Ajker Patrika

আশ্রয়শিবিরকেও ছাড়ছে না ইসরায়েল, বারবার হামলার লক্ষ্যবস্তু স্কুল ও হাসপাতাল

অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ভবন। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ভবন। ছবি: এএফপি

আবারও ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হলো গাজার একটি স্কুল। গতকাল রোববার, স্থানীয় সময় রাতে বাইত লাহিয়ার ফাহমি আল-জারজাবি স্কুলে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে স্কুলটি বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

স্কুলটি ছাড়াও উপত্যকাজুড়ে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে রাতভর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বাইত লাহিয়ার ওই স্কুল থেকে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলি হামলায় স্কুলটির অর্ধেকই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলার পর পরই আগুন ধরে যায় ভবনে। পুরোপুরি ভস্ম হয়ে গেছে দুটি ক্লাসরুম। স্কুলটিতে আশ্রিতদের একজন বিবিসিকে বলেন, ‘এত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে যে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যেদিকেই তাকাচ্ছিলাম শুধু আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাচ্ছিলাম। মেঝেতে পড়ে ছিল দগ্ধ মরদেহ। এমন বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখে আমার ছেলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ভাবিনি বেঁচে যাব!’

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুলে হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন উত্তর গাজা পুলিশের তদন্ত বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আল-কাসিহ ও তাঁর পরিবার।

গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলি বাহিনীর অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হয়েছে স্কুল এবং হাসপাতাল। গত ১৯ মাসে স্কুল ও হাসপাতালগুলোতেই সবচেয়ে ভয়ংকর হামলাগুলো চালানো হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, গাজা উপত্যকার ৯৫ শতাংশ স্কুলই ধ্বংস করে ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এর আগে, চলতি বছর এপ্রিলেই গাজা সিটির তুফফাহ এলাকার তিনটি স্কুলে একসঙ্গে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ৩ এপ্রিল চালানো ওই হামলায় নিহত হয় কমপক্ষে ৩৩ ফিলিস্তিনি, গুরুতর আহত হয় শতাধিক। নিহতদের মধ্যে ১৮ জনই শিশু।

গত বছর আগস্টে গাজা সিটির আল তাবিন স্কুলে অন্যতম ভয়ংকর হামলাটি চালায় নেতানিয়াহুর বাহিনী। স্থানীয় সময় ভোরে চালানো হয় হামলা। সেসময় ফজরের নামাজ পড়তে জড়ো হয়েছিলেন মুসল্লিরা। আর নামাজরত ওই মানুষগুলোর ওপরই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। নিহত হয় কমপক্ষে ১০০ জন। একই মাসে মধ্য গাজার শেখ রেদওয়ান এলাকার হাম্মাম স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৫ জনকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।

এর এক মাস আগে ২০২৪-এর জুলাইতেও একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে ৩০ ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নেয় ইসরায়েলি সেনারা। ওই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল খান ইউনিসের আল আদওয়াহ স্কুল। এই হামলার এক সপ্তাহ আগেই নুসেইরাহর আরও একটি স্কুলে চালানো হয় বিমান হামলা। ওই হামলায় প্রাণ যায় আরও ১৫ ফিলিস্তিনির। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলছে, স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় ২ হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় পুরোদস্তুর অভিযান শুরুর পর নভেম্বরেই গাজা সিটির বুরাক স্কুলে হামলা চালিয়ে অর্ধশত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এসব হামলার পেছনে ইসরায়েলের সাফাই থাকে একটাই—শরণার্থীদের মাঝে লুকিয়ে ইসরায়েলবিরোধী কার্যক্রম চালায় হামাস। এসব শরণার্থীশিবিরেই লুকিয়ে রাখা হয় অস্ত্র-গোলাবারুদ। যদিও হামলা শুরুর এত দিন পরও এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি ইসরায়েল। এরপরও একের পর এক স্কুল-শরণার্থী শিবির-হাসপাতালগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে আসছে ইসরায়েল।

বেসামরিক স্থাপনা ও নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলের এমন নির্বিচার হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত