Ajker Patrika

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলায় সমর্থন ব্রাজিলের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৫, ১০: ৩৩
গাজায় অনেকগুলো বহুজাতিক কোম্পানি ইসরায়েলি গণহত্যায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ছবি: আনাদোলু
গাজায় অনেকগুলো বহুজাতিক কোম্পানি ইসরায়েলি গণহত্যায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ছবি: আনাদোলু

গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানাতে যাচ্ছে ব্রাজিল। গতকাল বুধবার, এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা মামলায় হস্তক্ষেপের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়া যায়।

কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চলমান নৃশংসতার সামনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না। এখন আর নৈতিক দ্ব্যর্থতা বা রাজনৈতিক নীরবতার কোনো স্থান নেই। গণহত্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার যে অধিকার ফিলিস্তিনিদের রয়েছে, তা গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে—এ বিষয়টিরই সম্ভাব্যতা এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে ব্রাজিল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিবৃতিতে ক্ষুধা ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ব্যবহারের ইসরায়েলি কৌশলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ব্রাজিল। সম্প্রতি ব্রিকস সম্মেলনে গিয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযানকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ‘গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশন’-এর আওতায় ২০২৩ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এতে বলা হয়, ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যামূলক’ কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিশেষ করে বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিত হামলা ও মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখার মাধ্যমে এই গণহত্যা চালানো হচ্ছে।

এরই মধ্যে ব্রাজিলের এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। ব্রাজিলের ইসরায়েলি দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলে, ‘ব্রাজিলের বক্তব্য বাস্তব পরিস্থিতির সঠিক প্রতিফলন নয়। এ ছাড়া, তাদের ওই বক্তব্যে হামাসের ভূমিকাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে।

ব্রাজিলের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে দেশটির ইসরায়েলি জাতীয় সংস্থা কনিব (সিওএনআইবি)। তাদের ভাষ্য—ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্ব ভাঙার এই সিদ্ধান্ত ব্রাজিলের পররাষ্ট্রনীতির চরমপন্থী অবস্থানেরই প্রমাণই।

ইতিমধ্যেই স্পেন, আয়ারল্যান্ড, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ এ মামলায় হস্তক্ষেপের আবেদন করেছে। তারা আইসিজেকে অনুরোধ করেছে—ইসরায়েল ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে, এমন ঘোষণা দিতে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক আদালত এখনো গণহত্যার প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আদালত এক অন্তর্বর্তী আদেশে ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়, যার মধ্যে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করার বিষয়টিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশকে উপেক্ষা করে গত মার্চে গাজায় সব ধরনের সহায়তা প্রবেশে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। পরে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্ক মানবিক সংগঠন গাজা হিউম্যানিটিরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইএফ) মাধ্যমে সীমিত পরিসরে কিছু ত্রাণ সহায়তা ঢুকতে দেওয়া হয়।

বিতর্কিত ওই সংগঠনের ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রতিদিনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে বহু ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ওই বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে মে মাস থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়া বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থাকেই নিষিদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে এসব ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রকে ‘মৃত্যুকূপ’ আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

গাজায় চলমান সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজারের এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত