Ajker Patrika

সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ যুক্তরাষ্ট্রের, সরকার কাঠামো গড়তে সহায়তার বার্তা

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
হায়াত তাহরির আল-শামের প্রধান আল-জোলানি। ছবি: স্কাই নিউজ

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির নিয়ন্ত্রণে থাকা হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি গোষ্ঠীটিতে অনুরোধ করেছে, তারা যেন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করে। মার্কিন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা ও দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এক সহকারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সরকার কাঠামো গড়তে সহায়তার বার্তাও দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে একাই দেশের সর্বময় ক্ষমতা দখল না করার অনুরোধ করেছে। পরিবর্তে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের সহায়তায় হায়াত তাহরির আল-শামের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। হায়াত তাহরির আল-শাম এখনো জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে নবনির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের দলের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। গত কয়েক দিন ধরে চলা এই আলোচনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জানান, যুক্তরাষ্ট্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক শাসন কাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করার জন্য বার্তা পাঠিয়েছে। তবে বার্তাগুলো সরাসরি পাঠানো হচ্ছে নাকি মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে—তা তিনি জানাতে অস্বীকার করেন।

কর্মকর্তার আরও বলেন, ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে—অন্তর্বর্তী সরকার যেন সিরিয়ার জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে এবং তারা এইচটিএস-এর সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণকে সমর্থন করবে না; যদি না নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

এদিকে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বিদ্রোহী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান বিশ্বের দেশগুলোকে আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন, সিরিয়াকে নিয়ে বিদেশিদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আজ বুধবার তিনি এ কথা বলেন।

হায়াত তাহরির আল-শামের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি আসাদ সরকারের পতনের পর এই প্রথম কোনো পশ্চিমা গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলেন। স্কাই নিউজের আন্তর্জাতিক সংবাদ সম্পাদক জেইন জাফার এবং মধ্যপ্রাচ্য প্রযোজক সেলিন আল-খালদির সঙ্গে দামেস্কে এই সাক্ষাৎকারে দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দেশটি পুনর্নির্মাণ করা হবে।’

আল-জোলানি আগে ইসলামিক স্টেট অব ইরাকের সদস্য ছিলেন এবং পরে সিরিয়ায় আল–কায়েদার সহযোগী গোষ্ঠী আল-নুসরা ফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন। তবে ২০১৬ সালে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এখন তিনি নিজেকে আরও উদারপন্থী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। তবে হায়াত তাহরির আল-শাম এখনো জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত।

আল-জোলানি আরও বলেন, ‘ভয়টা মূলত ছিল সরকারের উপস্থিতির কারণে। এখন সিরিয়া উন্নয়ন, পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতার পথে এগোচ্ছে।’ তবে তাঁর এই আশ্বাসের পরও হায়াত তাহরির আল-শামের দ্রুত ক্ষমতায় উত্থান সিরিয়ার সংখ্যালঘুদের মধ্যে, যেমন—কুর্দি, আলাওয়ি বা আলভি এবং খ্রিষ্টানদের মধ্যে আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।

আল-জোলানি জোর দিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধ ক্লান্ত সিরিয়ার মানুষ নতুন করে সংঘাত চায় না। দেশ আরেকটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় এবং এমন যুদ্ধে জড়াবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইরানি মিলিশিয়া, হিজবুল্লাহ এবং আসাদ সরকারের অপসারণ সিরিয়ার পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘তাদের অনুপস্থিতিই সমাধান। বর্তমান পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।’

সাক্ষাৎকারে আল-জোলানি তাঁর যোদ্ধাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তিনি দাবি করেন, তাঁরা কোনো বিদেশি সহায়তা বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই সিরিয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। আগের আসাদ সরকারের রুশ ও ইরানি সমর্থনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সব সাবেক উপনিবেশবাদী দেশ সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত