Ajker Patrika

হাসপাতালের সুড়ঙ্গ থেকে মুহাম্মাদ সিনওয়ারের মরদেহ উদ্ধারের দাবি আইডিএফের

অনলাইন ডেস্ক
মুহাম্মাদ সিনওয়ারের পরিচয়পত্র। ছবি: আইডিএফ।
মুহাম্মাদ সিনওয়ারের পরিচয়পত্র। ছবি: আইডিএফ।

হামাসের সামরিক শাখার শীর্ষ নেতা এবং সাবেক হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মুহাম্মাদ সিনওয়ারের মরদেহ উদ্ধারের দাবি করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী—আইডিএফ। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, গতকাল রোববার খান ইউনিসের ইউরোপীয় হাসপাতালের নিচে একটি সুড়ঙ্গে তাঁর মরদেহ পাওয়া গিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

এর আগে গত ১৩ মে আইডিএফের এক বিমান হামলায় মুহাম্মাদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছিল ইসরায়েলি প্রশাসন। ওই হামলায় আরও ২৮ বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল। মুহাম্মদ সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে শুরু থেকেই রয়েছে ধোঁয়াশা। গতকাল আইডিএফ মরদেহ উদ্ধারের দাবি করলেও হামাস এ ইস্যুতে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য দেয়নি।

এদিকে, ওই সুড়ঙ্গে সিনওয়ারের সঙ্গে হামাসের রাফা ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ সাবানেহর মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করছে আইডিএফ। এছাড়াও আইডিএফ বলছে, মরদেহের পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। তদন্তের জন্য গোয়েন্দা বিভাগের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

হামাসের ওই দুই নেতা ছাড়াও আরও কয়েকটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি বেশ কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যম। তবে, সেগুলোর পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

গতকাল রোববার বেশ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককে খান ইউনিসের সুড়ঙ্গটিতে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। পরে তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে ইউরোপীয় হাসপাতালের সামনে সদ্য খোঁড়া মাটির নিচে ছোট্ট এক সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ দেখা যায়।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সরু একটি সুড়ঙ্গের ভেতর একটি করিডোরে, তার দুপাশে কয়েকটি কক্ষ। সেখানে ছড়িয়ে ছিল কিছু পোশাক, প্লাস্টিক চেয়ারে ঠেস দেওয়া একটি রাইফেল এবং কয়েকটি বন্ধ দরজা। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কাপড় মোড়া মরদেহ দড়ি দিয়ে সুড়ঙ্গ থেকে টেনে তোলা হচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি দেফরিন জানান, ওই সুড়ঙ্গের একটি কক্ষেই মোহাম্মদ সিনওয়ারের মরদেহ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘হামাস আবারও প্রমাণ করেছে যে তারা বেসামরিক স্থাপনা, এমনকি হাসপাতালকেও মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে—এটি তাদের কৌশলেরই অংশ।’

ইসরায়েল অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, হামাস হাসপাতালগুলোকে অস্ত্র মজুদ ও কমান্ড পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে যুদ্ধের শুরু থেকে গাজার হাসপাতালগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এসেছে ইসরায়েল। যার ফলে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনটি।

এই হামলা ও অবরোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বহু হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়ায় রোগী ও চিকিৎসাকর্মীরা মারাত্মক সংকটে পড়েছেন। গত এপ্রিল মাসে গাজার আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের, চিকিৎসা কর্মীদের এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সম্মান ও সুরক্ষা প্রদর্শন করা আবশ্যক।

ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে দাবি করছে যে হাসপাতালের নিচ থেকে হামাস নেতার মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবিক সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, হাসপাতালের ওপর হামলা কিংবা সেগুলোর চারপাশে সামরিক অভিযান চালানো আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন। এমনকি প্রতিপক্ষ ওই স্থাপনাগুলো ব্যবহার করলেও সেগুলোতে হামলা চালানোর বৈধতা মেলে না।

হামাসের অন্যতম শীর্ষ সামরিক নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার দক্ষিণ গাজার সামরিক প্রধান ছিলেন এবং তিনি হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি যদি নিশ্চিত হয়, তবে তা হবে চলমান গাজা সংঘাতে হামাসের অন্যতম বড় নেতার নিহত হওয়ার ঘটনা। তবে হামাসের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মৃত্যুর ঘোষণা না আসায় এ বিষয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পালানোর গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরলেন আবদুল হামিদ

মেঘালয়ে হানিমুনের সময় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে হত্যা, উত্তর প্রদেশে নববধূর আত্মসমর্পণ

কানাডার লেকে বোট উল্টে বাংলাদেশের পাইলট ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

এআই যুগে চাকরি পেতে যে দক্ষতা লাগবেই, জানালেন মাইক্রোসফটের সিইও

ঈদের ছুটির সুযোগে মাদ্রাসার গাছ বেচে দিলেন সুপার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত