Ajker Patrika

ফিলিস্তিনিদের নজরদারিতে ইসরায়েলকে প্রযুক্তি দিয়েছে চীনা কোম্পানি, উইঘুর নিপীড়নেও তারা

আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০৯: ৫৭
ফিলিস্তিনিদের নজরদারিতে ইসরায়েলকে প্রযুক্তি দিয়েছে চীনা কোম্পানি, উইঘুর নিপীড়নেও তারা

ফিলিস্তিনের অধিকৃত এলাকাগুলোর সর্বত্র ইসরায়েলের নজরদারি ক্যামেরা। পূর্ব জেরুজালেমের সিলওয়ানে সব রাস্তায় ক্যামেরা বসানো। সেই সব ক্যামেরা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের বাড়িতেও নজরদারি করা হয়। সারা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এই ক্যামেরায় এমনভাবে তাঁর পরিবারের প্রত্যেক লোককে শনাক্ত ও নজরদারি করা সম্ভব, যেন সেই সব ক্যামেরা তাঁদের বাড়িতেই বসানো হয়েছে। সারা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের বাড়িকে কখনোই নিজের বাড়ি মনে হয় না। আমাদের সব সময় পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরে থাকতে হয়।’

জেরুজালেমের ওল্ড সিটির প্রধান প্রবেশদ্বার দামেস্ক গেটে অসংখ্য নজরদারি ক্যামেরা। এই এলাকায় এটিই ফিলিস্তিনিদের একমাত্র জনসমাগমস্থল। এখানে তাঁরা নানা সামাজিক অনুষ্ঠান ও জমায়েত করেন। এখানেই তাঁরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ‘অটোমেটেড অ্যাপার্থেইড’ বা স্বয়ংক্রিয় বর্ণবাদ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, এই গেটে ফিলিস্তিনিদের সর্বদা পর্যবেক্ষণ ও গতিবিধি মূল্যায়নের মধ্যে রাখা হচ্ছে। অ্যামনেস্টির অনুসন্ধানী দলের মতে, এই ক্যামেরাগুলো কেবল প্রতিবাদ করার সক্ষমতাই নয়, দখলদারের অধীনে থাকা ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনেও ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে। এর আগের এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছিল, এখানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে একটা বর্ণবাদী ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে।

এসব ক্যামেরা সরবরাহ করেছে এক চীনা কোম্পানি। সেই কোম্পানি আবার চীনের উইঘুর মুসলিমদের দমন-পীড়নে সি চিনপিং সরকারের সহযোগী। কোম্পানিটির নাম হিকভিশন। চীনের হ্যাংজুতে অবস্থিত কোম্পানিটি ভিডিও নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ভেন্ডরদের মধ্যে একটি। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। উইঘুর জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর চীনের দমন-পীড়নে জড়িত থাকার কারণে যুক্তরাজ্যও কোম্পানিটিকে ‘বিশ্ব নিরাপত্তার হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পশ্চিম তীরে হিকভিশনের ক্যামেরার উপস্থিতির তথ্য প্রথম গত মে মাসে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। তখন মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলকে পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে এই চীনা কোম্পানির ক্যামেরা, এটি মূলত ‘ডিজিটাল দমন’।

অ্যামনেস্টি পশ্চিম তীরের পার্শ্ববর্তী দুই এলাকা, পূর্ব জেরুজালেম ও হেবরনে জরিপ চালায়, যেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। সেখানে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে চেহারা শনাক্তকরণ (ফেসিয়াল রিকগনিশন) ব্যবস্থাসহ উন্নত নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহ করার মাধ্যমে ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন চলাফেরার স্বাধীনতা আরও সংকুচিত করছে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্ণবাদী ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে উন্নত প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা ব্যবহার করা হচ্ছে।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে পূর্ব জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে হিকভিশনের কয়েক ডজন ডিভাইস শনাক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০টি পাওয়া গেছে নিরাপত্তা অবকাঠামো এবং সিলওয়ানের আশপাশের অবৈধ বসতিগুলোতে। ডিভাইসগুলো ইসরায়েলি পুলিশ ও বসতি স্থাপনকারীরা পরিচালনা করে।

উইঘুর মুসলিমদের দমন–পীড়নে চীনা সরকারের সহযোগী হিকভিশন।এ ছাড়া পূর্ব জেরুজালেমের ওল্ড সিটি এবং এর আশপাশে সামরিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় বসানো হয়েছে এসব ডিভাইস। বিশেষ করে দামেস্ক গেট, আর্মেনিয়ান কোয়ার্টার, মুসলিমদের বসতি এবং সিলওয়ানে এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের হামলার পর থেকে যে পরিস্থিতি তৈরি তাতে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনটি নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কেননা, এরপর থেকে বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম তীরের শহর ও শরণার্থীশিবিরগুলোতে অভিযান পরিচালনা করছে।

হিকভিশন চেহারা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা বা ডিভাইস বাজারজাত করে। তাদের দাবি অনুযায়ী, এই ডিভাইস উইঘুর মুসলিমদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারে। এটি মুখ দেখেই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়, বয়স ও বর্ণ নির্ণয় করতে পারে বলেও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করে হিকভিশন।

হিকভিশন নিয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানই প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, হিকভিশনের মাধ্যমে পুলিশ সূক্ষ্মভাবে অ্যালার্ম সেট করতে পারে, যাতে কোথাও কোনো জনসমাগমস্থলে বিক্ষোভ বা মিছিলের লক্ষণ দেখা দিলেই ক্যামেরাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুলিশকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দেয়।

হিকভিশন অবশ্য অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এর আগে তারা গার্ডিয়ানকে বলেছিল, তারা যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের আইন মেনেই সবকিছু করে। সচেতনভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারা কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল না বলেও কোম্পানির বিবৃতিতে দাবি করা হয়।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপকালে পশ্চিম তীরে স্থাপন করা এমন কিছু নজরদারি ডিভাইস পাওয়া গেছে, যেগুলোতে মানুষ ও গাড়ি শনাক্ত করার ফিচার সক্রিয় রয়েছে। তবে এগুলোতে চেহারা শনাক্ত করার ফিচার সক্রিয় কি না নিশ্চিত হতে পারেনি অ্যামনেস্টি। যদিও সেটি যে করা হচ্ছে না, তা বলা যায় না।

অ্যামনেস্টির অনুসন্ধানী দল বলছে, এই ক্যামেরাগুলো মাবাত-২০০০ নামে একটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এটি ইসরায়েলি পুলিশের একটি নেটওয়ার্ক, এটি চেহারা শনাক্তকরণ নজরদারি নেটওয়ার্ক। সম্পূর্ণ পূর্ব জেরুজালেমে এই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। অর্থাৎ, এটি ধরেই নেওয়া যায় যে, ব্যাপক বিস্তৃত ক্যামেরা-ব্যবস্থার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এমনকি স্বাভাবিক চলাফেরা এবং ঘরের ভেতরেও ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের ক্যামেরার চোখ এড়াতে পারছে না।

তবে অ্যামনেস্টির গবেষক ম্যাথু মাহমুদি বলেন, ক্যামেরা যে চেহারা শনাক্ত করার জন্য রাস্তাঘাটে, বাড়িঘরের সামনে স্থাপন করা হয়েছে তা আর ফিলিস্তিনের না জানলেও চলবে। কারণ এ ধরনের আশঙ্কা অজানা নয়। ২০২১ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট ‘উলফ প্যাক’ নামে একটি বিশাল তথ্যভান্ডারের কথা প্রকাশ করে। সেই ডেটাবেজে পশ্চিম তীরের ৩০ লাখ বাসিন্দার সবার ছবিসহ সব তথ্য রয়েছে। ফলে চীনের কাছ থেকে নজরদারিব্যবস্থা কিনে সার্বক্ষণিক চোখ রাখার বিষয়টি ফিলিস্তিনিদের কাছে নতুন কোনো খবর নয়!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইস্তাম্বুলে আলোচনায় বসেছে আফগানিস্তান-পাকিস্তান, এর মধ্যেই নতুন সংঘর্ষে নিহত ৩০

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সীমান্তের ওপার থেকে আক্রমণ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: এএফপি
সীমান্তের ওপার থেকে আক্রমণ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: এএফপি

ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই দুই দেশের সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষের খবর এসেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দাবি, গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার আফগান সীমান্ত পেরিয়ে আসা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে পাঁচ সেনা ও ২৫ সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার (আইএসপিআর) বিবৃতির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা খুররম ও উত্তর ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। পাহাড়ি ও দুর্গম এই দুই জেলায় সংঘর্ষটি ঘটে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সীমান্ত অতিক্রমের এই চেষ্টা প্রমাণ করে যে আফগান সরকারের সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রকৃত অবস্থান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এ সংঘর্ষের পর আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে জানতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এদিকে, এ সংঘর্ষের সময়ই দুই দেশের প্রতিনিধিদল ইস্তাম্বুলে আলোচনায় বসেছে, যাতে সীমান্তে উত্তেজনা কমানো যায়। চলতি মাসের শুরুর দিকে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়, তা ছিল ২০২১ সালে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ঘটনা। পাকিস্তানের দাবি, তালেবান সরকার সীমান্তে সন্ত্রাসীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অভিযোগ ঘিরে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও পাকিস্তান আফগানিস্তানে বিমান হামলা করে। পরে দোহায় এক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।

তবে তালেবান সরকার বরাবরই পাকিস্তানের এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। বরং তারা অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানি সামরিক অভিযানে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হয়েছে।

গতকাল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি টিকে আছে এবং তিনি বিশ্বাস করেন, আফগানিস্তানও শান্তি চায়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ইস্তাম্বুলে কোনো সমঝোতা না হলে যুদ্ধ অনিবার্য।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত শুক্রবার ও গতকাল যাঁরা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরা ‘ফিতনা আল খারিজ’ নামের এক সংগঠনের সদস্য। সেনাবাহিনী বলেছে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এবং উগ্রবাদী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসির সাক্ষাৎকার

আবারও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চান কমলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিবিসির সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে কমলা হ্যারিস। ছবি: বিবিসি
বিবিসির সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে কমলা হ্যারিস। ছবি: বিবিসি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জানিয়েছেন, তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে হ্যারিস বলেন—ভবিষ্যতে একদিন তিনি নিজেই হয়তো হোয়াইট হাউসে বসবেন এবং কোনো এক সময় যে একজন নারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন, সেই বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজয়ের পর কমলা হ্যারিস এবারই প্রথম প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিলেন, ২০২৮ সালে তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এমনকি বিভিন্ন জরিপে ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাঁকে অনেক পিছিয়ে দেখানো হলেও তিনি তা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

হ্যারিস বলেন, ‘যদি আমি জরিপের ফল শুনতাম, তবে জীবনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতাম না। আমি এখনো শেষ হইনি—সারা জীবন জনসেবায় কাটিয়েছি, সেটাই আমার রক্তে মিশে আছে।’

সাক্ষাৎকারে হ্যারিস তাঁর সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে ‘একজন স্বৈরাচারী’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প সম্পর্কে যেসব সতর্কবার্তা তিনি দিয়েছিলেন, তা এখন সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। কমলা বলেন, ‘আমি বলেছিলাম তিনি (ট্রাম্প) বিচার বিভাগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন—এবং সেটাই তিনি এখন করছেন।’

উদাহরণ হিসেবে কমলা কৌতুক অভিনেতা জিমি কিমেলকে ট্রাম্প-নিযুক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপের মুখে টেলিভিশন থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। হ্যারিসের ভাষায়, ‘ট্রাম্পের চামড়া এতটাই পাতলা যে একটি রসিকতাও সহ্য করতে পারেন না।’

মার্কিন ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই ট্রাম্পের ক্ষমতার সামনে নতি স্বীকার করেছে উল্লেখ করে কমলা বলেন, ‘অনেকে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চায়, কোনো তদন্ত এড়াতে চায়, কিংবা নিজের স্বার্থে কিছু অনুমোদন করাতে চায়।’

হোয়াইট হাউস অবশ্য কমলা হ্যারিসের এসব মন্তব্যকে গুরুত্ব দেয়নি। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন বলেছেন, ‘কমলা হ্যারিস যখন বিপুল ব্যবধানে নির্বাচনে হেরে যান, তখনই আমেরিকান জনগণ তার প্রতি মত জানিয়ে দিয়েছে।’

সম্প্রতি কমলা প্রকাশ করেছেন তার নির্বাচনী স্মৃতিকথা ‘১০৭ ডেজ’। তিনি বাইডেনের পদত্যাগের পর মাত্র ১০৭ দিন সময় পান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য। সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেন—যদি বাইডেন আগে সরে দাঁড়াতেন, তাহলে কি এখন ট্রাম্পের বদলে আপনিই প্রেসিডেন্ট হতেন? জবাবে কমলা বলেছেন, ‘ওটা এক অনিশ্চিত প্রশ্ন—যা আমেরিকার ভাগ্য বদলাতে পারত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফেসিয়াল রিকগনিশনে বিদেশিদের ওপর নজরদারি করবে যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিদেশি নাগরিকদের আগমন ও প্রস্থান নজরদারিতে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, সব বিদেশি নাগরিককে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলসীমান্তে মুখের ছবি তুলতে বাধ্য করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর লক্ষ্য ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের পর থেকে যাওয়া ও পাসপোর্ট জালিয়াতি রোধ করা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই বিধান কার্যকর হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন সীমান্ত কর্তৃপক্ষ চাইলে বিদেশিদের কাছ থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ডিএনএসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক তথ্যও সংগ্রহ করতে পারবে।

নতুন নীতিতে আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে ১৪ বছরের নিচে শিশু ও ৭৯ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্কদেরও ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা যাবে। এত দিন এই দুই শ্রেণির মানুষ এ ব্যবস্থার বাইরে ছিল।

এই উদ্যোগকে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন এবার ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের পর থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের শনাক্তকরণেও গুরুত্ব দিচ্ছে।

তবে বিমানবন্দরগুলোতে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির বাড়তি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অধিকারকর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই প্রযুক্তির ভুল শনাক্তকরণ হার এখনো বেশি এবং এটি কৃষ্ণাঙ্গ বা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বৈষম্যপূর্ণ ফলাফল দিতে পারে।

২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে মার্কিন নাগরিক অধিকার কমিশন (US Commission on Civil Rights) জানিয়েছিল, পরীক্ষায় দেখা গেছে, ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে ভুল শনাক্তের সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি।

২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস অনুমান করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীর মধ্যে ৪২ শতাংশেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

এমনকি ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস একটি স্বয়ংক্রিয় ‘এন্ট্রি-এক্সিট সিস্টেম’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু তা কখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বর্তমানে মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) সংস্থা সব বাণিজ্যিক ফ্লাইটে আসা যাত্রীদের জন্য ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তবে বাইর হওয়ার ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা এখনো কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে সীমিত।

নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সব বাণিজ্যিক বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ বায়োমেট্রিক এন্ট্রি-এক্সিট সিস্টেম চালু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিল শিকারে সীমা আরোপের দাবি তোলা ইউক্রেনীয় জীববিজ্ঞানীকে আটক করল রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের জীববিজ্ঞানী লিওনিদ পশেনিচনভ। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের জীববিজ্ঞানী লিওনিদ পশেনিচনভ। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের জীববিজ্ঞানী লিওনিদ পশেনিচনভকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার জের ধরে শুরু হয়েছে তীব্র কূটনৈতিক বিরোধ। ইউক্রেন দাবি করেছে, অ্যান্টার্কটিকায় ক্রিল মাছ ধরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণেই পশেনিচনভকে ‘মিথ্যা’ অভিযোগে আটক করা হয়েছে।

রোববার (২৬ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, লিওনিদ পশেনিচনভ অ্যান্টার্কটিকা বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক জীববিজ্ঞানী। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি ‘অ্যান্টার্কটিক সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিশন’-এর গবেষণায় যুক্ত আছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি ইউক্রেনের প্রতিনিধি হিসেবে ওই কমিশনের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে আয়োজিত একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পশেনিচনভ। ওই সম্মেলনে অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ক্রিল মাছ ধরার সীমা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। ঠিক এমন সময়ই রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া থেকে তাঁকে আটক করা হয়েছে।

রুশ কর্তৃপক্ষের এক নথিতে দাবি করা হয়েছে, পশেনিচনভ ‘রাশিয়ার নাগরিক’ হিসেবে ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছেন এবং শত্রুপক্ষের সহায়তা করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, তিনি তাঁর গবেষণাকে ব্যবহার করেছেন রাশিয়ার অ্যান্টার্কটিক ক্রিল ধরার কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে। ইউক্রেনীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে ক্রিল আহরণে সীমা আরোপের আহ্বান জানানোয় রাশিয়ার অর্থনৈতিক স্বার্থ নষ্ট হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অ্যান্টার্কটিকার উপদ্বীপ ঘিরে একটি সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা গঠনের প্রস্তাব নিয়েই মূলত এই বিতর্ক। বহু বছর ধরে রাশিয়া ও চীন এমন সংরক্ষিত এলাকা গঠনের বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে ক্রিল আহরণের পরিমাণ টেকসই সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

পশেনিচনভের আটক নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আর যুক্তরাজ্য আহ্বান করেছে, রাশিয়া যেন ইচ্ছাকৃতভাবে আটক সব বেসামরিক নাগরিককে মুক্তি দেয়। পশেনিচনভ সম্পর্কে ইউক্রেনের অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ভাসিল মিরোশনিচেঙ্কো বলেছেন, ‘তিনি একজন বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ নন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ৭০ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানী শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ইভজেনি পাখোমভ বলেছেন, ‘তিনি (পশেনিচনভ) অতি সদালাপী ও সহৃদয় মানুষ। তাঁর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

ব্লু মেরিন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যান ক্রকেট মন্তব্য করেছেন, ‘পশেনিচনভকে কারাবন্দী করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে, তিনি ক্রিল আহরণের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৩ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি ২০ বছর থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন করেন। এখন এই বৃদ্ধ বিজ্ঞানীর জীবনও সেই আইনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত