Ajker Patrika

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নেওয়া অভিবাসীদের সন্তানদের দেশটির নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সেই আইন বাতিল করে দেন। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন ফেডারেল আদালত ট্রাম্পের সেই প্রচেষ্টাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে সেই তাঁর নির্বাহী আদেশকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ বা সাময়িকভাবে অবস্থানকারী পিতামাতার সন্তানদের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের যে প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন মার্কিন ফেডারেল আদালত সেটিকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল আদালতের বিচারক ডেবোরা বোর্ডম্যান গত বুধবার এক রায়ে বলেছেন, ‘আজ, প্রায় প্রতিটি শিশু—যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছে তারা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন নাগরিক হয়ে যায়। এটিই আমাদের দেশের আইন ও ঐতিহ্য।’

এই রায় ট্রাম্পের ২০ জানুয়ারি দেওয়া নির্বাহী আদেশের ওপর এরই মধ্যে আরোপিত স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই রায়ের ফলে এই মামলার আইনি প্রক্রিয়া যতক্ষণ না সম্পন্ন হবে ততক্ষণ এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি সমাধান হতে কয়েক মাস বা এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে।

এই রায়ের দুই সপ্তাহ আগে সিয়াটলের একটি ফেডারেল আদালতের বিচারক ট্রাম্পের আদেশকে ‘স্পষ্টভাবে সংবিধানবিরোধী’ বলে অভিহিত করেন এবং ১৪ দিনের স্থগিতাদেশ জারি করেন। ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করেছে এবং বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, তারা তা করবে।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের পরিকল্পনা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরানোর প্রচেষ্টার অংশ। তাঁর আদেশ ১৯ ফেব্রুয়ারি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তাঁর নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছিল, যদি কোনো শিশুর বাবা-মা কেউই মার্কিন নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা না হন তবে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিক হতে পারবে না।

বিচারক বোর্ডম্যান ট্রাম্পের আদেশকে, ‘আমাদের দেশের ২৫০ বছরের জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের ইতিহাসের বিপরীতে’ বলে রায় দেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকত্বের ১৪ তম সংশোধনীর ধারা নিয়ে প্রেসিডেন্টের ব্যাখ্যা একপ্রকার প্রত্যাখ্যান করেছে। আসলেই, দেশের কোনো আদালতই কখনো প্রেসিডেন্টের ব্যাখ্যাকে সমর্থন করেনি।’

মামলার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪ তম সংশোধনীর ব্যাখ্যা। এই ব্যাখ্যা ১৯ শতকে মার্কিন গৃহযুদ্ধের পরপরই গৃহীত হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে, ‘যেসব ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ বা স্বাভাবিকীকৃত হয়েছেন এবং তাদের অধীনে নিয়ন্ত্রণাধীন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।’

ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, এই ধারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী অ-নাগরিকদের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করে না এবং তারা আরও জানিয়েছে যে আদেশটি ‘প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য অনুযায়ী দেশের ভাঙা অভিবাসন ব্যবস্থা সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’

১৯ শতকের শেষদিকে থেকে এই সাংবিধানিক সংশোধনীর ব্যাখ্যা আদালতগুলো—এমনকি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টও—যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা সন্তানদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব প্রদান করে। তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে এতে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অন্য দেশের কূটনীতিকদের সন্তানেরা দেশটির নাগরিক বলে স্বীকৃত হবেন না।

কিন্তু রক্ষণশীলরা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিচ্ছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অবৈধ অভিবাসনের জন্য একটি চুম্বক এবং ‘বার্থ টুরিজমের’ মাধ্যমে (যেসব ব্যক্তি সন্তান জন্ম দানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, যাতে তাদের সন্তান আমেরিকান নাগরিক হয়) অনেকে অনৈতিকভাবে এর ফায়দা লুটছে।

এদিকে, ২২টি ডেমোক্রেটিক পার্টিশাসিত রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাম্পের নীতি ঠেকাতে মামলা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এই নির্বাহী আদেশের ফলে প্রতি বছর ১ লাখ ৫০ হাজার শিশুকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হবে। এ ছাড়া, শুক্রবার ম্যাসাচুসেটসে আরও একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে ১২ টিরও বেশি রাজ্য মামলা দায়ের করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল তাঁর তত্ত্বাবধানেই, যোগ্যদেরকে ডিসি নিয়োগ— বিএনপিকে প্রধান উপদেষ্টা

আমি ছিলাম নিখুঁত শিকার—মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রে

বিশ্ববাজারে সোনা বিক্রির হিড়িক, ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের সঙ্গে ‘অকারণ বৈঠকে সময় নষ্ট’ করতে চান না ট্রাম্প, সম্ভাবনা নেই ‘অদূর ভবিষ্যতেও’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে নির্ধারিত বৈঠকের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা কিয়েভের কোনো ভূখণ্ড ছাড় না দিয়ে যুদ্ধবিরতির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত আসে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে ‘অদূর ভবিষ্যতে’ কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা নেই। গত সপ্তাহের শেষে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় যুদ্ধের অবসানেও কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে ফোনালাপের পর এই বিষয়টি সামনে এল। ওই আলাপে লাভরভ জানান, রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।

লাভরভ বলেন, ‘আমি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করছি—আলাস্কা সম্মেলনে যে সমঝোতা হয়েছিল, তার পর থেকে রাশিয়ার অবস্থান বদলায়নি।’ তিনি আরও জানান, রুবিওকেও তিনি আগের দিন একই কথা বলেছেন।

গত রাতে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি ‘অকারণ বৈঠক’ চান না। তাঁর ভাষায়, ‘সময় নষ্ট করতে চাই না। দেখি কী হয়।’

বুদাপেস্ট সম্মেলন স্থগিত হওয়ার মানে হলো গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প–পুতিন ফোনালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সংক্ষিপ্ত এক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সমাপ্তি।

ওই ফোনালাপে পুতিন নাকি প্রস্তাব দিয়েছিলেন—রুশ বাহিনীর দখলে থাকা খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া প্রদেশের কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে দোনেৎস্ক অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মস্কোকে দিতে। এই দোনেৎস্ক অঞ্চলকে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে দেখে আসছে, যদিও ইউক্রেনের কাছে এটি দেশটির মধ্যাঞ্চলে প্রবেশের প্রধান দ্বার।

পুতিনের প্রস্তাবে প্রথমে কিছুটা ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও রোববার ট্রাম্প সেই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, দোনেৎস্ক ‘যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকা উচিত।’ এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘তারা চাইলে পরে আলোচনা করতে পারে, কিন্তু আমি বলেছি, বর্তমান ফ্রন্টলাইনেই থামো। ঘরে ফিরে যাও। যুদ্ধ থামাও, মানুষ মারা বন্ধ করো।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তাঁর দেশ পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ‘একই অবস্থানে’ আছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করায় রাশিয়া ‘গুরুতর আলোচনায় আগ্রহ হারিয়েছে।’

গত শুক্রবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন—যা হয়েছিল ট্রাম্পের পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের এক দিন পর। ওই বৈঠক ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। হোয়াইট হাউস সেখানে ইউক্রেনের সম্ভাব্য ভূখণ্ড ছাড়ের বিষয়টি তুলেছিল, যা কিয়েভ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। একই সঙ্গে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার অনুরোধও স্থগিত হয়ে যায়।

কিয়েভের ধারণা, প্রায় এক হাজার মাইল পাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারলে তারা রাশিয়ার ওপর সামরিক চাপ বাড়াতে পারবে। ইউক্রেন এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার সামরিক শিল্পাঞ্চল ও তেলশোধনাগারে হামলার অনুমতি চায়। তবে ক্রেমলিন বলেছে, এমন কোনো পদক্ষেপকে তারা যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধির ইঙ্গিত হিসেবে দেখবে।

এর আগে মঙ্গলবার জেলেনস্কি ও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং আরও পাঁচটি ইউরোপীয় দেশের নেতারা বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের সীমারেখা ধরে যুদ্ধবিরতির ট্রাম্পের আহ্বানকে সমর্থন করেন। যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বর্তমান যোগাযোগের সীমারেখাই আলোচনার সূচনাবিন্দু হওয়া উচিত।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক।

এছাড়া ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও ডেনমার্কের নেতারা, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্তাও ওই বিবৃতিতে সমর্থন জানান।

কিয়েভ বলেছে, রাশিয়ার দখলে থাকা কোনো ভূখণ্ডকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে না। তবে ইউক্রেন বিদ্যমান সীমারেখায় যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে রাজি আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়—মস্কো বর্তমানে ইউক্রেনের যে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখল করে রেখেছে, তা কার্যত তাদের নিয়ন্ত্রণেই থেকে যাবে, কারণ সামরিকভাবে ইউক্রেন এখনো দখলদার বাহিনীকে পুরোপুরি সরাতে পারেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল তাঁর তত্ত্বাবধানেই, যোগ্যদেরকে ডিসি নিয়োগ— বিএনপিকে প্রধান উপদেষ্টা

আমি ছিলাম নিখুঁত শিকার—মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রে

বিশ্ববাজারে সোনা বিক্রির হিড়িক, ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হামাসকে সোজা পথে আনতে গাজায় সেনা পাঠাতে চায় মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ: ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৩৭
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গাজায় সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজায় চলমান নাজুক যুদ্ধবিরতির মধ্যেই তিনি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির বিরুদ্ধে নতুন করে হুমকি দিলেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প তাঁর নিজ মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য এবং এর আশপাশের বহু দেশ, আমাদের এখনকার মহান মিত্ররা, আমাকে স্পষ্টভাবে ও উৎসাহের সঙ্গে জানিয়েছেন, আমার অনুরোধে তাঁরা গাজায় প্রবেশ করে বড় ধরনের বাহিনী নিয়ে হামাসকে সোজা পথে আনতে প্রস্তুত, যদি হামাস আমাদের সঙ্গে করা চুক্তি লঙ্ঘন করে খারাপ আচরণ চালিয়ে যায়।’

ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে বলেননি কোন কোন দেশ গাজায় সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তিনি ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মহান ও শক্তিশালী দেশ ইন্দোনেশিয়া এবং তার অসাধারণ নেতাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তারা যে সহায়তা দেখিয়েছে এবং দিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’

জাকার্তা ও আরও কিছু দেশ গাজায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দেশ সরাসরি হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এমন ভালোবাসা ও ঐক্যের স্পিরিট গত এক হাজার বছরেও দেখা যায়নি! এটি সত্যিই দেখার মতো এক সুন্দর দৃশ্য! আমি এসব দেশ ও ইসরায়েলকে বলেছি, এখনো নয়! এখনো আশা আছে, হামাস সঠিক কাজটি করবে।’

ট্রাম্প সতর্ক করে দেন, ‘যদি তারা তা না করে, হামাসের শেষ হবে দ্রুত, কঠোর ও নির্মমভাবে!’

এদিকে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

ট্রাম্প প্রায়ই হামাসকে এ ধরনের হুমকি দিয়ে থাকেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ আসলে হামাসের বিরুদ্ধে এমন কিছু করতে পারবে কি না, যা ইসরায়েল এত দিনেও করতে পারেনি, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

গত দুই বছরে ইসরায়েল হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগকেই হত্যা করেছে। পাশাপাশি তারা গাজা উপত্যকার প্রায় পুরো অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে, ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে, যা জাতিসংঘের তদন্তকারীদের মতে এবং শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষায় একপ্রকার গণহত্যা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল তাঁর তত্ত্বাবধানেই, যোগ্যদেরকে ডিসি নিয়োগ— বিএনপিকে প্রধান উপদেষ্টা

আমি ছিলাম নিখুঁত শিকার—মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রে

বিশ্ববাজারে সোনা বিক্রির হিড়িক, ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ বছরের জন্য কারাগারে গেলেন সারকোজি, হাত ধরে এগিয়ে দিলেন স্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
স্ত্রী কার্লা ব্রুনির হাত ধরে কারাগারের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন নিকোলাস সারকোজি। ছবি: রয়টার্স
স্ত্রী কার্লা ব্রুনির হাত ধরে কারাগারের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন নিকোলাস সারকোজি। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) প্যারিসের লা সান্তে কারাগারে তার পাঁচ বছরের সাজা ভোগ শুরু করেছেন। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় রক্ষণশীল এই রাজনীতিককে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ৭০ বছর বয়সী সারকোজি কারাগারে যাওয়ার আগে স্ত্রী কার্লা ব্রুনির হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হন। পথে তাঁকে ঘিরে সমর্থকেরা ফরাসি জাতীয় সংগীত গেয়ে তাঁর সমর্থনে স্লোগান দেন।

লা সান্তে কারাগারের ফটকের সামনে পৌঁছানোর আগেই স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নেন সারকোজি। মুখে কিছু না বললেও স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে সামান্য মাথা নেড়ে তিনি বিদায় জানান। কার্লা তখন ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি সহযোগী মার্শাল ফিলিপ পেতাঁর পর সারকোজিই হলেন প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট যাকে কারাগারে পাঠানো হলো।

নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে সারকোজি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘আজ একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট নয়, একজন নির্দোষ মানুষকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, এটি প্রতিশোধ ও ঘৃণার ফসল।

২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় নিহত লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে ২০০৭ সালের নির্বাচনে কোটি কোটি ইউরো তহবিল নেওয়ার অভিযোগ বহু বছর ধরে সারকোজির পিছু ছাড়েনি। আদালত রায় দিয়েছেন, তিনি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে এই তহবিল সংগ্রহের ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন, যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অর্থ গ্রহণ বা ব্যবহার প্রমাণিত হয়নি।

জেলে গেলেও তাঁর আইনজীবীরা আগাম মুক্তির আবেদন করেছেন এবং আশা করছেন, বড়দিনের আগেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন। আপিল বিচার পর্যন্ত সারকোজিকে কারাগারের বিচ্ছিন্ন একটি কক্ষে রাখা হবে। একজনের এই কক্ষে থাকবে টেলিফোন এবং টেলিভিশন ব্যবহারের সুযোগ।

জেলে নেওয়ার সময় সারকোজি জানিয়েছিলেন, তিনি তিনটি বই সঙ্গে নিচ্ছেন—এর একটি আলেক্সান্দ্রে দ্যুমার ‘দ্য কাউন্ট অব মন্টে ক্রিস্টো’, যেখানে এক নিরপরাধ মানুষের কারাগারে বন্দিত্ব ও প্রতিশোধের কাহিনি বলা হয়েছে।

এই রায় ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সারকোজির সমর্থকেরা বলছেন—তিনি অপরাধী নন, বরং বিচারব্যবস্থা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সাজা প্রমাণ করে—ফ্রান্স এখন অভিজাতদের অপরাধেও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল তাঁর তত্ত্বাবধানেই, যোগ্যদেরকে ডিসি নিয়োগ— বিএনপিকে প্রধান উপদেষ্টা

আমি ছিলাম নিখুঁত শিকার—মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রে

বিশ্ববাজারে সোনা বিক্রির হিড়িক, ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজার যুদ্ধবিরতি ভেঙে যেতে পারে—আশঙ্কা ট্রাম্প প্রশাসনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিরতি সমুন্নত রাখতে বর্তমানে ইসরায়েল সফর করছেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ছবি: সিএনএন
যুদ্ধবিরতি সমুন্নত রাখতে বর্তমানে ইসরায়েল সফর করছেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ছবি: সিএনএন

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ইসরায়েল পৌঁছেছেন। সিএনএন জানিয়েছে, তিনি এমন এক সময়ে ইসরায়েল গেলেন, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

সিএনএনকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভ্যান্সের সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে মার্কিন-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অটল রাখা। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ভ্যান্সের সফরকে রসিকতার ছলে ‘বিবিসিটিং’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

অপর একজন বলেছেন, প্রেসিডেন্টের পর সবচেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উপস্থিতির মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন শক্ত বার্তা দিতে চাইছে যে, যুদ্ধবিরতি অবশ্যই টেকসই হতে হবে, এমনকি সম্ভাব্য সংঘর্ষের মধ্যেও তা টিকিয়ে রাখতে হবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই মুহূর্তেই গাজার যুদ্ধবিরতি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাই ট্রাম্পের গত সপ্তাহের সফরের পরপরই ভ্যান্সের যাত্রা জরুরি হয়ে পড়ে। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, যুদ্ধবিরতির পর গত ১৯ অক্টোবর হামাসের হামলায় দুই আইডিএফ (ইসরায়েলি সেনা) সদস্য নিহত হয়েছে। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় আবারও বিমান হামলা চালায় এবং এতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

এই হামলার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে মার্কিন কর্মকর্তারা দ্রুত হস্তক্ষেপ করেন এবং দুই পক্ষকেই যুদ্ধবিরতিতে অটল থাকতে অনুরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই চুক্তির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এদিকে এক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই হামলাটি হামাসের নেতৃত্বে ঘটেনি, বরং তাদের বিদ্রোহী সদস্যরা এই কাজটি করেছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, প্রয়োজন হলে হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে।

ট্রাম্প আরও লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ‘মহান মিত্ররা’ গাজায় প্রবেশ করে হামাসকে সোজা পথে আনতে আগ্রহী। তবে তিনি তাদের আপাতত থামতে বলেছেন। কারণ তিনি এখনো আশা করছেন, হামাস সঠিক কাজটিই করবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনারও এখন ইসরায়েলে আছেন। তাঁরা প্রেসিডেন্টের ঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদি দিকগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ইসরায়েলি সূত্র জানিয়েছে, উইটকফ ইসরায়েলকে বলেছেন হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া অবশ্যই ‘আনুপাতিক’ হতে হবে এবং আগামী ৩০ দিন যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল তাঁর তত্ত্বাবধানেই, যোগ্যদেরকে ডিসি নিয়োগ— বিএনপিকে প্রধান উপদেষ্টা

আমি ছিলাম নিখুঁত শিকার—মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রে

বিশ্ববাজারে সোনা বিক্রির হিড়িক, ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত