Ajker Patrika

গাজার যে দৃশ্যটি কখনো ভুলবেন না মুহম্মদের মা

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

হঠাৎ তীব্র ভয়ে কুঁকড়ে গেলেন মুহম্মদ ভর। গড়গড় আওয়াজ করে কুকুরটি তাঁর ওপর হামলে পড়ল। কামড়ে কামড়ে রক্তাক্ত মুহম্মদ কোনোভাবেই থামাতে পারেনি হিংস্র প্রাণীটিকে। যদিও তাঁর চারপাশে তখন মানুষের কোলাহল। ঘরে তাঁর মা, ছোট্ট ভাইঝি তাঁর দুর্দশা দেখে ভয়ার্ত চোখে চিৎকার করছে। ছিল ইসরায়েলি সৈন্যরাও। তাঁদের আদেশেই গাজার ওই বাড়িটিতে এমন বিভীষিকা নেমে এসেছে। 

২৪ বছর বয়সী মুহম্মদ কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ নন। ডাউন’স সিনড্রোমে আক্রান্ত মুহম্মদ ছিলেন অটিস্টিক। তাই তিনি বুঝতেও পারছিলেন না, তাঁর সঙ্গে কী ঘটছে। গত জুলাইয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে সেদিনের সেই ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলেছেন বিবিসির একজন সাংবাদিক। তাঁরা তখনো সেদিনের সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি। 

মুহাম্মদের মায়ের বয়স ৭০ বছর। সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি দেখছিলাম, কুকুরটি একে একে তাঁকে (মুহম্মদ) এবং তাঁর হাতকে ছিঁড়ে ফেলছে। তাঁর হাত থেকে রক্ত ঝরছে।’ 

মুহম্মদের মা বলেন, ‘এই দৃশ্যটি আমি কখনোই ভুলব না। এটি সব সময় আমার চোখের সামনেই থাকে। দৃশ্যটি কখনোই আমাকে ছেড়ে যায় না। আমরা তাঁকে বাঁচাতে পারিনি। না তাদের কাছ থেকে না কুকুরের কাছ থেকে।’ 

ঘটনাটি ঘটেছিল গত ৩ জুলাই। ইসরায়েলি সৈন্যরা সে সময় গাজার শেজাইয়া অঞ্চলে তীব্র সামনাসামনি লড়াই এবং হামলা শুরু করেছিল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, তাদের সেনারা তখন হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল। গাজার ভবনগুলোতে হামাস যোদ্ধাদের খুঁজে বের করার জন্য তাদের সেনারা এক ধরনের প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করেছিল। এই কুকুরগুলো নিয়মিত যোদ্ধা ছাড়াও বুবি ফাঁদ, বিস্ফোরক এবং অস্ত্রের সন্ধান দিত। 

মুহম্মদের ঘটনার বিষয়ে আইডিএফ দাবি করে, ওই ভবনটির ভেতরে সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করেছিল কুকুরটি এবং এক ব্যক্তিকে কামড়ে দিয়েছিল। তবে সৈন্যরা ওই প্রাণীটিকে আটকে রেখেছিল। আহত মুহাম্মদকে অন্য ঘরে নিয়ে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়। 

অভিযানের সময় মুহম্মদের দুই ভাইকে আটক করা হয়। এর মধ্যে শুধু জিবরাইল নামে এক ভাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুহম্মদের মা নাবিলা জানান, ইসরায়েলি সেনারা পরিবারের বাকি সদস্যদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তাঁরা এ সময় আহত মুহম্মদের সঙ্গে থাকার অনুমতি চাইলেও দেওয়া হয়নি। ফলে আহত মুহম্মদ ওই ঘরেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন। সৈন্যরা চলে যাওয়ার সময় তিনি কী অবস্থায় ছিলেন তা আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়নি। মুহম্মদের ভাই জিবরাইল বিশ্বাস করেন, তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। 

ইসরায়েলিরা এক সপ্তাহ পরে আশপাশ থেকে সরে গেলে মুহাম্মদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ফিরে আসেন। তাঁরা মুহম্মদকে রান্নাঘরের মেঝেতে মরে পড়ে থাকতে দেখেন। 

কুকুরের আক্রমণের পর ঠিক কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে তা এখনো অজানা। বর্তমান যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তাঁর মরদেহের কোনো ময়নাতদন্তও হয়নি। গোরস্থানে কবর দেওয়া সম্ভব ছিল না বলে বাড়ির পাশেই একটি গলিতে মরদেহটি পুঁতে রাখা হয়েছিল। 

সোমবার গাজায় ইসরায়েলি হামলার এক বছর পূর্তিতে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, মুহম্মদের মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত চায় তাঁর পরিবার। তাঁর ভাই জিবরাইল বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করব। কারণ সে কোনো যোদ্ধা ছিল না, তাঁর কাছে অস্ত্র ছিল না, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন একজন সাধারণ মানুষ ছিল শুধু।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত