Ajker Patrika

বিয়ের অতিথিদের কাটতে হলো লক্ষাধিক টাকার টিকিট, প্রথা ভাঙলেন নবদম্পতি

অনলাইন ডেস্ক
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মার্লি জ্যাক্স আর স্টিভ জে লারসেনের বিয়েতে অতিথিদের ঢুকতে হয়েছে টিকিট কেটে! শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোতে। বিয়ের অনুষ্ঠানের অকল্পনীয় খরচ সামাল দিতে এই অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন উদ্যোক্তা এই যুগল।

মার্কিন সাপ্তাহিক ‘পিপল’-এর তথ্য অনুযায়ী, মার্লি জ্যাক্সের বয়স ৩৪ এবং স্টিভ জে লারসেনের বয়স ৩৭। তারা সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। আর পাঁচটা সাধারণ বিয়ের মতো করেই বিয়ে করার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু যখন অনুষ্ঠানের জন্য হল ভাড়া নিতে যান, তখন ভাড়া শুনে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান তারা। বুঝতে পারেন, ঐতিহ্যবাহী রীতিতে বিয়ে করতে গেলে জীবনের বড় একটি সময় পর্যন্ত মোটা অঙ্কের ঋণের বোঝা বইতে হবে তাদের। তখনই সিদ্ধান্ত নেন নিজেদের বিয়েতে তারা টিকিটের ব্যবস্থা করবেন!

দুই ধরনের টিকিটের ব্যবস্থা ছিল তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে—সাধারণ আর ভিআইপি। সাধারণ টিকিটের দাম ধরা হয় ৫৭ মার্কিন ডলার। আর ভিআইপি টিকিটের দাম ছিল ৯৯৭ ডলার। যারা সাধারণ টিকিট কেটেছেন তারা শুধু বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরেছেন। আর ৯৯৭ ডলারের টিকিটে মূল অনুষ্ঠান ছাড়াও বৃহস্পতিবারের ‘রিহার্সাল ডিনার’ এবং শনিবারের ‘বায়োহ্যাকিং ব্রাঞ্চ ও রিকভারি লাউঞ্জ’-এ প্রবেশাধিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জ্যাক্স বলেন, ‘বিয়ে একটি বহু-বিলিয়ন ডলারের শিল্প, যেখানে দম্পতিরা মাত্র একদিনের বিলাসিতার জন্য ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আমি এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়েছিলাম। আমি জানি, এই ভাবনাটা নতুন এবং প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে। কিছু মানুষ একে দৃষ্টিকটু বলতে পারে। আমাদের লোভী ভাবতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা এমন ছিল না। যারা আমাদের বিশেষ দিনটির উদ্‌যাপনের অংশ হতে চেয়েছেন তারা এসেছেন। আর তাদের অবদান আমাদের ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। এবং আমরা ওই অর্থ দিয়ে একটি ভালো কাজে সমর্থনও জানাতে পেরেছি।’

জ্যাক্স জানান, বাগদানের সময় তারা মজা করে বলছিলেন যে বিয়ের অনুষ্ঠানে টিকিটের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তা যে এভাবে বাস্তবায়িত হবে তা তাঁরা ভাবেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা ইভেন্ট ম্যানেজিংয়ের ব্যবসা করি। যখন আমাদের বাগদান হলো তখন মজা করে বলছিলাম যে যদি আমাদের বিয়েটাকে একটা বড় ইভেন্ট হিসেবে আয়োজন করতাম, আর লোকে টিকিট কেটে তা দেখতে আসত তাহলে কত মজা হতো। এটা শুধুই মজা করেই বলা। কিন্তু তারপর বিয়ের ভেন্যু দেখতে গিয়ে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ। শুধু কেক কাটার জন্য সাড়ে ছয় শ ডলার ফি চাচ্ছে। এই ফি-টা শুধু কেক কাটার জন্য, কেকের দাম নয়। তখন আমরা ভাবলাম ঠিক আছে তাহলে টিকিট বিক্রির ব্যাপারটাকে সত্যিকার অর্থেই গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে।’

এরপর জ্যাক্স নিজের সামাজিক মাধ্যম হ্যান্ডেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ সম্পর্কে একটা জরিপ করেন। সেখানে তাঁর অনুসারী ও বন্ধু-বান্ধবেরা জানান, বিয়ের অনুষ্ঠান এখন অনেক বেশি লোক দেখানো হয়ে গিয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত খরচ সামলাতে গিয়ে অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানান। এরপর জ্যাক্স বিয়ের অনুষ্ঠানে টিকিট বিক্রি করা উচিত কি না, টিকিটের বিক্রি করা উচিত হলে কত দাম রাখা যেতে পারে এ নিয়েও একটি জরিপ করেন। অনেকে সমালোচনা করলেও অনেকেই টিকিট কিনে বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে রাজি হন।

অবশেষে তারা নিজেদের বিয়ের টিকিট বিক্রি করতে রাজি হন। তাদের বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলেছিলাম আমাদের জন্য কোনো উপহার কিনতে হবে না। শুধু নিজেদের খাবার খরচটা দাও। আর আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনটায় আমাদের সঙ্গে থাকো। এতে তাদের ওপরও উপহার কেনার চাপ ছিল না। আর আমরাও কোনো ঋণ ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পেরেছি।’

অনেকেই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিলেও কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট ছিলেন। পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের টিকিট কেনার প্রয়োজন ছিল না; তাদের শুধু আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছিল। বাকিদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে অনলাইনে দেখার পর তারা টিকিট কিনবেন কি না। এক ব্যক্তি সরাসরি ফেসবুক লাইভে তাদের বিরোধিতা করেন।

জ্যাক্স সেই বিতর্ক মেনে নেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, যদি তিনি সত্যিই এই আইডিয়ায় বিশ্বাস করেন, তাহলে তাকে তার পক্ষে যুক্তিও দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘বিয়ে মানেই এখন যুগলদের ওপর যে চাপ তৈরি হয় তা কমানোর যে পথ থাকতে পারে তা বোঝানোই এমন আয়োজনের কারণ ছিল। আর্থিক সমস্যা দাম্পত্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা। জীবন শুরুর আগেই হাজার হাজার ডলার ঋণ নেওয়া ভুল একটি বড় ভুল।"’

জ্যাক্স ও লার্সেনের এই অভিনব বিয়ের টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় দেড়শটি। ১০০টা সাধারণ ও ৩০টা ভিআইপি টিকিট বিক্রি করেছেন তারা। তারা জানান, বিয়েতে যা খরচ হয়েছে তার চেয়ে বেশি অর্থ পেয়েছেন তারা। বাকি টাকা ‘ভিলেজ ইম্প্যাক্ট’ নামে একটি দাতব্য সংস্থাকে দান করে দিয়েছেন তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত