Ajker Patrika

জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে হিমশিম হামাস, গাজার ‘বাস্তবতা বদলানোর’ হুমকি ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ২৩
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। এদিকে হামাস জানিয়েছ—বিশেষ সরঞ্জাম ছাড়া তারা আর কোনো নিহত ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিতে পারবে না। এরপরই এমন হুঁশিয়ারি দেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বুধবার রাতে হামাস আরও দুই ইসরায়েলির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৯ নিহত জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের হাতে ফিরেছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাস যে আরও একটি মরদেহ ফেরত দিয়েছে, তা কোনো ইসরায়েলি জিম্মির নয়।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা থেকে মিসরের রাফা সীমান্ত পারাপারটি আজ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে ‘পরবর্তী কোনো সময়ে’ খোলা হবে। জাতিসংঘ ও মানবিক সংস্থাগুলো এ পথকে গাজায় সাহায্য পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা কোগাতের এক মুখপাত্র জানান, রাফা ক্রসিং দিয়ে ভবিষ্যতেও কোনো মানবিক সহায়তা যেতে দেওয়া হবে না, তবে সীমিত ব্যক্তিগত পারাপার চলবে।

ওই মুখপাত্র বলেন, রাফা সীমান্ত দিয়ে কোনো মানবিক সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে কখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। গাজায় সাহায্য এখনো প্রবেশ করছে অন্য পথ দিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় গাজায় ‘সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তা’ নিশ্চিত করা ও সব জিম্মিকে—জীবিত বা মৃত—ফেরত আনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। আঞ্চলিক কূটনীতিকেরা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রথম দিকের দিনগুলো ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ ও ‘সংবেদনশীল’ হবে। জিম্মিদের মরদেহ ফেরত ও সাহায্য প্রবেশের মতো বিষয়গুলোই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার অনেক জটিল অংশ নিয়ে এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।

ইসরায়েল ২৮ জন নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত পাওয়ার আশা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, হামাস এখনো বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বিষয়টিতে আস্থা রাখছে না ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, যদি হামাস চুক্তির শর্ত না মানে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে ইসরায়েল আবার যুদ্ধ শুরু করবে এবং হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে গাজার বাস্তবতা পরিবর্তন করবে।

অন্যদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আমাদের হেফাজতে থাকা সব জীবিত ইসরায়েলি বন্দী ও যেসব মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল, সেগুলো ফেরত দিয়েছি। বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারে বিশেষ সরঞ্জাম ও ব্যাপক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে ৩৬০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহও ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯০টি মরদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক মরদেহেই নির্যাতন ও গুলির চিহ্ন রয়েছে।

গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান আহমেদ আল-ফাররা বলেন, প্রায় সব মরদেহেই চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল, হাত বাঁধা ছিল এবং কপালে গুলি করা হয়েছে। প্রায় সবাইকে যেন সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া নিয়ে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে নতুন করে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাস এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন গাজা থেকে আটক হয়েছিলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আনা হয়নি।

হামাসের ওপর চাপ বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, হামাস যদি চুক্তির শর্ত না মানে, তাহলে তিনি ইসরায়েলকে পুনরায় গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করার অনুমতি দিতে পারেন। ট্রাম্প সিএনএনকে ফোনে বলেন, ‘ইসরায়েল আমার নির্দেশ পেলে আবার রাস্তায় নামবে। তারা চাইলে এক মুহূর্তেই হামাসকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে।’

কাৎজের হুমকির পর গতকাল বুধবার রাতে এক মার্কিন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, গাজা এখন এমনভাবে ‘ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে’ যে, মরদেহ উদ্ধারে অনেক বাধা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুধু চারটি মরদেহ ফেরত আসায় অনেক ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছিল। তবু তারা পরদিনই আরও মরদেহ ফেরত দিয়েছে, যত দ্রুত আমরা তাদের গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছি। আমরা এখন এমন একটি পরিকল্পনা বিবেচনা করছি, যেখানে মরদেহ উদ্ধারকারীদের পুরস্কৃত করা হবে।’

এদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ তুরস্কের গাজায় মরদেহ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোদির গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া সব মন্ত্রীর পদত্যাগ

চট্টগ্রামে অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ২৩ ইউনিট

বিছানাভর্তি টাকা, বিলাসবহুল গাড়ি ও সোনাদানা মিলল পুলিশ কর্মকর্তার ঘরে

তৃতীয় দফায় বাড়ল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অপেক্ষা, চূড়ান্ত দলিলে যা যা আছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত