Ajker Patrika

আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েলেও, পাল্টা হামলার আশঙ্কায় চলছে ‘প্যানিক বায়িং’

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ১৬: ২৫
আজ শুক্রবার জেরুজালেমের সুপারশপে নিত্যপণ্য বহনের জন্য বেবিস্ট্রলার নিয়ে হাজির ইসরায়েলি নারীরা। ছবি: এএফপি
আজ শুক্রবার জেরুজালেমের সুপারশপে নিত্যপণ্য বহনের জন্য বেবিস্ট্রলার নিয়ে হাজির ইসরায়েলি নারীরা। ছবি: এএফপি

ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। জনগণ প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করতে দোকানে ভিড় করছেন—এমন চিত্র তুলে ধরেছেন ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে গোল্ডবার্গ জানান, ইসরায়েল সরকারের ‘দুই সপ্তাহের খাবার মজুতের’ পরামর্শ জনগণ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

গোল্ডবার্গ বলেন, ‘আমি তেল আবিবের কাছে হেরজেলিয়ায় একটি ছোট মুদিদোকানের ওপরেই থাকি। সকাল ১০টার দিকে নিচে নেমে গেলাম। পরিস্থিতি যেন সায়গনের পতনের মতো—দোকানে ছিল লম্বা লাইন এবং বাকি ছিল শুধু সবচেয়ে কঠিন শুকনা খাবারগুলো।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘পরিস্থিতি চরম হিস্টেরিক্যাল—তবু একই সঙ্গে মানুষ নিজেদের পতাকার চারপাশে একত্রিত হচ্ছে, একধরনের জাতীয় ঐক্য দেখা যাচ্ছে।’

এর আগে ইসরায়েলের হামলার প্রাথমিক জবাবে ইরান শতাধিক ড্রোন পাঠায়। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আরও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া আসছে অচিরেই। কারণ ইসরায়েলের হামলার কড়া জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। হামলার পর দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এক বিবৃতিতে তেল আবিবকে তেহরানের ভয়ংকর পাল্টা জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।

বিবৃতিতে খামেনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশের দিকে নোংরা ও রক্তাক্ত হাত বাড়িয়েছে জায়নবাদীরা। আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে এবার তারা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি নিজেদের শয়তানি প্রকৃতির প্রকাশ ঘটাল। তাদের এর শাস্তি পেতেই হবে। আর সেই শাস্তি হবে কঠোর। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বলিষ্ঠ বাহু কখনোই জায়নবাদীদের ছেড়ে দেবে না। শত্রুদের হামলায় আমাদের কয়েকজন কমান্ডার ও বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। ইনশা আল্লাহ তাঁদের উত্তরসূরিরা দ্রুতই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।’

এদিকে ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, কুম শহরের পবিত্র জামকারান মসজিদের চূড়ায় লাল রঙের একটি পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

ফার্স বলেছে, পবিত্র জামকারান মসজিদের ওপর প্রতিশোধের লাল পতাকা উড়ছে।

শিয়া মুসলমানদের জন্য লাল পতাকা এক বিশেষ প্রতীক। সাধারণত ইসলামি মাস মহররমে, বিশেষ করে কারবালার যুদ্ধ ও ইমাম হোসেন (আ.)-এর শাহাদাত স্মরণে এই পতাকা উত্তোলন করা হয়। তবে মহররম মাস ছাড়া এই পতাকা উত্তোলন অত্যন্ত বিরল ঘটনা। পতাকাটি প্রতিশোধ ও শোকের এক শক্তিশালী বার্তা বহন করে।

এই পতাকায় লেখা রয়েছে, ‘ইয়া লা-সারাত আল-হোসেইন’। এর অর্থ হলো—হে হোসাইনের প্রতিশোধ গ্রহণকারীরা।

ইসলামের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (আ.) শিয়া ইসলামের অন্যতম পবিত্রতম চরিত্র। তাঁকে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে মানা হয়। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান ইরাকের কারবালায় উমাইয়া খলিফা ইয়াজিদের সেনাদের হাতে তিনি শহীদ হন।

এই যুদ্ধ ও ইমাম হোসেনের শাহাদাত শিয়া ইসলামের ভিত্তিভূমি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি সুন্নি ও শিয়া ইসলামের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাজনরেখা তৈরি করে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই পতাকা উত্তোলন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের শক্ত বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক্সে প্রকাশিত ইরানের তাসনিম সংবাদ সংস্থার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কুম শহরের জামকারান মসজিদে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ইরানের পতাকা হাতে নিয়ে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। তেহরান থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কুম শহর ইরানের অন্যতম পবিত্র নগরী।

আজ শুক্রবার ভোরে চালানো ইসরায়েলি হামলায় উচ্চপদস্থ সামরিক কমান্ডার, পরমাণুবিজ্ঞানী, নারী-শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত