Ajker Patrika

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর হাতে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ৫৩
নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু উইটকফকেই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু উইটকফকেই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্ভাব্য একটি চুক্তির জন্য আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করতে যখন কাউকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠাননি। তিনি এমন একজনকে ক্রেমলিনে পাঠান, যার কূটনৈতিক কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সেই ব্যক্তি আর কেউ নন, তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধু, গলফ সঙ্গী এবং বিলিয়নিয়ার রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার স্টিভ উইটকফ।

ট্রাম্প উইটকফকে মধ্যপ্রাচ্যের দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রঙ্কসে জন্ম নেওয়া এই ব্যবসায়ীকে পূর্ব ইউরোপের এক সংঘাত বন্ধের আলোচনায় যুক্ত দেখতে যায়। ট্রাম্পের ভাষায়, তিনি পুতিনের সঙ্গে ‘খুব দীর্ঘ সময়, প্রায় তিন ঘণ্টা’ কাটিয়েছেন।

উইটকফ মস্কো গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বন্দী বিনিময়ের একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে, যা দুই দেশের সম্পর্কে বরফ গলার সম্ভাব্য ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয়েছিল। এর আগে, উইটকফ ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখেন।

যদিও উইটকফ তখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর পদে ছিলেন না, তবে উইটকফ চুক্তির আগে তেল আবিব গিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তিনি দোহায় গিয়ে বাইডেনের দূত ব্রেট ম্যাকগার্কের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘এটি ছিল খুব ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব, এমনকি বন্ধুত্বও।’

এখন উইটকফ আবার মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন। তিনি এমন এক সময়ে সৌদি আরব যাচ্ছেন, যখন দেশটিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে প্রথম মার্কিন-রুশ সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকের আগে ট্রাম্প নিজেই পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজও আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

তবে ট্রাম্পের দলের এই সাহসী পদক্ষেপ পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা আশঙ্কা করছে যে, নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার উদ্ভব হতে পারে, যেখানে প্রধান প্রধান অংশীদারদের আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হবে। ইউক্রেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে সৌদি আরবের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

তাহলে, এই উইটকফ কে, যাকে মার্কিন গণমাধ্যম ‘ম্যান ইন দ্য রুম’ বলে অভিহিত করছে এবং যিনি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন? সাধারণত, ম্যান ইন দ্য রুম বলতে এমন কোনো বিষয় বা ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যাদের গুরুত্ব অনেক কিন্তু কেউই সেই বিষয় বা ব্যক্তির বিষয়ে কথা বলতে চায় না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পরপরই ট্রাম্পের প্রশাসন গঠনের অন্যতম প্রথম পছন্দ ছিলেন উইটকফ। ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘স্টিভ হবেন শান্তির জন্য এক আপসহীন কণ্ঠস্বর এবং তিনি আমাদের সবাইকে গর্বিত করবেন।’

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট স্টিভকে বিশ্বের অন্যতম সেরা চুক্তি সম্পাদনকারী হিসেবে দেখেন।’ উইটকফের পছন্দের কৌশল হলো আকর্ষণ ও সৌজন্যের মাধ্যমে আলোচনা চালানো, তবে প্রয়োজনে তিনি চাপও প্রয়োগ করতে পারেন।

৬৭ বছর বয়সী উইটকফ নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডে বেড়ে ওঠেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজারে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকান দলের দাতা হিসেবে সক্রিয় এবং ট্রাম্পের বহুদিনের পরিচিত বন্ধু। নিউ ইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হন।

গত বছরের রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উইটকফ স্মরণ করেন, কীভাবে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একবার এক আততায়ীর হামলার পর কথা বলেছিলেন। তিনি ট্রাম্পকে তাঁর ‘সত্যিকারের প্রিয় বন্ধু...দুঃসময় ও সুসময়ের সঙ্গী’ বলে অভিহিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এনবিসি নিউজকে বলেন, ট্রাম্প ও উইটকফ দীর্ঘদিনের গলফ সঙ্গী। তিনি বলেন, ‘স্টিভ আর আমি ট্রাম্প এবং আরেকজনের বিপক্ষে খেলতাম এবং সব সময় হারতাম।’

ফ্লোরিডায় গত সেপ্টেম্বরে গলফ খেলার সময় আরেক সন্দেহভাজন আততায়ীকে আটক করে সিক্রেট সার্ভিস। ট্রাম্প জানান, সেই মুহূর্তে তিনি ও উইটকফ গলফ কার্টেই ছিলেন। গ্রাহাম আরও বলেন, উইটকফ প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের দূত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ট্রাম্পের সঙ্গে এক দুপুরের খাবারের সময়। তিনি বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, কারণ আমি জানতাম না সে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এতটা আগ্রহী।’

উইটকফের মধ্যপ্রাচ্যের মিশনের মধ্যে ইরানের সঙ্গেও কূটনৈতিক আলোচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তাঁকে তেহরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় উইটকফের চুক্তি সম্পাদনের দক্ষতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। তিনি ট্রাম্প ও তাঁর পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি স্যান্টিসের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করেছিলেন।

উইটকফ জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্পের সঙ্গেও বৈঠক করেন, যিনি ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের ভোট কারচুপির দাবি প্রত্যাখ্যান করে তাঁর রোষের শিকার হয়েছিলেন। উইটকফ এই সম্পর্ক মসৃণ করতে কাজ করেন। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব মায়ামির বিজনেস স্কুলের রিয়েল এস্টেট অ্যাডভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্সির সময় জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ছিলেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত