাদের চোখের সামনেই তাঁর শুদ্ধ নৈতিকতা ও নির্মল জীবন প্রতীয়মান। তিনি এলেন হিদায়াতের আলো নিয়ে। হাতে ধরে দেখালেন সত্যের প্রদীপ। তাঁর আগমনেই মুছে গেল জাহিলিয়াতের ঘোর অমানিশা। ছিন্ন হলো অন্যায়ের শৃঙ্খল। উন্মোচিত হলো আলোর দিগন্ত।

জাহিলি যুগের মন্দ বৈশিষ্ট্যসমূহ। মূর্তিপূজা: জাহিলি যুগের সবচেয়ে বড় মন্দ দোষ ছিল মূর্তিপূজা। কাবা শরিফকে ঘিরে তিন শতাধিক মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল ওই লোকেরা। প্রতিটি গোত্রের আলাদা দেবতা ছিল এবং তারা সেই দেবতার পূজা করত। এমনকি কাবার ভেতরও মূর্তি রাখা হয়েছিল। হজও হয়ে গিয়েছিল মূর্তিপূজাকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান। আল্লাহর একত্ববাদ ও হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর রেখে যাওয়া তাওহিদের শিক্ষা ভুলে গিয়ে তারা অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল।

কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস: ওই সব লোকের দৈনন্দিন জীবনে কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ছিল অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ভাগ্য গণনা, জ্যোতিষবিদ্যা, পাখির ডাক, পশুর চলাফেরা, হাড়-হাড্ডির ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ—এসব ছিল তাদের সাধারণ প্রথা। যুক্তিবোধ, জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার বদলে তারা এসব কুসংস্কারকে পথপ্রদর্শক মনে করত। ফলে সমাজে যৌক্তিক চিন্তা ও বাস্তব বিচারপ্রক্রিয়ার কোনো স্থান ছিল না।

নারীর অবমাননা: জাহিলি সমাজে নারীর অবস্থান ছিল অত্যন্ত করুণ। তাদের সম্পত্তির মতো গণ্য করা হতো। উত্তরাধিকার থেকে তারা বঞ্চিত ছিল। বিধবা নারীদের জোরপূর্বক কবজা করা হতো। কন্যাশিশুর জন্মকে লজ্জাজনক মনে করা হতো। তাই অনেকেই জীবন্ত কন্যাশিশুকে মাটিতে পুঁতে ফেলত। এভাবে ওই যুগে নারীরা ছিল নির্যাতন, অবমাননা ও অমানবিকতার শিকার।

সামাজিক অসংগতি: ব্যভিচার, মদ্যপান, জুয়া, সুদ, খুনোখুনি ও লুণ্ঠন ছিল তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারও জীবন বা সম্পদের নিরাপত্তা ছিল না। যার শক্তি বেশি, তার প্রভাব ও ক্ষমতাই আইন হিসেবে বিবেচিত হতো। দুর্বলরা সব সময় শোষিত হতো। নৈতিকতার কোনো মানদণ্ডই সমাজে কার্যকর ছিল না।

আইন ও ন্যায়বিচারের অভাব: কোনো রাষ্ট্রীয় বা একক আইন ছিল না। গোত্রপ্রধানের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ন্যায়বিচারের পরিবর্তে শক্তিশালীর শাসন চলত। দুর্বল শ্রেণি সব সময় বঞ্চিত হতো এবং তাদের অধিকার কেউ রক্ষা করত না। ফলে সমাজে শোষণ ও অন্যায় চরম আকার ধারণ করেছিল।

অর্থনৈতিক বৈষম্য: ধনী ও গরিবের মধ্যে ছিল তীব্র বৈষম্য। সুদ ছিল অর্থনীতির প্রধান মাধ্যম। যা গরিবকে নিঃশেষ করে দিত। ধনীরা ক্রমশ ধনী হয়ে উঠত। আর গরিবেরা আরও নিপীড়িত হতো। বাণিজ্য, চাষাবাদ ও শ্রমের সুফল সমাজের একশ্রেণির হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল।

প্রতিহিংসাপরায়ণতা: সামান্য ঘটনা থেকেও বড় বড় যুদ্ধ লেগে যেত। গোত্রীয় রেষারেষি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলত। প্রতিহিংসার কারণে হাজার হাজার প্রাণহানি হতো। এসব দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ইতিহাসে ‘আয়্যামুল আরব’ নামে পরিচিত।

‘জোর যার, মুলুক তার’: জাহিলি যুগের সমাজে বিরাজ করত এক অন্ধাচারের নিয়ম—‘জোর যার, মুলুক তার।’ ক্ষমতা যার হাতের মুঠোয়, নীতি ও আইনও তার ইচ্ছার দিকে বাঁক নিত। মানুষের রক্তের মূল্য ছিল পানির চেয়ে সস্তা। প্রতিদিন ছিল হানাহানি, মারামারি, রক্তপাত—নিত্যনৈমিত্তিক শোকাবহ দৃশ্য। কেউ জানত না, কেন তাকে হত্যা করা হচ্ছে। আর কার অনুপযুক্ত রোষের শিকার তাকে হতে হলো।

সেই সময়ের সমাজ চলত ক্ষুধা ও প্রতিশোধের তাগিদে। যুদ্ধে বিজয়ীর ইচ্ছে ছিল ন্যায়ের বিকল্প।

আলোকবর্তিকার আগমন: এই অন্ধকারে এসে দীপ্তি হয়ে প্রকাশিত হলো নবী মুহাম্মদ (সা.)। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত তিনি, পৃথিবীর আলোকবর্তিকা রূপে। যিনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনলেন। কেবল কোরআনের আলোকেই নয়, তাঁর জীবন ও চরিত্রের মাধ্যমে তিনি সমাজে ন্যায়, মানবিকতা ও সদাচারের বীজ বপন করলেন।

রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা প্রতিটি অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হয়ে উঠেছিল। তিনি মূর্তিপূজার চূর্ণ করে গড়ে তোলেন আল্লাহর একত্ববাদের দালান। নারীর দিলেন তার প্রাপ্ত মর্যাদা। কন্যাশিশুর অধিকার নিশ্চিত করলেন। সামাজিক অসংগতি, সুদ ও লুণ্ঠন বিলুপ্ত করে প্রতিষ্ঠা ন্যায় ও ইনসাফ। প্রতিহিংসা, রক্তক্ষয় ও জুলুমের সংস্কৃতিকে নিন্দা জানিয়ে, মানবতার প্রতি দয়া, ক্ষমা ও ন্যায়ের পথ প্রদর্শন করলেন।

রাসুল (সা.)-এর প্রতিরোধ ছিল কেবল তাত্ত্বিক ছিল না, বরং তিনি জীবনের প্রতিটি ধাপে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। তিনি নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিশ্ববাসীকে দেখালেন যে সত্য, ধৈর্য ও ন্যায়ের পথে চললে অন্ধকার দূর হয় এবং সমাজকে আলোর দিকে নেওয়া যায়।

জাহিলি যুগের সব অমানবিক প্রথা, কুসংস্কার ও শোষণ তিনি একে একে দূর করে দিয়ে মানুষের হৃদয়ে ইমানের আলো জ্বালিয়েছিলেন।

ফলে জাহিলি যুগের অন্ধকার যতই ঘনঘন হোক, রাসুল (সা.)-এর আলোর দীপ্তি তা ছাপিয়ে গিয়েছে। তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা আজও মানুষের জীবনকে আলোকিত করে চলছে। তাঁর জ্ঞানের আলোতে দূর হয়েছে সহস্র কালব্যাপী জমে থাকা আঁধার। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক: জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনায় ইসলামের নির্দেশনা

শাব্বির আহমদ
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি রাস্তায় চলাচল এবং এর ব্যবস্থাপনায়ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম নিরাপদ সড়ক ও জনপথ গড়ে তোলাকে যেমন রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে দেখে, আবার এটিকে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হিসেবেও চিহ্নিত করে।

নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলাকে নবী (সা.) ইমানের শাখা বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইমানের ৭০টির বেশি শাখা আছে...। আর সবচেয়ে নিচের শাখাটি হলো সড়কে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া।’ (সহিহ বুখারি)।

এমনকি রাস্তা থেকে কাঁটা, ময়লা বা প্রতিবন্ধকতা সরানোকে ইসলামে সদকা বা দান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে; যা পরকালে একজন মুমিনের ক্ষমা ও জান্নাত পাওয়ার অসিলা হতে পারে। এ ছাড়া সড়ক দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা এবং যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা ইসলামে সুস্পষ্ট জুলুম ও গুনাহের কাজ।

ইসলাম ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু যান চলাচল নিশ্চিত করাকে বিশেষ সওয়াব লাভের উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাই নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে ট্রাফিক পুলিশ, চালক ও সাধারণ নাগরিক—সবারই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

চালকদের একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে—বেপরোয়া গতি, অদক্ষতা বা অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটানো গুরুতর অপরাধ। আর ইচ্ছাকৃত বা স্বেচ্ছায় হত্যাকাণ্ডের পরিণাম যেমন জাহান্নাম, তেমনি অসতর্কতাবশত কাউকে হত্যা করলে সে জন্যও কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে ইসলামে।

সাধারণ নাগরিকদের কর্তব্য হলো চলাচলের সময় রাস্তার প্রধান হকগুলো মেনে চলা। যেমন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, নিজে সালাম দেওয়া, কেউ সালাম দিলে তার উত্তর দেওয়া, অন্ধ, বৃদ্ধ, শিশু বা বিপদে পড়া ব্যক্তিকে সাহায্য করা।

আর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের উচিত সড়ক নিরাপদ রাখতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, অযথা কাউকে হয়রানি না করা, অসদুপায় গ্রহণের সুযোগ কাউকে না দেওয়া, নিজেও গ্রহণ না করা, আইনের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা।

বিষয়:

সড়কইসলাম
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২২ অক্টোবর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৬ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৪২ মিনিট
ফজর০৪: ৪৩ মিনিট০৫: ৫৮ মিনিট
জোহর১১: ৪৪ মিনিট০৩: ৪৯ মিনিট
আসর০৩: ৫০ মিনিট০৫: ২৫ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৭ মিনিট০৬: ৪১ মিনিট
এশা০৬: ৪২ মিনিট০৪: ৪২ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ধার্মিকতাই সুখী দাম্পত্যের মূল চাবিকাঠি

ইসলাম ডেস্ক 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিয়ে মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এটি কেবল দুটি মানুষের মিলন নয়, বরং দুটি পরিবার, দুটি আত্মা ও দুটি হৃদয়ের পবিত্র বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে দাম্পত্যজীবনে গড়ে ওঠে পারস্পরিক ভালোবাসা, শান্তি ও মধুর সম্পর্ক।

তাই ইসলাম এই সম্পর্ককে শুধু সামাজিক চুক্তি হিসেবে দেখেনি, বরং একে করেছে ইবাদতের অংশ। এ কারণেই নবীজি (সা.) পুরুষদের স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নারীকে চারটি কারণে বিয়ে করা হয়। ১. তার সম্পদ, ২. তার বংশমর্যাদা, ৩. তার সৌন্দর্য, ৪. তার দ্বীনদার। অতএব তুমি দ্বীনদারকেই প্রাধান্য দাও। না হলে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫০৯০)

এ হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, একজন পুরুষ যখন স্ত্রী নির্বাচন করবে, তখন তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মূলত চারটি দিক কাজ করে। সৌন্দর্য, সম্পদ, বংশমর্যাদা ও দ্বীনদার। এগুলো মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা। কিন্তু এর মধ্যে ইসলাম সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে দ্বীনদার ও আদর্শবান নারীকে।

কারণ, সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী, সম্পদ পরিবর্তনশীল, বংশমর্যাদা বাহ্যিক মর্যাদা মাত্র; কিন্তু দ্বীনদার হলো এমন এক গুণ, যা জীবনকে আখিরাতের সফলতার পথে নিয়ে যায় এবং দাম্পত্যসম্পর্ককে প্রকৃত অর্থে স্থায়ী সুখ-শান্তির নিশ্চয়তা দেয়।

নবীজি (সা.)-এর এ নির্দেশনার মূল কথা হলো, যখনই দ্বীনদার কোনো নারী পাওয়া যাবে, তখন তাকেই সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হবে। তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো গুণসম্পন্নাকে প্রাধান্য দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না।

কারণ দ্বীনদার ছাড়া অন্য সব গুণ একসময় ম্লান হয়ে যায়, কিন্তু দ্বীনদারের আলো দাম্পত্যজীবনকে চিরভালোবাসা, আস্থা ও সন্তুষ্টিতে ভরিয়ে রাখে।

অতএব, একজন মুসলিম যুবকের জন্য স্ত্রী নির্বাচনকালে সর্বোত্তম নির্দেশনা হলো, এমন নারীকে বেছে নেওয়া, যিনি দ্বীনদার, আল্লাহভীরু ও ইসলামি আদর্শে জীবন পরিচালনা করতে অভ্যস্ত। এর মাধ্যমে সংসার হবে শান্তিময়, জীবন হবে কল্যাণময় এবং আখিরাত হবে সফল।

লেখক: ইবরাহীম আল খলীল, সহকারী শিক্ষাসচিব, মাদ্রাসা আশরাফুল মাদারিস, তেজগাঁও ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লজ্জাহীনতা—নৈতিক পতনের প্রথম ধাপ

শাব্বির আহমদ
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চরিত্রের এক অসাধারণ ও স্বভাবজাত গুণ—লজ্জা। এই গুণ মানুষকে পশুত্বের স্তর থেকে পৃথক করে মনুষ্যত্বের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। এটি যেমন মানবিক বৈশিষ্ট্য, তেমন ইসলামের দৃষ্টিতে ইমানের অপরিহার্য অঙ্গ। কেউ যখন লজ্জাবোধ হারায়, তার তখন নৈতিক পতনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কেননা কোনো পাপকাজে লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে লজ্জাহীন ব্যক্তির আর কোনো দ্বিধা থাকে না।

নবী করিম (সা.) স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, ‘লজ্জা ইমানের একটি বিশেষ শাখা।’ (সহিহ্ বুখারি)। আর এ লজ্জাবোধ মানুষকে ইমান ও স্বচ্ছতার পথে চলতে সহযোগিতা করে। বলা যায়, লজ্জা হলো একটি অভ্যন্তরীণ জবাবদিহির কাঠগড়া, যা মানুষকে পাপ ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। যার মধ্যে লাজুকতা যতটুকু থাকে, সে পাপ ও অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে ততটাই সংকোচবোধ করে।

লজ্জাহীনতা কেন নৈতিক পতনের প্রথম ধাপ? কারণ, যখন লজ্জা চলে যায়, তখন আর কোনো কিছুই নৈতিক মানদণ্ড হিসেবে অবশিষ্ট থাকে না। নবীজি (সা.) চরম লজ্জাহীনতার পরিণতি বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘যখন তুমি নির্লজ্জ হয়ে পড়বে, তখন যা ইচ্ছা তা-ই করো।’ (সহিহ্ বুখারি)। তাঁর এ কথাটি মূলত একটি হুঁশিয়ারি। লজ্জাহীনতা মানুষকে সব ধরনের অন্যায় ও অশ্লীল কাজের দিকে ঠেলে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত তাকে ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত করে। পক্ষান্তরে লজ্জাশীলতা মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়। হাদিসের ভাষায়, ‘লজ্জা ইমানের অঙ্গ, আর ইমানদারের স্থান জান্নাত। লজ্জাহীনতা দুশ্চরিত্রের অঙ্গ, আর দুশ্চরিত্রের স্থান জাহান্নাম।’ (জামে তিরমিজি)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত