Ajker Patrika

স্বৈরশাসকের পতনের ৯ মাসের মধ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচন দিচ্ছে সিরিয়া

অনলাইন ডেস্ক
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: আনাদোলু
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: আনাদোলু

দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর নতুন শাসনের অধীনে সিরিয়ায় প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। দেশটির ‘পিপলস অ্যাসেম্বলি’ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির প্রধান মোহাম্মদ তাহা আল-আহমাদ রোববার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা-কে জানিয়েছেন, এই নির্বাচন ১৫ থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের এক আকস্মিক ও সফল অভিযানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটাই হতে যাচ্ছে সিরিয়ার প্রথম জাতীয় নির্বাচন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পুনর্গঠনের ধারায় নির্বাচনকে দেশটির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২১০ আসনের এই সংসদের এক-তৃতীয়াংশ সরাসরি নিয়োগ দেবেন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। বাকি আসনগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সদস্য হাসান আল-দাঘিম জানিয়েছেন, নির্বাচিত আসনের জন্য ভোট নিতে প্রতিটি প্রদেশে একটি করে ইলেকটোরাল কলেজ গঠিত হবে।

গত মার্চে এক অস্থায়ী সংবিধানে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আল-শারা। সেসময় একটি পিপলস কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়—যা স্থায়ী সংবিধান গ্রহণ ও পূর্ণাঙ্গ জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সংসদ হিসেবে কাজ করবে। তবে সংবিধান রচনা ও পূর্ণ নির্বাচন পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি কয়েক বছর সময় নিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে নির্বাচন ঘোষণার এই মুহূর্তে সিরিয়ায় রাজনৈতিক বাস্তবতা অত্যন্ত জটিল ও বিভক্ত। দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সুয়াইদায় সম্প্রতি নতুন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বেদুইন গোত্র ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের যোদ্ধাদের মধ্যে পারস্পরিক অপহরণ ও প্রতিশোধমূলক হামলার জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়, যাতে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

সরকারি বাহিনী সংঘর্ষ থামানোর জন্য হস্তক্ষেপ করলেও, স্থানীয় সূত্র জানায় তারা মূলত বেদুইন গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ নিয়েছে। এমনকি কিছু সরকারি সেনা সদস্যকে দ্রুজ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও বসতবাড়ি লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী ইসরায়েল সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সিরিয়ার দ্রুজ সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতেই এই হামলা চালিয়েছে।

দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপট এখনো অস্থির। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর কতটা শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রদায়িক বিভাজন, স্থানীয় অস্ত্রধারী গোষ্ঠীগুলোর প্রতিপত্তি ও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের পটভূমিতে নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও—সিরিয়ার সামনে স্থিতিশীলতা অর্জনের পথ এখনো বহু দূর।

এর মধ্যেই নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, শিগগিরই ভোটার তালিকা ও প্রার্থীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হবে। দেশবাসীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত