Ajker Patrika

নিরাপত্তা সংকট: ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর জন্য খাদ্য সরবরাহ স্থগিত

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২: ০৬
নিরাপত্তা সংকট: ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর জন্য খাদ্য সরবরাহ স্থগিত

ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার অভাবে গাজার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। অঞ্চলটিতে গাড়িবহরগুলো বিপর্যয় ও সহিংসতার মুখে পড়ায় ‘জীবন রক্ষাকারী’ এ কর্মসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।

সংস্থাটির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলে, এ সিদ্ধান্ত খুব সহজেই নেওয়া হয়নি। সংস্থার সদস্যরা ব্যাপক ভিড়, বন্দুকযুদ্ধ ও লুটপাটের সম্মুখীন হয়েছেন।

গত ডিসেম্বর থেকেই গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ। ডব্লিউএফপি বলছে, সর্বশেষ ঘটনাগুলো ক্ষুধা ও রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ারই প্রমাণ।

গত অক্টোবরে স্থল অভিযান শুরু করার সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ১১ লাখ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে গাজার উত্তরাঞ্চলের সব এলাকা খালি করে দক্ষিণে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেয়। উচ্ছেদের আওতায় গাজার ওই সব এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা যুদ্ধের আগে এই অঞ্চলের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল ছিল।

বেশির ভাগ বাসিন্দা ইসরায়েলি আদেশ অনুসরণ করলেও কয়েক লাখ বাসিন্দা ওই অঞ্চল ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। ইসরায়েলি সেনারা এই অঞ্চল ঘিরে ফেলায় এবং সেখানে হামাসের ঘাঁটিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কারণে অনেকে ওই অঞ্চল থেকে পালাতে পারেনি আর।

গত মাসে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, উত্তর গাজায় রয়ে যাওয়া অন্তত তিন লাখ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সংস্থাটির সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।

উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ বেশ দুরূহ এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে সুরক্ষা ছাড়পত্রের ওপর নির্ভরশীল।

এই সপ্তাহান্তে ডব্লিউএফপি আশা করেছিল, তারা এক সপ্তাহব্যাপী খাদ্য সরবরাহ শুরু করবে এবং ক্ষুধা ও হতাশা নিবারণে সহায়তা করতে প্রতিদিন ১০টি লরি পাঠাবে।

কিন্তু গত রোববার একটি গাড়িবহর উত্তরের দিকে যাওয়ার পথে ওয়াদি গাজা চেক পয়েন্টের কাছাকাছি পৌঁছালে ‘ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় তা ঘিরে ফেলে’ এবং ‘মানুষ গাড়িতে ওঠার একাধিক চেষ্টা’ করে। গাজা শহরে প্রবেশের পর গাড়িবহরটি ‘প্রচণ্ড উত্তেজনা ও বিস্ফোরণের’ মুখোমুখি হয়।

এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস ও মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহ শহরের মধ্যে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি লরিতে লুটপাট ও এক চালককে মারধরের ঘটনা ঘটে।

ডব্লিউএফপি জানায়, গত দুই দিনে তাদের দলগুলো গাজা উপত্যকায় ‘নজিরবিহীন মাত্রার হতাশার সাক্ষী হয়েছে’। খাদ্য ও নিরাপদ পানি অবিশ্বাস্যভাবে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে এবং রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। নারী-শিশুদের পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমে এসেছে এবং এর কারণে তীব্র অপুষ্টি বেড়েই চলেছে।

সংস্থাটি আরও বলে, এরই মধ্যে ক্ষুধার কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে।

ডব্লিউএফপি ও জাতিসংঘের শিশুদের সংস্থা ইউনিসেফ গত সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলে, গাজার উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি ‘বিশেষ করে চরম’ আকার ধারণ করেছে।

ডব্লিউএফপি বলে, উত্তরাঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পুষ্টি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, দুই বছরের কম বয়সী ১৫ শতাংশের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।

সংস্থাটি জানায়, এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ‘দায়িত্বশীল পদ্ধতিতে’ খাদ্য সরবরাহ পুনরায় শুরু করার উপায় বের করবে। এ ছাড়া উত্তর গাজায় সহায়তা বেশ বড় পরিসরে সম্প্রসারণের আহ্বান জানায় সংস্থাটি। বিবৃতি অনুসারে, এর জন্য একাধিক রুট থেকে গাজায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পরিমাণে খাদ্য প্রবেশ করতে হবে। বিবৃতিতে ইসরায়েল ও উত্তর গাজার মধ্যে ক্রসিং পয়েন্ট খুলে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এটি একটি কার্যকর মানবিক ব্যবস্থা, একটি স্থিতিশীল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং সংস্থাটির কর্মী ও সহযোগীদের পাশাপাশি গাজাবাসীদের জন্য সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজা একটি সুতোয় ঝুলছে এবং ডব্লিউএফপিকে অবশ্যই হাজার হাজার নিদারুণ ক্ষুধার্ত মানুষকে দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচাতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত