Ajker Patrika

হানিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করল ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক    
Thumbnail image
তেহরানে গুপ্তহত্যায় মৃত্যু হয় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের রাজধানী তেহরানে গত ৩১ জুলাই গুপ্তহত্যার শিকার হন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে তেহরানে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই নিজ বাসভবনে এক হামলায় মৃত্যু হয় তাঁর। সে সময় এ হামলার জন্য ইরান ও হামাস ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করলেও তখন দেশটির পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হয়নি। দীর্ঘ সময় পর গতকাল সোমবার হানিয়া হত্যার দায় স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, হানিয়াকে হত্যা করার বিষয়ে কাতজের স্বীকারোক্তি কোনো জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তার প্রথম প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি।

এক বিবৃতিতে হানিয়াকে হত্যার কথা উল্লেখ করে ইয়েমেনের হুতিদের প্রতি হুঁশিয়ারি বার্তা দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘হুতিদের ওপর কঠোর আঘাত হানব আমরা। তাদের নেতৃত্বকে নির্মূল করব, যেমন করে হানিয়া, (ইয়াহইয়া) সিনওয়ার ও (হাসান) নাসরুল্লাহকে করেছি। আমরা আল হুদেইদা ও সানায় তেমনই করব, যেমনটা তেহরান, গাজা এবং লেবাননে করেছি।’

ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজের প্রতিবেদনে জানা যায়, দুদিন আগে হুতি গোষ্ঠী ইসরায়েলের কার্যত রাজধানী তেল আবিবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এ কথা বললেন ইসরায়েল কাতজ। চলমান হামলাগুলোর প্রসঙ্গে কাতজ বলেন, ‘এই দিনগুলোতে যখন হুতি সন্ত্রাসীরা যখন ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে, এমন সময় আমি একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই। আমরা হুতি সন্ত্রাসী সংগঠনকে কঠোর হামলা চালিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দেব।’

উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে হুতিরা লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক জলপথে ইসরায়েলি কার্গো জাহাজ বা তেল আবিবের সঙ্গে সংযুক্ত জাহাজগুলোকে হামলা চালিয়েছে। গাজায় আক্রমণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধে ৪৫ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) একটি গণহত্যা মামলার মুখোমুখি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজার যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এর আগে, গত ২১ ডিসেম্বর ইসরায়েলের কার্যত রাজধানী তেল আবিবে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি। সেদিন ভোরে হুতি বাহিনী তেল আবিবজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় অন্তত ১৬ জন আহত হয়। হুতি বাহিনী এই হামলাকে ইসরায়েলের হৃৎপিণ্ডে হামলার সঙ্গে তুলনা করেছে।

হুতি বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে এ হামলার দায় স্বীকার করে হুতি কর্মকর্তা হেজাম আল-আসাদ হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বেশ কিছু বিদ্রুপাত্মক পোস্ট করেন। তার মধ্যে কিছু হিব্রু ভাষায় লেখা, যা ইসরায়েলি জনগণকে সরাসরি উদ্দেশ্য করে। এক হিব্রু পোস্টে হেজাম আল-আসাদ লেখেন, ‘সব ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে, সন্ত্রাসী শত্রুর হৃৎপিণ্ড আর নিরাপদ নয়।’ অন্য এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘বিলিয়ন ডলার খরচ করে বানানো প্রতিরক্ষাব্যবস্থার আর কোনো উপযোগিতা নেই।’

আরবিতে শেয়ার করা আরেক পোস্টে আল-আসাদ লেখেন, ‘শত্রু তাদের সামরিক অবস্থান এবং উপনিবেশকারীদের মনোবল বজায় রাখতে গণমাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী মিসাইল পড়েছে, তারা সেই জায়গাগুলোকে (আমাদের) ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত এলাকা হিসেবে উপস্থাপন করছে।’

এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। দেশটির অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, যেমন—আয়রন ডোম এবং ডেভিডস স্লিং সিস্টেম এই হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। হুতি বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই ব্যর্থতা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার প্রমাণ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত