Ajker Patrika

‘লন্ডন প্ল্যান’ ও বুশরার কারাবাসের জন্য দায়ী সেনাপ্রধান: ইমরান খান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ১২: ২৬
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ৯ মে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল, তা মূলত তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে ঘটানো হয়েছিল। এর এসব ঘটনা ঘটেছিল মূলত ‘লন্ডন প্ল্যানের’ অংশ হিসেবে। একই সঙ্গে তিনি তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির কারাবাস ও তাঁর ওপর হওয়া অন্যায় আচরণের জন্য দায়ী করেছেন বর্তমান সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে।

ইমরান খান তাঁর ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে বলেন, ‘যারা সত্যকে ধারণ করে, তাদের কখনোই পরাজিত করা যায় না। সর্বশক্তিমান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আর আপনার পালনকর্তা এমন নন যে, তিনি কোনো জনপদকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন, যখন তার অধিবাসীরা সৎকর্মশীল”।’

পোস্টে তিনি হজরত আলী (রা.)-এর একটি উদ্ধৃতি টেনে বলেন, ‘হজরত আলী (রা.) যেমন বলেছেন, অবিশ্বাসের ওপর নির্মিত একটি ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে, কিন্তু অবিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবস্থা টিকে থাকবে না। মিথ্যা ও প্রতারণা অনিবার্যভাবে উন্মোচিত হয়, এবং সত্য বিরাজ করে।’

ইমরান খান বলেন, ‘৯ মের (২০২৩) ঘটনাগুলো ছিল প্রকৃতপক্ষে “লন্ডন প্ল্যানের” একটি অংশ, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) নিশ্চিহ্ন করা। এই পূর্ব পরিকল্পনার অধীনে আমাকে এবং আমার দলের বেশ কয়েকজন নেতা ও কর্মীকে বেআইনিভাবে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নির্লজ্জভাবে চুরি করা হয়েছিল এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা নিরলস ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিলাম, আমাদের সমর্থকদের গুলি করা হয়েছিল এবং আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মামলা সাজানো হয়েছে।’

পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যখন আমি জেনারেল আসিফ মুনিরকে (গোয়েন্দা সংস্থা) আইএসআইয়ের মহাপরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করেছিলাম, তখন তিনি মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আমার স্ত্রী বুশরা বিবির কাছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছিলেন।’

তবে এই আলোচনা বুশরা বিবি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, ‘তিনি এ ধরনের বিষয়ে জড়িত নন এবং তাঁর (আসিম মুনির) সঙ্গে দেখা করবেন না। জেনারেল আসিম মুনিরের প্রতিহিংসাপরায়ণ স্বভাবই বুশরা বিবির অন্যায়ভাবে ১৪ মাসের কারাবাস এবং কারাগারে নিন্দনীয় অমানবিক আচরণের পেছনের কারণ।’

পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধানকে একহাত নিয়ে ইমরান খান আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে ব্যক্তিগত প্রতিশোধের জন্য যেভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, তা পাকিস্তানের অন্ধকারতম স্বৈরশাসনের সময়েও নজিরবিহীন। তাঁর বিরুদ্ধে সহায়তা ও প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছিল, যার কোনো প্রমাণ কখনো উপস্থাপন করা হয়নি এবং তাঁকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি একজন বেসরকারি নাগরিক, একজন গৃহিণী—যাঁর কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। গত চার সপ্তাহে আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করারও অনুমতি দেওয়া হয়নি। জেল নিয়ম অনুযায়ী, গতকাল আমার তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল, কিন্তু আদালতের আদেশ সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে সেই দেখাও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।’

কারাবন্দী ইমরান খান আরও বলেন, ‘গতকাল, আমাদের জাতীয় পরিষদের সদস্য আব্দুল লতিফ চিত্রালিকে ৯ মে (২০২৩) সম্পর্কিত এক সাজানো মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে? একইভাবে, ডাক্তার ইয়াসমিন রশিদ এখনো কারারুদ্ধ, আর শাহ মাহমুদ কোরেশি মুক্তি পেতেন যদি তিনি তাদের কাছ থেকে যা চান তা বলতে রাজি হতেন। সন্ত্রাস দমন আদালত এবং অসংখ্য বিচারক এই দমন অভিযানের সঙ্গে জড়িত। বারবার দাবি সত্ত্বেও, তারা ৯ মের চুরি যাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ তলব বা পরীক্ষা করতে অস্বীকার করে। একজন বিচারকেরও সেই টেপগুলো চাওয়ার এবং প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেওয়ার সাহস নেই। আমরা নির্দোষ। আমাদের জনগণকে প্রমাণ ছাড়াই এবং সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকার ছাড়াই সাজা দেওয়া হচ্ছে। আমরা সেই সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ ও পর্যালোচনার দাবিতে সব আদালতে আবেদন করব।’

তিনি বলেন, ‘আমি ৯ মে এবং ২৬ নভেম্বরের (২০২৪) গণহত্যার (নিরস্ত্র গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের) একটি স্বচ্ছ তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। অথচ এই দাবিতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। পাকিস্তানের বিচার বিভাগ আজকের চেয়ে বেশি লজ্জাজনক কখনো ছিল না। অতীতে, বিচারপতি মুনির ছিলেন, যার অন্যায় সিদ্ধান্তের জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আজ বিচারপতি কাজী ফয়েজ ইসাও একই পথে হাঁটছেন। পুরো বিচারব্যবস্থা জড়িত বলে মনে হচ্ছে, বিচার দ্বারা নয় বরং নিজেদের চাকরি ও সুযোগ-সুবিধা রক্ষার আকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত