Ajker Patrika

৭০ শতাংশ বিদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কাতার: অ্যামনেস্টি 

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

গত দশকে মারা যাওয়া ৭০ শতাংশ শ্রমিকের ব্যাখ্যা দিতে পারেনি ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।

একজন বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশির ভাগ বিদেশি শ্রমিকের মৃত্যু কারণ প্রাকৃতিক, অথবা হৃদ্‌রোগের কারণে দেখানো হয়েছে। তবে সেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ বিদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।

অ্যামনেস্টি বলছে, একটি ভালো স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সব মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যেতে পারে। তবে ১ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর সঠিক কারণ নাও জানা যেতে পারে।

এই প্রতিবেদনটি এমন সময় বের হলো যখন কাতার এবং ফিফাকে কর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য ফুটবলার এবং বিভিন্ন দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

আগামী বছরই কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফুটবল বিশ্বকাপের অবকাঠামোর উন্নয়নকাজে এ পর্যন্ত ৩৮ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জনই কাজ সম্পর্কিত কোনো কারণে মারা যায়নি। তবে অ্যামনেস্টি বলছে এ সব মৃত্যুর অর্ধেকই তদন্ত অথবা ব্যাখ্যা করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, তীব্র গরম এবং আর্দ্রতায় কাজ করার কারণে এ সব মৃত্যুর একটি বড় কারণ। এ সব কর্মীদের কাজের সুরক্ষার জন্য কাতারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

এ নিয়ে অ্যামনেস্টির অর্থনীতি এবং সামাজিক বিচার বিভাগের প্রধান স্টিব ককবার্ন বলেন, যখন অপেক্ষাকৃত যুবক এবং সুস্থ মানুষ দীর্ঘক্ষণ প্রখর তাপে কাজ করে মারা যাচ্ছে তখনই কর্মীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এটি বেঁচে থাকার অধিকারের পরিপন্থী। 

২০১০ সালে ফিফার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২২ বিশ্বকাপ কাতারে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে কাতারে ২০ লাখ প্রবাসী শ্রমিককে জোর করে কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দশকে কাতারে দক্ষিণ এশিয়া সাড়ে ছয় হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

কাতার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কর্মীদের সংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসী মৃত্যুর হার প্রত্যাশিত সীমার মধ্যে রয়েছে। তবে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের তথ্যের কারণে কাতার সরকার এমন দাবি করতে পারছে।

কাতার সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে, জীবনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিদেশি শ্রমিকদের কাতার ছাড়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

গত মে মাসে তীব্র গরম থেকে কর্মীদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল কাতার সরকার। ওই সময় গ্রীষ্মকালে কর্মঘণ্টা কমানো হয়। তখন অ্যামনেস্টি কাতার সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি তখন বলেছিল এই উদ্যোগ শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত হয়।

প্রতিবেদনে যে সব শ্রমিক কাতারে মারা গেছেন তাঁদের পরিবারের দুর্দশার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। কাতারের আইন অনুযায়ী, কাজের কারণে শ্রমিকদের মৃত্যু হলে সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। তবে মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে তদন্ত না হওয়ায় কাজের কারণে শ্রমিকেরা মারা যাচ্ছেন কি-না  তা বোঝা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

গত বছর কাতারে মারা যান নেপালের ৩৪ বছর বয়সী টুল বাহাদুর ঘার্তি। তাঁর স্ত্রী বিপানা বলেন, আমি কাতার সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ভাতা পাইনি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হৃদরোগে মারা গেলে কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি যারা ডিউটিতে ছিল না তাঁদেরকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

কাতার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গরমের সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণের সরকার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ করে আহত এবং মৃতদের হিসেবে রাখা হচ্ছে।

তালেবানের একজন মুখপাত্র বলেন, কাতার শ্রম সংস্কারের প্রতিশ্রুতিতে অবিচল রয়েছে। আমাদের যে অগ্রগতি হয়েছে তা কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে এমন কোনো সংগঠনকে অবশ্যই তাড়িয়ে দেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত