Ajker Patrika

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল-জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ২৯
ইসরায়েলের হামলায় আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ছবি: আল-জাজিরা।
ইসরায়েলের হামলায় আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ছবি: আল-জাজিরা।

গাজায় সাংবাদিকদের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলের হামলায় আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার গভীর রাতে আল-শিফা হাসপাতালের প্রধান ফটকের কাছের ওই তাঁবুতে হামলায় সাতজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আল-জাজিরার সংবাদদাতা আনাস আল-শরিফ, মোহাম্মদ কুরেইকেহ এবং ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নুফাল ও মুয়ামেন আলিওয়া।

দীর্ঘদিন ধরে উত্তর গাজা থেকে সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করে আসছিলেন ২৮ বছর বয়সী আনাস আল-শরিফ। আল-জাজিরার পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। নিহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আনাস আল-শরিফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানিয়েছিলেন, গাজার পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে ইসরায়েল তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। তাঁর শেষ ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলের ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিকট শব্দ আর আকাশে কমলা রঙের আলোর ঝলকানি।

গত ৬ এপ্রিল আল-শরিফ একটি বার্তা লিখে বলেছিলেন, এটি তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশের জন্য। সেখানে তিনি লেখেন, বারবার তিনি হারানোর বেদনা অনুভব করেছেন। তবুও কখনো সত্যকে বিকৃত বা ভ্রান্তভাবে উপস্থাপন না করে যেভাবে আছে সেভাবেই তুলে ধরতে দ্বিধা করেননি।

স্ত্রী বায়ান, ছেলে সালাহ ও মেয়ে শামকে রেখে যাওয়া এবং সন্তানদের বেড়ে ওঠা না দেখতে পাওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এই সংবাদদাতা।

এক বিবৃতিতে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে একে ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আরেকটি প্রকাশ্য ও পরিকল্পিত হামলা’ বলে অভিহিত করেছে আল-জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলার ভয়াবহ পরিণতির মধ্যে এই হামলা হয়েছে, যেখানে বেসামরিক মানুষদের লাগাতার হত্যা, জোরপূর্বক অনাহার এবং পুরো সম্প্রদায় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘গাজার সাহসী সাংবাদিকদের একজন আনাস আল-শরিফ ও তাঁর সহকর্মীদের হত্যার নির্দেশ, গাজা দখল ও দখলদারত্বের আসন্ন পরিকল্পনা উন্মোচনকারী কণ্ঠগুলোকে চুপ করিয়ে দেওয়ার এক মরিয়া প্রয়াস।’

ইসরায়েলের হামলায় আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ছবি: আল-জাজিরা।
ইসরায়েলের হামলায় আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ছবি: আল-জাজিরা।

চলমান গণহত্যা বন্ধ করতে এবং সাংবাদিকদের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে আহ্বান জানিয়েছে আল-জাজিরা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অপরাধীদের দায়মুক্তি ও জবাবদিহির অভাব ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে এবং সত্যের সাক্ষীদের ওপর আরও দমনপীড়ন চালাতে প্ররোচিত করছে।

এদিকে আল-শরিফকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, ওই সাংবাদিক হামাসের একটি সেলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং ‘ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের বিরুদ্ধে রকেট হামলা চালানোর কাজে অগ্রসর হচ্ছিলেন’।

সেনাবাহিনী আরও দাবি করেছে, তাদের কাছে এমন নথি রয়েছে, যা তাঁর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির সঙ্গে সম্পৃক্ততার ‘অখণ্ড প্রমাণ’ উপস্থাপন করে।

আল-জাজিরা আল-শরিফসহ তাদের সংবাদদাতাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলিদের ‘উসকানিমূলক প্রচারণা’র নিন্দা জানিয়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজায় অভিযান শুরু করার পর থেকে ইসরায়েল নিয়মিতভাবে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের হামাসের সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করে আসছে, যা অধিকার সংগঠনগুলোর ভাষায়, তাদের সংবাদে ইসরায়েলি নিপীড়ন উন্মোচন ঠেকানোর কৌশল।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বোমাবর্ষণ শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০০-র বেশি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীকে হত্যা করেছে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন আল-জাজিরার কয়েকজন সাংবাদিক এবং তাঁদের স্বজনেরাও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ বছরের জন্য কারাগারে গেলেন সারকোজি, হাত ধরে এগিয়ে দিলেন স্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
স্ত্রী কার্লা ব্রুনির হাত ধরে কারাগারের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন নিকোলাস সারকোজি। ছবি: রয়টার্স
স্ত্রী কার্লা ব্রুনির হাত ধরে কারাগারের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন নিকোলাস সারকোজি। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) প্যারিসের লা সান্তে কারাগারে তার পাঁচ বছরের সাজা ভোগ শুরু করেছেন। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় রক্ষণশীল এই রাজনীতিককে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ৭০ বছর বয়সী সারকোজি কারাগারে যাওয়ার আগে স্ত্রী কার্লা ব্রুনির হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হন। পথে তাঁকে ঘিরে সমর্থকেরা ফরাসি জাতীয় সংগীত গেয়ে তাঁর সমর্থনে স্লোগান দেন।

লা সান্তে কারাগারের ফটকের সামনে পৌঁছানোর আগেই স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নেন সারকোজি। মুখে কিছু না বললেও স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে সামান্য মাথা নেড়ে তিনি বিদায় জানান। কার্লা তখন ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি সহযোগী মার্শাল ফিলিপ পেতাঁর পর সারকোজিই হলেন প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট যাকে কারাগারে পাঠানো হলো।

নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে সারকোজি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘আজ একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট নয়, একজন নির্দোষ মানুষকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, এটি প্রতিশোধ ও ঘৃণার ফসল।

২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় নিহত লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে ২০০৭ সালের নির্বাচনে কোটি কোটি ইউরো তহবিল নেওয়ার অভিযোগ বহু বছর ধরে সারকোজির পিছু ছাড়েনি। আদালত রায় দিয়েছেন, তিনি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে এই তহবিল সংগ্রহের ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন, যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অর্থ গ্রহণ বা ব্যবহার প্রমাণিত হয়নি।

জেলে গেলেও তাঁর আইনজীবীরা আগাম মুক্তির আবেদন করেছেন এবং আশা করছেন, বড়দিনের আগেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন। আপিল বিচার পর্যন্ত সারকোজিকে কারাগারের বিচ্ছিন্ন একটি কক্ষে রাখা হবে। একজনের এই কক্ষে থাকবে টেলিফোন এবং টেলিভিশন ব্যবহারের সুযোগ।

জেলে নেওয়ার সময় সারকোজি জানিয়েছিলেন, তিনি তিনটি বই সঙ্গে নিচ্ছেন—এর একটি আলেক্সান্দ্রে দ্যুমার ‘দ্য কাউন্ট অব মন্টে ক্রিস্টো’, যেখানে এক নিরপরাধ মানুষের কারাগারে বন্দিত্ব ও প্রতিশোধের কাহিনি বলা হয়েছে।

এই রায় ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সারকোজির সমর্থকেরা বলছেন—তিনি অপরাধী নন, বরং বিচারব্যবস্থা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সাজা প্রমাণ করে—ফ্রান্স এখন অভিজাতদের অপরাধেও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজার যুদ্ধবিরতি ভেঙে যেতে পারে—আশঙ্কা ট্রাম্প প্রশাসনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিরতি সমুন্নত রাখতে বর্তমানে ইসরায়েল সফর করছেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ছবি: সিএনএন
যুদ্ধবিরতি সমুন্নত রাখতে বর্তমানে ইসরায়েল সফর করছেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ছবি: সিএনএন

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ইসরায়েল পৌঁছেছেন। সিএনএন জানিয়েছে, তিনি এমন এক সময়ে ইসরায়েল গেলেন, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

সিএনএনকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভ্যান্সের সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে মার্কিন-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অটল রাখা। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ভ্যান্সের সফরকে রসিকতার ছলে ‘বিবিসিটিং’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

অপর একজন বলেছেন, প্রেসিডেন্টের পর সবচেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উপস্থিতির মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন শক্ত বার্তা দিতে চাইছে যে, যুদ্ধবিরতি অবশ্যই টেকসই হতে হবে, এমনকি সম্ভাব্য সংঘর্ষের মধ্যেও তা টিকিয়ে রাখতে হবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই মুহূর্তেই গাজার যুদ্ধবিরতি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাই ট্রাম্পের গত সপ্তাহের সফরের পরপরই ভ্যান্সের যাত্রা জরুরি হয়ে পড়ে। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, যুদ্ধবিরতির পর গত ১৯ অক্টোবর হামাসের হামলায় দুই আইডিএফ (ইসরায়েলি সেনা) সদস্য নিহত হয়েছে। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় আবারও বিমান হামলা চালায় এবং এতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

এই হামলার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে মার্কিন কর্মকর্তারা দ্রুত হস্তক্ষেপ করেন এবং দুই পক্ষকেই যুদ্ধবিরতিতে অটল থাকতে অনুরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই চুক্তির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এদিকে এক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই হামলাটি হামাসের নেতৃত্বে ঘটেনি, বরং তাদের বিদ্রোহী সদস্যরা এই কাজটি করেছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, প্রয়োজন হলে হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে।

ট্রাম্প আরও লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ‘মহান মিত্ররা’ গাজায় প্রবেশ করে হামাসকে সোজা পথে আনতে আগ্রহী। তবে তিনি তাদের আপাতত থামতে বলেছেন। কারণ তিনি এখনো আশা করছেন, হামাস সঠিক কাজটিই করবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনারও এখন ইসরায়েলে আছেন। তাঁরা প্রেসিডেন্টের ঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদি দিকগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ইসরায়েলি সূত্র জানিয়েছে, উইটকফ ইসরায়েলকে বলেছেন হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া অবশ্যই ‘আনুপাতিক’ হতে হবে এবং আগামী ৩০ দিন যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমি ছিলাম নিখুঁত শিকার—মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ০০
ভার্জিনিয়া জিউফ্রে যে বয়সে জেফরি অ্যাপস্টেইনের যৌন দাসীতে পরিণত হয়েছিলেন। ছবি: দ্য টাইমস
ভার্জিনিয়া জিউফ্রে যে বয়সে জেফরি অ্যাপস্টেইনের যৌন দাসীতে পরিণত হয়েছিলেন। ছবি: দ্য টাইমস

জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর প্রেমিকা গিলেইন ম্যাক্সওয়েলের দ্বারা যৌন দাসত্বের শিকার হয়ে যে কিশোরীর গল্প গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, সেই ভার্জিনিয়া জিউফ্রে আত্মহত্যার আগে লিখে গেছেন তাঁর জীবনের কাহিনি। মৃত্যুর পর এক ভয়ংকর জীবনের দলিল হিসেবে আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ‘নোবডিজ গার্ল’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে ভার্জিনিয়ার আত্মজীবনী। সমালোচকেরা বলছেন—বইটি শুধু এক নারীর নির্যাতনের কাহিনি নয়, বরং ক্ষমতা, অর্থ ও শোষণের অন্ধকার জগতের নির্মম সাক্ষ্য।

লন্ডনের সেই রাত ও রাজপরিবারের কেলেঙ্কারি

স্মৃতিচারণামূলক এই বইয়ের শুরুতে জিউফ্রে ফিরে যান লন্ডনের সেই কুখ্যাত রাতে, যে রাতে তিনি দেখা করেছিলেন তখনকার ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে। তিনি লিখেছেন, সেই রাতে তাঁর পরনে ছিল গোলাপি হাতাকাটা টপ ও ঝলমলে জিন্স—যেন ব্রিটনি স্পিয়ার্স বা ক্রিস্টিনা আগুইলেরার মতো পপ তারকাদের পোশাক। তাঁর মালকিন গিলেইন ম্যাক্সওয়েল অবশ্য তাঁকে শালীন পোশাকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিশোরী ভার্জিনিয়া নিজের মতোই থাকতে চেয়েছিলেন।

সেই রাতের একটি ছবি এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটিতে দেখা যায়—ভার্জিনিয়ার কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। ছবিটি পরে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির কারণ হয়। অ্যান্ড্রু সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও ২০২২ সালে তিনি ভার্জিনিয়ার সঙ্গে মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সমঝোতা করেছিলেন।

শৈশবের অন্ধকার ও ‘নিখুঁত শিকার’-এর জন্ম

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার দরিদ্র শহর লক্সাহাটচিতে ভার্জিনিয়া জিউফ্রের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা স্কাই রবার্টস ও মা লিনের সংসারে দারিদ্র্য ও অবহেলা ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। ভার্জিনিয়া অভিযোগ করেছেন, তাঁর নিজের বাবাই শৈশবে তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন—যা তাঁর আত্মসম্মান ধ্বংস করে দেয়। আত্মজীবনীতে তিনি দাবি করেছেন, শৈশবের সেই আঘাতই তাঁকে অ্যাপস্টেইনের নিখুঁত শিকার বানিয়েছিল।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। এই অবস্থায় রন ইপিংগার নামের স্থানীয় এক শিশুকামী বৃদ্ধ তাঁকে ছয় মাস ধরে আটকে রেখে ধর্ষণের জন্য বিভিন্ন পুরুষের কাছে পাঠাতেন। পরে এফবিআই তাঁকে উদ্ধার করেছিল।

লন্ডনের সেই রাতে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে ভার্জিনিয়া, পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন গিলেইন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: সংগৃহীত
লন্ডনের সেই রাতে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে ভার্জিনিয়া, পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন গিলেইন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: সংগৃহীত

ট্রাম্পের মার-এ-লাগো ক্লাবে চাকরি ও গিলেইন ম্যাক্সওয়েলের আগমন

১৬ বছর বয়সে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার-এ-লাগো ক্লাবে লকাররুম অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে চাকরি পান ভার্জিনিয়া। একদিন ব্রিটিশ উচ্চারণে কথা বলা এক নারী, গিলেইন ম্যাক্সওয়েল, এসে পরিচিত হন তাঁর সঙ্গে। গিলেইন সে সময় ভার্জিনিয়াকে প্রস্তাব দেন—তিনি যেন তাঁর এক ধনী বন্ধুর শরীর ম্যাসাজ করে দেন—এতে কিছু অতিরিক্ত আয় হবে।

গিলেইনের সেই বন্ধু ছিলেন আসলে তাঁরই প্রেমিক কুখ্যাত জেফরি এপস্টেইন। সেদিনই প্রথমবারের মতো এপস্টেইনের বিলাসবহুল প্রাসাদে যান ভার্জিনিয়া। গিলেইন তাঁকে বাড়িটির একটি কক্ষে নিয়ে যান, যেখানে নগ্ন অবস্থায় অপেক্ষা করছিলেন এপস্টেইন। এর পর থেকে শুরু হয় এক দুঃস্বপ্নের জীবন, যেখানে প্রতিদিন ভার্জিনিয়াকে এপস্টেইনের চাহিদা পূরণের জন্য বাধ্য করা হতো।

যৌন দাসত্বের বছরগুলো

এপস্টেইনের প্রাসাদে কাজের নামে ভার্জিনিয়া আসলে যৌনদাসীতে পরিণত হয়েছিলেন। গিলেইন ম্যাক্সওয়েল তাঁকে শেখাতেন, কীভাবে ধনী পুরুষদের খুশি রাখতে হয়। আর প্রায় সময়ই ভার্জিনিয়ার প্রশংসা করে তিনি তাঁর হাতে ২০০ ডলার গুঁজে দিতেন।

অন্যদিকে ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়া ও মানসিক প্রভাব—সব মিলিয়ে ভার্জিনিয়া হয়ে ওঠেন জেফরি এপস্টেইনের পুরোপুরি বশ্য। সে সময় এপস্টেইন তাঁকে নিয়ে যেতেন বিল ক্লিনটন, নাওমি ক্যাম্পবেলের মতো নামকরা ব্যক্তিদের পার্টিতে।

১৫ বছর বয়সে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ভার্জিনিয়া। ছবি: সংগৃহীত
১৫ বছর বয়সে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ভার্জিনিয়া। ছবি: সংগৃহীত

রাজপুত্র ও বিলিয়নিয়ারদের ছায়ায়

দুই বছরের মধ্যে ভার্জিনিয়া হয়ে ওঠেন এপস্টেইনের তথাকথিত ‘নম্বর ওয়ান’ মেয়ে—যিনি কিনা অন্য মেয়েদেরও এই চক্রে নিয়ে আসতেন। ‘ললিতা এক্সপ্রেস’ নামে নিজের ব্যক্তিগত একটি জেট বিমানেও তাঁকে নিয়ে চড়তেন এপস্টেইন।

আত্মজীবনীতে ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে মোট তিনবার তিনি যৌনমিলনে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমবার লন্ডনে, পরে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে এবং শেষবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপে। গিলেইন ম্যাক্সওয়েল তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন—‘জেফরির সঙ্গে যেমনটা করো, তুমি তাঁর জন্যও সেটা করবে।’

আত্মজীবনীতে ভার্জিনিয়া উল্লেখ করেছেন, এভাবে আরও অসংখ্য ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তির সঙ্গে তাঁকে মিলিত হতে হয়েছে, যাঁদের অনেকের নামও তিনি জানেন না।

মুক্তি, মাতৃত্ব ও সাহসী প্রত্যাবর্তন

১৯ বছর বয়সে থাইল্যান্ডে ম্যাসাজ কোর্স করার অজুহাতে পালানোর সুযোগ পান ভার্জিনিয়া। সেখানে তিনি পরিচিত হন রবার্ট জিউফ্রের সঙ্গে। পরে তাঁকেই বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হন। কয়েক বছর পর তিনি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। মা হিসেবে নিজের মেয়েকে দেখে তাঁর মধ্যে জেগে ওঠে প্রতিবাদের আগুন।

২০০৯ সালে তিনি ‘জেন ডো’ ছদ্মনামে মামলা করেন এপস্টেইনের বিরুদ্ধে। পরে তিনি প্রকাশ্যে আসেন এবং এপস্টেইনের পর গিলেইন ম্যাক্সওয়েল ও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধেও মামলা করেন। সেই সময়টিতে সমাজের নিন্দা ও কুৎসা তাঁকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেয়। তারপরও তিনি তাঁর লড়াই থামাননি।

ভার্জিনিয়ার এই সাহসই অনুপ্রাণিত করে আরও অনেক নারীকে, যাঁরা নিজেদের ‘সারভাইভার সিস্টার্স’ বলে পরিচয় দেন।

শেষ জীবন ও বেদনার সমাপ্তি

বইটিতে ভার্জিনিয়া স্বীকার করেছেন, তাঁর দাম্পত্যজীবনও ছিল অশান্ত। তাঁর আত্মীয়রা জানিয়েছেন, স্বামী রবার্টের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ক্রমেই ভেঙে পড়েছিল। এর ফলে ২০২৪ সালে সন্তানদের হেফাজত হারান তিনি। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

নিজের অতীতের ছায়া থেকে তিনি কখনোই মুক্ত হতে পারেননি। তাই খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম, আত্মক্ষতি, এমনকি বারবার আত্মহত্যার প্রচেষ্টাও চালিয়েছেন তিনি। অবশেষে গত এপ্রিলে ৪১ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার পার্থের উপকণ্ঠে নিজের খামারবাড়িতে আত্মহত্যা করেন ভার্জিনিয়া। মৃত্যুর কিছুদিন আগে নিজের আত্মজীবনীর কথা উল্লেখ করে এক ই-মেইলে তিনি লিখেছিলেন—‘আমার আন্তরিক ইচ্ছা, এই পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত হোক, যেকোনো পরিস্থিতিতে। সত্য জানা অত্যাবশ্যক—যাতে এই ভয়াবহ চক্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়।’

উল্লেখ্য, যৌন পাচারের অভিযোগে বিচারাধীন অবস্থায় ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট একটি মার্কিন কারাগারে রহস্যজনকভাবে আত্মহত্যা করেন ভার্জিনিয়াকে যৌনদাসীতে পরিণত করা জেফরি এপস্টেইন। আর ২০ বছরের দণ্ড নিয়ে বর্তমানে মার্কিন কারাগারে বন্দী আছেন গিলেইন ম্যাক্সওয়েল। সম্প্রতি গিলেইন ও এপস্টেইনের আলোচিত খদ্দের প্রিন্স অ্যান্ড্রুও তাঁর রাজকীয় উপাধি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ০১
শামখানি নিজের মেয়ের হাত ধরে তেহরানের বিলাসবহুল এসপিনাস প্যালেস হোটেলের এক ‘ওয়েডিং হলে’ প্রবেশ করছেন। ছবি: এক্স
শামখানি নিজের মেয়ের হাত ধরে তেহরানের বিলাসবহুল এসপিনাস প্যালেস হোটেলের এক ‘ওয়েডিং হলে’ প্রবেশ করছেন। ছবি: এক্স

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বাধীন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এক বিরল কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে। খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী আলী শামখানির মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এতে দেখা গেছে, নববধূ (শামখানির মেয়ে) পরেছেন কাঁধ ও বাহু খোলা এক পোশাক। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর সমালোচকেরা কঠোর হিজাব নীতির জন্য দায়ী শাসকদের বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ তুলেছেন।

বিতর্কিত ভিডিওটি ২০২৪ সালে আলী শামখানির মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের। শামখানি ইরানের অন্যতম সিনিয়র প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। তিনি নারীদের ওপর কঠোর ইসলামি বিধান প্রয়োগের পক্ষে ছিলেন এবং প্রতিবাদ দমনে সহিংস অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০২২ সালে দেশজুড়ে হিজাববিরোধী আন্দোলনের সময় শামখানি ছিলেন ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান। তখন হাজার হাজার নারী রাস্তায় নেমে হিজাব পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ক্লিপে দেখা যায়, ইরানের এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডমিরাল শামখানি নিজের মেয়ের হাত ধরে তেহরানের বিলাসবহুল এসপিনাস প্যালেস হোটেলের এক ‘ওয়েডিং হলে’ প্রবেশ করছেন। কনে ফাতিমেহ এ সময় পরে ছিলেন উন্মুক্ত গলা ও ডানাকাটা জামা, মাথায় একটি জলের মতো স্বচ্ছ কাপড়ের ঘোমটা।

শামখানির স্ত্রীও পরে ছিলেন খোলা পিঠ ও পার্শ্ববিশিষ্ট নীল লেইসের গাউন। তাঁর মাথায়ও ছিল না কোনো ওড়না। ভিডিওতে উপস্থিত আরও কয়েকজন নারীও হিজাব ছাড়া ছিলেন।

পশ্চিমা ধাঁচের ওই জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে এবং কনে ও তাঁর মায়ের খোলামেলা পোশাক ‘বাধ্যতামূলক হিজাবের দেশ ইরানে’ খুবই অস্বাভাবিক। বিষয়টি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সমালোচকেরা বলছেন, খামেনির শাসনব্যবস্থা দ্বিচারিতা করছে।

ইরানের নির্বাসিত সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী মসিহ আলিনেজাদ এক্সে লিখেছেন, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ আইনপ্রয়োগকারী আলী শামখানির মেয়ে পরেছেন ডানাকাটা পোশাক। অথচ ইরানে সামান্য চুল খোলা রাখায় নারীদের মারধর করা হচ্ছে আর তরুণেরা বিয়ে করতে সামর্থ্যবান হতে পারছে না।’

আলিনেজাদ আরও বলেন, ভিডিওটি লক্ষাধিক ইরানিকে ক্ষুব্ধ করেছে, কারণ, খামেনি সরকার সাধারণ জনগণের ওপর জোরপূর্বক ‘ইসলামি মূল্যবোধ’ চাপিয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে চলে গুলি, লাঠি ও কারাবাস। তবে নিজেদের বেলায় সেসবের কোনো বালাই নেই।

আলিনেজাদ আরও বলেন, খামেনির প্রধান উপদেষ্টা তাঁর মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন বিশাল প্রাসাদে। যে সরকার মাহসা আমিনিকে সামান্য চুল দেখা যাওয়ার কারণে হত্যা করে, গান গাওয়ার কারণে নারীদের কারাবন্দী করে, ৮০ হাজার ‘নৈতিকতা পুলিশ’ দিয়ে মেয়েদের টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায়—তারা নিজেরাই আবার বিলাসী পার্টি করে। এটি ভণ্ডামি নয়, এটাই তাদের ব্যবস্থা। তারা ‘সংযম’ শেখায়, অথচ নিজেদের মেয়েরা পরে পশ্চিমা পোশাক। বার্তাটি স্পষ্ট, নিয়ম কেবল আম-জনতার জন্য, শাসকদের জন্য নয়।

ইরানি সাংবাদিক আমির হোসেইন মোসাল্লা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ভিডিওটি প্রমাণ করে, শাসকগোষ্ঠী নিজেরাই তাদের আরোপিত আইনে বিশ্বাস করে না। তারা শুধু জনগণের জীবন দুর্বিষহ করতে চায়।

গতকাল সোমবার ইরানের সংস্কারপন্থী পত্রিকা শার্ঘ প্রথম পাতায় শামখানির ছবি ছাপিয়ে শিরোনাম দেয়, কেলেঙ্কারিতে খুঁড়ল কবর।

ওয়াশিংটনভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ডনের ইরান বিশেষজ্ঞ ওমিদ মেমারিয়ান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, এটা ভণ্ডামির সবচেয়ে নির্ভেজাল রূপ। নারী অধিকারকর্মী এলি ওমিদভারি বলেন, ‘তাদের কনে প্রাসাদে, আমাদের কনে মাটির নিচে।’

এমনকি রেভল্যুশনারি গার্ডসের সংবাদমাধ্যম তাসনিমও শামখানির সমালোচনা করে লিখেছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের জীবনযাপন আরও সাদামাটা ও শালীন হতে হবে, যাতে তাঁদের পক্ষে দুটো কথা বলা যায়। তবে তারা ব্যক্তিগত ভিডিও প্রকাশ করাকে ‘অনৈতিক’ বলেও মন্তব্য করেছে।

তবে শামখানি দাবি করেছেন, ইসরায়েল ভিডিওটি ফাঁস করেছে। ইরান ইন্টারন্যাশনাল তাঁকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হ্যাক করা এখন ইসরায়েলের নতুন কৌশল।

সাবেক ইরানি মন্ত্রী এজাতোল্লাহ জরগামি শামখানিকে পক্ষ নিয়ে বলেন, তিনি (শামখানি) মাথা নিচু করে ছিলেন এবং অনুষ্ঠানটি ছিল শুধু নারীদের জন্য। কিছু নারী ওড়না পরেছিলেন আর অন্যরা ছিলেন নিকটাত্মীয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত