Ajker Patrika

পারমাণবিক স্থাপনার কাছে আকাশ প্রতিরক্ষা দৃঢ় করছে ইরান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ২৭
Thumbnail image
নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছে আকাশ প্রতিরক্ষা মহড়া শুরু করেছে ইরান। ছবি: এএফপি

ইরানের সামরিক বাহিনী দেশটির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নাতাঞ্জ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দৃঢ় করছে। সম্প্রতি এই এলাকায় আকাশ প্রতিরক্ষা বিষয়ে মহড়া শুরু করেছে তারা। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এটি দেশজুড়ে পরিকল্পিত এক সামরিক মহড়ার অংশ। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ফারসি ভাষায় এই মহড়ার নামকরণ করা হয়েছে ‘একতেদার’ যার বাংলা অর্থ ‘শক্তি’। ইরানের সামরিক বাহিনীর অংশ ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এবং সেনাবাহিনী একত্রে এই মহড়া পরিচালনা করছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, ‘আকাশ প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরের কমান্ডারের নির্দেশে নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে যৌথ একতেদার মহড়ার প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে।’

টেলিভিশন প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, আইআরজিসির বিমানবাহিনী কঠিন ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বা বৈদ্যুতিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ‘বহুমুখী বিমান হুমকির বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষার’ মহড়া পরিচালনা করছে। এর আগে, গত সোমবার আইআরজিসির মুখপাত্র আলী মোহাম্মদ নাইনী বলেন, ‘এই মহড়া মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইরানের অন্যান্য অংশেও চালানো হবে।’

আলী নাইনী বলেন, ‘উদ্ভূত নতুন নিরাপত্তা হুমকির জবাব হিসেবে এই মহড়া পরিচালিত হচ্ছে।’ তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি আরও বলেন, ‘আইআরজিসির বিভিন্ন শাখা, যেমন নৌবাহিনী এবং আধাসামরিক বাসিজ বাহিনীও এই মহড়ায় অংশ নেবে।’

অক্টোবরের শেষের দিকে ইসরায়েল ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালায়। যার ফলে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দাবি করে তেল আবিব। এটি ওই মাসের শুরুতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় করা হয়েছিল।

এর আগে, গত বছরের জুলাইয়ে তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইসরায়েলে হামলা চালায়। এই হামলায় ইরান কয়েক শ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা করে। এই হামলায় কোনো প্রাণহানি না হলেও, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনী আইডিএফ জানায়, কিছু বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে বিমানবাহিনীর সক্ষমতায় কোনো প্রভাব পড়েনি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও আইডিএফ দাবি করে যে, ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতা এবং পারমাণবিক কর্মসূচির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করলেও এটি তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তবে তারা জানিয়েছে, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ব্যবহৃত কঠিন জ্বালানির উৎপাদন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বড় অংশ—যার মধ্যে চারটি রাশিয়া-নির্মিত এস-৩০০ সিস্টেম রয়েছে, ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানায়, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জানুয়ারির ২০ তারিখের আগে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সম্ভাব্য মার্কিন হামলার জন্য বিভিন্ন বিকল্প উপস্থাপন করেছেন।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকায়ী এই প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে হুমকি ‘আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।’ ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার কোনো পরিকল্পনা অস্বীকার করে।

তবে ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, এটি একমাত্র অপারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ যা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করেছে। এই মাত্রা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত যাওয়ার পথে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত