Ajker Patrika

সরকার গঠনে কাজ করছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা, ক্ষমতা হস্তান্তর শিগগির

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৫২
Thumbnail image
সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনীর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের আকস্মিক পতন আঞ্চলিক ও পরাশক্তিগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থায় ক্ষমতার শূন্যতা কাটাতে বিদ্রোহী জোট সরকার গঠনে মনোযোগী হয়েছে। বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করছে। তবে তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে এরই মধ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো কাজ শুরু করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গতকাল সোমবার রাতে এক গোপন বৈঠক করেছে। কূটনীতিকরা বলেছেন, ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর মাত্র ১২ দিনের মধ্যে আসাদের পতনে সবাই বিস্মিত। জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যসহ সবাই বিস্মিত। তবে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে—পরিস্থিতি কীভাবে এগিয়ে যায়।’

রাশিয়া আসাদের সরকারকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। রোববার আসাদ দামেস্ক ছেড়ে মস্কো পালিয়ে যান, যা তাঁর পরিবারের ৫০ বছরের বেশি সময়ের কঠোর শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।

দামেস্কে এখনো উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আসাদের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ জালালি গত সোমবার বিদ্রোহী-নেতৃত্বাধীন স্যালভেশন গভর্নমেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্মতি দেন। এই প্রশাসন বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় অবস্থিত।

প্রধান বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা—যিনি আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নামে বেশি পরিচিত—তিনি প্রধানমন্ত্রী জালালি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল মিকদাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘জালালি বলেছেন, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।’

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা টেলিভিশন জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী প্রশাসনের নেতৃত্ব দেবেন মোহাম্মদ আল-বাশির, যিনি বর্তমান স্যালভেশন গভর্নমেন্টের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন।

হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে মিলিশিয়া জোটের দুর্দমনীয় অগ্রগতি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি বিশাল পরিবর্তন। ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ পাঁচ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ হয়েছে। এই যুদ্ধ আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট তৈরি করেছে এবং শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকা জনশূন্য হয়েছে এবং বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতি ধসে পড়েছে।

বিদ্রোহী জোট এখনো সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা প্রকাশ করেনি। এমন একটি অঞ্চলে এ ধরনের ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো নির্দিষ্ট মডেলও নেই। জাতিসংঘে মার্কিন উপ-রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, ‘এটি সিরিয়ার জনগণের জন্য এক অসাধারণ মুহূর্ত। এখন এই পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। সিরিয়ায় কি এমন একটি শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে যা জনগণের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখাবে?’

গত সোমবার সিরিয়ার রাজধানীর দামেস্কে কিছু বিদ্রোহী যোদ্ধা আশা প্রকাশ করেছেন, শিগগির একটি নাগরিক প্রশাসন দেশ পরিচালনা করবে। ইদলিব প্রদেশের যোদ্ধা ফেরদৌস ওমর জানান, ‘আমরা চাই রাষ্ট্র এবং নিরাপত্তা বাহিনী যেন ক্ষমতায় থাকে।’ ফেরদৌস শিগগির নিজের আদি পেশা কৃষিকাজে ফিরে যেতে চান।

এদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত কুসাই আলধাহক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিরিয়ানরা স্বাধীনতা, সমতা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার দিকে তাকিয়ে আছে এবং আমরা আমাদের দেশ পুনর্গঠনে একসঙ্গে কাজ করব। যা ধ্বংস হয়েছে তা পুনর্নির্মাণ করব এবং সিরিয়ার ভবিষ্যৎ—একটি ভালো ভবিষ্যৎ—পুনর্গঠন করব।’

অপরদিকে, সিরিয়া জুড়ে শৃঙ্খলা ফেরানোর কিছু চিহ্ন ধরা পড়েছে। সিরিয়ার ব্যাংকগুলো আজ মঙ্গলবার খোলা হবে এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয় আজই এই খাতের সব কর্মচারীকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত