Ajker Patrika

‘ইরানে হামলা করলে মার্কিন ঘাঁটিতে আগুন ঝরাবে মিত্ররা’

অনলাইন ডেস্ক
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত আবাসিক ভবন খতিয়ে দেখছেন ইসরায়েলের নিরাপত্তাকর্মীরা। ছবি: এএফপি
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত আবাসিক ভবন খতিয়ে দেখছেন ইসরায়েলের নিরাপত্তাকর্মীরা। ছবি: এএফপি

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোহরে খারাজমি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভালোভাবেই অবগত আছেন যে, ইরানের কাছে ‘বিভিন্ন রেঞ্জের হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র’ রয়েছে। আর তিনি যুদ্ধে জড়ালে ইরানের আঞ্চলিক মিত্ররা ‘মার্কিন ঘাঁটিতে প্রচুর আগুন’ ঝরাতে পারে—এটাও তিনি জানেন।

আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক খারাজমি বলেন, ‘ট্রাম্প নিজেই দোটানায় ভুগছেন এবং সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে দ্বিধাগ্রস্ত বলে মনে হচ্ছে।’

খারাজমি আরও বলেন, ‘এমনকি আজও, যুক্তরাষ্ট্রের দশজনের মধ্যে আটজন কূটনৈতিক সমাধানের কথা ভাবছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশে একমত নন।’

তিনি মন্তব্য করেন, ‘আমি মনে করি, যদি পশ্চিম, চীন, রাশিয়া এবং আরব রাষ্ট্রগুলো অন্যান্য দেশের পাশাপাশি পরিস্থিতির জন্য আরও বেশি দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি হয়, তাহলে তারা সত্যিই একটি কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে পারবে।’

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১৯টি স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনা রয়েছে, যার মধ্যে বাহরাইন, মিসর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটটি স্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে। এসব ঘাঁটিতে প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। প্রয়োজনে কয়েক গুণ বাড়াতেও পারে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে তার নিজস্ব ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ নামে একটি জোট তৈরি করেছে। এই জোটে রয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী, ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী এবং ফিলিস্তিনের হামাসের মতো বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলো অতীতে মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের কাছে বিভিন্ন পাল্লার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে কিছু ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিতে পৌঁছাতে সক্ষম। ইরানের সেজ্জিল-২ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার এবং সম্প্রতি উন্মোচিত হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাত্তাহ’-এর গতি শব্দের পাঁচ গুণেরও বেশি, যা প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এমন এক সময় খারাজমি এমন মন্তব্য করলেন যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে, আর ইরান পাল্টা জবাব দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে আঞ্চলিক সংঘাতের ব্যাপকতা মারাত্মক হতে পারে এবং মার্কিন স্বার্থের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে ইরান সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতে চাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত