Ajker Patrika

ফিলিস্তিনি ও লেবানিজদের নরক যন্ত্রণা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ইসরায়েলিরা

অনলাইন ডেস্ক
ইরানি হামলার ভয়ে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তেল আবিবের টিকভা অঞ্চলের বাসিন্দাদের। ছবি: এএফপি
ইরানি হামলার ভয়ে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তেল আবিবের টিকভা অঞ্চলের বাসিন্দাদের। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল গত শুক্রবার ইরানে আক্রমণ চালানোর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় সংঘাতের সূচনা করে। এরপর দুদিন ইরান খুব ছোট পরিসরে জবাব দিলেও তৃতীয় দিন থেকে ইসরায়েলের ওপর যেন স্রেফ নরক নামিয়ে এনেছে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র মুহুর্মুহু আঘাত হানছে ইসরায়েলি শহরগুলোতে। বেশির ভাগ বাসিন্দাকেই আশ্রয় নিতে হয়ে কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে।

ইরান এমনভাবে মারাত্মকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে—এমনটা বোধ হয় ইসরায়েলি নীতি নির্ধারকেরাও ভাবেননি। একই সঙ্গে, ইসরায়েলিদেরও সেই ভুল ভেঙে গেছে যে, তারা নিজ দেশে নিরাপদ। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সেই ভুল ভেঙে দিয়েছে। ইরানের হামলায় স্রেফ হতবিহ্বল ও ভীত হয়ে পড়েছেন ইসরায়েলিরা। তারা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, তাদের দেশের বর্বরতার কারণে বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা কোন নরক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলিজা ম্যাগনিয়ের মনে করেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে শত্রুতা কেবলই আরও খারাপের দিকে যাবে। তবে ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে ইসরায়েলের যুদ্ধ সমর্থন কমে যেতে পারে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় এটি (সংঘাতের তীব্রতা) বাড়তে থাকবে, কারণ ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আমরা এখন কেবল এর প্রথম দিনগুলোতে আছি।’

ম্যাগনিয়ের প্যারিস থেকে বলেছেন, ‘এ ছাড়া ইসরায়েলি কর্মকর্তারা, প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনী, সকলেই ইসরায়েলি সমাজকে সতর্ক করেছেন যে—এই যুদ্ধ ভয়াবহ হবে এবং...এর মূল্য অত্যন্ত বেশি হবে। কিন্তু বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পেছনে থাকা এবং ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সমর্থনকারী সমাজ এই মাত্রার ধ্বংস আশা করেনি। কারণ ১৯৭৩ সাল থেকে ইসরায়েল কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়নি এবং তেল আবিবের ঠিক কেন্দ্রস্থল এই মাত্রার হামলার শিকার হয়নি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সুতরাং এখন তারা বুঝতে পারছে ফিলিস্তিনিরা কী কষ্ট ভোগ করছে, লেবানিজরা কী কষ্ট ভোগ করছে। ইসরায়েলিরা তাদের চোখের সামনে ধ্বংসযজ্ঞ দেখছে, তেল আবিবে, হাইফাতে ভবনগুলো ধ্বংস হয়েছে, সবখানে আগুন। সম্পত্তি আর অবশিষ্ট নেই। ১ দিনে আটজন নিহত, ২৫০ জন আহত। ইসরায়েলে এত দীর্ঘ সময় ধরে এমন ঘটনা শোনা যায়নি। সুতরাং, ইসরায়েলি সমাজ এর জন্য প্রস্তুত ছিল না।’

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের জেরুজালেম প্রতিনিধি জেরেমি ডায়মন্ড ইরানি হামলার পর তেল আবিবের রাস্তায় ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেছেন। সেখানে উদ্ধারকারী ও সামরিক কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এমন দৃশ্য তৈরি হয়েছে।

এক নারী জানান, তিনি তাঁর বাড়ির ভূগর্ভস্থ বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই হামলার ‘তীব্র অনুভব’ করেছেন। তিনি ডায়মন্ডকে বলেন, ‘আমরা খুব সাবধানে বেরিয়ে এসেছিলাম, কারণ আমরা ভীত ছিলাম।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা যখন হাঁটছিলাম, তখন ভবনগুলো ধসে পড়ছিল আমাদের চোখের সামনেই।’

ওই নারী বলেন, ‘বাতাসে ধোঁয়ার গন্ধ...আমাকে টি-শার্ট দিয়ে নাক ঢাকতে হয়েছিল। বেসমেন্টে বিষাক্ত নিশ্বাস নেওয়া থেকে বাঁচতে আমাদের খোলা রাস্তায় বেরিয়ে এসে হাঁটতে হয়েছে।’

ডায়মন্ড জানান, ঘটনাস্থলের কাছে একটি আবাসিক ভবন আংশিকভাবে ধসে পড়েছে এবং কয়েক ব্লক দূর থেকেও ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, অন্তত ১০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ মানুষ হামলার ক্ষয়ক্ষতি দেখতে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং পরিবার ও বন্ধুরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। ইরানি হামলার ধাক্কা সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ডায়মন্ড বলেন, ‘১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকে তেল আবিব ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এত ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি আর কখনোই হয়নি। সেই সময় শহরটিতে স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার আগে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারলে বর্তমান পরিস্থিত ‘অনেক বেশি মারাত্মক’ হতে পারত।

সিএনএনের এই সাংবাদিক বলেন, ‘এই হামলায় বেঁচে যাওয়া প্রতিটি মানুষ, যাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তারা আঘাতের মুহূর্তে কোনো না কোনো বোমা আশ্রয়কেন্দ্র বা ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। এর কারণ হলো, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরান থেকে সম্ভাব্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত