Ajker Patrika

যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে গাজার রাস্তায় ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক দোয়া আল বাজ। ছবি: ইপিএ
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে গাজার রাস্তায় ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক দোয়া আল বাজ। ছবি: ইপিএ

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সারা বিশ্বের গণমাধ্যম ব্যস্ত মুক্ত ইসরায়েলি বন্দী, মুক্ত ফিলিস্তিনি বন্দী ও তাঁদের পরিবারের গল্প তুলে ধরতে। তবে এসব সংবাদ তারা যুদ্ধের মূল কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করছে, কারণ, ইসরায়েল এখনো বিদেশি সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিদেশি সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে গাজায় ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ কর্তারা বলছেন, নিকট ভবিষ্যতেও এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির গ্লোবাল নিউজ ডিরেক্টর ফিল চেটউইন্ড বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে স্বাধীন গণমাধ্যমকে দূরে রাখা বা তাদের টার্গেট করা হলে বুঝতে হবে এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমাদের বলা হচ্ছে—এটা আমাদের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু সাংবাদিকেরা গত ১০০ বছর ধরে যুদ্ধ কাভার করছেন, ঝুঁকি নিতে তাঁরা প্রস্তুত। তারপরও গাজায় সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এর কারণ, তারা যুদ্ধ ও সামরিক অভিযানের পূর্ণ চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে আসতে দিতে চায় না।’

চেটউইন্ড বলেন, ফিলিস্তিনি সাংবাদিকেরা অসাধারণ কাজ করছেন। কিন্তু এএফপির পুরো গাজা টিমকে এক বছরেরও বেশি আগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা আবারও গাজায় ফিরে যেতে চান। নতুন চোখে মাঠের বাস্তবতা দেখা দরকার।

গত দুই বছরে ইসরায়েল শুধু ‘এম্বেডেড’ বা সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সাংবাদিকদের গাজায় ঢোকার অনুমতি দিয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর কিছু ব্রিটিশ গণমাধ্যম—যেমন বিবিসি ও চ্যানেল-৪ নিউজ এসব সীমিত কাভারেজে অংশ নেয়। কয়েকজন মার্কিন সাংবাদিকও অনুরূপ অনুমতি পেয়েছিলেন।

তবে এই প্রবেশাধিকার ছিল খুবই সীমিত। এবিসি অস্ট্রেলিয়ার একটি টিম ২০২৫ সালের আগস্টে বারবার আবেদন করার পর অবশেষে সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ গাজার কেরেম শালোম সাহায্যকেন্দ্র সফরের সুযোগ পায়।

এবিসি অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথিউ ডোরান তাঁর প্রতিবেদনে লেখেন, এই সফরগুলো ‘অত্যন্ত পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত’ ছিল। তবু তিনি সফরে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, গাজার জনগণকে সাহায্য করার নামে ইসরায়েল আসলে কী করে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ও বিশ্বনেতারা প্রশ্ন তুলেছেন।

ডোরান বলেন, ‘আমাদের সেই ছোট দলে ছিলেন এক ইসরায়েলি গণমাধ্যম প্রতিনিধি, এক লেখক ও কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার। তাঁরা মূলত ইসরায়েলপন্থী বার্তা ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী ছিলেন।’

গত দুই বছরে বিভিন্ন সংস্থা গাজায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেরুজালেমের ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (এফপিএ) ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টে নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর সংস্থাটি জানায়, তারা এক বছর আগে দ্বিতীয় পিটিশন জমা দিয়েছিল, কিন্তু আদালত সরকারের অনুরোধে বারবার শুনানি পিছিয়ে দিচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’ ও ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে) এ বিষয়ে একাধিক আবেদন করে। তারা একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ড বন্ধেরও দাবি তুলেছিল। কিন্তু কোনো আবেদনেই কাজ হয়নি।

সিপিজের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় অন্তত ১৯২ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৬ জন সাংবাদিককে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হয়েছে বলে সিপিজের ধারণা। সংস্থাটি বলেছে, এটি সাংবাদিকদের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত।

তবে ইসরায়েল সাংবাদিকদের টার্গেট করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উল্টো তারা কিছু ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে। সিপিজে বলেছে, ইসরায়েল যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়াই সাংবাদিকদের ‘যোদ্ধা’ বা ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিচ্ছে, যা বন্ধ করা উচিত।

সেপ্টেম্বরে বিবিসি, এএফপি, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ও রয়টার্স যৌথভাবে একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের জন্য গাজা উন্মুক্ত করার আহ্বান জানায়। ভিডিওতে উপস্থাপক ডেভিড ডিম্বলবি বলেন, ‘আমরা চাই, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দিক, যাতে তাঁরা গাজার ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারেন এবং বিশ্ববাসীর সামনে সত্য তুলে ধরতে পারেন।’

তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বর্তমান অবস্থায় পরিস্থিতির পরিবর্তন শিগগির হবে না। অনেকে ব্যঙ্গ করে বলছেন—হয়তো প্রথমবারের মতো গাজায় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার তখনই মিলবে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেস ক্যারাভ্যান’ সেখানে গিয়ে ট্রাম্পের কল্পিত গাজা রিভিয়েরা পুনর্গঠনের চিত্র ধারণ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোদির গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া সব মন্ত্রীর পদত্যাগ

চট্টগ্রামে অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ২৩ ইউনিট

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫ শতাংশের বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা

তৃতীয় দফায় বাড়ল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

বিছানাভর্তি টাকা, বিলাসবহুল গাড়ি ও সোনাদানা মিলল পুলিশ কর্মকর্তার ঘরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত