Ajker Patrika

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মরিয়া ট্রাম্প, বাদ রাখছেন না কোনো চেষ্টাই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ১০
নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুদিন ধরেই নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিষয়ে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন। তাঁর ধারণা, এই পুরস্কারের মর্যাদা তাঁকে বিশ্বমঞ্চে এক বিশেষ ও নির্বাচিত ক্লাবের সদস্য করবে। তবে মার্কিন ট্রাম্পের নোবেল জয়, কোনো নির্বাচনের ওপর নয়, নির্ভর করে মাত্র পাঁচজন ব্যক্তির সিদ্ধান্তের ওপর। আর এই ব্যক্তিদের বাছাইয়ে ট্রাম্প সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন কি না, তা অনিশ্চিত।

ট্রাম্প তাঁর আগের মেয়াদেও নোবেল পাওয়ার আকুলতা প্রকাশ করেছেন। এই মেয়াদেও তাঁর সেই ধারা অব্যাহত। সাম্প্রতিক সময়ে সেই প্রচেষ্টা আরও তীব্র হয়েছে। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ইউক্রেন শান্তিচুক্তি হতে পারে পুরস্কার জয়ের চাবিকাঠি। কিন্তু নোবেল শান্তি পুরস্কার মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ফলে তাঁদের সমর্থন পাওয়া সহজ নয়।

নোবেল পাওয়ার প্রচেষ্টায় ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সমর্থন কুড়ানোর চেষ্টা করছেন। এমনকি নরওয়ের অর্থমন্ত্রী ও সাবেক ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। স্টলটেনবার্গ ন্যাটো মহাসচিব হিসেবে ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। নরওয়েতে ক্ষমতাসীন স্টলটেনবার্গের দল লেবার পার্টির হাতেই নোবেল কমিটিতে সদস্য নিয়োগের ক্ষমতা। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি একাধিক সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছেন। গত সপ্তাহে তাঁর তালিকায় ছিল ছয়টি যুদ্ধ। তবে শুক্রবার তিনি বললেন, ‘যদি আপনি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই সেটিকে থামিয়ে দেওয়ার কথা বিবেচনা করেন, তাহলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ এ।’

তবে ট্রাম্প এটিও স্বীকার করেছেন যে, নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা হয়তো ক্ষীণ। তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলে, আমি যা-ই করি না কেন, ওরা আমাকে এটা দেবে না। আমি নিজে এর জন্য রাজনীতি করছি না। তবে অনেকেই করছে। এটা অবশ্যই এক বিশাল সম্মান হবে।’

নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রতি এই আগ্রহই সম্ভবত ট্রাম্পকে ইউক্রেন যুদ্ধ মীমাংসার প্রচেষ্টায় ধরে রেখেছে। বিশেষ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় মনোযোগী হচ্ছেন তিনি। কিছু পশ্চিমা কূটনীতিকও মনে করেন, যেহেতু পুতিনের একক নিয়ন্ত্রণেই যুদ্ধ চলছে, তাই সরাসরি আলোচনা বাস্তবসম্মত হতে পারে।

কিন্তু তাঁকে এখনো সংশয়ী কমিটির সদস্যদের মন জয় করতে হবে। কমিটির চেয়ারম্যান ইয়র্গেন ভাটনে ফ্রিডনেস গত ডিসেম্বরে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষয় হচ্ছে।’ সেসময় তিনি ট্রাম্পের নাম সরাসরি উল্লেখ করেছিলেন। ফ্রিডনেস বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প গণমাধ্যমের ওপর ১০০ বারেরও বেশি মৌখিক হামলা চালিয়েছেন।’ ৪০ বছর বয়সী ফ্রিডনেস পেন নরওয়ের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সংস্থাটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা নিয়ে কাজ করে। তিনি লেবার পার্টির মনোনীত সদস্য।

নরওয়ের সাধারণ জনগণের মনোভাবও ট্রাম্প বিরোধী। গত অক্টোবরের এক জরিপে দেখা যায়, বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিপরীতে মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে ভোট দিতেন। নোবেল কমিটির কয়েকজন সদস্যও একই রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

কমিটির আরেক সদস্য ও নরওয়ের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ক্লেমেট মে মাসে লিখেছিলেন, ‘মাত্র ১০০ দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প আমেরিকান গণতন্ত্র ভেঙে ফেলতে শুরু করেছেন। তিনি উদারনৈতিক ও নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।’

কমিটির তৃতীয় এক সদস্য ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই বহুবার সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের নির্বাচনের আগের দিন ফেসবুকে পোস্ট করা এক ছবিতে দেখা যায় কমিটির সদস্য গ্রি লারসেন লাল রঙের একটি ক্যাপ পরেছেন, যেখানে লেখা ছিল, ‘মেক হিউম্যান রাইটস গ্রেট অ্যাগেইন।’ ২০১৭ সালে তিনি এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, ‘ট্রাম্প লাখো মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছেন।’ তখন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন তিনি।

অবশ্য কমিটির অন্য দুই সদস্যের ট্রাম্প বিরোধী মন্তব্যের স্পষ্ট ইতিহাস নেই। তাঁদের একজন, শিক্ষাবিদ অসলে তোইয়ে। তিনি বাইডেন প্রশাসনের সময় ট্রাম্পের আইনি সংকট নিয়ে সহানুভূতিশীল লেখা লিখেছিলেন। কমিটির কোনো সদস্যই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেননি। নোবেল ইনস্টিটিউটও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের নোবেল আকাঙ্ক্ষা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে, চেয়ারম্যান ফ্রিডনেস সরাসরি উত্তর দেননি।

ফ্রিডনেস বলেন, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে দেওয়া হলে তা অনেক সময়েই বিতর্ক তৈরি করে। কারণ, রাষ্ট্রপ্রধান হলে ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতা ব্যবহারও করা হয়। যদি কোনো সংঘাত থাকে, তবে প্রায়ই তাঁর হাতে রক্তও লেগে যায়। আবার সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি পরবর্তী সময়ে অনেক কিছু করতে পারেন। ফলে বিষয়টা জটিল হয়ে ওঠে।’

তবে নরওয়ের নোবেল শান্তি পুরস্কার মনোনয়ন কমিটির পাঁচজনের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, হোয়াইট হাউসে সফররত অনেক বিশ্বনেতার কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রশংসা করা এবং তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলে ঘোষণা করাটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। আবার অনেকে সমালোচনা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। তিনি ২০০৯ সালে মাত্র কয়েক মাস ক্ষমতায় আসার পরই নোবেল পান। ওবামা নিজেও স্বীকার করেছিলেন, এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘বেশ বিতর্ক’ হয়েছিল।

ট্রাম্পের নোবেল পাওয়ার পক্ষে উকালতি করে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেন, ‘যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার না পান, তবে কে পাওয়ার যোগ্য?’ কিছুদিন আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমি নোবেল কমিটির ইতিহাসে কিছু অদ্ভুত সিদ্ধান্তের কথা তুলতে চাই না, যেখানে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল এমন কাউকে, যিনি কিছুই করেননি।’

আলিয়েভের প্রতিপক্ষ, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানও একই কথা বলেন। তিনি ট্রাম্পকে বলেন, ‘আশা করি আপনি আমাদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ডাকবেন।’ হাসতে হাসতে ট্রাম্প উত্তর দেন, ‘সামনের সারিতেই থাকবেন। আপনাদের সামনের সারির আসন।’

তবে ট্রাম্পের এই প্রচারণা কেবল হাসি–তামাশায় শেষ হয়নি। গত মাসে তিনি ন্যাটোর মহাসচিব স্টলটেনবার্গের কাছে ফোনে বিষয়টি তুলেছিলেন। আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরে এক বিবৃতিতে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আমরা শুল্ক, অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে কথা বলেছি। এটি ছিল নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোরের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপের প্রস্তুতির অংশ।’ তবে তিনি বিস্তারিত তথ্য দেননি।

নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্টলটেনবার্গ নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির সদস্য নিয়োগে ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে একবার নরওয়েজিয়ান সংসদ কমিটিকে নিয়োগ দিলে এর সদস্যরা তাদের কাজের স্বাধীনতাকে কঠোরভাবে রক্ষা করে। তাই এমন চাপ প্রয়োগ তাঁরা ভালো চোখে নাও দেখতে পারেন।

এই বিষয়ে পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর পরিচালক নিনা গ্রেগার বলেন, ‘কোনো প্রার্থী এভাবে সরাসরি কথা বলেন, এটা খুব অস্বাভাবিক।’ নিনার প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টা নিয়ে গবেষণা করে এবং প্রতিবছর সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রাপকদের একটি তালিকা প্রকাশ করে।

ট্রাম্প নোবেল পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের সমালোচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারও রয়েছেন। তিনি ২০০২ সালে শান্তি পুরস্কার পান। নোবেল জয়ীদের তালিকায় আরও আছেন উড্রো উইলসন ও থিওডোর রুজভেল্ট। সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারও এই পুরস্কার পেয়েছেন। তবে কেউই বিতর্ক এড়াতে পারেননি।

চলতি বছর ট্রাম্প যে শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন না, তা প্রায় নিশ্চিত। কারণ মনোনয়নের শেষ তারিখ ছিল জানুয়ারিতে। ২০২৫ সালের শর্টলিস্টে আছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি (গাজায় শান্তি মধ্যস্থতায় ভূমিকার জন্য), জিমি কার্টার প্রতিষ্ঠিত কার্টার সেন্টার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। ট্রাম্প নিজে এই আদালতের কর্মকর্তাদের টার্গেট করেছিলেন, কারণ তারা মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের তদন্ত করছিলেন।

তবে হয়তো আগামী বছর সুযোগ থাকতে পারে। কিছু নরওয়েজিয়ান এখনো ইউক্রেনে শান্তির দরজা খোলা রাখার চেষ্টা করছেন। নিনা গ্রেগার বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ইউরোপীয় নেতাদের একত্রিত করার যে উদ্যোগটি এই সপ্তাহে হয়েছে, তার জন্য আমি ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুব অপ্রচলিত এক উপায়ে শান্তিচুক্তি আনার চেষ্টা। নিয়ম মেনে নয়। কখনো কখনো তা কাজে লাগতে পারে। আমি সেটার কৃতিত্ব তাঁকে দিতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে দু-তিন মিনিটে পুড়ে ছাই এসি বাস, মরল ১১ জন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১৫
ভারতে এসি বাসে আগুন ধরে পুড়ে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতে এসি বাসে আগুন ধরে পুড়ে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কুরনুলে ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১১ জনের। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার ভোরে একটি ভলভো বাসে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কায় আগুন ধরে মুহূর্তেই ছাই হয়ে যায়। হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরুগামী ওই বাসে তখন প্রায় ৪০ জন যাত্রী ছিল। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে কুরনুল জেলার উল্লিন্দাকোন্ডা এলাকার কাছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বাসটি স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হায়দরাবাদ থেকে রওনা হয়। জাতীয় সড়ক ৪৪ (এনএইচ-৪৪) ধরে ভোররাত ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে কুরনুলের কাছে পৌঁছালে সেটি একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খায়।

পুলিশের ধারণা, ধাক্কার পর মোটরসাইকেলটি বাসের নিচে আটকে যায় এবং সেখান থেকে স্ফুলিঙ্গ ছিটকে আগুন লাগে। দুর্ঘটনার পর বাসচালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বাসটিতে আগুন লাগার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন পুরো বাসটিকে গ্রাস করে।

কুরনুলের পুলিশ সুপার বিক্রান্ত পাতিল এনডিটিভিকে বলেন, ‘ভোররাত ৩টার দিকে হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিল কাভেরি ট্রাভেলসের একটি ভলভো বাস। এটি একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়, যা বাসের নিচে আটকে যায়। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে আমরা ধারণা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এফএসএল) দল ঘটনাস্থলে এসে আগুন লাগার সঠিক কারণ খতিয়ে দেখছে। বাসটি যেহেতু এসি, তাই অনেক যাত্রী জানালা ভেঙে বের হতে বাধ্য হয়। যারা জানালা ভাঙতে পেরেছে, তারাই বেঁচে আছে।’

যাত্রী তালিকা অনুযায়ী বাসে ৪০ জন যাত্রী ছাড়াও চালক ও সহকারী ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় অধিকাংশ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিল, তাই বের হতে দেরি হয়ে যায়। এফএসএল দল এখনো অনুসন্ধান চালাচ্ছে, কেউ বাসের ভেতরে আটকে আছে কি না তা জানতে। পুলিশ সুপার আরও জানান, ‘১৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’

সরকারি হাসপাতালে ১১ জন যাত্রী চিকিৎসা নিচ্ছে, আর তিনজনকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। নিখোঁজ যাত্রীদের খোঁজে এবং নিহত ব্যক্তিদের শনাক্তে অভিযান চলছে।

নান্দিয়ালের সংসদ সদস্য বাইরেড্ডি শাবরী বলেন, ‘বাসটি দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এক প্রত্যক্ষদর্শী আমাদের জানিয়েছেন, তিনি বিপরীত দিক থেকে আসছিলেন এবং উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাসে বিস্ফোরণ ঘটে। আমরা ১৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু মরদেহ এতটা দগ্ধ হয়েছে যে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

অন্ধ্র প্রদেশের পরিবহনমন্ত্রী রামপ্রসাদ রেড্ডি বলেন, ‘বাসটির নথিপত্র যাচাই করা হচ্ছে। গত দুই মাসে এই বাস সংক্রান্ত নিয়ম ও রক্ষণাবেক্ষণ কতটা মানা হয়েছে, সেটিও পরীক্ষা করা হবে।’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘কুরনুল জেলার চিনা টেকুর গ্রামের কাছে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার খবর শুনে আমি মর্মাহত। যেসব পরিবার প্রিয়জন হারিয়েছে, তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার সর্বোচ্চ সহায়তা দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ‘কিছু ক্ষতি অনিবার্য’হলেও মাথানত করবে না রাশিয়া: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় হয়তো কিছু ক্ষতি হবে, তবে তাঁর দেশ মাথানত করবে না। ছবি: এএফপি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় হয়তো কিছু ক্ষতি হবে, তবে তাঁর দেশ মাথানত করবে না। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে কাছে রাশিয়া কখনো মাথানত স্বীকার করবে না। তবে তিনি স্বীকার করেন, ওয়াশিংটনের নতুন নিষেধাজ্ঞা অর্থনীতিতে কিছুটা ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এর মধ্যেই খবর এসেছে, চীন ও ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর দুই বৃহৎ তেল উৎপাদক কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর এই খবর সামনে এসেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র রসনেফট ও লুকওয়েলসহ তাদের অন্তর্ভুক্ত প্রায় তিন ডজন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ক্রেমলিনের ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই পদক্ষেপ নেয়। অপরদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা দিতে সম্মত হয়েছে।

রসনেফট ও লুকওয়েল রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার পর এই দুটি কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে ট্রাম্পের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মস্কোর বিরুদ্ধে প্রথম বড় পদক্ষেপ। মূল লক্ষ্য হলো—ক্রেমলিনের যুদ্ধযন্ত্রকে চালাতে তেল যে আয়ের জোগান দেয়, তা বন্ধ করে দেওয়া।

ওয়াশিংটন আশা করছে, এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিতে আঘাত হানবে এবং পুতিনকে আলোচনার টেবিলে ফিরতে বাধ্য করবে। নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন নিষেধাজ্ঞাকে বলেছেন, ‘অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপ’ যা ‘রাশিয়া-আমেরিকা সম্পর্ককে শক্তিশালী করে না।’ তাঁর ভাষায়, এটি ‘রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা’, তবে এটি ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ উদ্যোগ’—বলে মনে করেন তিনি।

পুতিন বলেন, ‘আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন কোনো দেশ কখনো চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয় না।’ তিনি দাবি করেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে না, তবে ‘কিছু ক্ষতি অনিবার্য।’ এ সময় তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তাঁর উচিত ভেবে দেখা—তাঁর প্রশাসন আসলে কার স্বার্থে কাজ করছে।’ তিনি সতর্ক করেন, এই নিষেধাজ্ঞা তেলের দাম আরও বাড়াবে।

পুতিন আরও হুঁশিয়ারি দেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ‘টমাহক ক্রুজ মিসাইল’ দেয় এবং তা দিয়ে রাশিয়ার ওপর হামলা চালানো হয়, তবে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া হবে ‘অত্যন্ত শক্তিশালী, এমনকি ধ্বংসাত্মক।’

নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় অন্যান্য দেশ ও কোম্পানিগুলোকে রাশিয়ার বড় তেল উৎপাদকদের সঙ্গে ব্যবসা করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে তারা আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার বৃহৎ অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবারই এর প্রাথমিক প্রভাব দেখা গেছে। রাশিয়ার দুই প্রধান ক্রেতা দেশ চীন ও ভারত তেল আমদানি স্থগিতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ভারতের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ জানায়, তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনার প্রক্রিয়া ‘পুনর্মূল্যায়ন’ করছে। সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, ‘রিলায়েন্স সম্পূর্ণভাবে ভারতের সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রাশিয়ান তেল আমদানিতে সামঞ্জস্য আনছে।’ রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলোও আপাতত সমুদ্রপথে রুশ তেল কেনা স্থগিত করেছে। তারা আশঙ্কা করছে, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জটিলতায় না জড়িয়ে পড়ে।

রাশিয়ার জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশই তেল ও গ্যাস খাত থেকে আসে। চীন ও ভারতের মতো প্রধান ক্রেতারা যদি হঠাৎ তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, তা ক্রেমলিনের অর্থনীতিতে ভয়াবহ আঘাত হানবে, আর বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে। রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন এবং ভারত ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছে এবং দুই দেশই এত দিন পশ্চিমা চাপকে ‘ফাঁপা হুমকি’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার তারা বাস্তবিকই নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি। নিষেধাজ্ঞা মানতে হলে তাদের রাশিয়ার সস্তা তেল ত্যাগ করতে হবে, যা তাদের অর্থনীতিকে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট থেকে রক্ষা করেছিল।

এদিকে, ট্রাম্প বুদাপেস্টে বৈঠকের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা বাতিলের প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, বৈঠকটি ‘সম্ভবত পিছিয়ে যাবে’ এবং যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া তা আয়োজন করা ‘ভুল হবে।’ তবে তিনি জানান, তিনি এখনো ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী, কারণ ‘সংলাপ সর্বদা যুদ্ধের চেয়ে ভালো।’

রুশ কর্মকর্তারা অবশ্য অনেক কঠোর সুরে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা ‘যুদ্ধের ঘোষণা।’ তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শত্রু। তাদের বাচাল ‘শান্তিদূত’ এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পথে পা রেখেছে।’

ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ কিছু বিশেষজ্ঞও স্বীকার করেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা রুশ অর্থনীতিতে আঘাত আনতে পারে। রাশিয়া সরকারের অধীন ফিন্যান্সিয়াল ইউনিভার্সিটির জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইগর ইউশকভ কমেরসান্ত পত্রিকাকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে এশীয় ক্রেতারা সরাসরি রুশ তেল কিনতে দ্বিধা করবে। এতে কোম্পানিগুলোকে মধ্যস্বত্বভোগী ও জটিল লজিস্টিক চেইনের ওপর নির্ভর করতে হবে, যা খরচ বাড়াবে।

তবে এই নিষেধাজ্ঞার প্রকৃত প্রভাব নির্ভর করবে তা কতটা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয় তার ওপর—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কি সেই দেশগুলোর বিরুদ্ধেও ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন’ দেবে, যারা রুশ তেল কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাবে। রাশিয়ার হাতে এখনো এক মাস সময় আছে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে। মস্কো সম্ভবত সেই সময়টা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যবহার করবে।

আগেও রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে গেছে বিভিন্ন গোপন বাণিজ্যিক কৌশল ও তাদের তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এই নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয় পুরোনো জাহাজ, যেগুলো অচেনা পতাকা নিয়ে চলে এবং মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার অজানা কোম্পানির নামে নিবন্ধিত। এই পদ্ধতিতেই রাশিয়া এখনো ভারত ও চীনের মতো ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে, জি-৭ এর দামের সীমা ও ইইউ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও।

মস্কোর অনেকে আবার আত্মবিশ্বাসী যে রাশিয়া এবারও টিকে যাবে। রুশ সামরিক ঘনিষ্ঠ ব্লগার মিখাইল জভিঞ্চুক বলেন, ‘নতুন বিক্রয় কাঠামো গড়ে উঠবে। এতে পরিবহন জটিলতা ও খরচ বাড়বে ঠিকই, কিন্তু তেল ব্যবসা গত তিন বছর ধরেই এসব সামলে নিয়েছে, এখনো পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাশিয়ায় একাধিক বিস্ফোরণ ও ‘ড্রোন হামলা’, নিহত ১৪

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৫৩
রাশিয়ায় একাধিক বিস্ফোরণ ও ‘ড্রোন হামলা’, নিহত ১৪

রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে একাধিক বিস্ফোরণ ও সন্দেহভাজন ড্রোন হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রুশ সংবাদমাধ্যম মস্কো টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

চেলিয়াবিন্স্ক অঞ্চলের গভর্নর আলেক্সেই টেক্সলার জানান, বুধবার রাতে কোপেয়েস্ক শহরের একটি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি নিশ্চিত করেন, ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও পাঁচজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন।

গভর্নর টেক্সলার জোর দিয়ে বলেন, এই বিস্ফোরণগুলো ড্রোন হামলার কারণে ঘটেনি। তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত ছিল এবং এখনো ১০ জন কর্মী নিখোঁজ।

১২ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি মোট ১৯ জন আহত হয়েছে বলে জানান গভর্নর। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, আর ১৪ জনকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। টেক্সলার এই তথ্য টেলিগ্রামে প্রকাশ করেন।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের স্থানটি প্লাস্টমাস নামের একটি প্লাস্টিক প্রস্তুতকারী কারখানা, যেখানে রুশ সেনাবাহিনীর জন্য আর্টিলারি গোলাবারুদ তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।

আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে দক্ষিণাঞ্চলীয় স্তাভরোপল শহরে, যা একটি সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, একটি বাসস্ট্যান্ডের পাশে শিশুর বেবি স্ট্রলারে বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল।

সেখানে এক নারী ধাতব টুকরোতে আহত হন। এই ঘটনায় এক ব্যক্তিকে আটক করে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে ব্যবসায়িক পত্রিকা কমারসান্ট জানিয়েছে।

ইউক্রেন সীমান্তবর্তী ব্রিয়ানস্ক ও বেলগোরোদ অঞ্চলের কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় দুটি বেসামরিক যানবাহন লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় দুজন নিহত হয়েছেন।

এদিকে রিয়াজান অঞ্চলের গভর্নর পাভেল মালকভ জানান, ইউক্রেনীয় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। স্বাধীন গণমাধ্যম আস্ত্রা স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে জানায়, রিয়াজান তেল শোধনাগারটি সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোররাতে তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ১৩৯টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত বা আটক করেছে।

এর মধ্যে বেলগোরোদ অঞ্চলে ৫৬টি, ব্রিয়ানস্কে ২২টি এবং রিয়াজান অঞ্চলে ১৪টি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আফগান সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানে টমেটো এখন ৬০০ রুপি কেজি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত বন্ধ থাকায় দুই দেশের বাজারেই নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। বিশেষত পাকিস্তানে টমেটোর দাম একলাফে পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে, যা এখন স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজিতে প্রায় ৬০০ পাকিস্তানি রুপি (প্রায় ২ ডলার ১৩ সেন্ট) ছুঁয়েছে। এই দাম বাড়ার পেছনে কারণ—দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘর্ষ ও বাণিজ্য বন্ধ।

১১ অক্টোবর থেকে দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের সীমান্ত পারাপার ও বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। ওই সময় সীমান্তে ভয়াবহ যুদ্ধ ও পাকিস্তানের বিমান হামলায় দুই পক্ষেই বহু মানুষ নিহত হয়। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ।

পাকিস্তান-আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্সের প্রধান খান জান আলোকজাই আজ বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে বলেন, প্রতিদিন দুই দেশ প্রায় ১০ লাখ ডলার করে ক্ষতি করছে।

পাকিস্তান-আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্সের তথ্য অনুযায়ী, দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যার বেশির ভাগই তাজা ফল, শাকসবজি, খনিজ, ওষুধ, গম, চাল, চিনি, মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য। সীমান্ত বন্ধ থাকায় এসব পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

আলোকজা১ই বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কনটেইনার সবজি রপ্তানির জন্য প্রস্তুত থাকে, কিন্তু সীমান্ত বন্ধ থাকায় সব পণ্য এখন নষ্ট হয়ে গেছে।’

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান তোরখাম সীমান্তের এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, সীমান্তের দুই পাশে এখন প্রায় ৫ হাজার কনটেইনার আটকা পড়ে আছে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বাজারে ইতিমধ্যে টমেটো, আপেল ও আঙুরের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, আপেল আমদানির বড় অংশ আফগানিস্তান থেকে আসে, ফলে এর দামও দ্রুত বাড়ছে।

ইসলামাবাদ দাবি করেছে, আফগানিস্তানে অবস্থান নেওয়া সন্ত্রাসীরা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। কাবুলকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তবে তালেবান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এদিকে গত সপ্তাহে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনায় উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, যা এখনো কার্যকর রয়েছে। তবে দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্য এখনো বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী বৈঠক ২৫ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত