অনলাইন ডেস্ক
এক বছর আগে গাজায় আগ্রাসনে নেমে বেশ চাপে ছিল ইসরায়েল। আটকে পড়া জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে দেশের মধ্যে বিক্ষোভ, ইরানের ভাড়াটে বাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণ, আর ওয়াশিংটনের চাপ ছিল যুদ্ধ থামাতে। তবে এবার ইরানে আক্রমণ শুরু করার পর তেমন কোনো অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নেই দেশটি।
ইসরায়েল নিজের খায়েশ মোতাবেক মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দেওয়ার অভিযানে নেমেছে। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকটা বাধ্য করছে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে। ইসরায়েল চতুর্থ দিনে এসে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা আরও জোরদার করেছে। তবে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ বিশ্ববাজারে অস্থিরতা ও ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস ঘটাতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে।
দুঃসাহসিক গোয়েন্দা অভিযান ও তীব্র সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল কার্যত হামাস ও হিজবুল্লাহকে নিষ্ক্রিয় করেছে এবং একই সঙ্গে সিরিয়ায় আসাদ শাসনের পতন ঘটিয়েছে। এখন তারা সরাসরি তেহরানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আড়ালে ইসরায়েল চালিয়েছে এক নজিরবিহীন হামলা। এর লক্ষ্য কেবল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধূলিস্যাৎ করে দেওয়া নয়, বরং দেশটির ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলা।
এই সংঘাত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত কূটনৈতিক পথের কাঁটাও। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে ছিলেন। তবে সে পথে কোনো সাফল্য না আসায় এখন তিনি ইসরায়েলি হামলার প্রশংসা করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘এখনই চুক্তিতে না এলে ইরানের কিছুই বাকি থাকবে না।’
মধ্যপ্রাচ্যে নাক না গলানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া ট্রাম্প এখন ইরানি পাল্টা আক্রমণ থেকে ইসরায়েলকে রক্ষায় যুদ্ধজাহাজ ও জঙ্গি বিমান পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। ইরান যদি আমেরিকান ঘাঁটি বা পারস্য উপসাগরের জ্বালানি রপ্তানিতে বাধা দেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত ভয়ংকর রকমের বিস্তৃত যুদ্ধ শুরু হয়নি। ইরান ইসরায়েলের দিকে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, কিন্তু তেমন কোনো কার্যকর ফল আসেনি। ইসরায়েলি নেতারা এখন অবশ্যম্ভাবী বিজয়ের কথাও বলছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতাকে বদলে দিতে পারে।
শুক্রবার ইরানিদের উদ্দেশে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনাদের মুক্তির দিন এখন খুব কাছেই। সেই দিন এলে ইসরায়েলি ও ইরানিরা তাদের প্রাচীন বন্ধুত্ব পুনর্গঠন করবে। একসঙ্গে আমরা শান্তি, সমৃদ্ধি ও আশার ভবিষ্যৎ গড়ব।’
যুক্তরাষ্ট্র দেশীয় সংকট ও অন্য ভূরাজনৈতিক হুমকি নিয়ে ব্যতিব্যস্ততার মধ্যে ইসরায়েলের এই সাহসী আক্রমণ চালিয়েছে। সেটি অনেকটা মার্কিন স্বার্থের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে ইসরায়েলকে না করতে পারছেন না ট্রাম্প। আগের নির্ধারিত মার্কিন কূটনৈতিক রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে তিনি নিজস্ব বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেছেন।
ক্ষমতায় আসার আগে গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন ট্রাম্প। তবে ইউক্রেন ও ইরান সংকট মাথাচাড়া দেওয়ার পর তার মনোযোগে বিচ্যুতি ঘটেছে। গাজাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা বললেও তাতে আগ্রহ হারিয়েছেন। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েও থেমে গেছেন। ফলে নেতানিয়াহু সহজেই নিজের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
ইসরায়েলের সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। ইরান যে বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করেছে এবং তার চারপাশে জোট তৈরি করেছে, তা ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তাই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা এখন জরুরি।
গত কয়েক দিনে ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, এতে তারা ইচ্ছামতো হামলা চালাতে পারছে। তবে এখনো পর্যন্ত তারা ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো—যেমন শক্তভাবে সুরক্ষিত ফোরদৌ কেন্দ্র বা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ইউরেনিয়াম মজুত ধ্বংস করতে পারেনি।
সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলেন, ইসরায়েল ও ইরান—উভয়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই যুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বেঁচে থাকে কি না তার ওপর।
রোববার দুপুর পর্যন্ত ইসরায়েল ৫০ ঘণ্টায় ২৫০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এখনো ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেনি—যা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বড় পরিবর্তন।
পূর্বের বাইডেন প্রশাসন হামলার মাত্রা কমাতে ইসরায়েলের ওপর চাপ দিয়েছিল, যাতে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমে, গাজার যুদ্ধ থামে এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমিত হয়। ইরান ও ইসরায়েলের সরাসরি সংঘাতে বাইডেন প্রশাসন চাইত, ইসরায়েল যেন ইরানের পারমাণবিক বা জ্বালানি খাতে হামলা না করে।
এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বারবার বলেছিলেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে ধৈর্য ধরুন, যাতে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু নেতানিয়াহু যখন তাকে স্মরণ করিয়ে দেন, যে নির্ধারিত দুই মাসের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে, তখন ট্রাম্প সম্মতি দেন।
সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেন বলেন, ‘এই যুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে ইতি টানার চেয়ে বড় ভুল আর কিছু হতে পারে না।’
তবে বড় প্রতিবন্ধকতা এখন ইসরায়েল নিজেই। ২০ মাসের যুদ্ধে ক্লান্ত জনতা, অনেককেই বারবার সেনাবাহিনীতে ডাকা হয়েছে, পরিবার ও পেশা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজায় এখনো অন্তত ২০ জন জিম্মি জীবিত এবং অনেক লাশ ফেরত আনা হয়নি। সঙ্গে আছে নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়ে বিভক্তি। বিরোধীদের সামরিক ও নিরাপত্তা খাত থেকে সরিয়ে দেওয়া, বিচারব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে বিতর্ক ও গাজার যুদ্ধ শেষ করতে না পারাসহ ইত্যাদি কারণে দেশ বিভক্ত।
ওরেন বলেন, ব্যথা, ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তা—এই তিনেই ইসরায়েলি সমাজ ডুবে আছে এখন।
তবে ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ইয়োহানান প্লেসনার মনে করেন, তবু এখানে বোঝাপড়াটা স্পষ্ট। এই সংঘাতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এপ্রিলের এক জরিপ বলছে, অর্ধেকের বেশি ইহুদি ইসরায়েলি ইরানের ওপর হামলার পক্ষে, এমনকি আমেরিকার সমর্থন না থাকলেও।
ইসরায়েল বহু বছর ধরে ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা ও হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতি প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তারা ‘ঘাস কাটা’ কৌশলে হামলা করেছে, সরবরাহ বন্ধ করেছে। কিন্তু ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের আক্রমণে সেই কৌশল ব্যর্থ হয়। এরপর তারা ধারাবাহিকভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহকে দমন করে।
এতে নিরাপত্তা মহলে নতুন উপলব্ধি আসে, ঝুঁকি নিয়ে হলেও হুমকি চিরতরে দূর করাই একমাত্র পথ। প্লেসনার বলেন, এটা কেবল মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক দফা সহিংসতা নয়। এটা অনেক বড় মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ঘটনা। এখন কেবল ইরানই বাকি।
ইসরায়েলের লক্ষ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়; বরং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে তারা সীমিত লক্ষ্য নির্ধারণ করে সফল হয়। ২ মাসের মধ্যে হিজবুল্লাহ পিছু হটে। কিন্তু গাজায় এই কৌশল ছিল না। হামাসকে ধ্বংস করার ঘোষণা থাকলেও যুদ্ধ-পরবর্তী শাসনব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা ছিল না। ফলে ২০ মাস ধরে চলা অভিযানে গাজায় প্রায় ৫৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তবু যুদ্ধের শেষ নেই।
গাজার যুদ্ধ নিয়ে দেশে আস্থা কমছে। আন্তর্জাতিক সমর্থনও হ্রাস পেয়েছে। শিশুর মৃত্যু ও দুর্ভিক্ষের ছবি বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলকে একঘরে করে ফেলেছে।
তেল আবিবভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড্যানি সিট্রিনোভিচ বলেন, ইরানে প্রাথমিক সাফল্যে ইসরায়েলে যে উল্লাস দেখা যাচ্ছে, তা দ্রুত বদলে যেতে পারে যদি ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখে।
তিনি বলেন, ইসরায়েলের সামরিক সাফল্য অনেক সময় কূটনৈতিকভাবে কাজে আসেনি। ১৯৮২ সালে বৈরুতে দ্রুত অগ্রসর হয়ে তারা ২০০০ সাল পর্যন্ত লেবাননে আটকে ছিল। ১৯৬৭ সালের জয়ও ১৯৭৩ সালের আকস্মিক হামলায় অনেকটাই ম্লান হয়।
এখন নেতানিয়াহুর বড় চ্যালেঞ্জ ইরানে কৌশলগত সাফল্যকে স্থায়ী কূটনৈতিক বিজয়ে রূপ দেওয়া। ইরান দুর্বল, কিন্তু এখনো একটি বড় এবং অটল প্রতিপক্ষ। নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প চান, তারা যেন এক দুর্বল অবস্থায় আলোচনায় বসে। কিন্তু ইরান না-ও বসতে পারে।
সিট্রিনোভিচ বলেন, ‘ইসরায়েলকে এখনই ভাবতে হবে, কীভাবে এই যুদ্ধের ইতি টানবে। আমাদের যুদ্ধ শুরুর আগেই ‘প্রস্থান কৌশল’ নিয়ে ভাবতে শুরু করা উচিত।’
এক বছর আগে গাজায় আগ্রাসনে নেমে বেশ চাপে ছিল ইসরায়েল। আটকে পড়া জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে দেশের মধ্যে বিক্ষোভ, ইরানের ভাড়াটে বাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণ, আর ওয়াশিংটনের চাপ ছিল যুদ্ধ থামাতে। তবে এবার ইরানে আক্রমণ শুরু করার পর তেমন কোনো অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নেই দেশটি।
ইসরায়েল নিজের খায়েশ মোতাবেক মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দেওয়ার অভিযানে নেমেছে। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকটা বাধ্য করছে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে। ইসরায়েল চতুর্থ দিনে এসে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা আরও জোরদার করেছে। তবে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ বিশ্ববাজারে অস্থিরতা ও ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস ঘটাতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে।
দুঃসাহসিক গোয়েন্দা অভিযান ও তীব্র সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল কার্যত হামাস ও হিজবুল্লাহকে নিষ্ক্রিয় করেছে এবং একই সঙ্গে সিরিয়ায় আসাদ শাসনের পতন ঘটিয়েছে। এখন তারা সরাসরি তেহরানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আড়ালে ইসরায়েল চালিয়েছে এক নজিরবিহীন হামলা। এর লক্ষ্য কেবল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধূলিস্যাৎ করে দেওয়া নয়, বরং দেশটির ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলা।
এই সংঘাত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত কূটনৈতিক পথের কাঁটাও। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে ছিলেন। তবে সে পথে কোনো সাফল্য না আসায় এখন তিনি ইসরায়েলি হামলার প্রশংসা করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘এখনই চুক্তিতে না এলে ইরানের কিছুই বাকি থাকবে না।’
মধ্যপ্রাচ্যে নাক না গলানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া ট্রাম্প এখন ইরানি পাল্টা আক্রমণ থেকে ইসরায়েলকে রক্ষায় যুদ্ধজাহাজ ও জঙ্গি বিমান পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। ইরান যদি আমেরিকান ঘাঁটি বা পারস্য উপসাগরের জ্বালানি রপ্তানিতে বাধা দেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত ভয়ংকর রকমের বিস্তৃত যুদ্ধ শুরু হয়নি। ইরান ইসরায়েলের দিকে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, কিন্তু তেমন কোনো কার্যকর ফল আসেনি। ইসরায়েলি নেতারা এখন অবশ্যম্ভাবী বিজয়ের কথাও বলছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতাকে বদলে দিতে পারে।
শুক্রবার ইরানিদের উদ্দেশে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনাদের মুক্তির দিন এখন খুব কাছেই। সেই দিন এলে ইসরায়েলি ও ইরানিরা তাদের প্রাচীন বন্ধুত্ব পুনর্গঠন করবে। একসঙ্গে আমরা শান্তি, সমৃদ্ধি ও আশার ভবিষ্যৎ গড়ব।’
যুক্তরাষ্ট্র দেশীয় সংকট ও অন্য ভূরাজনৈতিক হুমকি নিয়ে ব্যতিব্যস্ততার মধ্যে ইসরায়েলের এই সাহসী আক্রমণ চালিয়েছে। সেটি অনেকটা মার্কিন স্বার্থের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে ইসরায়েলকে না করতে পারছেন না ট্রাম্প। আগের নির্ধারিত মার্কিন কূটনৈতিক রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে তিনি নিজস্ব বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেছেন।
ক্ষমতায় আসার আগে গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন ট্রাম্প। তবে ইউক্রেন ও ইরান সংকট মাথাচাড়া দেওয়ার পর তার মনোযোগে বিচ্যুতি ঘটেছে। গাজাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা বললেও তাতে আগ্রহ হারিয়েছেন। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েও থেমে গেছেন। ফলে নেতানিয়াহু সহজেই নিজের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
ইসরায়েলের সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। ইরান যে বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করেছে এবং তার চারপাশে জোট তৈরি করেছে, তা ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তাই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা এখন জরুরি।
গত কয়েক দিনে ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, এতে তারা ইচ্ছামতো হামলা চালাতে পারছে। তবে এখনো পর্যন্ত তারা ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো—যেমন শক্তভাবে সুরক্ষিত ফোরদৌ কেন্দ্র বা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ইউরেনিয়াম মজুত ধ্বংস করতে পারেনি।
সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলেন, ইসরায়েল ও ইরান—উভয়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই যুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বেঁচে থাকে কি না তার ওপর।
রোববার দুপুর পর্যন্ত ইসরায়েল ৫০ ঘণ্টায় ২৫০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এখনো ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেনি—যা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বড় পরিবর্তন।
পূর্বের বাইডেন প্রশাসন হামলার মাত্রা কমাতে ইসরায়েলের ওপর চাপ দিয়েছিল, যাতে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমে, গাজার যুদ্ধ থামে এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমিত হয়। ইরান ও ইসরায়েলের সরাসরি সংঘাতে বাইডেন প্রশাসন চাইত, ইসরায়েল যেন ইরানের পারমাণবিক বা জ্বালানি খাতে হামলা না করে।
এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বারবার বলেছিলেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে ধৈর্য ধরুন, যাতে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু নেতানিয়াহু যখন তাকে স্মরণ করিয়ে দেন, যে নির্ধারিত দুই মাসের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে, তখন ট্রাম্প সম্মতি দেন।
সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেন বলেন, ‘এই যুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে ইতি টানার চেয়ে বড় ভুল আর কিছু হতে পারে না।’
তবে বড় প্রতিবন্ধকতা এখন ইসরায়েল নিজেই। ২০ মাসের যুদ্ধে ক্লান্ত জনতা, অনেককেই বারবার সেনাবাহিনীতে ডাকা হয়েছে, পরিবার ও পেশা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজায় এখনো অন্তত ২০ জন জিম্মি জীবিত এবং অনেক লাশ ফেরত আনা হয়নি। সঙ্গে আছে নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়ে বিভক্তি। বিরোধীদের সামরিক ও নিরাপত্তা খাত থেকে সরিয়ে দেওয়া, বিচারব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে বিতর্ক ও গাজার যুদ্ধ শেষ করতে না পারাসহ ইত্যাদি কারণে দেশ বিভক্ত।
ওরেন বলেন, ব্যথা, ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তা—এই তিনেই ইসরায়েলি সমাজ ডুবে আছে এখন।
তবে ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ইয়োহানান প্লেসনার মনে করেন, তবু এখানে বোঝাপড়াটা স্পষ্ট। এই সংঘাতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এপ্রিলের এক জরিপ বলছে, অর্ধেকের বেশি ইহুদি ইসরায়েলি ইরানের ওপর হামলার পক্ষে, এমনকি আমেরিকার সমর্থন না থাকলেও।
ইসরায়েল বহু বছর ধরে ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা ও হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতি প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তারা ‘ঘাস কাটা’ কৌশলে হামলা করেছে, সরবরাহ বন্ধ করেছে। কিন্তু ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের আক্রমণে সেই কৌশল ব্যর্থ হয়। এরপর তারা ধারাবাহিকভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহকে দমন করে।
এতে নিরাপত্তা মহলে নতুন উপলব্ধি আসে, ঝুঁকি নিয়ে হলেও হুমকি চিরতরে দূর করাই একমাত্র পথ। প্লেসনার বলেন, এটা কেবল মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক দফা সহিংসতা নয়। এটা অনেক বড় মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ঘটনা। এখন কেবল ইরানই বাকি।
ইসরায়েলের লক্ষ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়; বরং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে তারা সীমিত লক্ষ্য নির্ধারণ করে সফল হয়। ২ মাসের মধ্যে হিজবুল্লাহ পিছু হটে। কিন্তু গাজায় এই কৌশল ছিল না। হামাসকে ধ্বংস করার ঘোষণা থাকলেও যুদ্ধ-পরবর্তী শাসনব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা ছিল না। ফলে ২০ মাস ধরে চলা অভিযানে গাজায় প্রায় ৫৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তবু যুদ্ধের শেষ নেই।
গাজার যুদ্ধ নিয়ে দেশে আস্থা কমছে। আন্তর্জাতিক সমর্থনও হ্রাস পেয়েছে। শিশুর মৃত্যু ও দুর্ভিক্ষের ছবি বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলকে একঘরে করে ফেলেছে।
তেল আবিবভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড্যানি সিট্রিনোভিচ বলেন, ইরানে প্রাথমিক সাফল্যে ইসরায়েলে যে উল্লাস দেখা যাচ্ছে, তা দ্রুত বদলে যেতে পারে যদি ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখে।
তিনি বলেন, ইসরায়েলের সামরিক সাফল্য অনেক সময় কূটনৈতিকভাবে কাজে আসেনি। ১৯৮২ সালে বৈরুতে দ্রুত অগ্রসর হয়ে তারা ২০০০ সাল পর্যন্ত লেবাননে আটকে ছিল। ১৯৬৭ সালের জয়ও ১৯৭৩ সালের আকস্মিক হামলায় অনেকটাই ম্লান হয়।
এখন নেতানিয়াহুর বড় চ্যালেঞ্জ ইরানে কৌশলগত সাফল্যকে স্থায়ী কূটনৈতিক বিজয়ে রূপ দেওয়া। ইরান দুর্বল, কিন্তু এখনো একটি বড় এবং অটল প্রতিপক্ষ। নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প চান, তারা যেন এক দুর্বল অবস্থায় আলোচনায় বসে। কিন্তু ইরান না-ও বসতে পারে।
সিট্রিনোভিচ বলেন, ‘ইসরায়েলকে এখনই ভাবতে হবে, কীভাবে এই যুদ্ধের ইতি টানবে। আমাদের যুদ্ধ শুরুর আগেই ‘প্রস্থান কৌশল’ নিয়ে ভাবতে শুরু করা উচিত।’
ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে উত্তেজনা বাড়ছে। দ্রুত সংকট সমাধান না হলে যেকোনো সময় ‘হরমুজ প্রণালি’ বন্ধের হুমকি দিয়েছে ইরান। জ্বালানি তেল সরবরাহে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক এই বাণিজ্যপথ বন্ধ হলে জ্বালানির বৈশ্বিক বাজার আরও অস্থির হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন...
২ ঘণ্টা আগেইরানে গত বৃহস্পতিবার হামলা চালায় ইসরায়েল। এর জবাবে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। আল জাজিরা ও জেরুজালেম পোস্টের খবর অনুযায়ী এ পর্যন্ত আড়াই থেকে তিন শ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের দাবি, ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তেহরান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালানো এক হামলায় তারা ইরানের দুটি এফ-১৪ যুদ্ধবিমান সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিএফের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফরিন এ তথ্য জানান।
৪ ঘণ্টা আগেইসরায়েলে সবচেয়ে তীব্র ও বড় হামলার প্রস্তুতি শুরু করেছে ইরান। তারা বলেছে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে যেসব হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় এটি হবে সবচেয়ে বড় ও তীব্র। সোমবার (১৬ জুন) দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
৪ ঘণ্টা আগে