Ajker Patrika

ইরানে হামলার দিনক্ষণ লুকাতে যেসব ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিল ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ১৪: ৩৯
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি হামলার পর ইরান কতটা বিস্মিত হয়েছিল, এখনই তা মূল্যায়ন করা খুবই চটজলদি হয়ে যায়। হামলার বিষয়টি লুকিয়ে রাখতে ইসরায়েলি রাজনৈতিক মহল ও জ্যেষ্ঠ মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রচেষ্টা তেহরানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে কতটা বিভ্রান্ত করেছিল তা-ও বলা কঠিন। তবে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যে এই কৌশলের মাধ্যমে ইরান ও বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গত সোমবার এক গোপন বৈঠকে ইরানে হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফার আলোচনার ছয় দিন আগে এই সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ইসরায়েল সরকার ‘সবকিছু স্বাভাবিক’ এমন একটা ধারণা দিতে চেয়েছিল গণমাধ্যম ব্যবহার করে। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

ইসরায়েল তেহরান সরকারকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেও বেশ কিছু তথ্য ফাঁস হয়েই যায়। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার যে বৈঠকটি ইরানে হামলার অনুমোদনের জন্য ডাকা হয়, সেটিকে প্রকাশ্যে জিম্মি চুক্তি আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক বলে উল্লেখ করা হয়।

মন্ত্রিসভার সদস্যরা হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন, কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠক পর্যন্ত সবাই হামলার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতেন না। বৈঠক শেষে একটি রাজনৈতিক সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানায় যে, বৈঠকটি জিম্মি সংকট নিয়েই ছিল এবং আলোচক দল হামাসের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

একই সঙ্গে, একটি ইসরায়েলি সূত্র জানায়—আলোচক দলের নেতা, কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার এবং মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া আগামীকাল রোববারের আলোচনার আগে উইটকফের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

হামলা গোপন করতে ইসরায়েল সরকার তাদের অনেকগুলো কর্মসূচির কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। যেমন—শুক্রবার তেল আবিব প্রাইড প্যারেডের জন্য নির্ধারিত ছিল এবং সোমবার নেতানিয়াহুর ছেলের বিয়ের কথা ছিল। এগুলো গণমাধ্যমের বিশ্লেষণেও প্রভাব ফেলেছিল যে, ইসরায়েলের হামলা মঙ্গলবার নাগাদ হবে না।

গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, নেতানিয়াহু সপ্তাহান্তে উত্তর ইসরায়েলে ছুটি কাটাবেন। উত্তেজনা বাড়ার আরও খবর আসার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ‘ইন্টারনেটে হামলা হতে পারে এমন খবর প্রচারিত হলেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্ধারিত সফর বাতিল করেননি।’

হামলার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার এক দিন পর গত মঙ্গলবার, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল-১২ নিউজকে নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ফোন কলের বিষয়বস্তু ফাঁস করে দেয়। এ থেকে জানা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুকে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সম্ভাবনা এজেন্ডা থেকে বাদ দিতে বলেছিলেন এমনকি ইরানিদের কাছ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করলেও কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা রাখতে চেয়েছিলেন। নেতানিয়াহু নাকি উত্তরে বলেছিলেন, ইরানের সব সময় সামরিক হুমকির মুখোমুখি হওয়া উচিত, কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইরানের সঙ্গে আলোচনা, দেশটির সঙ্গে কথা বলার অসুবিধা এবং প্রক্রিয়াটি ফলপ্রসূ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি নেতানিয়াহুকে ইরানে আক্রমণ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছেন কি না। ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, তিনি আপাতত ইসরায়েলি হামলার বিরোধী।

প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের আরও বলেন, তাঁর দেশ ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি ছিল। ইসরায়েলি হামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি সব শেষ করে দেবে। তবে, আসলে এটি সাহায্যও করতে পারে। তবে এটি সব শেষও করে দিতে পারে।’

হামলার প্রাক্কালে ওয়াশিংটন অবিলম্বে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিতে শুরু করে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে দূতাবাস খালি করার ঘোষণা দেয় এবং ‘ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার’ কারণে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বাড়ায়। ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস কর্মীদেরও জেরুজালেম, তেল আবিব বা বির শেভার বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়।

এই পদক্ষেপগুলো ব্যাপক প্রচার লাভ করে এবং সম্ভবত ইরানের নীতিনির্ধারকদের কাছেও পৌঁছেছিল। তেহরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বৃহস্পতিবার জানান, একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ’ ইরানকে ইসরায়েল শিগগিরই হামলা করতে পারে বলে সতর্ক করেছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও ইরানে সামরিক হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন বিমানবাহিনী জর্ডানে এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন মোতায়েন করে। যাতে ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করা ইরানি ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সহায়তা করা সম্ভব হয়।

এই স্কোয়াড্রনের বিমানগুলো সাধারণত স্থায়ীভাবে ব্রিটেনে মোতায়েন থাকে। এর আগে, গত বছরের এপ্রিলে ইসরায়েলে প্রথম ইরানি হামলার আগেও জর্ডানে মোতায়েন করা হয়েছিল, পাশাপাশি অক্টোবরে দ্বিতীয় ইরানি হামলার ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়ার পরেও মোতায়েন করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত